কারাগারে আধ্যাত্মিকতার চরম উৎকর্ষে
কারাগারে আধ্যাত্মিকতার চরম উৎকর্ষে
এস, এ, এ
এক বছর হারুনর রশিদ হজ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয় এবং যাত্রা পথে মদীনাতে আসে। মদীনাতে আসার কয়েকদিন পরে সে তার লোকদেরকে নির্দেশ দেয় যে, তারা যেন হজরত ইমাম মূসা কাযিম (আ.) কে তার সামনে উপস্থিত করে। ইমাম মূসা কাযিম (আ.) তখন মসজিদে ছিলেন তাকে সেখান থেকে ধরে এনে হারুনের সামনে তাকে হাতে পায়ে শিকল বাধা অবস্থায় উপস্থিত করা হয়। তখন হারুনর রশিদ দুইটি উটের উপরে ডুলি বানাতে বলে এবং তার একটির মধ্যে ইমাম মূসা কাযিম (আ.) বসিয়ে দেয়। একটি উটকে বাসরার দিকে এবং অপরটিকে কুফার দিকে রওনা করে দেয় এবং ইমাম কাযিম (আ.) কে বাসরাগামী উটের পিঠে বসিয়ে দেয়। তখন ঈসা নামক ব্যাক্তি ছিল বাসরা শহরের গভর্নর। ইমাম (আ.) কে তার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
হারুনর রশিদের ইমাম (আ.) কে হত্যা করার নির্দেশ আসার পূর্ব পর্যন্ত ঈসা বাসরাতে তাঁকে এক বছর তার কারাগারে বন্দি করে রাখে। ঈসা তার পরামর্শদাতাদের সাথে পরামর্শ করে যে ইমাম (আ.) কে হত্যা করা ঠিক হবে কিনা? তারা তাকে পরামর্শ দেয় যে ইমাম (আ.) কে হত্যা করা ঠিক হবে না এবং হারুনর রশিদকে চিঠি লিখতে বলে যে, সে যেন তাকে উক্ত কাজটি করতে বাধ্য না করে। অতঃপর ঈসা হারুনর রশিদকে চিঠি লিখে, তাতে সে লিখে যে, ইমাম মূসা কাযিম (আ.) বেশ কিছুদিন হয়েছে যে, আমার কারাগারে বন্দি অবস্থায় আছে আমি তাকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেছি এবং আমার গুপ্তচরেরা লক্ষ্য করেছে যে সে ইবাদত ছাড়া আর কিছুই করেনা এবং সর্বদা দোয়াতে মশগুল থাকে। কিন্তু সে দোয়াতে কি বলে তা আমরা বুঝতে পারিনি। কিন্তু সে কখনও আমার এবং আপনার প্রতি অভিসম্পাত বা আমাদের সম্পর্কে খারাপ কোন কথা সে উচ্চারণ করেনি বরং সে সর্বদা দোয়াতে নিমগ্ন থাকেন। এখন আপনি এমন কাউকে প্রেরণ করেন যেন আমি ইমাম মূসা কাযিম (আ.) কে তার কাছে হস্তান্তর করে দিতে পারি আর তানাহলে আমি তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করে দিব। কেননা আমি তাকে কারাগারে এর চেয়ে বেশী আটকিয়ে রাখতে পারব না।
ঈসার কারাগারের গুপ্তচরেরা বলে যে, আমরা শুনেছি যে, ইমাম মূসা কাযিম (আ.) তার দোয়াতে বলতেনঃ হে খোদা! আমি তোমার নৈকট্য অর্জন এবং তোমার ইবাদতের জন্য সর্বদা একটি নির্জন স্থানই চেয়েছিলাম এবং তুমি আমার জন্য এমন এক নির্জন স্থানের ব্যাবস্থা করেছ। এজন্য আমি তোমার দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া আদায় করছি।
তারপরে হারুনর রশিদ ফাযল বিন রাবী নামক তার এক উজিরকে প্রেরণ করে যেন সে ইমাম (আ.) কে হত্যা করে। কিন্তু সেও এ কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায়। তারপরে হারুনর রশিদ ইয়াহিয়ার পুত্র ফাযলকে বলে সেও উক্ত কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায়। তারপরে হারুনর রশিদ এমন এক ব্যাক্তিকে নির্ধারণ করে যে ছিল পাষাণ হৃদয়ের। হারুন তার এক বার্তা বাহককে বাগদাদে সিন্দি বিন শাহেকের কাছে প্রেরণ করে (সে ছিল ইয়াহুদী ধর্মের অনুসারী) এবং তাকে ইমাম মূসা কাযিম (আ.) কে হত্যা করার নির্দেশ দেয়।
সিন্দি বিন শাহেক খাবারে বিষ মাখিয়ে তা ইমাম মূসা ইবনে জাফর (আ.) এর কাছে নিয়ে যায়। ইমাম তা খাওয়ার পরে তিন দিন পর্যন্ত অসুস্থ থাকে। অতঃপর সারা জীবনের দুঃখ কষ্ট সহ্য করার পরে কারাগারে বন্দি ও অসহায় অবস্থায় শাহাদতের অমৃত সুধা পান করেন।
সূত্রঃ আল ইরশাদ, শেইখ মুফিদ, তরজুমা সৈয়দ হাশেম রাসুলি মাহাললাতি।
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন