সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক হজরত মোহাম্মাদ (সা.) -৪
সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক হজরত মোহাম্মাদ (সা.) -৪
বিশ্বনবী (সা.) আরো বলছিলেন,
" বুদ্ধিবৃত্তি বা আকলের অন্যতম কল্যাণ হল লজ্জা। আর লজ্জা থেকে উৎসারিত হয় : নমনীয়তা, দয়াশীলতা, প্রকাশ্যে এবং গোপনে আল্লাহর পাহারার প্রতি মনোযোগ, (দৈহিক ও মানসিক) সুস্থতা, মন্দ থেকে দূরে থাকা, সমৃদ্ধি, দানশীলতা, বিজয় এবং মানুষের মাঝে সুনামের সাথে স্মরণ। এগুলো বিবেকবান ব্যক্তি তার লজ্জা থেকে অর্জন করে। সুতরাং ধন্য সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর নসিহত গ্রহণ করে এবং তাঁর অপমানকে ভয় করে।"
আর বুদ্ধিবৃত্তি বা আকলের অন্যতম কল্যাণ ব্যক্তিত্ব ও স্থিরচিত্ততা থেকে উৎসারিত হয় (সংখ্যাগুলো কথায় বলুন) : ১. দয়া, ২. পরিণামদর্শিতা, ৩. আমানত রক্ষা, ৪. খেয়ানত বর্জন, ৫. সত্যবাদিতা, ৬. লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা, ৭. সম্পদের পরিশুদ্ধি, ৮. শত্রুর বিরুদ্ধে প্রস্তুতি, ৯. অসঙ্গত কাজ করতে নিষেধ করা, ১০. বোকামি বর্জন। বিবেকবানরা এসব বিষয় ব্যক্তিত্ব ও স্থিরচিত্ততা থেকে পেয়ে থাকেন। সুতরাং ধন্য সেই ব্যক্তি যে ব্যক্তিত্ব ও স্থিরচিত্তের অধিকারী হয় এবং যার মধ্যে লঘুচিত্ততা আর মূর্খতা থাকে না এবং যে ক্ষমাশীল হয় ও মার্জনা করে।
বিশ্বনবী (সা.) আরো বলছিলেন, আর বুদ্ধিবৃত্তি বা আকলের অন্যতম কল্যাণ অব্যাহতভাবে সৎ কাজে প্রবৃত্ত হওয়া থেকে লাভ হয়
: ১. অশ্লীল কথাবার্তা বর্জন,
২. মনের উৎকণ্ঠা থেকে দূরে থাকা,
৩. সতর্কতা অবলম্বন
৪. ইয়াকীন তথা অবিচল বিশ্বাস,
৫. মুক্তি-প্রিয়তা,
৬. আল্লাহর আনুগত্য,
৭. কুরআনের প্রতি সম্মান,
৮. শয়তান থেকে দূরে সরে যাওয়া,
৯. ন্যায়কে মেনে নেয়া
১০. হক ও ন্যায্য কথা। এগুলো বিবেকবান ব্যক্তি ভালো কাজে অবিচ্ছিন্নভাবে সৎ কাজে প্রবৃত্ত হওয়ার ফলে লাভ করে থাকে। ধন্য সেই ব্যক্তি যে নিজ ভবিষ্যতের চিন্তায় এবং নিজ পরকালের চিন্তায় থাকে। আর দুনিয়ার ধ্বংস থেকে শিক্ষা নেয়।
আর বুদ্ধিবৃত্তি বা আকলের অন্যতম কল্যাণ মন্দকে ঘৃণা করা থেকে লাভ হয় :
১. ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদা,
২. সহিষ্ণুতা,
৩. উপকার করা,
৪. পরিকল্পনার ওপর স্থির থাকা,
৫. সঠিক পথকে আগলে রাখা,
৬. আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস,
৭. প্রাচুর্য,
৮. নিষ্ঠা,
৯. সব অনর্থক কাজ বর্জন
১০. যা কিছু তার জন্য উপকারী তা বজায় রাখা। এগুলো বিবেকবানেরা মন্দকে ঘৃণার মাধ্যমে অর্জন করে থাকেন। সুতরাং ধন্য সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর হক পথে পদক্ষেপ নেয়, আর তাঁর পথেই চলে।
বিশ্বনবী (সা.)শামউনের প্রশ্নের জবাবে আরো বলছিলেন, বুদ্ধিবৃত্তির অন্যতম কল্যাণ হিসেবে উপদেশদাতার অনুসরণ থেকে লাভ হয় : ১. বুদ্ধির বিকাশ,
২. আত্মিক পূর্ণতা সাধন,
৩. ভালো পরিণাম,
৪. ভর্ৎসনার হাত থেকে মুক্তি,
৫. গ্রহণীয় হওয়া,
৬. বন্ধুত্ব,
৭. অন্তরের প্রসারতা,
৮. ন্যায়বিচার বা ইনসাফ,
৯. কাজে-কর্মে উন্নতি,
১০. আল্লাহর আনুগত্যের শক্তি সঞ্চার। ধন্য সেই ব্যক্তি যে নাফসের দ্বারা পরাস্ত হওয়া থেকে নিরাপদ থাকে। এগুলো হলো সেই বৈশিষ্ট্য যা আকল থেকে উৎপত্তি লাভ করে।
এ পর্যায়ে শামউন বিশ্বনবী (সা.)-কে বলেন : মূর্খদের চিহ্নগুলো আমাকে বলুন।
রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বললেন :
যদি তার সাথে তথা মূর্খের সঙ্গে মেশ, সে তোমাকে কষ্ট দেবে। যদি তার থেকে দূরে সরে যাও, তোমার বদনাম করবে। যদি তোমাকে দান করে, তাহলে তোমার ওপর করুণার গর্ব করবে। আর তুমি যদি তাকে দান করো, তা হলে অকৃতজ্ঞ হবে। যদি কোনো গোপন কথা তার সাথে বল, সে খেয়ানত করবে। আর তোমাকে যদি কোনো গোপন কথা সোপর্দ করে, তা হলে তোমার প্রতি অভিযোগ করবে। মূর্খ যদি ক্ষমতাবান হয়, তা হলে অরাজকতা করে এবং রূঢ় ও নিষ্ঠুর হয়। যদি নিঃস্ব হয়, তা হলে আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করে। যদি আনন্দিত হয় তা হলে সীমা ছাড়িয়ে যায় এবং অবাধ্য হয়, আর যদি দুঃখিত হয়, তা হলে নিরাশ হয়ে পড়ে। মূর্খ যদি হাসে তা হলে অট্টহাসি দেয়, আর যদি কাঁদে, তা হলে পশুর মতো গর্জন করে। মূর্খ ব্যক্তি সৎ লোকদের সাথে ঝগড়া করে। আল্লাহকে ভালোবাসে না এবং তাঁকে মান্য করে না। তাঁর থেকে লজ্জা করে না এবং তাঁকে স্মরণ করে না। তুমি যদি তাকে খুশী করো, তা হলে তোমার এমন গুণের প্রশংসা করবে যা তোমার মধ্যে নেই। আর যদি তোমার ওপর অসন্তুষ্ট হয় , তা হলে তোমার প্রশংসাকে বিনষ্ট করে। আর মিথ্যা প্রচারে তোমার বদনাম ছড়ায়। এগুলো মূর্খদের পন্থা।
এরপর পাদ্রি শামউন রাসূল (সা.)কে প্রশ্ন করেন, ইসলামের নিদর্শন কী, আমাকে বলুন।
রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বললেন : বিশ্বাস, জ্ঞান এবং কর্ম।
পাদ্রি শামউন প্রশ্ন করেন : ঈমানের , জ্ঞানের ও কর্মের চিহ্ন কী?
রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বললেন : ঈমানের চিহ্ন চারটি : আল্লাহর একত্বের স্বীকারোক্তি, তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস আর তাঁর রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস।
আর জ্ঞানের চিহ্ন চারটি : আল্লাহকে চেনা, তাঁর বন্ধুদের পরিচয় জানা, তাঁর ফরযগুলোকে জানা এবং সেগুলোর সংরক্ষণ করা যাতে সেসব সঠিকভাবে সম্পাদিত হয়।
আর কর্মের চিহ্ন হলো নামায, রোযা, যাকাত এবং নিষ্ঠা তথা ইবাদতকে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সম্পাদন করা।
সূত্রঃ তেহরান রেডিও
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন