কোরআনের দৃষ্টিতে ইমাম মাহদী (আ.)’এর আবির্ভাব
পবিত্র কোরআনের দৃষ্টিতে ইমাম মাহদী (আ.)’এর আবির্ভাব
১
وَقُلْ جَاء الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا
অর্থ: বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। (সূরা বণী ইসরাইল, আয়াত নং ৮১)
ইমাম বাকের (আ.) উক্ত আয়াত সম্পর্কে বলেছেন: যখন ইমাম মাহদী (আ.) আবির্ভূত হবেন তখন সকল বাতিল শাষণ ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে যাবে। (রওযাতুল কাফি, পৃষ্ঠা ২৮৭)
২
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ
অর্থ: তিনি তাঁর রসূলকে পথ নির্দেশ ও সত্যধর্ম নিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে একে সবধর্মের উপর প্রবল করে দেন যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। (সূরা আছ- ছফ, আয়াত নং ৯)
মোহাম্মাদ বিন ফুযাইল থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে, ইমাম মূসা কাযিম উক্ত আয়াত সম্পর্কে বলেছেন: মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুলকে তাঁর (স্থলাভিষিক্ত)ওয়াসী’এর বেলায়াত (নেতৃত্ব) সম্পর্কে বলেছেন যে, বেলায়াত হচ্ছে সেই সত্যধর্ম।
আমি রাসুল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম:
لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّه
অর্থ: যাতে একে সব ধর্মের উপর প্রবল করে দেন।
তিনি বললেন: ইমাম মাহদী (আ.)’এর আবির্ভাবের পরে কিয়ামের সময় সকল দ্বীনের উপরে প্রাধান্যতা অর্জন করবে।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
وَاللَّهُ مُتِمُّ نُورِهِ
অর্থ: আল্লাহ তাঁর আলোকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন। (সূরা আছ- ছফ, আয়াত নং ৮)
ইমাম মাহদী (আ.)’এর বেলায়াত পৃথিবীর সকল ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হবে। (আল মোহাজ্জা, পৃষ্ঠা ৩৮১, উসুলে কাফি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৪৩২)
৩
وَنُرِيدُ أَن نَّمُنَّ عَلَى الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا فِي الْأَرْضِ وَنَجْعَلَهُمْ أَئِمَّةً وَنَجْعَلَهُمُ الْوَارِثِينَ
অর্থ: পৃথিবীতে যাদেরকে দূর্বল করা হয়েছিল, আমার ইচ্ছা হল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করার, তাদেরকে নেতা করার এবং তাদেরকে পৃথিবীর উত্তরাধিকারী করার। (সূরা কেসাস, আয়াত নং, ৫)
ইমাম বাকের ও সাদিক্ব (আ.) উক্ত আয়াত সম্পর্কে বলেছেন: উক্ত আয়াতটি বিশেষত ইমাম মাহদী (আ.)কে কেন্দ্র করেই নাযিল হয়েছে কেননা তাঁর মাধ্যেমেই স্বৈরাচারী এবং ফেরাউনের ন্যায় দাবীকারী খোদাদের পতন ঘটবে এবং তিনিই হবেন পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্যন্ত সারা বিশ্বের শাষক তিনি পৃথিবী থেকে জুলুম অত্যাচারকে দূরীভূত করবেন এবং পৃথিবীকে ন্যায় দ্বারা পূর্ণ করে দিবেন। (তাফসীরে বোরহান, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২২০, হাদীস নং ১২)
৪
وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُم فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَى لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّن بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا
অর্থ: তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকতৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার এবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। (সূরা নূর, আয়াত নং ৫৫)
ইমাম সাদিক্ব (আ.) উক্ত আয়াত সম্পর্কে বলেছেন: উক্ত আয়াতটি ইমাম মাহদী এবং তাঁর সাহাবীদেরকে উদ্দেশ্যে করে নাযিল হয়েছে। (আল মোহাজ্জা, পৃষ্ঠা নং ২৬৩, আল গায়বা, পৃষ্ঠা ১২৬)
৫
وَأَنذِرِ النَّاسَ يَوْمَ يَأْتِيهِمُ الْعَذَابُ
অর্থ: মানুষকে ঐ দিনের ভয় প্রদর্শন করুন, যেদিন তাদের কাছে আযাব আসবে। (সূরা ইব্রাহিম, আয়াত নং ৪৪)
হজরত আলী (আ.) উক্ত আয়াত সম্পর্কে বলেছেন: “মানুষকে ঐ দিনের ভয়” বলতে এখানে ইমাম মাহদী (আ.)’এর আবির্ভাবের দিনকে বুঝানো হয়েছে। আর উক্ত দিনটি মুমিনদের জন্য হবে পরিত্রাণ এবং রহমত স্বরূপ এবং কাফেরদের জন্য হবে আযাব স্বরূপ। (মুনতাখাবুল আসার, পৃষ্ঠা ৩১৯, অধ্যায় ৪৯, হাদীস নং ১)
৬
يُعْرَفُ الْمُجْرِمُونَ بِسِيمَاهُمْ فَيُؤْخَذُ بِالنَّوَاصِي وَالْأَقْدَامِ
অর্থ: অপরাধীদের পরিচয় পাওয়া যাবে তাদের চেহারা থেকে; অতঃপর তাদের কপালের চুল ও পা ধরে টেনে নেয়া হবে। (সূরা আর রহমান, আয়াত নং ৪৪)
ইমাম সাদিক্ব (আ.) উক্ত আয়াত সম্পর্কে বলেছেন: যখন আমাদের মাহদী (আ.) কিয়াম করবেন তখন মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁকে, অপরাধীদের পরিচয় করিয়ে দিবেন। তখন তিনি তাদেরকে সনাক্ত করবেন এবং তাদেরকে যথাপোযুক্ত শাস্তি প্রদান করবেন। (মিকইয়ালুল মাকারেম, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৭৩, বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ৩২০)
৭
وَالْعَصْرِ، إِنَّ الْإِنسَانَ لَفِي خُسْرٍ، إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ.
অর্থ: কসম যুগের (সময়ের), নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে তাকীদ করে সত্যের এবং তাকীদ করে সবরের। (সূরা আছর, আয়াত নং ১- ৩)
ইমাম সাদিক্ব (আ.) উক্ত সূরা সম্পর্কে বলেছেন:
(وَالْعَصْرِ) দ্বারা ইমাম মাহদী (আ.)’এর আবির্ভাবকে বুঝানো হয়েছে। (إِنَّ الْإِنسَانَ لَفِي خُسْرٍ) দ্বারা আমাদের শত্রুদেরকে বুঝানো হয়েছে এবং (إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ) দ্বারা দ্বীনি ভাইদের সাথে সহমর্মিতাপূর্ণ সম্পর্ক রাখাকে বুঝানো হয়েছে। (وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ) দ্বারা অন্তর্ধানের যুগে সকলে আকায়েদ দূর্বল হয়ে পড়বে তখন সকলকে ধৈর্য এবং দৃঢ়তার সাথে থাকতে বলা হয়েছে। (আল মুহাজ্জা, পৃষ্ঠা ৪৩৬, কামাল উদ্দিন, খন্ড ২ থেকে নেয়া হয়েছে)
৮
وَالشَّمْسِ وَضُحَاهَا، وَالْقَمَرِ إِذَا تَلَاهَا، وَالنَّهَارِ إِذَا جَلَّاهَا، وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَاهَا.
অর্থ: শপথ সূর্যের ও তার কিরণের, শপথ চন্দ্রের যখন তা সূর্যের পশ্চাতে আসে, শপথ দিবসের যখন সে সূর্যকে প্রখরভাবে প্রকাশ করে, শপথ রাত্রির যখন সে সূর্যকে আচ্ছাদিত করে। (সূরা শামস, আয়াত নং ১- ৪)
ইমাম সাদিক্ব (আ.) উক্ত আয়াত সমূহ সম্পর্কে বলেছেন: (وَالشَّمْسِ) হচ্ছেন রাসুল (সা.) যিনি সর্বসাধারণের জন্য দ্বীনকে স্পষ্টভাবে প্রচার ও প্রসার করেছেন। (وَالْقَمَرِ إِذَا تَلَاهَا) দ্বারা হজরত আলী (আ.)কে বুঝানো হয়েছে কেননা তিনি হচ্ছে রাসুল (সা.)’এর পরে আল্লাহর নির্বাচিত খলিফা এবং (وَالنَّهَارِ إِذَا جَلَّاهَا) দ্বারা সেই ইমামকে বুঝানো হয়েছে যিনি হজরত ফাতেমা (সা.)’এর বংশধরা থেকে হবেন এবং তিনি সকল জাহেলিয়াত এবং অত্যাচারকে দূরীভূত করবেন এবং তিনি হবেন ইমাম মাহদী (আ.)। (আল মুহাজ্জা, পৃষ্ঠা ৪২৫)
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন