আরব-ইসরাইল গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ: সিএনএন
আরব-ইসরাইল গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ: সিএনএন
গাজায় ইসরাইলি হামলাকে 'ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আরব দেশগুলো ও ইসরাইলের যৌথ যুদ্ধ' বলে মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক সিএনএন'এর এক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে।
টেলিভিশনটি মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ আলী ইউনুসসহ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের উদ্ধৃতি দিয়ে এই মন্তব্য করেছে।
কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে বিশ্লেষণের অভিজ্ঞতার অধিকারী আলী ইউনুস গাজার যুদ্ধকে ' আরব-ইসরাইলি সংঘাতের ইতিহাসে ব্যতিক্রমী ঘটনা' বলে উল্লেখ করেছেন।
তিনি দাবি করেছেন, 'বেশিরভাগ আরব(?)ই ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলকে সমর্থন দিচ্ছে এবং তারা এ ব্যাপারে লজ্জা বা কুণ্ঠাও অনুভব করছে না।'
ইউনুস বলেন, 'আরব-ইসরাইলের যৌথ এই যুদ্ধে একই শিবিরে রয়েছে মিশর, জর্দান, সৌদি ও অন্য অনেক আরব দেশ—আর ফিলিস্তিনিদের নেতৃত্ব দিচ্ছে হামাস।'
তিনি বলেছেন, 'এই যুদ্ধের সম্ভাব্য ফল হচ্ছে আরব সরকারগুলোর জোট এতদিন ফিলিস্তিনিদের যে নামমাত্র সমর্থন দিত ও একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনকেও সমর্থন জানাতো তার অবসান ঘটবে।'
আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউট-এর পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা গবেষণা বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েলি প্লেটকাও দাবি করেছেন, 'ইসরাইল ও হামাসের সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে নতুন কিছু বিভাজন সৃষ্টি করেছে। মুসলমানরা এখন আর ইহুদি বিরোধী নয়। এখন কেবল চরমপন্থীরাই – ইখওয়ানুল মুসলিমিন বা মুসলিম ব্রাদারহুড, হামাস, হিজবুল্লাহ এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক ইরান, কাতার ও তুরস্ক—ইসরাইলের বিরুদ্ধে রয়েছে; এই জোট জর্দান, মিশর ও সৌদি আরবসহ অপেক্ষাকৃত বেশি নমনীয় মুসলমানদেরও প্রতিপক্ষ।'
এদিকে সিএনএন-এর ফরিদ জাকারিয়া গাজার যুদ্ধকে 'মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রক্সি (পরোক্ষ) যুদ্ধ বলে' অভিহিত করেছেন। বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে সিএনএন আরো বলেছে, হামাস হচ্ছে ব্রাদারহুডেরই একটি অংশ। নিকট-প্রাচ্য নীতি বিষয়ক ওয়াশিংটন ইন্সটিটিউটের এরিক ট্র্যাগার বলেছেন, 'ইখওয়ানুল মুসলিমিন বা ব্রাদারহুড একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ৭০টিরও বেশি দেশে এর শাখা বা সমর্থক গ্রুপ রয়েছে।'
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক সউফান গ্রুপ বলেছে, 'গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের চলমান যুদ্ধ হচ্ছে মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে একটি বিস্তৃততর আঞ্চলিক যুদ্ধ। বেশিরভাগ আরব সরকারই হামাসকে চিরতরে শেষ করে দেয়ার ইসরাইলি সিদ্ধান্তের শরিক, কিন্তু তাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।'
আলী ইউনুস বলেছেন, 'মিশর, সৌদি আরব, জর্দান ও আরব আমিরাতসহ আরো কয়েকটি আরব সরকারের দৃষ্টিতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তাদের পক্ষ থেকেই হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন যাতে ব্রাদারহুডের শেষ শক্তিশালী ঘাঁটি তথা হামাস নির্মূল হয়ে যায়।'
এরিক ট্র্যাগার মিশর প্রসঙ্গে বলেছেন, এই দেশে মুসলিম ব্রাদারহুডের সরকারকে উৎখাত করে একটি নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তাই সেখানে ব্রাদারহুডের সঙ্গে সংঘাত বজায় রয়েছে। তাই এ সরকার তার সীমানার পাশেই ফিলিস্তিনি মুসলিম ব্রাদারহুড তথা হামাসের শক্তিশালী হয়ে ওঠার বিষয়টি সহ্য করতে রাজি নয়।'
সৌদি, আরব আমিরাত ও জর্দানের রাজাদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে এই রিপোর্টে (অবমাননাকর)যুদ্ধ-বিরতি মেনে নিতে হামাসের প্রতি তাদের আহ্বানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। এরিক ট্র্যাগার বলেছেন, 'সৌদি আরব ও আমিরাতের রাজতান্ত্রিক সরকার ইসলামপন্থীদের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জের শিকার হয়েছে, এই ইসলামপন্থীরা রাজপরিবারের সদস্যদের মত পারিবারিকভাবে ক্ষমতায় আসেননি, বরং জনগণের ভোট পেয়েই ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন।'
'আর এ জন্যই এই দেশগুলো মিশরের (সামরিক) অভ্যুত্থানকে সরাসরি সমর্থন দিয়েছে, কারণ এ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত ইসলামপন্থীরা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে এবং (গণতন্ত্রের) ওই মডেলকে হেয় করা হয়েছে।'
ইউনুস বলেছেন, মিশরে ব্রাদারহুড সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষেত্রে সৌদি সরকার নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছে অভ্যুত্থানকে সমর্থন যুগিয়ে এবং ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমের প্রচারণায় অর্থ যুগিয়ে।'
'মিশর, জর্দান, সৌদি আরব এবং আমিরাতের দৃষ্টিতে হামাসের ধ্বংস হয়ে যাওয়াটা তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যই লাভজনক।'
জাকারিয়া বলেছেন, 'সৌদি ও মিশরিয়রা(?) এখন ইসলামী পুনর্জাগরণবাদ বা মৌলবাদকে ইসরাইলের চেয়েও বেশি ভয় করছে।' অন্যদিকে তুরস্ক ও কাতার এখনও হামাসকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। দোহা মিশরের ব্রাদারহুডের সরকারকে সমর্থন দিয়েছে এবং ব্রাদারহুডের নির্বাসিত বহু নেতাকে অর্থও দিয়ে আসছে।
এরিক ট্র্যাগার বলেছেন, 'ব্রাদারহুডের প্রতি তুরস্কের সমর্থন কেবলই আদর্শিক সহমর্মিতা-প্রসূত নয়।
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন