আফগানিস্তানে মার্কিন নীতির তীব্র সমালোচনা করেছে পাকিস্তান
আফগানিস্তানে মার্কিন নীতির তীব্র সমালোচনা করেছে পাকিস্তান
পাকিস্তান সরকারের পররাষ্ট্র নীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা সারতাজ আজিজ আফগানিস্তান যুদ্ধে মার্কিন নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, আফগানিস্তানে অব্যাহত সংকটের নেতিবাচক প্রভাব পাকিস্তানের ওপরও পড়ছে। তিনি আরো বলেন, হোয়াইট হাউজ আফগানিস্তানে শান্তি, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা, সন্ত্রাসবাদ দমন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত কোন লক্ষে তারা পৌঁছাতে পারেনি। পাকিস্তানের এ কর্মকর্তা বলেন, আফগানিস্তানের ব্যাপারে মার্কিন নীতি পাকিস্তানের জন্য বিরাট সংকট তৈরি করেছে। কারণ আফগানিস্তানে আমেরিকার যুদ্ধনীতিই ছিল ভুল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আফগানিস্তান যুদ্ধ ও সেদেশে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে মার্কিন নীতির সমালোচনা এবারই নতুন নয়। এর আগেও পাকিস্তান এ বিষয়ে আমেরিকার সমালোচনা করেছে। পাকিস্তানে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন তারা এ অঞ্চলে বিশেষ করে পাকিস্তানে উগ্রপন্থা রোধে মার্কিন নীতি বা কৌশলের সমালোচনা করেছে। এর আগে পাকিস্তানের পিপলস পার্টির সরকারও আফগানিস্তানে সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদ রোধে হোয়াইট হাউজের নীতির সমালোচনা করেছে এবং পাকিস্তানের উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় মার্কিন ড্রোনা হামলার নিন্দা জানিয়ে একে সেদেশের জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছে।
বর্তমানে পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকারও আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় মার্কিন নীতিকে অকার্যকর হিসেবে অভিহিত করে বলেছে, এর ফলে কেবল পাকিস্তানে সহিংসতা ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে। পাক-সরকারের পররাষ্ট্র নীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা সারতাজ আজিজ বলেছেন, আমেরিকা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে আফগানিস্তানে সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে তার কোনটিই তারা অর্জন করতে পারেনি এবং পাশ্চাত্যও এখন এটা স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে।
পাকিস্তান সরকার মনে করে, ২০০১ সাল থেকে আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক হামলার ফলে পাকিস্তানেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। গত বছর পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি বলেছেন, আফগানিস্তানে আমেরিকার যুদ্ধ নীতির কারণে পাকিস্তানের এক হাজার ৭০০ কোটি ডলারের বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। অবশ্য গোটা এ অঞ্চলে আমেরিকার কথিত সন্ত্রাসবাদ নির্মূল অভিযানের কারণে পাকিস্তানের ক্ষতি শুধু আর্থিক ক্ষতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। একই সঙ্গে পাকিস্তানের হাজার হাজার মানুষ হতাহত হওয়া ছাড়াও লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছে।
২০০৪ সাল থেকে পাকিস্তানের উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় অব্যাহত মার্কিন ড্রোন হামলাকে কেন্দ্র করে দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে, সন্ত্রাসবাদ দমনে আমেরিকার ব্যর্থতার জন্য পাক সরকারের পররাষ্ট্র নীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা সারতাজ আজিজের বক্তব্য ওয়াশিংটনের নীতিতে খুব একটা পরিবর্তন আনবে বলে মনে হয় না।
আমেরিকা গত এক দশকের বেশি সময় ধরে সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে আফগানিস্তানে ব্যাপক সামরিক উপস্থিতি ঘটিয়েছে এবং পাকিস্তানসহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশে এর নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টিকে তারা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে চলেছে। এ কারণে এ অঞ্চলের দেশগুলোর জনমনে মার্কিন বিরোধী মনোভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন