অস্ট্রিয়ায় আবার পরমাণু আলোচনা শুরু
অস্ট্রিয়ায় আবার পরমাণু আলোচনা শুরু
অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের নতুন করে পরমাণু আলোচনা গতকাল থেকে শুরু হয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ এবং ছয় জাতিগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাশ্টোন বৈঠকের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পরমাণু বিষয়ে চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছার জন্য ধারাবাহিক আলোচনার এটিই হচ্ছে প্রথম বৈঠক।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফের নেতৃত্বে ইরানের আলোচক দল গতকাল ভিয়েনায় পৌঁছান। ভিয়েনায় পৌঁছেই তিনি ক্যাথেরিন অ্যাশ্টোনের সঙ্গে সাক্ষাতের পরএক সংবাদ সম্মেলনে ইরানের জনগণ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গে করে না এবং নিজ অধিকার প্রশ্নেও কোনো ছাড় দেবে না-মর্মে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, আমরা এ জন্য সংলাপে এসেছি যাতে চূড়ান্ত সমাধানে পৌঁছা যায়। ইরানের পরমাণু কর্মসূচির কট্টর বিরোধী মার্কিন নেতৃত্বে পাশ্চাত্য বিশ্ব গত কয়েক বছর ধরে ইরান বিরোধী অপপ্রচার, হুমকি ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর এখন তারা তেহরানের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে ফিরে এসেছে।
অচলাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য গত ২৪ নভেম্বর স্বাক্ষরিত ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তিকে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ চুক্তি ইরানের সঙ্গে আমেরিকার আলোচনার পথকে সুগম করে দিয়েছে। এ বাস্তবতা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বক্তব্যেও লক্ষ্য করা গেছে। প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছেন, যদি এককভাবে তার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা থাকতো তাহলে তিনি ইরানের সমস্ত পরমাণু স্থাপনা বন্ধের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতেন। কিন্তু আমেরিকা ছয় জাতিগোষ্ঠীর অন্যতম শরীক যারা কিনা সম্মিলিতভাবে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছার জন্য আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।
বাস্তবতা হচ্ছে, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে বলে পাশ্চাত্য এতদিন ধরে যে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে তা এখন অসার প্রমাণিত হয়েছে। চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছার জন্য পারস্পরিক আস্থা সবচেয়ে জরুরি। এ অবস্থায় পাশ্চাত্যের যে কোনো ষড়যন্ত্র পরমাণু সংলাপকে জটিল করে তুলতে পারে। চলমান পরমাণু আলোচনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে বিতর্ক।
ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের যে প্রাথমিক পরমাণু চুক্তি সই হয়েছে তাতে পরমাণু জ্বালানি উৎপাদনের জন্য ইরান ২০ মাত্রা থেকে নামিয়ে পাঁচ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ করতে পারবে। জেনেভা চুক্তিতে আরো বলা হয়েছে, ইরান যদি জেনেভা চুক্তি ঠিক মত মেনে চলে তাহলে এনপিটি চুক্তিতে সইকারী অন্যান্য দেশ যে অধিকার পায় ইরানকেও সেই অধিকার দেয়া হবে। পরমাণু অস্ত্র উৎপাদন ও বিস্তার রোধ সংক্রান্ত এনপিটি চুক্তিতে সইকারী দেশগুলোর মধ্যে ইরানও রয়েছে। ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী ইরানও আরাকের হেভিওয়াটার নির্মাণ কেন্দ্র নিয়ে সৃষ্ট সন্দেহ দূর করার পদক্ষেপ নেবে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, পরমাণু বিষয়ে চূড়ান্ত সমাধানে পৌঁছার জন্য এখনো অনেক পর্যায় অতিক্রম করতে হবে। এ সংক্রান্ত আলোচনা অত্যন্ত জটিল একটি প্রক্রিয়া। এ কারণে জেনেভা সমঝোতা অনুযায়ী আগামী ছয় মাসের মধ্যে চূড়ান্ত সমাধানে পৌঁছার যে কথা বলা হয়েছিল দু’পক্ষই ওই সময়ের পরও আলোচনা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে। ইরান ও ছয়জাতি গোষ্ঠী যদি রাজি থাকে তাহলে চূড়ান্ত সমাধানে পৌঁছার জন্য পরবর্তী ছয় মাসের টার্গেট নিয়ে তারা আলোচনা করতে পারে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ ভিয়েনায় ফের আলোচনা শুরুর প্রাক্কালে বলেছেন, প্রতিপক্ষ যদি তাদের সৎ মনোভাবের পরিচয় দিতে চায় তাহলে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যেও তারা চূড়ান্ত সমঝোতায় আসতে পারে।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন