ইমাম রেজা (আ.)ও তৎকালিন রাজনৈতিক অবস্থা

ইমাম রেজা (আ.)ও তৎকালিন রাজনৈতিক অবস্থা

রেযা, সাবের, রাযী, ফাযেল, ওয়াফী, ইমাম, ইমাম রেযা, তুস, খোরাসান, মাশহাদ, ইরান, ইমাম কাযিম, হারুন, আমিন, মামুন, খেলাফত,

এস, এ, এ

নামঃ আলী।
উপাধিঃ রেযা, সাবের, রাযী, ফাযেল, ওয়াফী।
ডাক নামঃ আবুল হাসান, আবু আলী।
পিতার নামঃ ইমাম মূসা কাযিম (আ.)।
মাতার নামঃ নাজমা (তুকতাম, খেইযারান)
জন্ম তারিখঃ ১১ই জিলক্বদ ১৪৮ হিজরী।
জন্মস্থানঃ মদীনা মুনাওয়ারা।

আয়ুঃ ৫৫ বছর।
ইমামতকালঃ ২০ বছর।
হত্যাকারীঃ মামুন।
শাহাদতঃ সফর মাসের শেষ তারিখে ২০৩ হিজরী।
দাফনের স্থানঃ তুস (মাশহাদ মোকাদ্দাস)।
তাঁর ইমামতকালে খলিফাগণঃ হারুনর রশিদ, মোহাম্মাদ আমীন, আব্দুল্লাহ মামুন। 
সন্তানঃ ২জন, ১জন ছেলে এবং ১জন কন্যা।

ইমাম রেযা (আ.) ছিলেন শিয়া ইশনা আশআরিদের ৮ ম ইমাম। ইমাম রেযা (আ.)’এর ২০ বছরের ইমামতকালে তিনজন আব্বাসিয় খলিফার হুকুমত ছিল:

১- খলিফা হারুন, ১৭০- ১৯৩ হিজরি।

২- খলিফা আমিন, ১৯৩- ১৯৮ হিজরি।

৩- খলিফা মামুন, ১৯৮- ২১৮ হিজরি।

খলিফা হারুনের যুগে ইমাম রেযা (আ.):

হারুন ছিল আব্বাসিয় খেলাফতের পঞ্চম খলিফা। হারুন ২১ অথবা ২২ বছর বয়সে খেলাফতে আসিন হয়। (তারিখে উমাম ওয়াল ‍মুলুক, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ২৩০)

সে ছিল একজন যুদ্ধপ্রেমি খলিফা। তার সম্পর্কে ইতিহাসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, হারুন ছিল একজন যুদ্ধপ্রেমি খলিফা তার অভ্যাস ছিল যে সে এক বছর হজ করতো এবং এক বছর যুদ্ধে যেত। সে এমন একটি যেরা পরিধান করতো যার সম্মুখভাগে লিখা ছিল “হাজ” এবং পশ্চাতভাগে লিখা ছিল “গাজি”।(আল ওযারা ওয়াল কুতাব, পৃষ্ঠা ৩০৪)

তার হুকুমতকালে আব্বাসিয় খেলাফতের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা হাঙ্গমা লেগেই থাকতো। তার খেলাফতকালের উক্ত কারণে আলাভিদের সন্তানদের মাধ্যেমে দুটি বিপ্লব সংঘটিত হয়। একটি বিপ্লব ইয়াহিয়া ইদ্রিস’এর মাধ্যেমে ইরাকের পূর্বাঞ্চলে এবং অপরটি আব্দুল্লাহ বিন হাসান’এর মাধ্যেমে ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলে সংঘটিত হয়।

হারুন ইয়াহিয়া ইদ্রিসকে নিরাপত্তা দানের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা করে এবং তাকে বাগদাদে নিয়ে এসে হত্যা করে। (মাকাতেলুত তালেবিন, পৃষ্ঠা ৩৮৮- ৪০৬)

আর উক্ত ঘটনার কারণে ইদ্রিস বিন আব্দুল্লাহ উত্তর আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলে পালিয়ে যায়। সে ‘বেরবের’ উপজাতিদের মাধ্যেমে হারুনের হুকুমতের বিরূদ্ধে রূখে দাঁড়ায়। হারুন তার চাতুর্যতার মাধ্যেমে ইদ্রিস বিন আব্দুল্লাহকে বিষ দ্বারা হত্যা করার বৃথা চেষ্টা চলায়। অবশেষে ইদ্রিস বিন আব্দুল্লাহ বেরবের উপজাতিদের নেতৃস্থানিয় পর্যায়ে পৌছে যায়। (মাকাতেলুত তালেবিন, পৃষ্ঠা ৪০৬- ৪০৯)

তার বাবার কারণে তাঁকে ‘দ্বিতিয় ইদ্রিস’ বলা হতো এবং তার মাধ্যেমেই ইদ্রিসি স্বাধিন হুকুমত প্রতিষ্ঠিত হয়। হারুন আব্বাসি হুকুমত এবং নিজের রক্ষার্থে আলে ইদ্রিসের পতন ঘটানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। হারুন ইব্রাহিম বিন আগলাবকে সকল প্রকারের ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যেমে তিউনেসিয়াতে প্রেরণ করে। আর হারুনের যুগে শিয়াদের প্রথম রাষ্ট্রে আলে ইদ্রিসের মাধ্যেমে প্রতিষ্ঠিত হয়। (তারিখে খেলাফাতে আব্বাসি আয আগায তা পায়ানে আলে বুয়ে, পৃষ্ঠা ৫৬)

ইতিহাস গবেষকদের মতে হারুন আলাভিদের উক্ত দুটি বিপ্লবের মুখোমুখি হওয়ার পরে সে আলাভিদের থেকে সর্তক এবং সাবধানে থাকতো। সে তাদের যে কোন নেতাদেরকে স্বিয় ক্ষমতার আওয়তায় পেলে বন্দি এবং হত্যা করে ফেলতো। (জিহাদুশ শিয়া ফিল আসরিল আব্বাসিউল উলা, পৃষ্ঠা ৩৯৭)

হারুনের খেলাফতকালে ইমাম মূসা কাযিম (আ.) তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় কারাগারে অতিবাহিত করেন। সে সময় তাঁকে এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে স্থানান্তর করা হতো। অবশেষে হারুনের নির্দেশে তাঁকে ১৮৩ হিজরিতে শহিদ করা হয়। (জিহাদুশ শিয়া ফিল আসরিল আব্বাসিউল উলা, পৃষ্ঠা ৪০২, আল ফাখরু ফিল আদাবিল সুলতানিয়া ওয়া দৌলাল ইসলামিয়া, পৃষ্ঠা ১৯৬)

হারুনের উক্ত দমনমূলক আচরণের কারণে ইমাম কাযিম (আ.) এবং তাঁর অনুসারিগণ অত্যান্ত সংরক্ষণশীল বা তাকিয়া’এর সাথে জিবন যাপন করতো। আর উক্ত কারণেই হারুনের যুগ থেকে উকিল সংস্থার প্রথা চালু হয়। আর ইমাম কাযিম (আ.) এবং তাঁর অনুসারিগণ উক্ত পন্থার মাধ্যেমেই একে অপরের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতেন। (সাযমানে ওয়েকালাত ওয়া নাকশে অন দার আসরে আয়েম্মা)

উক্ত কারণে ইমাম কাযিম (আ.)কে জিবনের অধিকাংশ সময় কারাগারে অতিবাহিত করতে হয়। আর সে যুগের অত্যান্ত সংরক্ষণশীল বা তাকিয়া’এর জিবন যাপন এবং ইমাম কাযিম (আ.)’এর শাহাদতের কারণে শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিভক্তি পরিলক্ষিত হয়। আর উক্ত কারণে ওয়াকেফিয়া ফেরকা সৃষ্টি হয়। আর ওয়াকেফিয়া ফেরকা তারাই সৃষ্টি করে যাদের কাছে শিয়াদের অর্থ সম্পদ গচ্ছিত রাখা হয়েছিল।

আর উক্ত সংরক্ষণশীল বা তাকিয়াপূর্ণ জিবন যাপনের কারণে ইমাম কাযিম (আ.)’এর শাহাদত সম্পর্কে বিভিন্নভাবে রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে। অনেকে আবার তাঁকে ভুল বুঝে প্রতিক্ষিত মাহদি বলে মনে করেছে। হারুনের উক্ত দমনমূলক আচরণের কারণে সে যুগে বিভিন্ন ফেরকার সৃষ্টি হয় এবং সে ফেরকাগুলোকে ইমাম কাযিম (আ.)’এর শিয়াদের নামে অপপ্রচার চালানো হয়।

আব্বাসিয় খেলাফতের উগ্রতার কারণ শুধুমাত্র আলাভিদের বিপ্লব ছিল না বরং বিভিন্ন গোত্রের বিদ্রোহ আন্দোলনও এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল যেমন: ১৮১ হিজরিতে হামযা বিন আব্দুল্লাহ খারেজি’এর বিদ্রোহ আন্দোলন। (তারিখে সিসতান, পৃষ্ঠা ১৫৬)

হারুন যখন ইমাম রেযা (আ.)’এর যুগে হামযা বিন আব্দুল্লাহ খারেজি’এর বিদ্রোহ আন্দোলন এবং ১৯২ হিজরিতে রাফে বিন লাইস’এর নেতৃত্বে খলিফার বিরূদ্ধে খোরাসানের জনগণের বিদ্রোহকে দমন করার লক্ষ্যে খোরাসানের দিকে অগ্রসর হয় তখন সে পথের মধ্যে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ১৯৩ হিজরিতে তুস নামক এলাকায় মারা যায়। (আল কামেল ফিত তারিখ, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ২০৭, তারিখু মুখতাসারুদ দৌলা, পৃষ্ঠা ১৩০, ইবনে আসির, পৃষ্ঠা ২১১)

খলিফা আমিনের যুগে ইমাম রেযা (আ.):

মোহাম্মাদ বিন হারুন ওরফে আমিন ১৯৩ হিজরিতে তার বাবার মৃত্যুর পরে খেলাফতে আসিন হয়। (তারিখে তাবারি, পৃষ্ঠা ৪৯৮)

জনাব সিয়ুতি’এর বর্ণনামতে আমিন খেলাফতের যগ্যে ছিল না। কেননা সে একজন অপচয়কারি, অহংকারি এবং নিতিহিন যুবক ছিল। আর এ কারণে  তার খেলাফতের সুচনালগ্ন থেকেই বিদ্রোহ ও রাষ্ট্রদ্রোহিতা শুরু হয়।

ইতিহাসের দৃষ্টিতে আমিন ছিল একজন বিলাসি, অমিতব্যায়ি এবং যৌনবেদনাময়ী ব্যাক্তি। সে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজেও অপরের সিদ্ধান্তকে প্রাধান্যতা দান করতো। (তারিখে খোলাফা, পৃষ্ঠা ২২৭, ইবনে আসির, পৃষ্ঠা ২৯৩, আল তাম্বিয়াতু ওয়াল আশরাফ, পৃষ্ঠা ৩০২)

আমিনের খেলাফতকালটি ছিল বিভিন্ন ফেতনা, বিদ্রোহ এবং বিক্ষোভে পূর্ণ এবং এর সাথে তার ভাই মামুনের  মতবিরোধিতাও ছিল অরেকটি গুরুত্বপূর্ণ এবং চিন্তার কারণ। আর উক্ত কারণকে উদ্দেশ্যে করে ইরানি এবং আরবদের মধ্যেও দ্বন্দ লেগে থাকতো। তাদের দুই ভাইয়ের চরম দ্বন্দের সুযোগে বিভিন্ন বিদ্রোহ আন্দোলনও চরম আকার ধারণ করে। অবশেষে আমিন অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পরে ইয়েমেন, মিশর এবং শামের বিদ্রোহকে দমন করতে সফল হয়। (জিহাদুশ শিয়া ফিল আসরিল আব্বাসিল উলা, পৃষ্ঠা ৪২৩- ৪২৫)

মামুনের ষড়যন্ত্র এবং বিভিন্ন বিদ্রোহকে দমন করতেই আমিনের সম্পূর্ণ হুকুমতের সময়টি অতিক্রান্ত হয়। অবশেষে ১৯৮ হিজরিতে মামুন তার ভাই আমিনকে হত্যা করার মাধ্যেমে খেলাফতে আসিন হয়। (তারিখে তাবারি, পৃষ্ঠা ৪৭২- ৪৮১)

খলিফা মামুনের যুগে ইমাম রেযা (আ.):

মামুনের খেলাফতকাল ছিল ১৯৮- ২১৮ হিজরি পর্যন্ত। মামুন তার ২০ বছরের খেলাফতকালের প্রথম ৫ বছরে ইমাম রেযা (আ.)তার জীবনের অবশিষ্ট সময়গুলো অতিক্রান্ত করেন। আব্দুল্লাহ মামুন ১৭০ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করে এবং তার মা ছিল একজন দাসি যার নাম ছিল মারাজেল। (তারিখে ইয়াকুবি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪০৭, ৪৪৪)

মামুন ছিলতার ভাই আমিনের সম্পূর্ণ বিপরিতধর্মি চরিত্রের অধিকারি একজন ব্যাক্তি। ইতিহাসে তার সম্পর্কে এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, সে সাহসী, উচ্চাভিলাষী এবং বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেছিল এবং সে ছিল বণি আব্বাসের জন্য একজন উজ্জল নক্ষত্র স্বরূপ। (আল আখবারুত তেওয়াল, পৃষ্ঠা ৪০১)

সিউতি তাকে বণি আব্বাসের সবচেয়ে জ্ঞানি খলিফা বলে উল্লেখ করেছে। (তারিখে খোলাফা, পৃষ্ঠা ২৩৪)

তার এত গুণাবলি থাকার পরেও সে দ্বিতিয় যুবরাজ পধে অধিষ্ঠিত ছিল। কেননা সে আমিনের চেয়ে বয়সে ছোট ছিল। (তারিখে ইয়াকুবি, পৃষ্ঠা ১২৯)

আর মামুনকে দ্বিতিয় যুবরাজ পদ দান করার পিছনে আমিনের মা “যুবাইদা”এর মূখ্য ভুমিকা ছিল। (মুরুজুয যাহাব, পৃষ্ঠা ১৫২, ১৫৩, ১৫৫)

মামুন তার বিচক্ষণতার কারণে ইরানি এবং আরবদেরকে নিজ ক্ষমতার পদতলে রাখার উদ্দেশ্যে তার উক্ত হুকুমতকে বাগদাদ ও ইরান দুইটি ভাগে ভাগ করে।

মামুন তার হুকুমতের প্রথমভাগ (১৯৮- ২০৪ হিজরি)ইরানের  বিভিন্ন স্থান যেমন: রেই, সারখাস, তুস, মার্ভ নামক স্থান সমূহের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয় এবং তার  হুকুমতের কেন্দ্রস্থল ছিল মার্ভ।

মামুন তার হুকুমতের দ্বিতিয়ভাগ ২০৪ হিজরি থেকে নিয়ে মৃত্যু অবধি বাগদাদে অতিবাহিত করে। সে তার হুকুমতকালে বিভিন্ন জ্ঞানিগুণি ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের সাথে সুসম্পর্ক বজায়ে রেখেছিল।

সার্বিকভাবে বলা যেতে পারে যে, মামুনের খেলাফতের প্রথমভাগ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত ছিল না। কিন্তু একেবারেই যে কোন সমস্যা ছিল না এমনটি বলা যাবে না কেননা অনেক গোত্রই বিভিন্ন কারণে তাকে পছন্দ করতো না। নিন্মে উক্ত কারণগুলো উল্লেখ করা হলো:

১- বণি অব্বাসীয় কিছু নেতৃস্থানিয় লোকদের অসন্তুষ্টতা। (আল তাম্বিয়াতু ওয়াল আশরাফ, পৃষ্ঠা ৩০৩, তারিখে ইবনে অসির, পৃষ্ঠা ৩০৮, ৩২৬- ৩২৭, তারিখে ইয়াকুবি, পৃষ্ঠা ৪৪৫)

২- আমিনকে হত্যা করে খেলাফত অর্জন।

৩- বাগদাদ থেকে রাজধানিকে মার্ভে স্থানান্তর।

৪- ইরানিদেরকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ দান।

৫- ইরানিদেরকে পূর্ণ সহায়তা দান করা।

৬- ফাযল ইবনে সাহল নামক এক ইরানিকে মন্ত্রি বানানো এবং তাকে যুর রিয়াসাতাইন পদবি দান করা।

৭- হাসান বিন সাহালকে ইরাকের দ্বায়িত্বে প্রেরণ করা।

৮- মামুনের মামা মানসুর বিন মাহদির কাছে বাগদাদিদের বাইয়াত গ্রহণ করার নির্দেশ দান।

৯- হাসান বিন সাহলকে ইরাক থেকে বাহির করে দেয়া।

১০- ইব্রাহিম বিন মাহদিকে খলিফা হিসেবে মেনে নেয়া। (আল ওযারা ওয়াল কুতাব, পৃষ্ঠা ৪২৮- ৪২৯, আল তাম্বিয়াতু ওয়াল আশরাফ, পৃষ্ঠা ৩০৩, তারিখে ইবনে আসির, পৃষ্ঠা ৩২৬- ৩২৭)

১১- নাসর বিন সাবাশ যে আমিনের শত্রু ছিল। সে আরবদের প্রতিনিধিত্ব করতো। খোরাসানের প্রতি মামুনের প্রবণতা তার বিদ্বেষকে আরো বাড়িয়ে দেয় এবং অবশেষে সে আরবদের সহায়তায় মামুনের বিরূদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। তখন মামুন উক্ত বিষয়টিকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে তার বিরোধিতা মামুনের বিরূদ্ধে ছিল না বরং তার বিরোধিতার মূখ্য উদ্দেশ্যে ছিল ইরানিরা। (দৌলাতে আব্বাসিয়ান, পৃষ্ঠা ১৩২- ১৩৩)

১২- আলাভিদের বিরোধিতা, যারা খেলাফতকে নিজেদের প্রাপ্য অধিকার বলে মনে করতো এবং বণি আব্বাসদেরকে তারা অবৈধ শাষক বলে করতো। আর এ কারণে ১৯৯ হিজরিতে ইবনে তাবাতাবা কুফাতে এবং মোহাম্মাদ বিন আলি বিন হাসান ওরফে ইবনে আফতাস মক্কাতে বিপ্লব আন্দোলন গড়ে তুলে। (তারিখে খালিফা ইবনে খাইয়াত, পৃষ্ঠা ৩১০- ৩১১)

১৩- ফাযল বিন সাহলকে মন্ত্রী পদ অর্জন করার পরে সে উক্ত সুযোগের অসৎ ব্যাবহার করতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খবর সে মামুনকে জানাতে দিত না। (আল ওযারা ওয়াল কুতাব, পৃষ্ঠা ৪২৮, ৪২৯)

মামুনের উক্ত আচরণের কারণে ইরাকের লোজন উগ্র হয়ে উঠে এবং পরিস্থিতি এত সংঙ্কটপূর্ণ হয়ে যে, দক্ষিণ ইরাকের গ্রামঞ্চলে চুরি এবং রাস্তায় ডাকাতি শুরু হয়ে যায়। (দৌলাতে আব্বাসিয়ান, পৃষ্ঠা ১২৬)

আর তখন মামুন রাজনৈতিক এবং সামাজিক সকল সমস্যাবলিকে সমাধানের লক্ষ্যে ‘বেলায়াতে আহাদি’এর নিল নকশা তৈরি করে এবং ইমাম রেযা (আ.)কে মদিনা থেকে মার্ভে জোরপূর্বক ডেকে পাঠায়।  (তারিখে সিসতান, পৃষ্ঠা ২১২, ২৪২)

যেন সে এভাবে আলাভি, ইরানি, এবং আরবদের সকল ষড়যন্ত্রকে দমন করতে পারে। শুধু তাই না বরং সে চেয়েছিল উক্ত পরিকল্পনার মাধ্যেমে ইমাম কাযিম (আ.)’এর ন্যায় ইমাম রেযা (আ.)কেও নিজের নথদর্পনে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু ইমাম রেযা (আ.) তার সকল ষড়যন্ত্রের নিল নকশাকে নস্যাত করে দিয়েছিলেন এবং তার প্রস্তাবিত বেলায়াতে আহাদিকে গ্রহণ করতে অস্বিকার করেন। ইমাম রেযা (আ.) তাকে এবং সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে স্পষ্ট করে দেন যে, আহলে বাইত (আ.) কখনই হুকুমতের আশা করে না। আর তাই আমরা বর্তমান বিশ্বে দেখতে পাই যে হারুন, আমিন ও মামুনের দরবারের কোন অস্ত্বিই অবশিষ্ট নেই।  কিন্তু আজও খোরাসানে ইমাম রেযা (আ.)’এর হুকুমত ও দরবার অবশিষ্ট রয়েছে। যেখানে প্রত্যেকদিন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের হাজার হাজার লোকজনের সমাগম ঘটে। আজও ইমাম রেযা (আ.) খোরাসান সহ সকল আহলে বাইতের অনুসারি ও মুসলমানদের অন্তরে হুকুমত করছেন।

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন