সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী হত্যা মামলার রায়
সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী হত্যা মামলার রায়
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী হত্যা মামলার তিন আসামীর মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আসামীরা হলেন- পেরারিভালান, সান্থন ও মুরুগান।
আজ (মঙ্গলবার) প্রধান বিচারপতি পি সত্যশিবমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ রায় দিয়েছে। প্রাণভিক্ষার আর্জি নিয়ে সিদ্ধান্তে দীর্ঘসূত্রিতার কারণ দেখিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ওই তিন আসামির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ রায় দেয়। তবে তাদের মুক্তির বিষয়টি তামিলনাড়ু সরকারের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
১৯৯১ সালে রাজীব গান্ধীকে হত্যা করা হয়। রাজীব হত্যা মামলায় ওই তিন আসামিকে ১৯৯৮ সালে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। দু’বছর পর তারা প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানায়। কিন্তু ১১ বছর আবেদনটি ঝুলে থাকার পর ২০১১ সালে তাদের আবেদন খারিজ করে দেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রতিভা পাতিল। তবে প্রেসিডেন্টের কাছে করা ক্ষমার আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে দীর্ঘ সময় লেগে যাওয়ার যুক্তিতে ওই বছরই মাদ্রাজ হাইকোর্ট আসামিদের ফাঁসি কার্যকরের ওপর স্থগিতাদেশ দেন।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে জানিয়েছিল, প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অহেতুক দেরি হলে ফাঁসি মওকুফ হতে পারে। গত ২১ জানুয়ারি ১৫ আসামির ফাঁসি মওকুফ করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। এরপরই রাজীব হত্যা মামলার ওই তিন আসামী মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আবেদন জানান। ৪ ফেব্রুয়ারি তাদের আর্জি শোনার পর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয় ১৮ ফেব্রুয়ারি।
এর আগে ওই তিন আসামীর শাস্তি মওকুফ না করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হয়। শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল গোলাম বাহানবতী বলেন, ওই তিন আসামীর প্রাণভিক্ষার আবেদনে কোথাও অনুতাপ কিংবা অনুশোচনা প্রকাশ পায়নি। সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হলেও, কারাগারে তাদের উপর কোনো ধরনের অত্যাচার করা হয়নি। ফলে তারা ক্ষমা পেতে পারেন না।
শুনানিতে আসামীপক্ষের আইনজীবী বলেন, মানসিক যন্ত্রণা ও অত্যাচারের প্রমাণ শারীরিক আঘাত দেখে হয় না। তাছাড়া, পেরারিভালান, সান্থন ও মুরুগান তাদের আবেদনে জানিয়েছিলেন, ফাঁসির আসামি হিসেবে জেলে থাকার ফলে প্রবল মানসিক চাপে রয়েছে তারা। ফলে, তাদের ফাঁসি মওকুফ করা হোক।
তবে, অ্যাটর্নি-জেনারেল জি ই বাহনবতী এ যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, "ওই তিন আসামি তাদের আর্জিতে জেলের মধ্যে গঠনমূলক কাজে অংশগ্রহণ করার কথা জানিয়েছে। সে ক্ষেত্রে মনোকষ্টে ভোগার কথা খাটছে না। ওই তিন আসামির ফাঁসি মওকুফ করার তাই কোনো যুক্তি নেই।"
দু'পক্ষের পাল্টাপাল্টি যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মত দেয়, "বিষয়টিকে অন্যভাবেও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। ওই তিন আসামি গঠনমূলক কাজে অংশ নিয়েছে। তা থেকে এটাও মনে করা যেতে পারে যে, তারা দাগি অপরাধী নয়। এই বিষয় থেকে তারা যে মনোকষ্টে নেই, এটা বোঝা যায় না।" এর পরই চাঞ্চল্যকর এ রায় ঘোষণা করে সর্বোচ্চ আদালত।
এ রায়ে আসামীপক্ষ খুশি হলেও কেন্দ্রীয় সরকার অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন