গ্রানাডায় মার্কিন আগ্রাসনের পটভূমি ও গতি-প্রকৃতি
গ্রানাডায় মার্কিন আগ্রাসনের পটভূমি ও গতি-প্রকৃতি
'বিজয়ীরাই ইতিহাস লেখেন'- এই প্রবাদ বাক্যটি ল্যাটিন আমেরিকার দেশ গ্রানাডার সংক্ষিপ্ত সময়ের বিপ্লব, গৃহযুদ্ধ ও সেখানে মার্কিন আগ্রাসনের জন্য অত্যন্ত মানানসই। গ্রানাডার স্বৈরশাসক এরিক গ্যাইরি ছিলেন মার্কিন সরকারের মিত্র। ১৯৭৯ সালের মার্চ মাসে এক বিপ্লবের মাধ্যমে পদচ্যুত হন গ্যাইরি।
'নিউজুয়েল মুভম্যান্ট' নামের একটি আন্দোলনের সদস্যরা এই বিপ্লব ঘটান। গ্যাইরি এ সময় জাতিসংঘে ছিলেন। মার্কিন সরকার কখনও রক্তপাতহীন এই অভ্যুত্থানকে ভুলতে পারেনি। বিপ্লবীদের প্রভাবশালী নেতা ও বিপ্লবী সরকারের প্রধান মরিস বিশপ কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিডেল ক্যাস্ট্রোর দিকে ঐক্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি গ্রানাডার পুনর্গঠন ও উন্নয়নের কাজও শুরু করেন। 'নিউজুয়েল মুভম্যান্ট' বা নবরত্ন আন্দোলন ব্রিটিশ সংসদীয় পদ্ধতি বাতিল করেন। এই পদ্ধতি ছিল ক্যারিবিয় অঞ্চলে ব্রিটেনের সাবেক উপনিবেশগুলোতে প্রতিষ্ঠিত শাসন-পন্থা। বিপ্লবীরা স্থানীয় নতুন সংস্থাগুলোকে সংসদের স্থলাভিষিক্ত করেন। এইসব সংস্থার নেতারা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হতেন। বিপ্লবীরা কৃষি খাতে ছোট ছোট সমবায় পদ্ধতি চালু করেন এবং বেশির ভাগ পরিবারের কাছেই কৃষি জমি ন্যস্ত করেন। এ ছাড়াও তাদেরকে দেয়া হতো বীজ, কাজে যন্ত্রপাতি ও আশপাশের দ্বীপ দেশগুলোতে ফল বিক্রির ক্ষেত্রে সহায়তা।
গ্রানাডার বিপ্লবী সরকার নানা ধরনের শাক-সবজি ও ফলের রস উৎপাদন এবং সেগুলোর টিনজাতকরণের জন্য একটি কারখানা চালু করে। এইসব উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের ফলে গ্রানাডায় বেকারত্ব ৪৯ শতাংশ থেকে কমে ১৪ শতাংশে নেমে আসে। এ ছাড়াও বিপ্লবী সরকার শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতের উন্নয়নকে জোরদার করে। কিউবার বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য-কেন্দ্রগুলোর পুনর্গঠন বা আধুনিকায়নে সহায়তা করে এবং চিকিৎসা ও প্রশিক্ষণ সেবার খাতও গ্রানাডার বিপ্লবী সরকারের হাতে ন্যস্ত করে। শিক্ষা কেবল প্রাথমিক শিক্ষাতেই সীমিত থাকেনি, বরং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গ্রানাডার প্রকৃত ইতিহাস শেখানো হতে থাকে। দাস প্রথার বিরুদ্ধে গ্রানাডার জনগণের সংগ্রামসহ ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তাদের প্রচেষ্টা ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করে এইসব বিষয়ে গর্বের অনুভূতি জাগিয়ে তোলাই ছিল এই উদ্যোগের লক্ষ্য। গ্রানাডার বিশাল অভিবাসী বা মুহাজির সমাজও ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে বিপ্লবের সহায়তায় এগিয়ে আসেন। তারা গ্রানাডায় নতুন বিমান-বন্দর নির্মাণের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে ও সরকারি বন্ড বা ঋণপত্র কিনে এই প্রকল্পে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
সেই যুগে ল্যাটিন আমেরিকা ও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের পর্যটকরা গ্রানাডার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য প্রথমে হয় ত্রিনিদাদ অথবা বার্বাডোজে আসতো বিমানে চড়ে। এরপর অন্য ফ্লাইটে চড়ে আসতো গ্রানাডায়। আর এ জন্যই গ্রানাডার বিপ্লবী সরকার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। এই প্রকল্পের জন্য গ্রানাডা ব্রিটেনের মার্গারেট থেচার সরকারের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য পেয়েছিল। কিন্তু থ্যাচারের মিত্র ও তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান সে সময় এ ঘোষণা দিয়ে বসেন যে, আমেরিকা তার ‘খোলা উঠানে’ আরেকটি কিউবা বা দ্বিতীয় কিউবার অস্তিত্ব সহ্য করবে না। এভাবে বিশ্ব-মোড়ল হওয়ার দাবিদার মার্কিন সরকার গ্রানাডার বিপ্লবী সরকারকে উৎখাতের সিদ্ধান্তের কথা মোটামুটি সবার কাছে স্পষ্ট করে দেয়।
রিগান গ্রানাডাকে আমেরিকার খোলা উঠান বলে দাবি করায় গ্রানাডার বিপ্লবী সরকার ও জনগণ ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং ক্যারিবিয় অঞ্চলের সরকারগুলোও ক্রুদ্ধ হয়। তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ ধরনের দাবিকে অবমাননাকর বলে প্রতিবাদ জানায়।
এরপর মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে শুরু হয় শীতল যুদ্ধ। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ প্রচারণার যুদ্ধ জোরদার করে। সিআইএ’র প্রচারণায় বলা হয় যে গ্রানাডায় কোনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের দরকার নেই এবং সম্ভবত এই বিমানবন্দর রাশিয়া ও কিউবার সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু ১৯৮৩ সালে মার্কিন এই দাবির অসত্যতা প্রমাণিত হয় যখন গ্রানাডার প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে মার্কিন সংসদ বা প্রতিনিধি পরিষদের তৎকালীন সদস্য রন ডিলামস তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে গ্রানাডা সফর করেন।
ডিলামস এ প্রসঙ্গে বলেছেন: ‘আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ ও গ্রানাডার নির্মিয়মান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংক্রান্ত বিতর্ক ও বিশ্লেষণের আলোকে আমার বক্তব্য বা মত হল এটা যে, চলমান এই প্রকল্পটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি পদক্ষেপ এবং এর কোনো সামরিক উদ্দেশ্য নেই। মার্কিন সরকার এই বিমানবন্দরকে তার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে যদি দাবি করে থাকে তাহলে তা একটি অর্থহীন ও অন্তঃসারশূন্য দাবি ছাড়া অন্য কিছুই নয়।’
মার্কিন প্রচার মাধ্যমগুলো এ প্রচারণাও শুরু করে যে গ্রানাডার সরকার সেদেশে রাশিয়ার পারমানবিক সাবমেরিনের একটি ঘাঁটি নির্মাণেরও অনুমতি দিয়েছে। আর এই অজুহাতে রিগান সরকার ১৯৮১ সালে পোর্টোরিকোয় সামরিক মহড়া চালায় এবং গ্রানাডা ও আশপাশের দ্বীপগুলোয় নৌ হামলা চালানোর মহড়াও সম্পন্ন করে। ১৯৮৩ সালে গ্রানাডার সরকারের ভেতরে ক্ষমতার লড়াই দেখা দেয়। এ লড়াইয়ে পদচ্যুত ও নিহত হন বিপ্লবী প্রধানমন্ত্রী মরিস বিশপ।
এ অবস্থায় মার্কিন সরকার ১৯৮৩ সালের ২৫ অক্টোবর গ্রানাডায় সামরিক আগ্রাসন শুরু করে। বেলা ভোর ৫টায় শুরু হয় এই অভিযান। মার্কিন সেনারা গ্র্যান্টলি অ্যাডামস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করে ও বার্বাডোস দ্বীপের দিকে রওনা হয়। সূর্য ওঠার আগেই তারা গ্রানাডায় পৌঁছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধে পরাজয়ের পর এটাই ছিল মার্কিন সেনাদের বড় ধরনের প্রথম সামরিক অভিযান।
গ্রানাডায় মার্কিন সেনা অভিযানে ফলে সেখানে কয়েকদিন ধরে যুদ্ধ চলে। মার্কিন সেনারা দেড় হাজার ও ৭০০ কিউবান সেনার মুখোমুখি হয়। মার্কিন সরকারি সূত্রগুলো জানায় যে, কোনো কোনো প্রতিরোধ-যোদ্ধা আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন এবং তারা খুব ভালোভাবে অবস্থান বা পজিশন নিয়েছিলেন। তারা এতই বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন যে মার্কিন সরকার ২৬ অক্টোবর রাতেই ওই অঞ্চলে আরো দুই ব্রিগেড সেনা তলব করে। প্রচণ্ড সংঘর্ষে ১৯ মার্কিন সেনা নিহত ও ১৯৬ জন আহত হয়। নিহত হয় ২৪ জন বেসামরিক নাগরিক। এই বেসামরিক নাগরিকদের অনেকেই একটি মানসিক হাসপাতালের ওপর মার্কিন বোমা বর্ষণের শিকার হয়ে নিহত হয়।
মার্কিন সরকার গ্রানাডায় হামলার অজুহাত দিতে গিয়ে দাবি করে যে, এ অঞ্চলের সরকারগুলোই এই হামলা চালানোর অনুরোধ জানিয়েছিল এবং গ্রানাডায় আমেরিকার ১০০ থেকে ১৫০ জন মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রকে অপহরণের ফলে তাদের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। অথচ ১৯৮৩ সালের ২৫ অক্টোবর রাতেই ‘নিউজউইক নাইটলাইন’ অনুষ্ঠানের সংবাদ উপস্থাপক টড ক্যাপেল গ্রানাডায় মার্কিন মেডিক্যাল ছাত্রদের কাছে টেলিফোন করে তাদের অবস্থা জানতে চাইলে তারা নিরাপত্তা অনুভব করছে বলে জানিয়েছিল। তারা আরও বলেছিল যে কোনো ধরনের বিপদ বা নিরাপত্তাহীনতার হুমকিও তারা দেখছে না। এমনকি তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ‘জেমস বুডিট’ও গ্রানাডায় মার্কিন হামলার দুই দিন আগে এক বিবৃতিতে দাবি করেন যে, ‘গ্রানাডায় পড়তে আসা মার্কিন মেডিক্যাল ছাত্ররা কোনো ধরনের হুমকির মুখে নেই এবং এ ধরনের দাবি পুরোপুরি বানোয়াট।’
এ ঘটনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, অন্য অনেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের মতই সত্য ও বাস্তবতার প্রতি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ ছিল না। তিনি মার্কিন নাগরিকদের কাছে এমন ভাব দেখিয়েছেন যে, গ্রানাডা রাশিয়া ও কিউবারই একটি উপনিবেশ মাত্র এবং দেশটি সন্ত্রাসবাদ রপ্তানির চেষ্টা করছে ও গণতন্ত্রের ওপর আঘাত হানার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বলে মার্কিন সরকার সময়মত গ্রানাডার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে!
বিশিষ্ট মার্কিন চিন্তাবিদ নোয়াম চমস্কি ১৯৮৩ সালে গ্রানাডায় ওয়াশিংটনের সামরিক আগ্রাসন প্রসঙ্গে বলেছেন: 'সেই গরুর রাখাল তথা রিগান কয়েক ডজন নির্মাণ শ্রমিকের প্রতিরোধ গুড়িয়ে দেয়ার জন্য ছয় হাজার স্পেশাল সেনা পাঠান এবং এরপর ঘোষণা করেন যে এখন আমরা আগের চেয়েও বেশি নিরাপত্তার অধিকারী।'
চমস্কি এ সম্পর্কে দু'টি দিক সূক্ষ্মভাবে তুলে ধরে বলেছেন: 'প্রথমত: মার্কিন নীতি-নির্ধারকদের গৃহীত একটি প্রচলিত প্রথা হল, জনগণকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সব সময় বিদেশী বিপদকে বড় করে ও জোর দিয়ে তুলে ধরা হয় এবং দ্বিতীয়ত তারা গণমাধ্যমকে এ ধরনের নীতি বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন।'
গ্রানাডায় মার্কিন সামরিক আগ্রাসনের কিছুকাল পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করে। এ প্রস্তাবের পক্ষে পড়ে ১০৮টি ভোট এবং বিপক্ষে পড়ে মাত্র ৯টি ভোট। প্রস্তাবে গ্রানাডায় মার্কিন সামরিক হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখণ্ডতার লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করা হয়।
চীন গ্রানাডায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপকে মার্কিন কর্তৃত্বকামীতার প্রকাশ্য দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করে। কোনো কোনো সরকার এই হস্তক্ষেপকে বর্বরতার যুগে ফিরে যাওয়ার মত নিকৃষ্ট কাজ বলে নিন্দা জানায়। কোনো কোনো সরকার এটাও বলেছে যে, এই আগ্রাসন চালিয়ে মার্কিন সরকার এমন কয়েকটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে যে ওয়াশিংটন নিজেই এইসব চুক্তির সদস্য। একই ধরনের প্রস্তাব জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদেও উত্থাপন করা হয় এবং এই প্রস্তাবে পরিষদের বেশিরভাগ সদস্যের সমর্থন থাকা সত্ত্বেও মার্কিন সরকার তাতে ভেটো দেয়।
গ্রানাডায় মার্কিন দখলদার সেনাদের কর্তৃত্ব ও দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার পর মার্কিন সরকারের মনোনীত সেখানকার সেবাদাস সামরিক সরকার বিপ্লবী নেতাদের একটি আদালতে হাজির করে প্রহসনের বিচার চালায়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বা এআই এই আদালতকে 'অন্যায্য ও পক্ষপাতদুষ্ট' বলে অভিহিত করেছে। এই আদালতে গ্রানাডার যে ১৭ বিপ্লবী নেতার বিচার করা হয়েছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদেরকে 'শীতল যুদ্ধের সর্বশেষ বন্দি' বলে অভিহিত করে। এই উপমার মাধ্যমে সংস্থাটি মার্কিন ও সোভিয়েত শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতাকালীন সংঘাতগুলো ও অমূলক মার্কিন আশঙ্কার কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। এ ধরনের কৌশলের মাধ্যমে মার্কিন সরকার এখনও মার্কিন জনগণ ও জনমতকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ইসলাম সম্পর্কে মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে মিথ্যাচার ও আতঙ্ক প্রচার করা এবং সন্ত্রাসবাদ ও অন্য আরো অনেক বিষয় সম্পর্কে আতঙ্ক তুলে ধরাই এর কিছু জ্বলন্ত প্রমাণ।
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন