ইরান-আমিরাত সম্পর্ক মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা পাল্টে দিতে পারে
ইরান-আমিরাত সম্পর্ক মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা পাল্টে দিতে পারে
সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেইখ আব্দুল্লাহ বিন যেইদ আল নাহিয়ান ইরানের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিস্তারের উপায় খুঁজে বের করার জন্য দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি গতকাল তেহরানে ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেছেন।
এ সাক্ষাতে ইরানের প্রেসিডেন্ট আর্থ-রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য বিরাজমান সুযোগকে কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি প্রতিবেশী সব দেশ বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে সব ক্ষেত্রে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানো ইরানের নতুন সরকারের প্রধান লক্ষ্য উল্লেখ করে বলেছেন, সাম্প্রতিক পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি এ দু’দেশের মধ্যে আর্থ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক বিস্তারের সুযোগ এনে দিয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এ দু’দেশের মধ্যে দ্রুত সহযোগিতার বিস্তার ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
চলতি বছর জুনে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয় লাভের পর প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ঘোষণা করেছিলেন, প্রতিবেশীসহ মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং এ অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করাই হবে তার সরকারের প্রধান কাজ। ইরান সবসময়ই আঞ্চলিক ঐক্য ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়ে আসছে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের শিকার এবং কেবলমাত্র আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের মাধ্যমেই এ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া সম্ভব।
ইরান মনে করে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই কেবল এ অঞ্চলে নিরাপত্তা, শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নতি সম্ভব। এ কারণে তেহরান এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত বাঁধানো ও পারস্পরিক অবিশ্বাস সৃষ্টিতে কোনো কোনো মহলের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহবান জানিয়েছে। এ অবস্থায় শত্রুদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেয়ার এবং নিজেদের স্বার্থ টিকিয়ে রাখার জন্য এ অঞ্চলের দেশগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে ইরান আশা করছে।
বাস্তবতা হচ্ছে, ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ভাগ্য একই সূতায় গাঁথা এবং বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হচ্ছে, এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বিস্তার ও গঠনমূলক আলোচনা। এ কারণে ইরান পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো মজবুত করার ওপর ব্যাপক গুরুত্বারোপ করেছে। ইরানের এ আন্তরিক প্রচেষ্টার প্রতি সাড়া দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তেহরান সফরকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ইরানের পানি সীমানা রয়েছে এবং এ দু’দেশের মধ্যকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও সহযোগিতা এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও জনগণের স্বার্থের অনুকূলে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরানের মধ্যেকার যে কোনো উত্তেজনা ও ভুল বোঝাবুঝি এ দু’দেশের জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী এবং এতে করে কেবলমাত্র শত্রুরাই লাভবান হবে। আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তেহরানে আসার আগে ইরানের তিনটি দ্বীপকে তাদের নিজেদের বলে দাবি করে বক্তব্য দিয়েছিলেন। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে এটা প্রমাণিত যে ওই তিনটি দ্বীপ ইরান ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
যাহোক, মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আগ্রহকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং জাতিগুলোর অধিকার রক্ষা ও ইরানের শান্তিকামী চরিত্রের বিষয়টি আগের চেয়ে আরো বেশি প্রমাণিত হয়েছে।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন