হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.)’এর অবিবাহিত থাকার কারণ
হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.)’এর অবিবাহিত থাকার কারণ
এস, এ, এ
প্রত্যেক নর নারীর প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরে বিবাহ করা হচ্ছে রাসুল (সা.)’এর সুন্নাত। কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্নে সঞ্চার হতে পারে তাহলে কেন ইমাম কাযিম (আ.) এর কন্যা হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.) বিবাহ করেননি? লেখক, গবেষক এবং ঐতিহাসিকগণ উক্ত প্রশ্নের একাধিক উত্তর তাদের পুস্তকে দিয়েছেন।
১- ঐতিহাসিক ইয়াকুবি তার গ্রন্থে হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.) এর বিবাহ না করার কারণ এভাবে উল্লেখ করেছেন:
ইমাম মুসা কাযিম (আ.) তাঁর কন্যাদেরকে ওসিয়াত করেন যে, তারা যেন বিবাহ না করে। আর এ কারণে তিনি বিবাহ করেননি।
- ইয়াকুবির উক্ত কথাটি হচ্ছে ভিত্তিহিন,অযুক্তিক এবং আহলে বাইত (আ.)দের সুন্নাতের বিরোধি একটি বিষয়। কেননা এটা কোন মতেই সম্ভব না যে, আহলে বাইত (আ.)গণ রাসুল (সা.)’এর সুন্নাতের বিরোধিতা করবেন। কেননা রাসুল (সা.) বিবাহ সম্পর্কে একাধিক হাদিস বর্ণনা করেছেন। আর বিবাহের বিষয়টি কোন মতেই সঠিক না কেননা কখনই ইমমাগণ (আ.) তার সন্তানদের হককে নষ্ট করবেন না। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে ইয়াকুবি’এর উক্ত মতামতটি হচ্ছে সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহিন ও অযুক্তিক।
- কয়েক শত শতাব্দির পরেও ইমাম কাযিম (আ.)’এর ওসিয়ত নামাটি ইতিহাসের পাতায় আজও অবশিষ্ট রয়েছে। মরহুম কুলাইনি (রহ.) তার গ্রন্থ আল কাফিতে ইমাম মুসা কাযিম (আ.)’এর উক্ত ওসিয়ত নামাটি উল্লেখ করেছেন। ইমাম কাযিম (আ.) তাঁর সকল সন্তানদেরকে ইমাম রেযা (আ.)’এরর অনুসরণ করার নির্দেশ দান করেছেন এবং তাঁর সন্তানদেরকে উদ্দেশ্যে করে বলেছেন: তোমরা কেউ ইমাম রেযা (আ.)’এর অনুমতি ব্যাতিত আমার কন্যাদের বিবাহ দিবে না। কেননা তিনি তার বংশের ব্যাক্তিদের সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি অবগত।
- অন্য এক স্থানে উক্ত ওসিয়তটি এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, ইমাম কাযিম (আ.) তাঁর সন্তানদেরকে উদ্দেশ্যে করে বলেন যে, তোমরা আমার মেয়েদেরকে তাদের সৎ ভাই, শাষকদের এবং ইমাম রেযা (আ.)’এর অনুমতি ব্যাতিত বিবাহ দিবে না। আর যদি তোমরা আমার উক্ত নির্দেশের বিরূদ্ধে পদক্ষেপ নাও তাহলে তোমাদের উক্ত পদক্ষেপ হবে আল্লাহ এবং রাসুল (সা.)’এর বিরূদ্ধে। কেননা ইমাম রেযা (আ.) হচ্ছেন তার বংশের ব্যাক্তিদের বিবাহের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি অবগত।
- ইমাম মুসা কাযিম (আ.)’এর উক্ত ওসিয়ত নামা থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট তা হচ্ছে যে ইমাম মুসা কাযিম (আ.)’এর সন্তানরা যেন সকল কাজেই ইমাম রেযা (আ.) আজ্ঞাবহ থাকে। আর উল্লেখিত বর্ণনার দ্বারা বিষয়টি স্পষ্ট যে, ইয়াকুবি’এর মতটি হচ্ছে ভিত্তিহিন এবং অযুক্তিক।
২- ইমাম কাযিম (আ.)’এর কন্যাদের বিবাহ সম্পর্কে দ্বিতিয় মত হচ্ছে:
- তাদের সাথে বিবাহের জন্য কোন উপযুক্ত ছেলে পাওয়া যায়নি আর এ কারণে তাদের বিবাহ হয়নি। উক্ত মতটিও ইমাম (আ.)’দের চরিতের বিপরিত। কেননা ইমাম কাযিম এবং রেযা (আ.) কখনই এমন ধরণের কাজ করবেন না যে, তাদের সম মর্যাদার ছেলে না পেলে তার মেয়ে বা বোনদের বিবাহ দিবেন না। বরং তাঁদের দৃষ্টিতে মুমিন নর-নারি হচ্ছে একে অপরের জন্য উপযুক্ত পাত্র-পাত্রি। ইমাম কাযেম (আ.) বলেছিলেন যে, যদি তোমরা এমন কোন দ্বিনদার এবং তাকওয়াধারি ব্যাক্তিকে খুঁজে পাও তাহলে তোমরা নিজেদের বোনদেরকে তাদের সাথে বিবাহ দিয়ে দিও।
- ইমাম কাযিম (আ.)’এর যুগে ইমাম হাসান (আ.)’এর ইমাম হুসাইন (আ.)’এর বংশের উপযুক্ত সন্তানেরা উপস্থিত ছিল। তার ছিলেন ইমাম কাযিম (আ.)’এর কন্যাদের উপযুক্ত পাত্র। কিন্তু সে যুগে হারুনর রশিদ এমন শ্বাসরূদ্ধকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছিল যে কেউ যেন ইমাম কাযিম (আ.)’এর কন্যাদেরকে বিবাহ করাতো দূরের কথা তার ঘরে যাতায়াত করতেও ভয় করতো।
উক্ত কথার উত্তর এভাবেও দেয়া যেতে পারে যে:
- ফাতেমা কুবরা অর্থাৎ হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.) ১৭৩ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। ঐতিহাসিকদের মতে তিনি ছিলেন ইমাম কাযিম (আ.)’এর কন্যাদের মধ্যে জৈষ্ঠ কন্যা। ইমাম কাযিম (আ.) শাহাদত বরণ করেন ১৮৩ হিজরিতে। সুতরাং তাঁর বাবার শাহাদতের সময় তাঁর বয়স ছিল ১০ বছর। সুতরাং ইমাম কাযিম (আ.)’এর অন্যান্য কন্যারা তাঁর চেয়ে বয়সে ছোট ছিলেন।
পরিশেষে আমরা উক্ত বিষয় সম্পর্কে এভাবে বলতে পারি যে, অনেক ঐতিহাসিকগণ ইমাম (আ.)’দের সন্তানদের জন্ম মৃত্যু তারিখ সঠিকভাবে উল্লেখ করেননি। এমনকি স্বয়ং ইমাম (আ.)দের জন্ম ও মৃত্যু তারিখ নিয়েওে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে এবং হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.)’এর বিবাহের ঘটনা সম্পর্কিত কোন তথ্য ইতিহাসে পাওয়া যায়নি। আর তাই এক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি যে, হজরত ফাতেমা মাসুমার বিবাহ হয়নি।
সূত্রঃ
১- জারয়েয়ি এ দারিয়া, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫১৬।
২- মুসতাদরাকে সাফিনা, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ২৫৭।
৩- কিতাবে কুম, পৃষ্ঠা ২১৩।
৪- রায়াহিনুশ শারিয়াহ, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৩২।
৫- কামেলুয যিয়ারাত, পৃষ্ঠা ৫৩৬।
৬- বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৪৮, পৃষ্ঠা ৩০৭, খন্ড ৬০, পৃষ্ঠা ২১৬।
৭- যুবদাতুত তাসানিফ, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ১৫৯।
৮- আওয়ালেমুল উলুম, খন্ড ২১, পৃষ্ঠা ৩৫৩।
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন