জেনেভায় ইরান ও ৬ জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে পরমাণু আলোচনায় অগ্রগতি
জেনেভায় ইরান ও ৬ জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে পরমাণু আলোচনায় অগ্রগতি
জেনেভা চুক্তি বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ নিয়ে আবারও আলোচনা করেছে ইরান ও ছয় জাতিগোষ্ঠী।
ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি গতকাল (শুক্রবার) দুই দিনের এই আলোচনা শেষেবলেছেন,রাজনৈতিক ও কারিগরি মতপার্থক্য নিরসনে কিছু সমঝোতা হয়েছে, তবে এসব সমঝোতা চূড়ান্ত করার জন্য আলোচকদের নিজ নিজ রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ ও শলা-পরামর্শ করতে হবে।
আগামী দুই দিনের মধ্যে এসব শলা-পরামর্শ শেষ হবে এবং এরপরই জেনেভা চুক্তি বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান আরাকচি। গত ২৪ নভেম্বর ইরান ও ৬ জাতির মধ্যে পরমাণু বিষয়ে একটি চুক্তি সই হয়েছিল।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ব্রিটেন ও ফ্রান্স এবং এই পরিষদ বহির্ভূত জার্মানিকে নিয়ে গঠিত হয়েছে ছয় জাতিগোষ্ঠী।
আব্বাস আরাকচির সঙ্গে সাম্প্রতিক এ আলোচনায় প্রতিপক্ষ ছিলেন ইউরোপীয় জোটের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপপ্রধান হেলগা শ্মিড। তিনিও এই আলোচনায় বেশ ভাল অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান।
ইউরোপীয় জোটের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান ক্যাথরিন এশটোনের মুখপাত্র মাইকেলম্যানও গতকাল বলেছেন, আগের দু’দিনের আলোচনায় যেসব সমঝোতা হয়েছে সেগুলোকে চূড়ান্ত করার জন্য আলোচকদের নিজ নিজ রাজধানী থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন জরুরি।
মার্কিন কর্মকর্তারাও এ আলোচনার ব্যাপারে প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেছেন।
অথচ, একদল মার্কিন সিনেটর ইরানের বিরুদ্ধে নতুন কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপের উদ্যোগ নিয়েছেন। এ ধরনের পরস্পর-বিরোধী আচরণ পরমাণু আলোচনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন যদিও ইউরোপ ও আমেরিকার নেতৃবৃন্দ চলমান পরমাণু আলোচনাকে ইতিবাচক ও অগ্রগতিমূলক পদক্ষেপ বলেই উল্লেখ করেছেন।
আসলে ইরান ও ৬ জাতির মধ্যে মতবিরোধগুলো নিরসনযোগ্য। জেনেভা চুক্তির ব্যাপারে দু’পক্ষের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের বৈঠকগুলো করা হয়েছে এ চুক্তির বিস্তারিত বা খুঁটি-নাটি বিষয় এবং চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে সমঝোতা অর্জনের জন্য।
এর আগে পশ্চিমা কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলেছিল সম্ভবত ২০ জানুয়ারি থেকে জেনেভা চুক্তির বাস্তবায়ন শুরু হবে। অবশ্য এ ব্যাপারে ইউরোপীয় জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ইরানের ওপর থেকে ইউরোপীয় জোটের নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেয়ার প্রাথমিক পর্যায় শুরু করাও ওই বৈঠকের আরেকটি লক্ষ্য।
জেনেভা চুক্তিতে শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি হিসেবে ইরানের মাটিতেই দেশটির ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার মেনে নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আগামী ৬ মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ সমঝোতা অর্জনের পথ খুলে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও এই চুক্তির সুবাদে ইরানের ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে নেয়ার কথা রয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে ব্যাংকে আটক ইরানের বিপুল অর্থ মুক্ত করা, অর্থ-সম্পদ অর্জনের পথ সুগম করা ও ইরানের কোনো কোনো পণ্য রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া।
এভাবে পর্যায়ক্রমে ইরানের ব্যাপারে জেনেভা চুক্তির আলোকে ৬ জাতির অন্যান্য সিদ্ধান্তগুলোও ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়াও এই চুক্তির আলোকে দু'পক্ষই একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত স্বেচ্ছায় কিছু পদক্ষেপ নেবে। আসল দু'পক্ষ এখন আলোচনার কারিগরি ও আইনগত পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।
তাই এটা স্পষ্ট এ ধরনের আলোচনায় সব খুঁটিনাটি বিষয়ই বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে পর্যালোচনা করা উচিত এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এ বিষয়গুলো চূড়ান্ত করতে হবে। কারণ চূড়ান্ত সমঝোতার জন্য সামগ্রিক বিষয়ের প্রতিটি দিক ভালোভাবে উপলব্ধি করা উচিত।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন