বাশার আল-আসাদকে ছাড়া সিরিয়ার চলমান সংকট সমাধান সম্ভব নয়:তুরস্কের উপ-প্রধানমন্ত্রী
বাশার আল-আসাদকে ছাড়া সিরিয়ার চলমান সংকট সমাধান সম্ভব নয়:তুরস্কের উপ-প্রধানমন্ত্রী
তুরস্কের উপ-প্রধানমন্ত্রী মেহমেত সিমসেকে বলেছেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ছাড়া দেশটির চলমান সংকট সমাধান সম্ভব নয়। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের অবকাশে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি। সেমসেক বলেন, তুরস্কের পক্ষে আর বাশার আসাদকে বাদ দিয়ে সিরিয়া সংকট সমাধানের দাবি তোলা সম্ভব নয়।
কিন্তু বিশ্বের নির্ভরযোগ্য বেশিরভাগ গণমাধ্যমে তুর্কি উপ-প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য প্রকাশিত হওয়ার পর সেমসেক তা অস্বীকার করে বলেন, একটি বিদেশি গণমাধ্যম তার বক্তব্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে। তিনি তুরস্কের আনাতোলি বার্তা সংস্থাকে বলেন, রাশিয়ার স্পুৎনিক বার্তা সংস্থা তার বক্তব্যকে সঠিকভাবে তুলে ধরেনি। মেহমেত সেমসেক বলেন, তিনি দাভোসে বলেছিলেন, “সিরিয়ার মানবিক বিপর্যয়ের জন্য যদি কাউকে দায়ী করতে হয় তাহলে তিনি বাশার আসাদ। আমি আরো বলেছি, যে দেশের ক্ষমতার শীর্ষে আসাদ রয়েছেন সেদেশের সরকারকে মেনে নেয়া তুরস্কের পক্ষে সম্ভব নয়।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তুর্কি সরকার এই প্রথম সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সম্পর্কে এ ধরনের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেননি। উদাহরণ হিসেবে তারা গত বছরের আগস্টে রাশিয়ার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের মস্কো সফরের কথা উল্লেখ করছেন। ওই সফরে এরদোগান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তার সরকার সিরিয়া সংকট সমাধানের জন্য প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু এর কিছুদিনের মধ্যেই তুর্কি সরকার সে প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসে এবং সিরিয়ার ব্যাপারে আঙ্কারার আগের নীতি বাস্তবায়ন করতে থাকে।
এদিকে, আগামী সোমবার কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় শুরু হতে যাচ্ছে সিরিয়া বিষয়ক শান্তি আলোচনা। বিদেশি মদদপুষ্ট জঙ্গিদের বাদ দিয়ে সিরিয়ার সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সরাসরি আলোচনা পুনরুজ্জীবিত করা হবে আস্তানা বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য।
তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভুলত চাভুসওগ্লু এ বৈঠক সম্পর্কে ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, আস্তানা বৈঠকে সিরিয়ার সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে মুখোমুখি সংলাপের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি দেশটিতে চলমান যুদ্ধবিরতিকে স্থায়ী রূপ দেয়ারও চেষ্টা করা হবে।
বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, তুর্কি উপ-প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদ সম্পর্কে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেয়ার পরও বলা যায়, তিনি সিরিয়ায় মানবিক বিপর্যয়ের যে কথা বলেছেন, সেজন্য দায়ী আঙ্কারাসহ আরো কিছু পশ্চিমা দেশ। প্রকৃতপক্ষে তুরস্ক, আমেরিকা, কিছু ইউরোপীয় ও আরব দেশের অগঠনমূলক হস্তক্ষেপের কারণে সিরিয়ার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধ করা যায়নি বরং উল্টো তা মধ্যপ্রাচ্যের আরো কিছু দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ সম্পর্কে ব্রিটিশ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার রবার্ট ফিস্ক এরদোগানের মস্কো সফরের পর এক নিবন্ধে লিখেছিলেন, পারস্য উপসাগরীয় কিছু ধনকুবেরের কাছ থেকে নেয়া অর্থের বিনিময়ে সারাবিশ্ব থেকে আসা জঙ্গিদেরকে অস্ত্রসহ সিরিয়ায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে এরদোগান সরকার। সিরিয়া সরকারের প্রতি তুর্কি সরকারের এই অন্যায় আচরণের কারণে এখন পর্যন্ত লাখ লাখ সিরিয় নাগরিক নির্মমভাবে নিহত হয়েছে।
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন