মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নতুন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষ

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নতুন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষ

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এবং ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য গতকাল তেলআবিব সফরে গেছেন।

 

প্রায় তিন বছর বিরতির পর গত বছরের জুলাই মাস থেকে ইসরাইল ও স্বশাসন কর্তৃপক্ষের মধ্যে ফের শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছে। শান্তি আলোচনা শুরুর পর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও দু’পক্ষের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য এখন তুঙ্গে উঠেছে। জর্দান উপত্যকাকে ইসরাইলের সঙ্গে একীভূত করা নিয়ে মূলত ইসরাইল ও স্বশাসন কর্তৃপক্ষের মধ্যে নতুন করে বিরোধ দেখা দিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এ বিষয় নিয়েই মাহমুদ আব্বাস ও নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানা গেছে।

 

আমেরিকা জর্দান উপত্যকায় ইসরাইলি সেনা মোতায়েনের পরিবর্তে সেখানে ড্রোন ও উন্নতমানের উপগ্রহ ব্যবস্থা মোতায়েনের জন্য ইসরাইলকে পরামর্শ দিয়েছে। তবে জর্দান উপত্যকার সীমান্ত এলাকায় সীমিত সংখ্যক ইসরাইলি সেনা মোতায়েন থাকতে পারবে। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা আমেরিকার এ প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছে। কারণ তারা সীমান্ত এলাকায় ইসরাইলি সেনা উপস্থিতির বিরোধী। জর্দান সরকারও সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে জর্দান উপত্যকার সীমান্তে ইসরাইলি সেনা মোতায়েন রাখার মার্কিন প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে।

 

জর্দান উপত্যকার ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া ছাড়াও এখানকার পানির উতস ইসরাইলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে ইসরাইলের মন্ত্রীসভা সম্প্রতি জর্দান উপত্যকাকে ইসরাইলের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাশ করে। এ থেকেই বোঝা যায়, ইসরাইল আলোচনার কথা বললেও বাস্তবে তারা শান্তি চায় না। ফিলিস্তিনি দলগুলো অভিযোগ করেছে স্বশাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইসরাইলের আপোষ আলোচনার ব্যাপারে আমেরিকার ভূমিকা সন্দেহজনক এবং তারা অবিলম্বে এ  আলোচনা বন্ধের আহবান জানিয়েছে। কারণ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখনই মধ্যপ্রাচ্য সফরে আসেন তখন তিনি ইসরাইলের স্বার্থের বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দেন। আমেরিকা একদিকে আলোচনার কথা বলছে অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সমাজের বিরোধিতা সত্ত্বেও অধিকৃত ফিলিস্তিনে ইসরাইলের ইহুদি উপশহর নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে এবং ইহুদি বসতি নির্মাণে ইসরাইলকে আমেরিকা অর্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এ থেকে বোঝা যায়, তারা আলোচনার নামে বিশ্ববাসীকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করছে।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির মধ্যপ্রাচ্য সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে, জর্দান উপত্যকার ব্যাপারে মার্কিন প্রস্তাব মেনে নিতে স্বশাসন কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। ইসরাইলের সঙ্গে গত ২২ বছরের আলোচনায় এ পর্যন্ত যতগুলো সমঝোতা হয়েছে তার কোনটিকেই ফিলিস্তিনিরা মেনে নিতে পারেনি। ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত যতবার আলোচনা হয়েছে ততবারই প্রথম থেকে সংলাপ শুরু হয়েছে। আমেরিকা ও ইসরাইল সংলাপ প্রক্রিয়াকে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে গেছে যেখানে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও তা না হয়ে বরং জর্দান উপত্যকা, বায়তুল মোকাদ্দাস ও পশ্চিম তীরের ওপর ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণ আরো পাকাপোক্ত করা নিয়ে কথা হচ্ছে।

 

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের যে কথা বলা হচ্ছে তাতেও ফিলিস্তিন শরণার্থীদের নিজ দেশে ফিরে আসার কোন সুযোগ নেই। এমনকি ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব সেনাবাহিনীও থাকতে পারবে না। এ থেকে বোঝা যায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি আলোচনা প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বার বার মধ্যপ্রাচ্য সফরে এলেও তাতে ফিলিস্তিনিদের জন্য কোনো লাভ হবে না।

সূত্রঃ রেডিও তেহরান

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন