ছয় জাতি গ্রুপের মধ্যে দ্বিধা-বিভক্তি: এবারও হলো না কাঙ্ক্ষিত চুক্তি

ছয় জাতি গ্রুপের মধ্যে দ্বিধা-বিভক্তি: এবারও হলো না কাঙ্ক্ষিত চুক্তি


জেনেভায় ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু আলোচনায় অগ্রগতি হলেও শেষ পর্যন্ত কোনো চুক্তি ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছে। তিন দিন ধরে ব্যাপক আলোচনা চালিয়েও ইরানের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছার ব্যাপারে শেষ মুহূর্তে এসে ছয় জাতিগোষ্ঠীর দেশগুলো দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। আগামী ২০ নভেম্বর পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

গত ৭ নভেম্বর ইরান ও ছয় জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক শুরু হলেও পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ইরানের সঙ্গে চুক্তি সই করা নিয়ে পাশ্চাত্যের দেশগুলোর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়ায় শেষ পর্যন্ত চুক্তি না হলেও আগামী ২০ নভেম্বর জেনেভায় ফের বৈঠকে বসার ব্যাপারে সবাই সম্মত হয়। চুক্তি না হলেও জেনেভায় অনুষ্ঠিত তিনদিনের একটানা আলোচনায় অগ্রগতি থেকে বোঝা যায়, পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হওয়ার বিষয়টি প্রমাণের জন্য ইরান ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছে এবং এটাও বুঝিয়ে দিয়েছে ন্যায্য অধিকার প্রশ্নে তেহরান কোনো ছাড় দেবে না।

জেনেভা বৈঠকে ইরানের আলোচক দল ছয় জাতিগোষ্ঠীকে অভিন্ন লক্ষ্য, প্রথম পদক্ষেপ ও চূড়ান্ত পদক্ষেপ এই তিন পর্যায়ে আলোচনার প্রস্তাব তুলে ধরে। ইরানের আলোচক দলের সদস্যরা ছয় জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ব্যাপক কূটনৈতিক ততপরতা চালিয়ে পরমাণু বিষয়ে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ বা সমঝোতায় পৌঁছার জন্য পাশ্চাত্যকে মোটামুটি রাজি করাতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং এ কারণে সব পক্ষের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও জেনেভা সম্মেলনে উপস্থিত হন। ইরান ও ছয় জাতিগোষ্ঠীর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা উপস্থিত হওয়ায় চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে সবাই আশাবাদী হয়ে উঠলেও ইহুদিবাদী লবির মাধ্যমে প্রভাবিত ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরা ফ্যাবিয়াসের বিরোধিতার কারণে শেষ পর্যন্ত চুক্তি সই হতে পারেনি।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেনেভায় ইরানি আলোচক দলকে ইসরাইলের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেয়ার আহবান জানিয়েছেন যদিও ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে চলমান বিতর্কের সঙ্গে ইসরাইলের কোনো সম্পর্ক নেই। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি সংলাপে বসেননি। এ কারণে তিনি পাশ্চাত্যের দেশগুলোর পক্ষ থেকেও ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন।

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অস্ত্র বিস্তার রোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক দফতরের সাবেক প্রধান পল শোলত্‌ বলেছেন, ইরানের পরমাণু বিষয়ে জেনেভা বৈঠকে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী খারাপ পুলিশের ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বলেন, জেনেভা বৈঠকে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরা ফ্যাবিয়াস যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। মার্কিন সাময়িকী উইকলি ষ্ট্যান্ডার্ড জেনেভায় অনুষ্ঠিত ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের আলোচনায় কোনো ফল পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে লিখেছে, ফ্রান্সের সোশালিস্ট সরকার ইরানের ব্যাপারে আমেরিকার চাইতেও কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, কোনো চাপ সৃষ্টি করে ইরানকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞাও অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়া জারিফ বলেছেন, ২০০৫ সালে প্যারিস বৈঠকে ইউরোপকে পরমাণু বিষয়ে প্যাকেজ প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন পাশ্চাত্য ওই প্রস্তাব মানতে অস্বীকৃতি জানায়। সে সময় ইরানের কাছে ১৬০টিরও কম সেন্ট্রিফিউজ ছিল। কিন্তু কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এখন ইরানের কাছে ১৯ হাজারের বেশি সেন্ট্রিফিউজ রয়েছে।

ইরানের কর্মকর্তারা বহুবার বলেছেন, পারস্পরিক সম্মান ও ইরানি জনগণের ন্যায্য অধিকারের ভিত্তিতে এমনভাবে পরমাণু আলোচনা হতে হবে যাতে সব পক্ষই বিজয়ী হতে পারে। ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, জেনেভা সম্মেলন সফল হলে মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বে আরো বেশি শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা হবে।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন