চীন গাজায় আগ্রাসন বন্ধ করতে ইসরাইলের প্রতি আহবান জানিয়েছে
চীন গাজায় আগ্রাসন বন্ধ করতে ইসরাইলের প্রতি আহবান জানিয়েছে
চীন গাজায় যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইসরাইলের প্রতি আহবান জানিয়েছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুং লি গাজার বিভিন্ন শহরে ইসরাইলি সামরিক আগ্রাসনকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, গাজায় অব্যাহত গণহত্যা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক উত্তেজনা ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করতে পারে। বরাবরের মতই চীন দুপক্ষকেই যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনায় বসার আহবান জানিয়েছে।
ইসরাইল গত ৮ই জুলাই থেকে গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে আসছে এবং এসব হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় প্রায় ৪০০ শহীদ ও হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে। তবে চীন এত দেরিতে কেন গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তাপরিষদের স্থায়ী সদস্য চীনসহ আরো বহু দেশ ফিলিস্তিনের নিরীহ মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধের দাবি জানিয়েছে।
চীন ও দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইল ১৯৯২ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর তারা সবসময়ই স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর ২০০০ সাল পর্যন্ত সময়ে চীনা কর্মকর্তারা বহুবার ইসরাইল সফর করেছেন অন্যদিকে ইসরাইলের কর্মকর্তারাও বহুবার চীন সফর করেছেন। চীন ও ইসরাইলের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক বজায় রয়েছে। ইসরাইলের যুদ্ধমন্ত্রী ইহুদ বারাক ২৫ কোটি ডলার মূল্যের অত্যাধুনিক ফ্যালকন রাডার ব্যবস্থা চীনের কাছে বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু মার্কিন সরকারের চাপে পড়ে ইহুদ বারাক পরবর্তীতে চীনের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করা থেকে বিরত থাকেন। তবে চীনের কাছে ইসরাইলের রাডার ব্যবস্থা বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে ইসরাইলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু চীনের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র পরিদর্শন করে এসেছিলেন। এরপর চীনা প্রেসিডেন্টও ইসরাইল সফরে গিয়েছিলেন। চীন ও ইসরাইলের কর্মকর্তাদের এ সফর বিনিময় থেকে তাদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায়।
চীন সরকার ৫০, ৬০ ও ৭০’র দশকে ইসরাইলের ব্যাপারে আরব দেশগুলোর নীতি অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানাতো। কিন্তু এর পর ১৯৭৯ সালে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কার কর্মসূচির আওতায় চীন ইসরাইলের ব্যাপারে নীতি পরিবর্তন করে এবং এর ফলে ইসরাইলের সঙ্গে চীনের আর্থ-রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে সম্পর্কের দরজা খুলে যায়।
চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পেছনে দখলদার ইসরাইলের অনেক উদ্দেশ্য রয়েছে। ইসরাইল চীনের সঙ্গে আর্থ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে একদিকে মধ্যপ্রাচ্যে নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে অন্যদিকে চীনে অবস্থিত ইহুদিদের অবস্থানকে শক্তিশালী করারও সুযোগ পাবে। এদিকে চীনও ইসরাইলের সঙ্গে সহযোগিতা বিস্তারের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে তার অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা চালাচ্ছে। চীনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরাইলের সঙ্গে সহযোগিতা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এ ছাড়া, তাইওয়ানের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং ওয়াশিংটন-বেইজিং সম্পর্ক উন্নয়নে ইহুদিবাদী লবিকে ব্যবহার করাও চীনের আরেকটি উদ্দেশ্য।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখলেও দেশটি গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছে তাতে তেলআবিব-বেইজিং সম্পর্ক কোন দিকে যায় সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন