শেরম্যানের বক্তব্যে ইরানের প্রতিক্রিয়া: পরমাণু বিষয়ে ছাড় দেয়া হবে না

  ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। চূড়ান্ত চুক্তি সইয়ের জন্য আর মাত্র এক মাসেও কম সময় বাকী রয়েছে। আগামী ২৪শে নভেম্বরের মধ্যে সব পক্ষই সমাধানে পৌঁছার চেষ্টা করছে। ইরানের অন্যতম উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পরমাণু আলোচক দলের সদস্য সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি বলেছেন, পরমাণু বিষয়ে অত্যন্ত কঠিন ও শ্বাসরুদ্ধকর আলোচনা চলছে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমাধানে পৌঁছার আলামত এখনো দেখা যাচ্ছে না।

 

মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যানের সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আব্বাস আরাকচি বলেছেন, শান্তিপূর্ণ পরমাণু অধিকার প্রশ্নে ইরান বিন্দুমাত্র পিছু হটবে না তবে পারস্পরিক আস্থা সৃষ্টি ও স্বচ্ছতা প্রমাণের জন্য তেহরান প্রস্তুত রয়েছে। ওয়েন্ডি শেরম্যান গত বৃহস্পতিবার ইরানকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন, চুক্তি সইয়ের জন্য সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেছেন, ইরান যদি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে তাহলে প্রথমে দেশটির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখা হবে এবং এরপর পর্যায়ক্রমে তা তুলে নেয়া হবে।

 

আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের কয়েকটি দেশ সবসময়ই নিষেধাজ্ঞাকে অন্য দেশের ওপর চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। অথচ এসব নিষেধাজ্ঞা শুধু যে জুলুম তাই নয় একই সঙ্গে তা আন্তর্জাতিক আইনেরও বিরোধী। ইরান বিরোধী এ নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপীয় দেশগুলোর বাণিজ্যও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইউরোপের বিভিন্ন কোম্পানি ইরানের সঙ্গে ফের ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। চলতি মাসে তেহরানে দুটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি, ডেনমার্ক, ব্রিটেন ও জার্মানিসহ ইউরোপের আরো বহু দেশ এসব মেলায় অংশ নেয়। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ইরান ও ইউরোপের বাণিজ্য প্রতিনিধি দল লন্ডনে বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। এসব বৈঠকে ব্রিটেনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাক স্ট্র, তেহরানে ব্রিটেনের সাবেক রাষ্ট্রদূত রিচার্ড ডেল্টন, ফ্রান্সের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুবার্ট ভারদিনের মত ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন।

 

বাস্তবতা হচ্ছে, চীন ও রাশিয়ার তীব্র বিরোধিতার পর এখন ইরান বিরোধী এক তরফা নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে ইউরোপ ও আমেরিকার মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। এরফলে আন্তর্জাতিক সমাজ ইরানের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে বলে ওয়াশিংটন যে কথা বলে আসছিল তা কার্যত ভেঙ্গে পড়েছে।

 

পরমাণু বিষয়ে চূড়ান্ত সমাধানে পৌঁছার জন্য গত প্রায় এক বছর ধরে ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের বিরামহীন আলোচনা চলে আসছে। বিভিন্ন ঘটনা ও আচরণে প্রমাণিত হয়েছে আমেরিকার ষড়যন্ত্র ও বাধা সত্ত্বেও চূড়ান্ত চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা এগিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য কিছু বিষয়ে মতভেদ বিরাজ করছ এবং সর্বশেষ দিন পর্যন্ত আলোচনার ফলাফল কি দাঁড়াবে তা বলা অত্যন্ত কঠিন। কারণ ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এবং দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয়ে এখনো মতৈক্য হয়নি।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পরমাণু আলোচনা বর্তমানে যে অবস্থানে এসে পৌঁছেছে তাতে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাদের মতে এখন পর্যন্ত আলোচনা ইতিবাচক গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এবং চূড়ান্ত সমাধানে পৌঁছার জন্য হয়তো আরো সময়ের প্রয়োজন হবে।

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন