মহিয়সী নারী হজরত খাদিজা (রা.)

মক্কাবাসীর কাছে ‘তাহিরা’ বা ‘পবিত্র’ নামে খ্যাত খাদিজা (রা.)-এর ইন্তিকালের পর রাসূল (সা.) আরও একা হয়ে পড়েন। কারণ এর কিছু দিন আগে রাসূল (সা.) তার প্রিয় চাচা আবু তালিবকে হারান। দুই প্রিয় মানুষকে হারিয়ে রাসূল (সা.) এত বেশি শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন যে, ঐ বছরকে

মহিয়সী নারী হজরত খাদিজা (রা.)

হজরত খাদিজা, হজরত মোহাম্মাদ,  hussain, mohammad, imam mahdi, সিফফিন, জামালের যুদ্ধ, নারওয়ানের যুদ্ধ, খলিফা, খেলাফত, ইমামত, আলী, সিদ্দীক, ফারুক, মোর্তযা, বদর, ওহদ, খন্দক, খায়বার, বণী Shia, Sunni, Islam, Quran, Karbala, najaf, kufa, mashad, samera, madina, makka, jannatul baqi, kazmain, ali, Fatima, hasan, সাকিফা, বণী সায়াদা, সাহাবী, হিজবুল্লাহ, ইসরাইল, ড্রোন, বিমান, হাসান নাসরুল্লাহ , লেবানন, ইরান,  চীন, মালয়েশিয়া,  স্যাটেলাইট, কুয়ালালামপুর, বেইজিং, ভিয়েতনাম, মার্কিন, গোয়েন্দা, ইরাক, সিরিয়া, মিশর, আল কায়েদা, তাকফিরী, ইখওয়ানুল মুসলেমিন, বাংলাদেশ, ভারত, জিহাদ, ফিলিস্তিন, ইহুদি, গাজা, শহীদ, জিহাদ, ক্ষেপণাস্ত্র, দূতাবাস, সৌদি আরব , কুয়েত, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন, আমেরিকা, ভিয়েনা, পরমাণু, বাহারাইন, আফগানিস্থান, থাইল্যান্ড, হজরত ফাতিমা, মার্জিয়া, সিদ্দিকা, মোহাদ্দেসা, বাতুল, উম্মে আবিহা, যাহরা, মুবারেকা, যাকিয়া, তাহেরা, রাযিয়া, জিহাদুন নিকাহ, পোপ, পাদ্রি, বাইতুল মোকাদ্দাস, ওহাবী, সালাফি, মুফতি, ড্রোন, পাকিস্থান, এজিদ, মাবিয়া, আবু সুফিয়ান, আলী আকবর, হুসাইন, শাবান, আমল, শবে বরাত, রমজান, দায়েশ, তাকফিরী, তালেবান, মোতা, মোতা বিবাহ, সেগা করা,দায়েশ, তাকফিরি, তালেবান, ওহাবী

মক্কাবাসীর কাছে ‘তাহিরা’ বা ‘পবিত্র’ নামে খ্যাত খাদিজা (রা.)-এর ইন্তিকালের পর রাসূল (সা.) আরও একা হয়ে পড়েন। কারণ এর কিছু দিন আগে রাসূল (সা.) তার প্রিয় চাচা আবু তালিবকে হারান। দুই প্রিয় মানুষকে হারিয়ে রাসূল (সা.) এত বেশি শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন যে, ঐ বছরকে তিনি ‘শোক বর্ষ’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। খাজিদা (রা.)-এর ইন্তিকালের পর রাসূল (সা.) ভীষণ কেঁদেছেন। তিনি কেঁদে কেঁদে বলেছেন, খাদিজা তুলনাহীন। সবাই যখন আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে, সে সময় আমি তার সর্বাত্বক সমর্থন পেয়েছি, পেয়েছি সার্বিক সহযোগিতা। ইসলাম প্রচার ও প্রসারে খাদিজা তার অর্থ-সম্পদ দিয়ে আমাকে সহযোগিতা করেছে।

আরবের কোরাইশ বংশের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন হজরত খাদিজা (রা.)। কিন্তু তারপরও খাদিজা (রা.) অত্যন্ত সাধারণ জীবন-যাপন করতেন। তিনি জন্মের পর থেকেই একত্ববাদী ছিলেন। ইসলাম আবির্ভাবের আগে তিনি ইব্রাহিম (আ.)-এর ধর্মে বিশ্বাস করতেন। তৎকালীন সমাজে সৎকর্ম ও দানশীলতার ক্ষেত্রে হজরত খাদিজার (রা.) সমকক্ষ কেউ ছিলেন না। তিনি ছিলেন হিজাজের অন্যতম বড় ব্যবসায়ী। বিজ্ঞ ও সুদূর প্রসারী দৃষ্টিভঙ্গীর অধিকারী খাদিজা (রা.)-এর আধ্যাত্মিকতার প্রতি ব্যাপক ঝোঁক ছিল। খাদিজা (রা.) সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাবের অপেক্ষায় ছিলেন এবং তিনি আরবের সচেতন ও শিক্ষিত প্রবীণদের কাছে শেষ নবীর নিদর্শন সম্পর্কে মাঝেমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করতেন। কিন্তু কি সৌভাগ্য নবুয়্যত প্রাপ্তির আগেই রাসূলের (সা.) সাথে পরিচয় ঘটল হজরত খাদিজার। তিনি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিজের ব্যবসায়িক কাজ সম্পাদনের উদ্দেশ্যে সিরিয়ায় পাঠালেন। এরপরই বিবি খাদিজার কাছে রাসূলের (সা.) সৎ গুণাবলীগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে উঠলো। খাদিজা (রা.) বুঝতে পারলেন, সমাজের অতুলনীয় ও পবিত্রতম পুরুষ হচ্ছেন মুহাম্মদ (সা.)।

হজরত খাদিজা আরও বুঝতে পারলেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.) মানবিক গুণাবলীতে অনন্য এবং তিনি বঞ্চিতদের অধিকার প্রতিষ্ঠা চান। রাসূলের এসব গুণাবলী হজরত খাদিজাকে আকৃষ্ট করে। এরপরই তিনি রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমার আমানতদারি, সচ্চরিত্র, সত্যবাদিতা, ভদ্রতা ও মর্যাদা আমাকে তোমার প্রতি আকৃষ্ট করেছে। এরপরই তিনি রাসূলের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান এবং দু’জনের মধ্যে দাম্পত্য জীবন শুরু হয়।

বিবি খাদিজা জানতেন যে, রাসূলের সাথে বিয়ে হলে তিনি তাকে ঐশী পথে পরিচালিত করবেন। তবে খাদিজা (রা.)-এর বিয়েকে তৎকালীন সমাজ স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। তৎকালীন অন্ধকার যুগে সামাজিক সম্পর্কের মাপকাঠি ছিল অর্থ-সম্পদ। এ কারণেই খাদিজা (রা.) সম্পদহীন রাসূল (সা.)-কে বিয়ে করায় অনেকেই তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে। কুরাইশ বংশের এক দল অহংকারী ও নিন্দুক মহিলা খাদিজা (রা.)-কে কটাক্ষ করে বলত, তোমার এত আভিজাত্য ও সম্পদের অধিকারী হবার পরও কেন দরিদ্র এক যুবককে বিয়ে করলে?

খাদিজা (রা.)-এর জবাবে বলেছিলেন, ‘এই সমাজে মুহাম্মাদ (সা.)-এর মতো আর কেউ কি আছে? তার মতো সচ্চরিত্রবান ও মর্যাদাবান দ্বিতীয় কোন ব্যক্তিকে কি তোমরা চেন? আমি তার সৎ গুণাবলীর কারণেতাকে বিয়ে করেছি।’ কিন্তু সেই সমাজের গোড়া ও মুর্খ মানুষের কাছে বিবি খাদিজার যুক্তি বোধগম্য ছিল না। এ কারণে হিজাজের জেদি মহিলারা হজরত খাদিজার সাথে শত্রুর মতো আচরণ করেছে। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়্যত প্রাপ্তির পর ঐসব মহিলার বিদ্বেষ আরও বেড়ে যায় এবং এই বিদ্বেষের মাত্রা এত বেশি ছিল যে, খাদিজা (রা.)-কে তারা তার সন্তান প্রসবের সময় বিন্দু পরিমাণ সহযোগিতাও করেনি। সব মিলিয়ে হজরত খাদিজা (রা.) ঐ সমাজে একা হয়ে পড়েছিলেন। তৎকালীন সমাজের নারীরা তাকে সহযোগিতা না করলেও আল্লাহ তার সহযোগিতায় পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত মহিলাদেরকে পাঠিয়েছিলেন।

বিপুল সম্পদের মালিক এবং সমাজে ব্যাপক প্রভাবশালী হবার পরও রাসূলের (সা.) সাথে খাদিজা (রা.)’র ব্যবহার ছিল অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ। তার আচার-ব্যবহারে অহমিকার লেশ মাত্র ছিল না। আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীর প্রতি রাসূলের ব্যাপক আগ্রহের বিষয়ে তিনি ভালো ভাবে অবহিত ছিলেন। এ কারণে বিবি খাদিজা তার সাথে এমন ভাবে আচরণ করতেন যে, রাসূলের ইবাদত-বন্দেগীতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। নবুয়্যাত লাভের আগে রাসূল (সা.) প্রতিমাসে কয়েক বার করে নূর পাহাড়ের চূড়ায় হেরা গুহায় যেতেন। আর মহিয়সী নারী বিবি খাদিজা (রা.) হাসি মুখে রাসূলকে বিদায় জানাতেন। হজরত আলী (রা.)-কে দিয়ে তিনি গুহায় নিয়মিত খাবার পাঠাতেন। কখনো কখনো তিনি নিজেও আলী (আ.)-এর সাথে হেরা গুহায় যেতেন। নবুয়্যত লাভের পর রাসূলের অনেক আত্মীয়-স্বজন তাকে প্রত্যাখ্যান করলেও বিবি খাদিজা, রাসূল (সা.)-কে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছেন। হজরত খাদিজা (রা.) বিনা বাক্যে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি শুধু মুখে ঈমান আনেননি সমগ্র অস্তিত্ব দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত হন। তিনি ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তার সকল সম্পদ রাসূলকে উপহার দিয়েছিলেন। শোয়াবে আবু তালিব নামক উপত্যকায় মুসলমানরা যখন বিচ্ছিন্ন ও অবরোধের শিকার হয়েছিল, তখন বিবি খাদিজার আর্থিক সহযোগিতা মুসলমানদের টিকে থাকতে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে। অর্থনৈতিক সঙ্কট দূর হবার পরও হযরত খাদিজার সহযোগিতা মুসলমানদের পথ চলতে সহযোগিতা করেছে।

খাদিজা (রা.) ছিলেন অত্যন্ত ধৈয্যশীল ও সহিষ্ণু। মানব মুক্তির দূত সর্বশেষ নবী রাসূল (সা.)-এর প্রতি তার পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস ছিল। এ কারণে নবুয়্যত প্রাপ্তির আগে ও পরে রাসূলের মর্যাদা অুণœ রাখতে তিনি সর্বদায় সচেষ্ট ছিলেন। কোনো কারণে রাসূল (সা.)-এর মন খারাপ থাকলে তিনি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিতেন। রাসূলের সকল কাজে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। বলতে গেলে হজরত খাদিজা ছিলেন, রাসূলের এক যোগ্য উপদেষ্টা। মুসলিম ইতিহাসবিদ ইবনে হেশাম লিখেছেন, হজরত খাদিজা (রা.) রাসূলের (সা.) প্রতি ঈমান আনেন। রাসূলের বক্তব্যকে সমর্থন করেন এবং তাকে সর্বাত্বক সহযোগিতা দেন। আল্লাহ তায়ালা হজরত খাদিজার মাধ্যমে রাসূলকে প্রশান্তি দিতেন। ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে মক্কার মুশরিকরা একদিন পাথর নিপে করে রাসূল (সা.)-কে আহত করে এবং তারা পেছনে পেছনে হজরত খাদিজার বাড়ি পর্যন্ত আসে। এর পর খাদিজা (রা.)’র ঘরেও পাথর নিপে করে। এ সময় খাদিজা (রা.) ঘর থেকে বেরিয়ে মুশরিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘লজ্জা করে না তোমরা তোমাদের বংশের সবচেয়ে মহানুভব মহিলার ঘরে পাথর নিক্ষেপ করছো? এ কথা শুনে মুশরিকরা লজ্জিত হয়ে চলে যায়। এরপর বিবি খাদিজা (রা.) রাসূলের (সা.) জখমের চিকিৎসা করেন। এ সময় রাসূল (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে হজরত খাদিজার (রা.) প্রতি সালাম পৌঁছান এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত করার সুসংবাদ দেন। হজরত খাদিজা (রা.)-কে বেহেশতের মধ্যে কারুকার্য খচিত একটি বিরাট অট্রালিকা দেয়া হবে বলে আল্লাহতায়ালা জানিয়ে দেন, যেখানে কোনো দুঃখ-কষ্টের অস্তিত্ব থাকবে না।

আসলে মুসলমানদের উপর অবরোধ আরোপিত হবার পর হজরত খাদিজা (রা.) অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন। এ সময় সম্পদ ও আভিজাত্যের মধ্যে বেড়ে উঠা বিবি খাদিজা দীর্ঘ দিন ধরে শুষ্ক এক উপত্যকায় কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করেছেন। ইসলামের জন্য তার অঢেল সম্পদ বিলিয়ে দিয়েছিলেন। ঐ উপত্যকায় কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করার কারণে হজরত খাদিজার স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। তিনি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর ফলেই তার মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়।

হজরত খাদিজা (রা.) মৃত্যুশয্যায় সর্বশেষ যে কথাটি রাসূল (সা.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন তা হলো, ‘হে রাসূল আমি আপনার সব অধিকার পরিপূর্ণ ভাবে রক্ষা করতে পারিনি, আমাকে মা করে দিন।’ আল্লাহর রাসূল (সা.) ও ইসলামের জন্য এত ত্যাগ-তিতিক্ষার পরও যেন তার মন ভরেনি। তিনি ইসলাম ও রাসূলের জন্য আরও কষ্ট করতে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু মানুষের আয়ু তো নির্দিষ্ট। কাজেই রাসূল (সা.)-কে ছেড়ে তার চলে যেতেই হয়েছে। ইসলামের এই মহীয়সী নারী ৬১৭ খ্রিস্টাব্দের ১০ই রমজান ৬৫ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন।
সূত্র: ইন্টারনেট

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন