শিয়া মাযহাবের ভাবমূর্তি নষ্টের ক্ষেত্রে গোলাতদের ষড়যন্ত্র- ১

“غلات” গোলাত’এর শাব্দিক  অর্থ হচ্ছে অতিরঞ্জিত, মাত্রাধিক্য, নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করা। কেননা আরবি ভাষায় কোন জিনিষের দাম অতিরিক্তভাবে বেড়ে যাওয়াকে “غال” বলা হয়। (আল মুফরাদাত ফি এরাবিল কোরআন, পৃষ্ঠা ৩৬৫, আল মোজামুল ওয়াসেত, পৃষ্ঠা ৬৯০) বিভিন্ন ফেরকা পরিচিত

শিয়া মাযহাবের ভাবমূর্তি নষ্টের ক্ষেত্রে গোলাতদের ষড়যন্ত্র- ১

এস, এ, এ

“غلات” গোলাত’এর শাব্দিক  অর্থ হচ্ছে অতিরঞ্জিত, মাত্রাধিক্য, নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করা। কেননা আরবি ভাষায় কোন জিনিষের দাম অতিরিক্তভাবে বেড়ে যাওয়াকে “غال” বলা হয়। (আল মুফরাদাত ফি এরাবিল কোরআন, পৃষ্ঠা ৩৬৫, আল মোজামুল ওয়াসেত, পৃষ্ঠা ৬৯০)

বিভিন্ন ফেরকা পরিচিতি মূলক গ্রন্থ সমূহে গোলাতের সংজ্ঞা এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, যারা ইমামদেরকে খোদার সমপর্যায় অথবা খোদার রূহ ইমামরূপে দেহধারণ করেছে বলে মনে করে তাদেরকে গোলাত বলা হয়। (আল মেলাল ওয়ান নেহাল, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৭৬, ১৭৭, লোহাত নামে দেহখোদা, পৃষ্ঠা ১৬৭৭২)

শাহরিসতানি’র মতে: গোলাতগণ বিশ্বাস পোষণ করে যে, কোন এক ইমামরূপে খোদা দেহধারণ করেছেন। আবার অনেক সময় তারা মনে করে যে খোদাকেও হয়তো সৃষ্টি করা হয়েছে যেমনটি ইয়াহুদি, নাসারা এবং খৃষ্টানরা মনে করে থাকে যে, খোদা পুনরায় কোন রূপে দেহধারণ করবেন বা করেছেন।

অনেকেই গোলাতদেরকে শিয়াদের সাথে তুলনা করে থাকে। কিন্তু আমরা ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টিপাত দেখতে পাই যে, এমন কিছু দল ছিল যারা শিয়া ছিল না কিন্তু তারা গোলাত মতাদর্শের ছিল যেমন আব্বাসিয় খলিফা মনসুর এরূপ মতাদর্শেকে বিশ্বাসি ছিলেন।(আল মাকালাত ওয়াল ফেরাক, পৃষ্ঠা ৬৯)

গোলাত মতাদর্শের আবির্ভাব:

কাশি তার রেজাল গ্রন্থে ইমাম সাদিক (আ.) থেকে রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন যে, এক ইয়াহুদি ব্যাক্তি যার নাম ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা সে ছিল গোলাত মতাদর্শের প্রতিষ্ঠাতা। এক সময় সে ছিল ইয়াহুদি কিন্তু পরে সে নিজেকে মুসলমান বলে পরিচয় দেয়। কিন্তু যখন সে ইয়াহুদি ছিল তখন সে ইউসা বিন নুন সম্পর্কে অতিরঞ্জিতমুলক বিশ্বাস পোষণ করতো এবং যখন সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তখন সে ইমাম অলি (আ.)সম্পর্কে অতিরঞ্জিতমূলক কথাবার্তা বলতে থাকে।(এখতিয়ার মারেফাতুর রেজাল, পৃষ্ঠা ১০৬, ১০৭, ফেরাকুশ শিয়া, পৃষ্ঠা ২৪, ২৫)

অনেকে এ ধরণের মতাদর্শকে শিয়াদের সাথে সম্পৃক্ত করে দেয়ার চেষ্টা করে যা আসলেই ঠিক না বিশেষত সাবাবিয়ে ফেরকা। বলা হয় যে, “সাবাবিয়া” ফেরকার প্রতিষ্ঠাতা ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা অথচ আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা হচ্ছে ইতিহাসের একটি বানানো কাহিনি। আর সাইফ বিন উমর হচ্ছে তাদের মধ্যে একজন যে আব্দুল্লাহ ইবনে সাবার মতো বানোয়াট ঘটনাকে বর্ণনা করেছে। দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে তাবরিও কোন প্রকারের গবেষণা ছাড়া উক্ত বিষয়টিকে বর্ণনা করেছেন এবং অন্যান্যারাও তার থেকে বর্ণনা করেছেন।

ইমাম আলি (আ.)’এর যুগে গোলাত মতাদর্শিরা জিবন যাপন করতো। ইমাম আলি (আ.) তাদের সম্পর্কে বলেছেন: দুই ধরণের মানুষ আমার সম্পর্কে অতিরঞ্জিত কিছু দৃষ্টিভঙ্গি রাখার কারণে ধ্বংস হবে এক আমার ভক্তরা যারা আমার সম্পর্কে অতিরঞ্জিত মূলক কথাবার্তা বলে থাকে এবং দুই আমার শত্রুরা যারা ইয়াহুদিদের বুলি বলে বেড়ায়। যেহেতু ইমাম আলি (আ.)’এর যুগে গোলাতরা জিবন যাপন করতো কিন্তু “সাবাবিয়া” ফেরকার কোন অস্তিত্ব ছিল না। আর এ কারণেই সাবাবিয়া ফেরকাকে আব্দুল্লাহ ইবনে সাবার সাথে সম্পর্কিত করা যাবে না।

অনেকেই ইমাম (আ.)দের কারামত সমুহ দেখে তাদেরকে এমন কিছু গুণাবলির সাথে তুলনা করতো যা ছিল  অতিরঞ্জিত এবং ঠিক না। এ সম্পর্কে বিভিন্ন রেওয়ায়েতে উল্লেখ করা হয়েছে।(বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ২৫, পৃষ্ঠা ২৭১)

মেলাল ওয়া নাহল নামক গ্রন্থে গোলাতদের সম্পর্কে এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, উক্ত চিন্তাধারাটি ইমাম হুসাইন (আ.)’এর শাহাদত এবং মোখতারের বিপ্লবি আন্দোলনের পরে গঠিত হয়।যেহেতু বণি উমাইয়া এবং যুবাইরি বংশের লোকেরা ছিল মোখতারের বিরোধি, সেহেতু তারা মোখতারের প্রকৃত ভাবমূর্তিকে নষ্ট করার লক্ষ্যে বিভিন্নভাবে যাদুকর, নবুওয়াতের দাবিদার’এর মতো মিথ্যা অপবাদ, অবাঞ্চিত ও অতিরঞ্জিতমুলক কথা দ্বারা তাকে জনসম্মুখে পরিচয় করানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতো। তারা কিসানিয়া, মোখতারিয়া নামক ফেরকার প্রচার প্রসার করতে থাকে। আর এভাবে তারা তাদের স্বিয় হুকুমতের ক্ষমতার প্রভাবকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে যুক্তি উপস্থাপনের চেষ্টা করতো। আহলে সুন্নাতের রেজাল শাস্ত্রের গ্রন্থে বণি উমাইয়া দরবারি আলেমগণ এবং জাল হাদিস তৈরিকারিরা উক্ত বিষয়কে নিশ্চিত করা জন্য চেষ্টা চালিয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (কিয়ামে মোখতার ইবনে আবি ‍উবাইদা সাকাফি, পৃষ্ঠা ৭৩, ৯৩- )

অনেকে আবার গোলাত ফেরকা সৃষ্টির মূলে আব্বাসিয় খেলাফতকে দায়ি করেছেন। তারা আব্বাসিয় খেলাফতকে কিসানিয়া ফেরকার একটি শাখা বলেও মনে করেন। (কিয়ামে মোখতার ইবনে আবি ‍উবাইদা সাকাফি, পৃষ্ঠা ৯৩)

কেননা কিসানিয়া মতাদর্শের অনুসারিরা মোহাম্মাদে হানাফিয়ার পরে তার সন্তান আবু হাশিমকে ইমাম বলে মনে করতো। তারা দাবি করতো যে, আবু হাশিম মোহাম্মাদ বিন আলি বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্বাসের সমমর্যাদা সম্পন্ন সেহেতু সেও হচ্ছে ইমাম। ইতিহাসে এই ধরণের অতিরঞ্জিতকারিদেরকে “রাওয়ান্দিয়া” বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। (ফেরাকে শিয়া, পৃষ্ঠা ২৯- ৩৫)

উক্ত ফেরকাদ্বয়ের পরে গোলাতের অন্যান্য ফেরকা সমূহ পরিলক্ষিত হয়। (ফেরাকে শিয়া, পৃষ্ঠা ৩৫- ৪৬)

সুতরাং গোলাতের বিভিন্ন ফেরকা সৃষ্টির মূলে প্রধান এবং মুখ্য ভুমিকা পালন করেছে বণি আব্বাসিয়গণ না শিয়ারা।

চলবে...

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন