ওবামার ইরাকেও দ্বিমুখী চাল!
ওবামার ইরাকেও দ্বিমুখী চাল!
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, সিরিয়ার 'পাশ্চাত্যপন্থী বা মধ্যপন্থী বিদ্রোহীরা' আমেরিকার দেয়া অস্ত্রের মাধ্যমে দেশটির আসাদ সরকারকে উৎখাত করতে পারতো-এমন ধারণা মোটেই সত্য নয়, বরং আকাশ-কুসুম কল্পনা মাত্র।
সিবিএস নিউজ-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ওবামা এই মন্তব্য করেছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, সিরিয়ায় আগ থেকেই তৈরি হয়ে থাকা 'পশ্চিমাপন্থী বা মধ্যপন্থী বিদ্রোহীরা' আমেরিকার দেয়া অস্ত্রের মাধ্যমে কোনো না কোনোভাবে আসাদকে পরাজিত করতে পারতো-এমন ধারণা মোটেই সত্য নয়; "আপনারা জানেন, আমরা সিরিয়ার উদারপন্থী বিদ্রোহীদের সঙ্গে কাজ করার জন্য অনেক সময় ব্যয় করেছি (কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি)।"
বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়ায় জনসমর্থনহীন পরগাছা জাতীয় বিদ্রোহী ও তাদের ভাড়া করা বিদেশী সন্ত্রাসীদের অস্ত্র, অর্থ ও গোয়েন্দা তথ্যসহ সব ধরনের অস্ত্র দিয়েও মার্কিন সরকার এবং তাদের সেবাদাস স্থানীয় সরকারগুলো আসাদের জনপ্রিয় সরকারের অনুগত সেনাদের পরাজিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং সিরিয়ায় বিদেশী মদদপুষ্ট বিদ্রোহীদের চূড়ান্ত পরাজয় ঘনিয়ে আসছে বলেই ওবামা এ বিষয়ে সাফাই দেয়ার চেষ্টা করছেন।
একই সাক্ষাৎকারে ওবামা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ক্ষেত্রে শূন্যতার বিষয়েও সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এই শূন্যতার কারনেই তাকফিরি গ্রুপ আইএসআইএল ইরাক ও সিরিয়ায় অগ্রসর হতে পেরেছে। আইএসআইএলসহ কয়েকটি চরমপন্থী গ্রুপ আমেরিকার জন্য মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী হুমকি সৃষ্টি করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এইসব গ্রুপ বিশ্বের জন্যও হুমকি সৃষ্টি করেছে বলে দাবি করে ওবামা বলেন, মিত্রদের সহায়তা নিয়ে আমেরিকাকেই এই সমস্যা সমাধান করতে হবে।
ওবামা এমন সময় এইসব গ্রুপকে চরমপন্থী বলে উল্লেখ করলেন যখন এইসব গ্রুপ কিছু দিন আগেও মার্কিন সরকারের চোখের সামনেই সিরিয়ায় ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছে এবং এখনও দেশটির কোনো কোনো অঞ্চলে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন সরকার সব সময়ই এ বিষয়ে নীরব থেকেছে।
অথচ আলকায়দার নতুন সংস্করণ আইএসআইএল-যে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাসহ সেবাদাস আরব সরকারগুলোর সর্বাত্মক সহায়তা নিয়ে গঠিত হয়েছে ওবামা যেন সে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাইছেন। এমনকি ইসরাইল ও তার তল্পীবাহক জর্দান ও তুরস্ক সরকারও ওয়াহাবি-তাকফিরি এই গ্রুপটিকে সহায়তা দিয়ে আসছে।
আমেরিকা অতীতেও আলকায়দা ও তালেবানের মত চরমপন্থী গ্রুপ গঠনে সর্বাত্মক সহায়তা দিয়েছিল এবং এইসব গ্রুপকে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। এরপর মার্কিন সরকারই নিজের সৃষ্ট এ ধরনের চরমপন্থীদের দমনের অজুহাতে ইরাক ও আফগানিস্তানে হামলা চালিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আসলে আমেরিকা এখন আইএসআইএল দমনের নামে ইরাকে হস্তক্ষেপ করতে চায় এবং দেশটির শিয়া, সুন্নি ও কুর্দিদের ব্যাপারে দ্বিমুখি নীতি অব্যাহত রেখে বিভেদ ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে তেল-সমৃদ্ধ এ অঞ্চলে কয়েকটি নতুন অনুগত রাষ্ট্র সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে।
উল্লেখ্য, মার্কিন সরকার আইএসআইএল-সহ নানা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে সহায়তা দিয়ে আসার পাশাপাশি এখন ইরাক সরকারকেও সহায়তার প্রস্তাব দিচ্ছে। অবশ্য এইসব প্রস্তাবের সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছে ইরাকে আমেরিকার মনের মত সরকার গঠনসহ হস্তক্ষেপকামী নানা শর্ত। অন্য কথায় মার্কিন সরকারই সর্প হয়ে দংশন করছে, আবার ওঝা হয়ে ঝাড়ার চেষ্টাও করছে কিংবা চোরকে দিয়ে চুরি করাচ্ছে, অন্যদিকে গৃহস্থকে বলছে, চুরি ঠেকানো বা তোমার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আমার শর্তসাপেক্ষ সাহায্য নেয়া ছাড়া তোমার সামনে অন্য কোনো পথ খোলা নেই।
প্রতিবেশি ইসলামী ইরান ইরাকে মার্কিন হস্তক্ষেপের কঠোর বিরোধিতা করে আসছে। ইরানের নেতারা বলছেন, ইসরাইলকে নিরাপদ রাখতে ও অস্ত্র ব্যবসা জোরদার করতেই পাশ্চাত্যের নেতৃত্বাধীন মার্কিন সরকার মধ্যপ্রাচ্যে মুসলমানদের মধ্যে শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্বসহ নানা ধরনের সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত সহিংসতা উস্কে দেয়ার চেষ্টা করছে।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন