সূরা বনী ইসরাইল; আয়াত ৯৮-১০১

সূরা বনী ইসরাইল; আয়াত ৯৮-১০১


সূরা বনী ইসরাইলের ৯৮ ও ৯৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেছেন:
ذَلِكَ جَزَاؤُهُمْ بِأَنَّهُمْ كَفَرُوا بِآَيَاتِنَا وَقَالُوا أَئِذَا كُنَّا عِظَامًا وَرُفَاتًا أَئِنَّا لَمَبْعُوثُونَ خَلْقًا جَدِيدًا (98) أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّ اللَّهَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ قَادِرٌ عَلَى أَنْ يَخْلُقَ مِثْلَهُمْ وَجَعَلَ لَهُمْ أَجَلًا لَا رَيْبَ فِيهِ فَأَبَى الظَّالِمُونَ إِلَّا كُفُورًا (99)
“ওই (জাহান্নাম) তাদের কর্মফল;কারণ তারা আমার নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং বলেছিল,আমরা অস্থিতে পরিণত হয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হলেও কি নতুন সৃষ্টিরূপে পুনরুত্থিত হব?"(১৭:৯৮)
“ওরা কি দেখে না যে আল্লাহ্‌,যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন,তিনি তাদের মতো নতুন (মানুষ) সৃষ্টি করতে সক্ষম? তিনি ওদের জন্য এক নির্দিষ্ট কাল স্থির করেছেন যাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু অন্যায়কারীরা সত্য প্রত্যাখ্যান ও কুফরি করা ছাড়া আর কিছু গ্রহণ করে না।” (১৭:৯৯)

এ আয়াতটিতে কেয়ামত সম্পর্কে অতি পুরনো একটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আল্লাহ বলেন: কাফেররা মনে করে আল্লাহর ক্ষমতা দুনিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই মানুষ মরে মাটিতে মিশে যাওয়ার পর তাদেরকে আবার জীবিত করে কেয়ামতের দিন বিচারের মাধ্যমে পুরস্কার ও শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা আল্লাহর নেই। অথচ জীবন-মরণ সবই আল্লাহর হাতে। আল্লাহর ক্ষমতা সব ক্ষমতার ঊর্ধ্বে এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত কোনো বস্তুকে আবার আগের অবস্থায় সৃষ্টি করা তার জন্য খুবই সহজ। কিন্তু যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে গোঁয়ার্তুমির পথ বেছে নিয়েছে তারা তা মানতে রাজি নয়। কারণ, তারা যদি সত্যকে মেনে নেয় তাহলে তারা আর ভুল পথে চলতে পারবে না।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল:
এক. কাফেররা আল্লাহর ক্ষমতাকে খাটো করে দেখে বলে কেয়ামতকে অস্বীকার করে। যদিও তাদের কাছে কিয়ামত অস্বীকার করার মতো কোনো দলিল-প্রমাণ নেই।
দুই. কেয়ামতের দিন সবাই স্বশরীরে উপস্থিত হবে এবং সবাই তার কর্ম অনুযায়ী ফল পাবে।
তিন. কুফরির মূল কারণ হচ্ছে পাপ ও অন্যায়। পাপী ব্যক্তিরা তাদের অপরাধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার জন্য সত্যকে অস্বীকার করে।

সূরা বনী ইসরাইলের ১০০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
قُلْ لَوْ أَنْتُمْ تَمْلِكُونَ خَزَائِنَ رَحْمَةِ رَبِّي إِذًا لَأَمْسَكْتُمْ خَشْيَةَ الْإِنْفَاقِ وَكَانَ الْإِنْسَانُ قَتُورًا (100)
“বল! যদি তোমরা আমার প্রভুর অনুগ্রহের ভাণ্ডারের অধিকারী হতে,তবুও খরচ হয়ে যাবে এই ভয়ে তোমরা তা লুকিয়ে রাখতে। মানুষ তো অতিশয় কৃপণ।" (১৭:১০০)

এ আয়াতে কুফরির আরেকটি মূল কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন: যদি তোমরা বিশ্ব জাহানের মালিকও হয়ে যাও, সবকিছু তোমাদের অধীনে থাকে, তারপরও তোমাদের মন চাইবে না ঐ সম্পদ থেকে কিছু অন্যকে বিলিয়ে দিতে। তোমাদের ইচ্ছা করবে সবকিছু নিজেদের কাছে রেখে দিতে। অবশ্য এ স্বভাব সব মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যদি কেউ পরিপূর্ণতা অর্জন করতে চায়, তাহলে তাকে এ স্বভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করে দানশীল ও পরোপকারী হতে হবে। এখানে উদাহরণ হিসেবে অজ্ঞ ও জ্ঞানী ব্যক্তির কথা তুলে ধরা যায়। জন্মের সময় মানুষ সম্পূর্ণ অজ্ঞ থাকে। এ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তাকে কঠিন পরিশ্রম করে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। তেমনি সহজাত প্রবৃত্তির উর্ধ্বে উঠে দানশীল হতে হলে মানুষকে কঠোর পরিশ্রম এবং নিজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে।

এ আয়াতের কয়েকটি শিক্ষণীয় দিক হচ্ছে:
এক. সম্পদ অর্জন ও সম্পদ প্রীতি মানুষের কৃপণ প্রবৃত্তিকে শক্তিশালী করে, যা ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ কারণে রাজপ্রাসাদে বসবাসকারীদের বেশিরভাগই ঈমান আনেনি।
দুই. মানুষ সাধারণভাবে কৃপণ হলেও আল্লাহ দানশীল হওয়ার চেতনা সব মানুষের মধ্যে দিয়ে রেখেছেন। কেউ চাইলে দৃঢ়সংকল্পের মাধ্যমে দানশীল ও পরোপকারী হতে পারে।

সূরা বনী ইসরাইলের ১০১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ-তায়ালা বলেছেন:
وَلَقَدْ آَتَيْنَا مُوسَى تِسْعَ آَيَاتٍ بَيِّنَاتٍ فَاسْأَلْ بَنِي إِسْرَائِيلَ إِذْ جَاءَهُمْ فَقَالَ لَهُ فِرْعَوْنُ إِنِّي لَأَظُنُّكَ يَا مُوسَى مَسْحُورًا (101)
“বনী ইসরাইলীদের জিজ্ঞাসা কর,মুসাকে আমি নয়টি মুজিযা বা স্পষ্ট নিদর্শন দিয়েছিলাম। যখন সে তাদের কাছে এসেছিল ফেরাউন তাঁকে বলেছিল,"হে মুসা আমি মনে করি,তুমি জাদুগ্রস্ত।” (১৭:১০১)

এ আয়াতসহ পরের কয়েকটি আয়াতে মিশরের অত্যাচারী শাসক ফেরাউন ও আল্লাহর নবী হযরত মুসা’র মধ্যকার কথাবার্তা বর্ণিত হয়েছে। এতে হক ও বাতিলের অনুসারীদের চিন্তার ধরণ সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। এ আয়াতে আল্লাহ বলেন : মুসাকে আমি নয়টি মুজিযা বা অলৌকিক নিদর্শন দিয়েছিলাম। যেমন: লাঠির সাপ হয়ে যাওয়া, লাঠির আঘাতে সমুদ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়া, লাঠির আঘাতে একদুইটি ঝরণাধারা সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি। এত নিদর্শন থাকা সত্ত্বেও যখন হযরত মুসা (আ.) ফেরাউনের কাছে গেলেন তখন ফেরাউন বলল- এগুলো সবই জাদুমন্ত্র। তুমি অন্যান্য জাদুকরের মতো একজন জাদুকর। এটিও অসম্ভব নয় যে, তুমি অন্য কারো জাদুতে মোহাচ্ছন্ন হয়ে রয়েছো।

এটা ফেরাউনের অহংকার ও আত্মম্ভরিতার ফল। এই অহঙ্কারের কারণে সে মুসা (আ.)এর সত্য বাণী ও আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার দাওয়াতকে জাদুমন্ত্র বলে প্রত্যাখ্যান করে। এমনকি সে হযরত মুসা (আ.)কে অপমান করতেও দ্বিধা করেনি।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হচ্ছে:
এক. মুজিযা প্রদর্শন বা অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখানো নবী-রাসূলদের প্রধান কাজ নয়। মানুষকে হেদায়েত করা তাদের প্রধান দায়িত্ব। আল্লাহর রেসালাতের দায়িত্ব পালন ও সত্য প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তারা অলৌকিক ক্ষমতা প্রদর্শন করেন।
দুই. নবী-রাসূলরা দরদী চিকিত্‌সকের মতো মানুষের দ্বারে দ্বারে চলে যেতেন। জনগণ তাদের কাছে আসবে- এ আশায় তারা ঘরে বসে থাকতেন না।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন