‘জেনেভা-দুই’ সম্মেলনকে ঘিরে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য
‘জেনেভা-দুই’ সম্মেলনকে ঘিরে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য
সিরিয়া বিষয়ে ‘জেনেভা-দুই’ সম্মেলনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে কথিত বিরোধী জোট সিরিয়ান ন্যাশনাল কোয়ালিশন এসএনসি’র মধ্যকার মতপার্থক্য ততই তীব্রতর হচ্ছে। বিশেষ করে সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও জনগণের প্রতিরোধের কাছে পরাজিত হওয়ায় সশস্ত্র বিদ্রোহীদের মধ্যে হতাশা ও মতবিরোধ এখন তুঙ্গে। সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিল বা এসএনসি ‘জেনেভা-দুই’ সম্মেলনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর সৌদি আরব ও তুরস্কের সমর্থনপুষ্ট ছয়টি বিদ্রোহী গোষ্ঠী এসএনসি থেকে বেরিয়ে গেছে। সম্প্রতি ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বৈঠকে এই ছয়টি গোষ্ঠী এসএনসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
সিরিয়ায় গত তিন বছর ধরে চলমান সংঘর্ষে দেশটির সেনাবাহিনী, জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করায় এখন বিদ্রোহীদের মধ্যে মতপার্থক্য ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বিদেশি মদদপুষ্ট সিরিয়ার বিদ্রোহীরা ২০১১ সালের মার্চ থেকে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উতখাতের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা ব্যর্থ হয়েছে। সিরিয়ার সরকার ও সেনাবাহিনী রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে সাফল্যের পরিচয় দেয়ায় শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সমাজও কূটনৈতিক উপায়ে সিরিয়া সমস্যা সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করতে বাধ্য হয়েছে। এরই আলোকে আগামী ২২ জানুয়ারি ‘জেনেভা-দুই’ আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
তবে পাশ্চাত্যের সরকারগুলো তাদের প্রভাব কাজে লাগিয়ে জেনেভা-দুই সম্মেলনকে সিরিয়ার বিরুদ্ধে তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করছে। পাশ্চাত্যের এ ষড়যন্ত্রের ফলে যারা সিরিয়া সরকারের সমর্থকদের জেনেভা সম্মেলনে অংশগ্রহণের বিরোধিতা করছে তাদের ততপরতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে রাজনৈতিক উপায়ে সিরিয়া সমস্যা সমাধানের চেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।
সিরিয়ার বিদ্রোহীরা ‘জেনেভা-দুই’ সম্মেলনে অংশ নেয়ার জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে তার মাধ্যমে তারা সিরিয়া ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমাজের কাছ থেকে ছাড় আদায় করে নেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু সিরিয়ার সরকার ও জনগণ সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় অটল থাকায় এবং দেশটির কর্মকর্তারা কোন শর্ত ছাড়াই জেনেভা সম্মেলনে যোগ দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করায় দেশটিতে ততপর সন্ত্রাসী ও তাদের সমর্থকদের অশুভ উদ্দেশ্য কার্যত ব্যর্থ হতে চলেছে। কারণ রাজনৈতিক উপায়ে সিরিয়া সমস্যা সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সমাজ যে উদ্যোগ নিয়েছে সন্ত্রাসী ও তাদের সমর্থকরা সে উদ্যোগ ব্যর্থ করে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ছাড়া, সিরিয়ার সশস্ত্র বিদ্রোহীরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় এবং রাজনৈতিক বিরোধও তীব্রতর হওয়ায় তাদের ধ্বংস বা পতন অনিবার্য। সিরিয়ার জনগণও যেভাবে বিদেশি মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে তাতে বোঝা যায়, সেদেশের মাটিতে তাদের কোন স্থান নেই।
সিরিয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে প্রমাণিত হয়েছে, দেশটি ক্রমেই সংকট কাটিয়ে উঠছে যা কিনা শত্রুরা চাপিয়ে দিয়েছিল। এ অবস্থায় বিশ্ববাসী সিরিয়ায় ততপর সন্ত্রাসীদের উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে সেদেশটির জনগণ আশা করছে।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন