ইসরাইল ব্যবহার করছে ‘আয়রন ডোম’
ইসরাইল ব্যবহার করছে ‘আয়রন ডোম’
হামাসের রকেট হামলা থেকে প্রাণ বাঁচাতে বোমা আশ্রয় কেন্দ্রে ঢুকছে ইহুদিবাদীরা
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে ছোঁড়া রকেট ঠেকানোর জন্য ইহুদিবাদী ইসরাইল ব্যবহার করছে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’। ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের রকেট হামলা তীব্রতর হয়ে ওঠায় ইসরাইল এতোটাই দিশেহারা হয়ে উঠেছে যে এখন এর চেয়ে উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির বিষয়ে মাথা ঘামাতে হচ্ছে তাকে।
মঙ্গলবার হামাস ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ১১৭টি রকেট ছুঁড়েছে। এগুলো তেল আবিব, জেরুজালেম এবং গাজা থেকে ১৫০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত হাদেরাসহ ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ ৪৫টি নগরী লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয়। ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, গাজা থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী যে শহরে হামলা চালানো হয়েছে তা হলো হাদেরা।
হামাসের ছোঁড়া এ সব রকেটের ৪৫টি ধ্বংস করেছে ‘আয়রন ডোম’। লক্ষ্যবস্তুর ৩.৪ থেকে ৪৩.৪ মাইলের মধ্যে রকেট ধ্বংস করার ক্ষমতা ‘আয়রন ডোমের’ আছে বলে দাবি করা হয়। হামাসের নিক্ষিপ্ত রকেট ধ্বংস করার জন্য ‘আয়রন ডোমের’ রাডার সব সময় আকাশে নজর রাখছে। ছুটে আসা রকেটের ধরণ এবং কোথায় এটি আছে তা রাডারের চোখে ধরা পড়ে। ছুটে আসা রকেটের গতিপথ চোখের নিমিষেই বিশ্লেষণ করতে পারে আয়রন ডোমের সফটঅয়্যার। হামাসের রকেটের লক্ষ্যবস্তু কী এবং কোথায় এটি আঘাত হানতে পারে তা নিমিষেই বের করে ফেলা হয়। যদি দেখা যায়, কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আঘাত হানতে ছুটছে হামাসের রকেট তখন তাকে ধ্বংস করার পদক্ষেপ নেয়া হয়। এজন্য ছুটে আসা রকেটকে লক্ষ্য করে ভূমি থেকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের রকেট বিধ্বংসী ‘তামির’ ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়। ভূমির সঙ্গে যোগাযোগ নষ্ট হয়ে গেলেও যাতে ছুটে আসা রকেটকে ধ্বংস করতে পারে সে ব্যবস্থা করা আছে ‘তামির’ ক্ষেপণাস্ত্রে। প্রতিটি রকেট বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রে ব্যয় হয় ৯৫ হাজার ডলারের সমপরিমাণ অর্থ। অন্যদিকে বলা হয়, হামাসের একটি রকেট তৈরিতে ব্যয় হয় ৬০০ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ।
কিন্তু কার্যত দেখা যাচ্ছে, আয়রন ডোম ইসরাইলের আকাশে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করেছে বলে তেল আবিব দাবি করলেও বাস্তবে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় কোনো কাজ হচ্ছে না। ২০১২ সালের নভেম্বরে গাজায় ইহুদিবাদী আগ্রাসনের সময়ে হামাস ১,৫০০ রকেট ছুঁড়েছিল। এর মধ্যে মাত্র ৪২৬টি ঠেকাতে পেরেছিল আয়রন ডোম। বাকি ১,৫৭৪টি রকেট ইসরাইলে আঘাত হানে। চলমান সংঘর্ষেও হামাসের বেশিরভাগ রকেট ইসরাইলে আঘাত হানছে এবং দখলদার দেশটি থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে সাইরেন বেজে ওঠামাত্র ইহুদিবাদীরা জীবন বাঁচানোর জন্য আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছে।
ফলে আয়রন ডোমের উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে ইসরাইলকে। ইহুদিবাদী ইসরাইলি প্রতিরক্ষা কোম্পানি রাফেল তৈরি করছে ‘আয়রন ডোম’। রাফেল এপ্রিলে খ্যাতনামা প্রতিরক্ষা সাপ্তাহিক জেনকে বলেছে, ‘আয়রন ডোমের’ হার্ডঅয়্যার এবং সফটঅয়্যারে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। তবে সে পরিবর্তন আনা হবে বা পরিবর্তনের ধরণ কি হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি রাফেল। অবশ্য রাফেল স্বীকার করেছে, ফিলিস্তিনিদের রকেট নির্মাণ প্রযুক্তির সঙ্গে ইহুদিবাদী ইসরাইলকে পাল্লা দিতে হচ্ছে এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে বাধ্য হচ্ছে।
এ ছাড়া, ‘আয়রন ডোমের’ সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার এবং এর চেয়েও উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির পদক্ষেপ নিতে হয়েছে রাফেলকে। ‘ডেভিড স্লিং’ বা ‘ডেভিডের গুলতি’ নামের এ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির জন্য মার্কিন সংস্থা রেথনের সঙ্গে জোট বেঁধেছে। এই ব্যবস্থা ৪৫ থেকে ২০০ মাইলের মধ্যে রকেট ধ্বংস করতে পারবে বলে জানানো হয়েছে। আয়রন ডোম খাতে বছরে ১৭ কোটি ৬০ লাখ ডলারের যোগান দেয় আমেরিকা। গত মে মাসে প্রতিনিধি পরিষদ এই অর্থের পরিমাণ দ্বিগুণ করার পক্ষে ভোট দিয়েছে।
সূত্রঃ রেডিও তেহরা
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন