দায়েশ- ৭
দায়েশ- ৭
ইতিহাস এবং রেওয়ায়েতে যে নাফসে যাকিয়া’র হত্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে যাকে ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাবের পূর্বে হত্যা করা হবে এবং উক্ত আলামতটি হচ্ছে ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাবের সর্বশেষ নিশ্চিত আলামত। যাকে ইমাম মাহদী (আ.) এর বার্তা প্রচার করার সময় মসজিদুল হারামে মাকাম ও রুকুনের মাঝে হত্যা করা হবে।
ইসলামের ইতিহাসে কয়েকজন নাফসে যাকিয়া’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
নাফসে যাকিয়া এর অর্থ হচ্ছে যে ব্যাক্তি গুনাহ করে না। রেওয়ায়েতের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে আমরা দেখতে পাই যেখানে চারজন নাফসে যাকিয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
১- প্রথম নাফসে যাকিয়াঃ হজরত খিযির (আ.) এর যুগে একজন নব যুবক যাকে হজরত খিযির (আ.) হত্যা করে। হজরত মূসা (আ.) তাকে বলে কেন তুমি একজন “নাফসে যাকিয়া” (নির্দোষ ব্যাক্তি) কে হত্যা করলে যে কাউকে হত্যা করেনি.....। উক্ত নাফসে যাকিয়া যাকে ইমাম মাহদী (আ.) জন্মের প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে হত্যা করা হয়।
২- দ্বিতীয় নাফসে যাকিয়াঃ হজরত ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) এর যুগে যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত নাফসে যাকিয়াকে ইমাম সাদিক্ব (আ.) এর প্রায় ১১০ বছর পূর্বে হত্যা করা হয়।
৩- তৃতীয় নাফসে যাকিয়াঃ উক্ত নাফসে যাকিয়া নাজাফে আশরাফে শাহাদাত বরণ করবে। সে সহ আরো ৭০ জন কে কুফার পিছনের এলাকায় নাজাফে হত্যা করা হবে।
৪- কিন্তু যে নাফসে যাকিয়া ইমাম মাহদী (আ.) এর সাথে সম্পৃক্ত তাকে ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাবের তিন মাস দুই দিন পরে এবং ইমাম (আ.) এর কিয়ামের ১৫ দিন পূর্বে রুকুন ও মাকামের মধ্যবর্তি স্থানে জিলহজ্ব মাসের ২৫ তারিখে শহীদ করা হবে।
নাফসে যাকিয়া সম্পর্কে একাধিক রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছেঃ
ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) থেকে বর্ণিত তিনি বলছেনঃ নাফসে যাকিয়া যাকে হত্যা করা হবে সে হবে রাসুল (সা.) এর বংশ থেকে তাকে মাকাম ও রুকুনের মাঝে হত্যা করা হবে। তার নাম হবে মোহাম্মাদ বিন হাসান (নাফসে যাকিয়া)।
রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে নাফসে যাকিয়া হবে ইমাম মাহদী (আ.) এর সাহাবী ইমাম (আ.) তাকে তাঁর আবির্ভাবের পূর্বে মক্কাবাসীদের কাছে প্রেরণ করবেন যেন সে তাদেরকে ইমাম (আ.) এর আবির্ভাবের খবর দেয়। যখন সে ইমাম (আ.) এর আবির্ভাবের খবর মক্কাবাসীকে দিবে তখন তারা তাঁর উপরে হামলা করবে এং তাঁকে হত্যা করবে।
নাফসে যাকিয়ার শাহাদতঃ সে হবে তার গোত্র এবং জাতীর মধ্যে একজন সম্মানিত ব্যাক্তি। সে সুফিয়ানীদের আগমণের সময় মদীনাতে যাবে এবং সেখানের জনগণকে ইসলাম এবং ঐক্যর আহবান জানাবে। যখন সুফিয়ানীরা মদীনাতে পৌছাবে তখন তিনি মক্কা অভিমুখে রওনা হবেন এবং সেখানেও তিনি ইসলাম ও ঐক্যর দাওয়াত দিবেন এবং আহলে বাইতে রাসুলের প্রতি কৃত অত্যাচারের কথাকে বর্ণনা করবে। তার উক্ত কাজকে কেন্দ্র করে তাকে হজ্বের পরে জিলহজ্ব মাসের ২৫শে তারিখে মাকাম ও রুকেুনের মাঝে শহীদ করা হবে এবং তার মাথাকে তার শরীর থেকে আলাদা করা হবে এবং এটা হবে কাবার ইতিহাসের এমন এক ঘটনা যা পূর্বে কখনই ঘটেনি।
হেজাজে আরো দুই সৈয়দকে হত্যা করা হয়ঃ
ইমাম মাহদী (আ.)’র অবির্ভবের পূর্বে আরো দুইজন সৈয়দকে হত্যা করা হবে। তাদের মধ্যে একেজনকে ইরাকী একজন সুফিয়ানীদের অনুসারী হত্যা করবে সে হবে নাফসে যাকিয়ার চাচাতো ভাই। অপর একজন কে হত্যা করা হবে সে হবে প্রকৃত নাফসে যাকিয়া যাকে জিলহজ্ব মাসের ২৫ তারিখে শহীদ করা হবে। তার ১৫ দিন পরে আশুরার দিন ইমাম মাহদী (আ.) কিয়াম করবেন।
নাফসে যাকিয়া সম্পর্কিত রেওয়ায়েতঃ
১- রাসুল (সা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেনঃ নাফসে যাকিয়াকে হত্যা করার পরে ইমাম মাহদী কিয়াম করবেন। যেভাবে মেহামানরা বিয়ে বাড়িতে অনন্দিত অবস্থায় যায় অনুরূপভাবে মানুষেরা দলে দলে তার কাছে এসে জমা হবে। (আল মালায়েম ওয়াল ফেতান, পৃষ্ঠা ১৩৯, অধ্যায় ৬৩, আল হাওয়ি ওয়াল ফাতাওয়ি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৬৫)
২- আমিরুল মুমিনিন (আ.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেনঃ তোমরা কি জানতে চাও অমুক হুকুমত সম্পর্কে যে কখন তা শেষ হবে? সবাই বলে হ্যাঁ। যখন উক্ত পবিত্র ব্যাক্তিকে (নাফসে যাকিয়া) পবিত্র মাসে, পবিত্র স্থানে তাকে হত্যা করা হবে এবং সেই পবিত্র সত্তার শপথ তাদের হুকুমত ১৫ রাতের বেশী স্থায়ী হবে না। (বাশারাতুল ইসলাম, পৃষ্ঠা ৪৮, বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ২৩৪)
৩- ইমাম বাকের (আ.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেনঃ নাফসে যাকিয়াকে হত্যা করার ১৫ দিনের মধ্যে ইমাম মাহদী (আ.) আবির্ভূত হবে।(বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ২২৩, ২২৪)
নাফসে যাকিয়াকে কিভাবে হত্যা করা হয়ঃ
ইমাম বাকের (আ.) থেকে রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, ইমাম মাহদী (আ.) তার সাহায্যেকারীদেরকে বলবেন যে মক্কার লোকেরা আমাকে ভালবাসেনা কিন্তু আমি তাদের কাছে আমার হুজ্জাতকে পৌছানোর জন্য আমার একজন লোককে তাদের কাছে প্রেরণ করতে চাই। যেন সে তাদের কাছে আমার হুজ্জাতকে পূর্ণ করে। তখন তিনি তার একজন সঙ্গিদের মধ্যে থেকে একজনকে ডাকেন এবং বলেন তুমি মক্কাবাসীর কাছে যাও এবং বল আমি ইমাম (আ.) এর প্রেরিত একজন লোক। তিনি তোমাদের উদ্দেশ্যে করে বলেছেন। আমরা আহলে বাইত’রা হচ্ছি রহমত, রেসালাত ও খেলাফতের খনি স্বরূপ। আমরা হচ্ছি রাসুল (সা.) এর বংশ হতে কিন্তু তারপরেও আমাদের উপরে অত্যাচার করা হয়েছে আমাদেরকে বিভিন্ন স্থানে ও বাস্তুহারা অবস্থায় রাখা হয়েছে। রাসুল (সা.) এর ওয়াফাতের পর থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত আমাদের হক্বকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। এখন আমারা তোমাদের কাছে সাহায্যে কামনা করছি সুতরাং আমাদেরকে সাহায্যে কর।
যখন নাফসে যাকিয়া উক্ত কথাগুলো মক্কাবাসীদের সামনে বলে তখন তাকে রুকুন ও মাকামের মাঝে হত্যা করা হয় এবং সেই হচ্ছে প্রকৃত নাফসে যাকিয়া।(বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ৩০৭, হাদীস নং ৮১)
উপরে উল্লেখিত আলোচনা থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হয় তা হচ্ছে যদি কোন ব্যাক্তি নিজেকে সুফিয়ানী বলে দাবী করে তাহলে তা তার জন্য সম্মানজনক বিষয় না বরং তা হবে তার একটি লজ্জাজনক বিষয়। কিন্তু আমার দেখতে পাই কিছু লোক যারা নিজেদেরকে সুফিয়ানী বলে দাবী করছে আসলে তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্যে কি। তারা কি ইসলামের দরদী নাকি ইসলামের শত্রুদের এজেন্ট। এখন বিশ্বে এমন অবস্থা বিরাজ করছে তাতে যদি কোন মুসলমান নিজেদের বিবেক বুদ্ধিকে কাজে না লাগিয়ে শুধু অপরের কথায় কান দেয় তাহলে যেভাবে দায়েশ দলের সদস্যরা সাধারণ পুরুষ, নারী এবং বাচ্চাদেরকে ইসলামের নামে ধোকা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে বোমা বিষ্ফোড়ণ করছে এবং অনৈসলামীক কাজে লিপ্ত করাচ্ছে। অনুরুপভাবে হয়তো তারাও উক্ত কাজে লিপ্ত হতে পারে। তাই আমাদেরকে উচিত ইসলামকে সঠিকভাবে চিনা এবং বুঝে তার উপরে আমল করা। তাহলেই আমরা নেজাত পেতে পারি এবং শত্রুদের বিভিন্ন ষড়যন্ত্র থেকে নিজেকে এবং ইসলামকে রক্ষা করতে পারি। খোদা যেন আমাদেরকে ইসলামকে সঠিকভাবে চিনার এবং বুঝার শক্তি দান করুক, আমিন।
চলবে...
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন