অধিক মুনাফর রাত্রি লাইলাতুল ক্বদর
অধিক মুনাফর রাত্রি লাইলাতুল ক্বদর
কদরের রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের সমতুল্য। কিন্তু শবে কদরের রাত কোনটি তা অস্পষ্ট রাখা হয়েছে যাতে পুরো রমজানেই মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য ও গোনাহ মাফ করিয়ে নেয়ার জন্য সাধনা করে। বলা হয় শবে কদরে গোটা এক বছরের জন্য মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়। আর তাই এই রাতকে সামনে রেখে গোটা এক বছরের জন্য মহাপরিকল্পনা নেয়া উচিত যাতে ব্যাপক যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমে এই মাসে এবং বিশেষ করে শবে কদরের রাতে কল্যাণ তথা রহমত, বারাকাত ও মাগফিরাতের বাজেট-বরাদ্দ হয় যথাসম্ভব সর্বোচ্চ মাত্রায়। সারা বছর ধরেই আমরা যদি আমাদের কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে আল্লাহকে এটা দেখাতে পারি যে এই বছর আমি বা আপনি আরো বেশি রহমত, বারাকাত ও মাগফিরাত পাওয়ার জন্য নিজের নানা যোগ্যতাকে আগের চেয়েও বেশি বিকশিত করতে পেরেছি তাহলে আল্লাহ অবশ্যই আগামী বছরের জন্য আমাকে বা আপনাকে আরো বেশি সুযোগ দিবেন। আর আল্লাহ যদি দেখেন যে, না এই ব্যক্তি আমার কাছে এইসব কামনা করছে না এবং পরকাল ও মৃত্যুর জন্য পাথেয় সংগ্রহে তার তেমন কোনো আগ্রহ নেই তাহলে আরো একটি নতুন রমজান ও শবে কদর তার জন্য তেমন একটা উজ্জ্বল বা সুবর্ণ সুযোগ হয়ে ধরা দেয় না।
যে ছাত্র সারা বছর ভালোভাবে পড়াশুনা করে তাকে যেমন পরীক্ষার আগের রাতে বেশি পড়তে হয় না তেমনি যে মুসলমান সারা বছর নিজেকে পবিত্র রাখার সাধনা করে ও বেশি বেশি সৎকর্ম করে রমজানে এবং শবে কদরের রাতে আল্লাহ তার জন্য সুযোগের দরজাগুলো অবশ্যই অনেকে বেশি মাত্রায় উন্মোচন করবেন। এ ধরনের ব্যক্তি হবেন বিশেষ অতিথির মর্যাদাপ্রাপ্ত। অন্যদিকে যারা সারা বছর উদাসীন থাকে বা পাপাচারে লিপ্ত থাকে রমজান ও শবে কদরের রাত তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমার উপলক্ষ হয়ে দেখা দেয় মাত্র। তাই যারা সারা বছরই আল্লাহকে সন্তুষ্ট রেখেছে আল্লাহ রমজানের সৎকর্মের জন্য আরো বেশি সন্তুষ্ট হন। আর যারা সারা বছরের আল্লাহর ক্ষমা লাভের জন্য সচেষ্ট ছিল না তারা কেবল সাধারণ ক্ষমা পেয়ে পরীক্ষায় শুধু পাশ নম্বরটি অর্জন করেন।
মহান আল্লাহ বলেছেন, যখন আমার বান্দাহ নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করে তখন আল্লাহ নিজেই তার প্রেমিক হয়ে যান এবং এ অবস্থায় বান্দাহ যা চান আল্লাহ তাকে তা-ই দেন। একত্ববাদ, আত্মত্যাগ ও ঈমানের কঠোর নানা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ইব্রাহীম (আ.)'র জন্য আল্লাহ বিশাল অগ্নিকুণ্ডকে ফুলের বাগানে পরিণত করেছিলেন এবং সেখানকার তাপমাত্রা হয়ে পড়েছিল নাতিশীতোষ্ণ। আর এ জন্য ইব্রাহীম (আ.)-কে কিছু চাইতেই হয়নি আল্লাহর কাছে। ফেরেশতারা যখন ওই কঠিন মুহূর্তে সাহায্যের প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে যান ইব্রাহিম (আ.)'র কাছে তখন তিনি জানান যে, আল্লাহ তো নিজেই আমার অবস্থা জানেন ও আমাকে দেখছেন! এ ধরনের ব্যক্তিত্বদের জন্য প্রতিটি দিন ও প্রতিটি মুহূর্তই শবেকদরের তুল্য। এ জন্যই আমিরুল মু'মিনিন আলী (আ.) বলেছেন, যে দিন কোনো মুসলমান কোনো পাপ করে না সে দিনটি তার জন্য ঈদের দিন।
সুতরাং আমাদের উচিত উক্ত রাতটি থেকে যথাসম্ভব ঐশী মুনাফা অজন করা।
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন