জামাদিউস সানী মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি

সন ১১ হিজরী ৩রা জামাদিউস সানী রোজ মঙ্গলবার হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.) এর শাহাদত বরণ করেন। রাসুল (সা.) এর ওফাতের পরে তিনবার হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.)ও হজরত আলী (আ.)এর ঘরে মুসলমানরা হামলা করে এবং পর্যায়ে তারা হজরত ফাতেমা (সা.আ.)এর ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। শুধুমা

জামাদিউস সানী মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি

এস, এ, এ

৩য় জামাদিউস সানী

হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.)এর শাহাদত

সন ১১ হিজরী ৩রা জামাদিউস সানী রোজ মঙ্গলবার হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.) এর শাহাদত বরণ করেন। রাসুল (সা.) এর ওফাতের পরে তিনবার হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.)ও হজরত আলী (আ.)এর ঘরে মুসলমানরা হামলা করে এবং পর্যায়ে তারা হজরত ফাতেমা (সা.আ.)এর ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। শুধুমাত্র আগুন লাগিয়ে তারা ক্ষান্ত হয়নি বরং তারা দরজায় এমনভাবে লাথি মারে যে জলন্ত দরজা ভেঙ্গে হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.)এর উপরে পড়ে যায়। উক্ত কারণে তাঁর পাজরের হাড় ভেঙ্গে যায়, অকালে গর্ভপাত ঘটে এবং হজরত মোহসিন শাহাদত বরণ করেন। হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.) হজরত আলী (আ.)কে ওসিয়ত করে যান এবং হজরত আলী (আ.) তাঁর ওসিয়ত অনুযায়ি আমল করেন। (রওযাতুল মুত্তাকিন, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৩৪২, আলামুল ওয়ারা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩০০, কাশফুল গুম্মা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৫০৩, মুসতাদরাকে সাফিনাতুল বিহার, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৮৫, ইকবাল, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৬১।)

৪ঠা জামাদিউস সানী

হারুনর রশিদের মৃত্যুদিবস

সন ১৯৩ হিজরী ৪ জামাদিউস সানী তারিখে আব্বাসীয় খলিফা হারুনর রশিদ ৪৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে তার কবর ইমাম রেযা (আ.)এর কবরের পিছনের অংশে রয়েছে। এছাড়াও ইতিহাসে তার মৃত্যু দিবস সম্পর্কে অন্যান্য মতামত বর্ণিত হয়েছে যেমন: ১লা জামাদিউস সানী। (তৌযিহুল মাকাসিদ, পৃষ্ঠা ১৩, আত তাম্বিহ ওয়াল ইশরাফ, পৃষ্ঠা ২৯৯, তারিখে খোলাফা বিন খায়াত, পৃষ্ঠা ৩৭৭, তারিখে ইয়াকুবি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৩০।)

১২ই জামাদিউস সানী

খায়বারের উদ্দেশ্যে মুসলমানদের যাত্রা

তৎকালীন আরবের মদীনা নগরী থেকে ১৫০ কিলোমিটার (৯৩ মাইল) দুরে অবস্থিত খায়বার নামক মরুভূমিতে বসবাসরত ইহুদিগণের সাথে মুসলিমগণের সংঘটিত একটি যুদ্ধ। ইসলামি ইতিহাস অনুসারে, মুসলিমগণ সেখানে দুর্গে আশ্রয় নেয়া ইহুদিদেরকে আক্রমণ করেছিল।

৭ম হিজরীতে মদীনা আক্রমণ করার ব্যাপারে খায়বারের ইহুদীদের নতুন ষড়যন্ত্রের কারণে খায়বার যুদ্ধ হয়। খায়বার ছিল মদীনা থেকে ৮০ মাইল দূরের একটি বড় শহর। এখানে ইহুদীদের অনেক গুলি দূর্গ ও ক্ষেত খামার ছিল। মূলত খায়বার ছিল ইহুদীদের একটি নতুন উপনিবেশ। খায়বারের ইহুদীরা বনু কোরাইজা গোত্রের ইহুদীদের কে বিশ্বাসঘাতকায় উদ্দীপিত করেছিল। এছাড়া মুহাম্মাদ (সা.) কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র এই খায়বার থেকে হত। খায়বারের ইহুদীরা গাতাফান গোত্র ও বেদুঈনদের সাথে মিলিত হয়ে মদীনা আক্রমণ করার ব্যাপারে ষড়যন্ত্র করছিল। তখন সন ৭ হিজরীর ১২ই জামাদিউস সানী তারিখে রাসুল (সা.) তাঁর ৪০০জন সাহাবীদেরকে নিয়ে খায়বারের দিকে অগ্রসর হন এবং দুই দিন পরে তারা খায়বারে পৌছায়। (ওয়াকায়েউশ শুহুর, পৃষ্ঠা ১০৭।)

১৩ ই জামাদিউস সানী

হজরত উম্মুল বানিনের ওফাত

নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

তাঁর নাম ছিল ফাতেমা, উপনাম উম্মুল বানিন। তাঁর পিতার নাম হেযাম এবং মাতার নাম ছিল সামামা অথবা লাইলা। তাঁর স্বামির নাম ছিল আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)। তিনি ছিলেন চার জন বীর সন্তানের জননি। তাঁর সন্তানরা ছিল যথাক্রমে হজরত আব্বাস (আ.), আব্দুল্লাহ, জাফর এবং উসমান। তাঁর এ চার বীর সন্তানকে তিনি ইমাম হুসাইন (আ.) এর জন্য আল্লাহর পথে উৎসর্গ করে দেন এবং তারা সকলেই ইমামতকে রক্ষার জন্য কারবালাতে শহীদ হয়ে যায়। উম্মুল বানিনকে জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়।

উম্মুল বানিনের জন্ম

ইতিহাসের বিশ্বস্ত গ্রন্থ সমূহে উম্মুল বানিনের জন্ম তারিখ সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায়না। তবে হজরত আলী (আ.) এর সাথে উম্মুল বানিনের বিবাহ সংঘটিত হয় ১৯ বছর বয়সে এবং তাঁর জৈষ্ঠ সন্তান হজরত আব্বাস (আ.) জন্মগ্রহণ করেন ২৬ হিজরীতে । সুতরাং এ সূত্র অনুযায়ি তিনি পঞ্চম হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন।

ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে যে, ইসলাম প্রচারের পূর্বে থেকে কালাব গোত্রের সাহসি ব্যাক্তিবর্গ ছিলেন হজরত উম্মুল বানিনের পূর্বপুরুষগণ। তাদের গোত্রের সে যুগের বিভিন্ন শাষকগণও তাদের কাছে নত স্বিকার করতে বাধ্যে হতো। আর এ কারণেই আকিল ইবনে আবি তালিব হজরত আলী (আ.) এর বিবাহের জন্য উক্ত গোত্রকে নির্বাচন করেন।

হজরত আলী (আ.) এর উপযুক্ত স্ত্রী উম্মুল বানিন

হজরত আলী (আ.) এর প্রথম স্ত্রী হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.) এর শাহাদতের পরে তিনি তাঁর ভাই আকিলকে বলেন: তিনি যেন তাঁর জন্য এমন এক গোত্রের নারীকে নির্বাচন করেন যেন সে গোত্রের লোকজন হয় অত্যান্ত সাহসি। যেহেতু আকিল ইবনে আবি তালিব আরবের বিভিন্ন বংশ সম্পর্কে ভাল জ্ঞান রাখতো সেহেতু তিনি কালাব গোত্রকে যারা মক্কার দক্ষিণাঞ্চলে বসবাস করতো উক্ত গোত্রেকে তিনি নির্বাচন করেন। কেননা সে যুগে আরবে সাহসি হিসেবে উক্ত গোত্রটি খুব পরিচিত ছিল।

উম্মুল বানিনকে বিবাহের প্রস্তাব

যখন আকিল ইবনে আবি তালিব কালাব গোত্রকে নির্বাচন করেন তখন হজরত আলী (আ.) আকিল ইবনে আবি তালিবকে উম্মুল বানিনের বাবার কাছে তাঁর বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে প্রেরণ করেন। যখন তাঁর পিতা উক্ত প্রস্তাবটির কথা তার কন্যার কাছে উস্থাপন করেন তখন তিনি উক্ত বিবাহে নিজের সম্মতির কথা জানান।

বিবাহের পরে হজরত আলী (আ.) তাঁর আচরণে সন্তুষ্ট হন এবং তাঁকে অন্তরের নিগুড় ভালবাসা দ্বারা এক আদর্শ মা এবং স্ত্রী রূপে গড়ে তোলেন।

বিবাহের প্রথম দিন

প্রথম যেদিন উম্মুল বানিন হজরত আলী (আ.) এর ঘরে পদার্পণ করেন সেদিন ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.) জ্বরের কারণে অসুস্থ ছিলেন। তাদের উক্ত অবস্থা দেখে তিনি তাদের শিয়রে বসে স্নেহময়ি মায়ের ন্যায় সারা রাত তাদের সেবা যত্ন করেন।

বিবাহের কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পরে তিনি হজরত আলী (আ.)কে অনুরোধ করেন তিনি যেন তাকে উম্মুল বানিন বলে সম্বোধন করেন। কেননা তিনি কখনও চাননি যে, ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.) ফাতেমা নামটি শুনে যেন কষ্ট পায় এবং তাঁরা যেন কোনভাবেই এটা মনে না করেন যে তাঁরা তাদের মাকে হারিয়েছে।

হাসনাইন (আ.) এর খাদেম উম্মুল বানিন

হজরত উম্মুল বানিনের সকল চেষ্টা ছিল যেন ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.) তাঁদের মাকে হারানোর বেদনাকে ভুলে যায়। ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.) ও উম্মুল বানিনের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সেবা যত্নের কারণে তাঁদের মাকে হারানোর ব্যাথাকে কম অনুভব করতেন।

উম্মুল বানিন সর্বদা ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.)কে তার সন্তানদের উপরে প্রাধান্যতা দান করতেন এবং সম্মান প্রদর্শন করতেন। আর উক্ত কাজটিকে তিনি নিজের ধর্মিয় এবং ঈমানি দ্বায়িত্ব বলে মনে করতেন।

উম্মুল বানিনের সন্তানগণ

হজরত আলী (আ.) ও উম্মুল বানিনের ঔরষজাত সন্তান ছিলেন চার জন। হজরত আব্বাস (আ.), আব্দুল্লাহ, জাফর এবং উসমান। যেহেতু তিনি ছিলেন চার পুত্র সন্তানের জননি সেহেতু তিনি উম্মুল বানিন নামে ইতিহাসে পরিচিতি অর্জন করেন। তাঁর উক্ত চার বীর সন্তান কারবালাতে ইমাম হুসাইন (আ.) এর জিবন রক্ষার্থে শাহাদত বরণ করেন।

ইমামতের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা

তিনি ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.) কে তার নিজের সন্তাদের চেয়েও বেশি ভালবাসতেন। আরএ কারণেই তিনি নিজের চার সন্তানকে ইমাম হুসাইন (আ.) এর জিবন রক্ষার জন্য আল্লাহর পথে উৎসর্গ করে দেন।

যখন বাশির মদীনায় কারবালার শহীদদের শাহাদতের খবর নিয়ে আসে তখন তিনি সর্বপ্রথমে ইমাম হুসাইন (আ.) এর খবর নেন। যখন তিনি বাশিরকে দেখেন যে সে কারবালার শহীদদের খবর প্রচার করে বেড়াচ্ছে তখন তিনি বাশিরকে জিজ্ঞাসা করনে হে বাশির! ইমাম হুসাইনের খবর বল। তখন বাশির তাঁকে বলে: হে উম্মুল বানিন! আল্লাহ আপনাকে ধৈর্য দান করুন। কেননা কারবালাতে আপনার চারজন সন্তান মারা গেছে। তখন তিনি বাশিরকে বলেন: হে বাশির! আগে তুমি ইমাম হুসাইন (আ.) এর খবর বল। আবারও বাশির তাঁকে বলে: হে উম্মুল বানিন! আপনার চারজন সন্তান শাহাদত বরণ করেছেন। তখন তিনি বলেন: আমার সন্তানরা হুসাইন (আ.) এর জন্য উৎসর্গিত হোক আমি হুসাইন (আ.) এর খবর শুনতে চাই। যখন বাশির তাঁকে ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদতের খবর শুনে তখন তিনি আর আবেগপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং বলেন: তুমি এ খবরের মাধ্যমে আমার কলিজার রগকে ছিড়ে ফেলেছো। এ দ্বারাই স্পষ্ট হয় যে তিনি ইমাম হুসাইন (আ.)কে কতটা বেশি ভালবাসতেন।

কারবালার ঘটনাকে জিবন্ত করে রাখার চেষ্টায় উম্মুল বানিন

উম্মুল বানিন ক্রন্দন এবং শোঁকগাথা দ্বারা কারবালার ঘটনাকে চীরন্তন করে রাখার চেষ্টা করতেন। যেন উক্ত ক্রন্দন এবং শোঁকগাথা দ্বারা ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদতের ঘটনাটি ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে পৌছে যায়। তিনি প্রত্যেকদিন হজরত আব্বাস (আ.) এর সন্তান আব্দুল্লাহ যে কারবালাতে উপস্থিত ছিল তাকে নিয়ে জান্নাতুল বাকিতে যেতেন এবং সেখানে ক্রন্দন করতেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন শ্লোগাণের মাধ্যমে সে যুগে বণি উমাইয়ার হুকুমতের বিরোধিতা করতেন। আর এভাবে তিনি বণি উমাইয়ার কুকর্ম এবং তাদের বাস্তব চেহারাকে সে যুগের লোকজনদের কাছে স্পষ্ট করতেন।

আহলে বাইত (আ.) দৃষ্টিতে উম্মুল বানিন

উম্মুল বানিন এমনভাবে রাসুল (সা.) এর আহলে বাইত (আ.) ভালবাসতেন যে, আহলে বাইত (আ.) এর কাছেও তাঁর একটি বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা রয়েছে। আর তাই বিভিন্ন রেওয়ায়েতে দেখতে পাই যে, হজরত জয়নাব (সা.আ.) কারবালা থেকে ফিরে আসার পরে সর্বপ্রথম উম্মুল বানিনকে তাঁর সন্তানদের শাহাদতের জন্য সমবেদনা জানিয়ে ছিলেন।

এছাড়া হজরত জয়নাব (সা.আ.) তাকে বিভিন্ন ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য তার সমিপে উপস্থিত হতেন।

উম্মুল বানিনের মৃত্যু

তিনি বিভিন্ন কষ্ট ও ব্যাথা সহ্য করে হজরত জয়নাব (সা.আ.) এর ওফাতের পরে ইহলোক ত্যাগ করেন। ইতিহাসে উম্মুল বানিনের মৃত্যুর সঠিক তারিখ সম্পর্কে তেমন সঠিক কিছু উল্লেখ করা হয়নি। তবে ইতিহাসে তার মৃত্যু সম্পর্কিত দুটি মত বর্ণিত হয়েছে। প্রথম: কারো মত অনুযায়ি তিনি সন ৭০ হিজরীতে মারা যান। দ্বিতিয়: কারো মতে তিনি ১৩ই জামাদিউস সানী ৬৪ হিজরীতে মারা যান। তবে প্রসিদ্ধ হচ্ছে দ্বিতিয় মতটি। মৃত্যুর পরে তাকে জান্নাতুল বাকিতে ইমাম হাসান, ফাতেমা বিনতে আসাদের কবরের কাছে দাফন করা হয়। তিনি সাধারণ মৃত্যুতে মারা গেলেও আজও তিনি ‍মুমিনদের অন্তরে অমর হয়ে রয়েছেন। (উম্মুল বানিন সাইয়েদাতুন নেসাইল আরাব, পৃষ্ঠা ১০-৮৪, রিয়াহিনুশ শারিয়াহ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৯৪, মাকাতেলুত তালেবিন, পৃষ্ঠা ৫৬, তানকিহুল মেকাল, খন্ড ৩, অধ্যায় কুনিয়া, পৃষ্ঠা ৭০, মাকতালুল হুসাইন (আ.) আবু মাখনাফ, ১৮১।)

১৯ ই জামাদিউস সানী

হজরত আব্দুল্লাহ ও হজরত আমিনার বিবাহ

১৯শে জামাদিউস সানী তারিখে হজরত আব্দুল্লাহ এর সাথে হজরত আমিনা (সা.আ.) এর বিবাহ সংঘটিত হয়।  উক্ত তারিখে রাত্রি জাগরণ করা হচ্ছে মুস্তাহাব। এছাড়াও  ইতিহাসে অন্যমতও বর্ণিত হয়েছে যেমন: আরাফার রাতে, আরাফার দিনে আসরের সময়। (মানাকেবে আলে আবি তালিব, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৫৩, মুসতাদরাকে সাফিনাতুল বিহার, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৮৫, ইকবাল, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৬২, তৌহফাতুয যায়ের, পৃষ্ঠা ৫৬- ৫৭, বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৯৭, পৃষ্ঠা ১৬৮।)

২০ শে জামাদিউস সানী

হজরত ফাতেমা (সা.আ.)এর জন্মদিবস

বেসাতের দ্বিতিয় বর্ষে ২০শে জামাদিউস সানী হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.) মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, মেরাজের রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা একটি আপেল হজরত মোহাম্মাদ (সা.)কে উপহার স্বরূপ দান করেন। ফেরেস্তারা উক্ত আপেলটির রং, সুগন্ধ এবং সৌন্দর্যতা দেখে মুগদ্ধ হয়ে পড়ে। আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.)কে বলেন: আপেলটি খেয়ে ফেল। যখন রাসুল (সা.) আপেলটিকে অর্ধেক করেন তখন তা থেকে একটি নূর উদ্ভাসিত হয়। তখন হজরত জিব্রাইল (আ.) বলেন: ইয়া রাসুল আল্লাহ! আপনি আপেলটি খেয়ে ফেলুন কেননা উক্ত আপেলটি খাওয়ার পরে আপনার ঔরষে হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.) এর অস্তিত্বের সূচনা হবে এবং তিনি আপনার সন্তান রূপে জন্মলাভ করবে। অন্যমত অনুযায়ি রাসুল (সা.) বেহেস্তি খেজুর খাওয়ার পরে হজরত ফাতেমা রাসুল (সা.)এর অস্তিত্বে আসেন।

১০ই শাবান হজরত জিব্রাইল (আ.) রাসুল (সা.) এর সমিপে উপস্থিত হন এবং হজরত খাদিজার কাছ থেকে ৪০ দিন পর্যন্ত দূরত্ব বজায় রাখুন। রাসুল (সা.) উক্ত রাতগুলোতে তাঁর চাচি হজরত ফাতেমা বিনতে আসাদের বাড়িতে অতিবাহিত করতেন। তিনি প্রত্যেকদিন ইফতারির সময় বেহেস্তের খুরমা বা আঙ্গুর দ্বারা ইফতারি করতেন। ৪০তম দিনে হজরত জিব্রাইল (আ.) রাসুল (সা.) এর কাছে আসেন এবং তাঁকে বলেন:আজকে আপনি হজরত খাদিজার কাছে রাত্রি যাপন করুন কেননা উক্ত রাতে হজরত ফাতেমা (সা.) এর অস্তিত্ব আপনার ঔরষ থেকে হজরত খাদিজা (সা.আ.)এর গর্ভে স্থান্তরিত হবে। যখন কুরাইশের কাফেরদের নারীরা হজরত ফাতেমা (সা.আ.)এর জন্মের সময় হজরত খাদিজা (সা.আ.)কে সহায়তা করতে অস্বীকৃতি জানায়। তখন মহান আল্লাহর নির্দেশে বেহেস্তি নারীরা হজরত খাদিজাকে সহায়তার জন্য দুনিয়ার বুকে আসেন এবং ২০শে জামাদিউস সানী পৃথিবির নারীদের সম্মানকে বৃদ্ধির জন্য  হজরত ফাতেমা (সা.আ.)জন্মগ্রহণ করেন। (দালায়েলুল ইমামা, পৃষ্ঠা ১৪০, কালায়দুন নুহুর, খন্ড শাবান, পৃষ্ঠা ৩৯৩, কাফি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৪৫৮, কাশফুল গুম্মা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৪৪৯, মেসবাহে কাফআমি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৯৭।)

২২ শে জামাদিউস সানী

হজরত আবু বকরের মৃত্যুদিবস

সন ১৩ হিজরী ২২শে জামাদিউস সানী রোজ মঙ্গলবার হজরত আবু বকর ৬৭ বছল বয়সে মদনিায় মৃত্যুবরণ করেন। অন্যমত অনুযায়ি তিনি ২৭শে জামাদিউস সানী তারিখে  মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দুই বছর তিন মাস ২২ দিন খেলাফতের পদে আসিন ছিলেন। মৃত্যুর সময় তিনি বলেন:হায় যদি আমি হজরত ফাতেমার ঘরে নিরীক্ষণের ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ না করতাম।  (মেসবাহে কাফআমি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৯৮, মেসবাহে মোতাহাজজেদ, পৃষ্ঠা ৭৩২, তারিখে ইয়াকুবি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৫৮, মুসনাদে আহমাদ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৫৫, শারহে নাহজুল বালাগা, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৬, ২৯, ৩৪।)

২৬ শে জামাদিউস সানী

মিশর বিজয়

সন ২০ হিজরীর ২৬শে জামাদিউস সানী তারিখে মুসলমানরা মিশরকে জয় করে।

২৭ শে জামাদিউস সানী

সুলতান আলী বিন মোহাম্মাদের শাহাদত

সন ১১৬ হিজরীর ২৭শে জামাদিউস সানী আবুল হাসান সুলতান আলী বিন মোহাম্মাদ বাকের (আ.) কে ইরানের কাশানে শহীদ করা হয়। ইমাম জাফর সাদিক (আ.) তাকে সেখানে প্রেরণ করেন এবং তার যাবতিয় খরচাদি তিনিই বহন করতেন। কাশানে আগমণের সময় প্রায় ৬ হাজার আহলে বাইতের অনুসারী তাঁকে স্বাগতম জানায়। একদা শত্রুপক্ষ সুলতান আলী এবং তাঁর অনুসারীদের উপরে হামলা করে এবং তাঁকে সহ প্রায় ১০০ জনকে শহীদ করে।

আয়াতুল্লাহ মারআশি নাজাফির (রহ.) বলেন: আমি যখন কবরের আসল অংশে যায় তখন দেখতে পাই যে, এখনও তাদের দেহ পূর্বের অবস্থার ন্যায় রয়েছে। (রওযাতুল জান্নাত, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ২১২, মারাকেদুল মাআরেফ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৭৯, ৮২।)

২৮ শে জামাদিউস সানী

১. হজরত হালিমা সাদিয়ার কাছে রাসুল (সা.)

২৮শে জামাদিউস সানী তারিখে আব্দুল মোত্তালেব হজরত মোহাম্মাদ (সা.) কে হালিমা সাদিয়ার কাছে প্রতিপালনের জন্য দান করেন। (ওকায়েউশ শুহুর, পৃষ্ঠা ১১৩।)

২. ইমাম আলী নাক্বি (আ.) এর শাহাদত

একটি মত অনুযায়ি ইমাম আলী নাক্বি (আ.) ২৫৪ হিজরীতে ২৮ শে জামাদিউস সানী, ৪০ অথবা ৪১ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। তবে প্রসিদ্ধ এবং  অন্য মতানুসারে তিনি  ৩ রা রজব শাহাদত বরণ করেন। 

২৯ শে জামাদিউস সানী

১. উম্মে কুলসুম (সা.আ.) এর ওফাত দিবস

উম্মে কুলসুম (সা.আ.) কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার সময় কারবালাতে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর পিতা ছিলেন হজরত আলী (আ.) এবং মাতা ছিলেন হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.)। তিনি হজরত অউন বিন জাফর তৈয়ারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এছাড়া ইতিহাসে তাঁর বিবাহ সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে তা হচ্ছে ইসলামের শত্রুদের ষড়যন্ত্রমূলক প্রতিবেদন। তিনি কারবালা থেকে ফিরে আসার ৪ মাস পরেই ২৯শে জামাদিউস সানী মদীনাতে মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে তার কবর শরিফ মদীনাতে রয়েছে। তবে ইতিহাসের অন্যমত অনুযায়ি তিনি ২১শে জামাদিউস সানীতে মৃত্যুবরণ করেন। (রিয়াহিনুশ শারিয়া, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪৫, ওয়াকায়েউশ শুহুর, পৃষ্ঠা ১১০, আয়ানুশ শিয়া, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪৮৪, বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৪২, পৃষ্ঠা ৭৪, তাযকেরাতুল খাওয়াস, পৃষ্ঠা ২৮৮।)

২. সৈয়দ মোহাম্মাদ বিন নাক্বি (আ.)এর মৃত্যুদিবস

সৈয়দ মোহাম্মাদ বিন আলী নাক্বি (আ.) ২৫২ হিজরী ২৯শে জামাদিউস সানী তারিখে ইরাকের সামেরা নামক এলাকায় মারা যান। অনেকেই মনে করতো যে ইমাম মোহাম্মাদ তাক্বি (আ.) এর পরে তিনি হবেন ইমাম। কিন্তু ইমাম মোহাম্মাদ তাক্বি (আ.) জিবদ্দশায় তিনি মারা যান। বর্তমানে সামেরা থেকে প্রায় ৩৬ কি:মি: দূরে “বালাদ” নামক স্থানে তাঁর কবর মোবারক রয়েছে। (মারাকেদুল মাআরেফ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৬২, কাফি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩২৭, ওয়াসায়েলুশ শিয়া, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৭৪, হাদায়েকুন নাযেরা, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৫২।)

জামাদিউস সানী মাসের শেষ তারিখ

১. ইব্রাহিম বিন মালিকে আশতারের শাহাদত

জামাদিউস সানী মাসের শেষ তারিখে মালিকে আশতারের পুত্র ইব্রাহিম সন ৭১ হিজরীতে শাহাদত বরণ করেন। ইব্রাহিম বিন মালিকে আশতার মোখতারের বিভিন্ন পদক্ষেপে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। (মারাকেদুল মাআরেফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৭, তারিখে সামেরা, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৪২।)

২. যাতুস সালাসেল নামক যুদ্ধ সংঘটিত হয়

সন ৮ হিজরীর জামাদিউস সানী মাসের শেষ তারিখে যাতুস সালাসেল নামক যুদ্ধটি সংঘটিত হয়। তবে ইতিহাসে উক্ত যুদ্ধটি জামাদিউল আওয়াল মাসে সংঘটিত হয়েছিল বলেও উল্লেখিত হয়েছে। (তাবাকাতে কুবরা, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩১, তাম্বিহুল ইশরাফ, পৃষ্ঠা ২৩১, শারহে মুসলিম, পৃষ্ঠা ১৫৩।)

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন