‘ওয়েল, আপনারা আবার বসে আলোচনা করুন, আমি চললাম’
‘ওয়েল, আপনারা আবার বসে আলোচনা করুন, আমি চললাম’
জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকোর উপস্থিতিতেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা অন্তত চারটি পয়েন্টে একমত হয়েছিলেন।
এগুলো হচ্ছে- ১. বিরোধী নেতাকর্মীদের মুক্তি, ২. মামলা প্রত্যাহার, ৩. বিরোধী দলগুলোর অফিসগুলো খুলে দেয়া, ৪. সভা-সমাবেশের ওপর বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার। ১০ই ডিসেম্বর প্রথম দফা এবং ১১ই ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফা বৈঠকে তারানকো এই চারটি পয়েন্টে ঐকমত্য দেখে খানিকটা উল্লসিত হয়েছিলেন। কিন্তু ১১ই ডিসেম্বর যখন বৈঠক প্রায় সমাপ্তির দিকে তখন আওয়ামী লীগের তরফে বলা হয় এই পয়েন্টগুলোর ব্যাপারে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনই নেয়া যাবে না। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
মুহূর্তেই তারানকোর মুখ অনেকটা মলিন হয়ে যায়। ‘ওয়েল, আপনারা আবার বসে আলোচনা করুন’ বলেই বৈঠকস্থল ত্যাগ করেন তিনি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম-ও হতাশায় ভেঙে পড়েন। কারণ তার চেষ্টাতেই প্রাথমিক সাফল্য এসেছিল। মূল দু’টো পয়েন্ট, যথা - নির্বাচনের তফসিল পরিবর্তন ও নির্বাচনকালীন সরকারে কে থাকবেন তা নিয়ে আলোচনায় যাওয়ার আগেই এভাবে সংলাপের ভাগ্য ঝুলে যায়। শুক্রবার আরেকবার বৈঠক হলেও সাফল্য আসেনি।
দু’ দলের একাধিক সূত্রে জানা যায়, সরকার সামান্যতম ছাড় দিতে রাজি নয়। তারা পূর্বশর্ত দেন হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করলেই শুধু এসব দাবি বিবেচনা করা যেতে পারে। এজন্য লিখিতও দিতে হবে। বিরোধী বিএনপি তাৎক্ষণিকভাবে লিখিত দিতে সম্মত হয়নি। তারা বারবারই বলেছেন, আপনারা আগে সংলাপের পরিবেশ তৈরি করুন। তারপর সব কিছুই হবে। হরতাল-অবরোধ স্থগিত রাখতে বিএনপি’র তরফে ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতা আমীর হোসেন আমুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, কোন অগ্রগতি হলে জানতে পারবেন।
স্মরণ করা যায় যে, স্যার নিনিয়ান স্টিফেনের উদ্যোগও একই ভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। ’৯৪ সালের ২৮শে ডিসেম্বর স্পিকারের কক্ষে সম্মিলিত বিরোধী দলের সঙ্গে তৎকালীন বিএনপি সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়। আলোচনায় সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধী দলের কাছে কোনরূপ সরকার বিরোধী সভা-সমাবেশ, মিছিল না করার লিখিত গ্যারান্টি দাবি করা হয়।
তখন বিরোধী দলের অন্যতম নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘মুচলেকা’ দিয়ে রাজনীতি হয় না। এ কথার পর পরই আলোচনা ভেঙে যায়। সরকার পক্ষের আলোচক কর্নেল (অব.) অলি অন্য তিন সহকর্মীকে নিয়ে কক্ষ ত্যাগ করেন। আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর ১৪৭ জন সংসদ সদস্য একযোগে পদত্যাগ করেন। এনডিপি’র সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী আলাদাভাবে পদত্যাগপত্র পেশ করেন।
বিরোধী দলগুলো পদত্যাগের আগে কয়েকটি শর্ত জুড়ে দেয়। এর মধ্যে ছিল - প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি বা অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতিকে সংবিধানের ৫৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নিয়োগ, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না ও কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য নন এমন ব্যক্তিদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন, অবাধ ও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব।
সূত্র: মানবজমিন অনলাইন।
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন