সূরা মারিয়াম; আয়াত ১৮-২৩

সূরা মারিয়াম; আয়াত ১৮-২৩


সূরায়ে মারিয়ামের ১৮ ও ১৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
قَالَتْ إِنِّي أَعُوذُ بِالرَّحْمَنِ مِنْكَ إِنْ كُنْتَ تَقِيًّا (18) قَالَ إِنَّمَا أَنَا رَسُولُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلَامًا زَكِيًّا (19)
“মারিয়াম অকস্মাত ঐ ফেরেশতাকে বলে উঠল, তুমি যদি আল্লাহকে ভয় করে থাকো তাহলে আমি তোমার হাত থেকে করুণাময়ের আশ্রয় চাচ্ছি।” (১৯:১৮)
“ফেরেশতা বলল, আমি তো তোমার রবের দূত এবং আমাকে পাঠানো হয়েছে তোমাকে একটি পবিত্র পুত্র দান করার জন্যে?” (১৯:১৯)

গত আসরে বলা হয়েছে যে, হযরত মারিয়াম (সা.) বায়তুল মোকাদ্দাসের এক কোণে এতেকাফরত অবস্থায় ইবাদাতে মশগুল ছিলেন। এমন সময় সেখানে সুন্দর এক যুবকের আবির্ভাব ঘটলো। মারিয়াম তার উপস্থিতি দেখে বিস্মিত যেমন হল তেমনি ভয়ও পেয়ে গেল।

এই আয়াতগুলোতে বলা হচ্ছে :
এ রকম পরিস্থিতিতে এক আল্লাহ ছাড়া তাঁর আর আশ্রয় নেওয়ার কোনো স্থান যেহেতু ছিল না, সেহেতু তিনি ঐ যুবককে সম্বোধন করে বললেনঃ আমি তোমার ব্যাপারে আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি। যদি তুমি পবিত্রতার অধিকারী ব্যক্তি হয়ে থাকো তাহলে আমার কাছ থেকে চলে যাও, আমাকে ত্যাগ কর। ঐ যুবক তখন মারিয়াম (সা.) কে সান্ত্বনা দেওয়া এবং প্রশান্ত করার জন্যে বললেনঃ আমি মানুষ নই। আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত একজন ফেরেশতা। তোমাকে একজন পবিত্র সন্তানের অধিকারী করার জন্যে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এইসব আয়াতে সুস্পষ্টভাবেই দেখানো হয়েছে যে পবিত্রতার অধিকারী নারীরা বেগানা পুরুষকে পরিত্যাগ করার জন্যে উঠেপড়ে লেগে যায় এবং এ রকম পরিস্থিতিতে তারা আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে। অথচ আজকের পৃথিবীতে খুবই দুঃখজনকভাবে এ ব্যাপারে নারী পুরুষেরা একেবারেই উদাসীন। বিভিন্ন পরিবেশে এখন বেগানা নারী পুরুষের মেলামেশা একেবারে স্বাভাবিক ব্যাপারে দাঁড়িয়ে গেছে।

এ আয়াতগুলো থেকে আমাদের জন্যে শিক্ষণীয় হলোঃ
১. শয়তানী কর্মকাণ্ড এবং ধোঁকা থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর আশ্রয় প্রাথর্না করার সুপারিশ কুরআনে যেমন রয়েছে তেমনি অলি আওলিয়া এবং পবিত্রতার অধিকারী ব্যক্তিত্বদের চরিত্র থেকেও উপলব্ধি করা যায়।
২. ফেরেশতারা কেবল ওহী পৌঁছানোর জন্যেই নয় বরং আল্লাহর অন্যান্য আদেশ পালন করার জন্যেও অবতীর্ণ হয়ে থাকেন এবং নবী নন-এমন ব্যক্তিদের সাথেও তাঁরা কথা বলেন।

সূরা মারিয়ামের ২০ ও ২১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
قَالَتْ أَنَّى يَكُونُ لِي غُلَامٌ وَلَمْ يَمْسَسْنِي بَشَرٌ وَلَمْ أَكُ بَغِيًّا (20) قَالَ كَذَلِكِ قَالَ رَبُّكِ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٌ وَلِنَجْعَلَهُ آَيَةً لِلنَّاسِ وَرَحْمَةً مِنَّا وَكَانَ أَمْرًا مَقْضِيًّا (21)
“মারিয়াম বলল : “আমার সন্তান হবে-তা কেমন করে সম্ভব! কোনো মানুষ (পুরুষ) তো আমার সংস্পর্শে আসে নি এবং আমি ব্যভিচারিনীও নই?” (১৯:২০)
“ফেরেশতা বলল, সেটাই তো কথা,তোমার রব বলেছেন,এমনটি করা আমার জন্য অতি সহজ আর আমি এটা এ জন্য করব যে, এই ছেলেকে আমি লোকদের জন্য একটি নির্দশন ও নিজের পক্ষ থেকে একটি অনুগ্রহে পরিণত করব এবং এ কাজটি হবেই।” (২০)

হযরত মারিয়াম তো প্রথমে ঐ যুবকের হঠাৎ উপস্থিতিতে ভীষণভাবে ভড়কে গিয়েছিলেন কিন্তু এখন তার কথা শুনে আরো বিস্মিত হলেন। বিশেষ করে এই ভেবে যে একজন অবিবাহিত মেয়ে কীভাবে সন্তানের অধিকারী হবে! এই ঘটনাটা ঘটেছিল যখন মারিয়াম (সা.) স্বাভাবিক জীবনের বাইরে গিয়ে নিজেকে বায়তুল মোকাদ্দাসে একান্তে ইবাদাতে ব্যস্ত রেখেছিলেন। কিন্তু ফেরেশতার বক্তব্যে ব্যাপারটা অবশ্যম্ভাবী বলে প্রতীয়মান হচ্ছিল। আল্লাহ চেয়েছেন একটা কুমারী মেয়ে সন্তানের মা হবে যাতে হযরত ইসা (আ.) এর জন্মটাই একটা অলৌকিক ঘটনা হয়ে ইতিহাসে থেকে যায়। আল্লাহর কাছে তো এটা একেবারেই সহজ একটি কাজ। যদিও প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে তা একটি অসম্ভব ব্যাপার বলেই মনে হয়।

এ আয়াতে আমাদের জন্যে শিক্ষণীয় হলোঃ
১. সকল প্রকার কার্যকারণের ওপরই আল্লাহ ক্ষমতাবান অর্থাৎ তাঁর ইচ্ছাতেই সব কিছু ঘটে, তাই কোনো কিছুই আল্লাহর ইচ্ছা বাস্তবায়নের পথে বাধা হতে পারে না।
২. নবী রাসূলদের অস্তিত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্যে রহমত স্বরূপ। ইসা (আ.) এর অস্তিত্বও মানুষের হেদায়েতের কারণ এবং মানুষের মনে আল্লাহর প্রতি ইমানের শক্তিকে আরো দৃঢ় করে।

সূরা মারিয়ামের ২২ ও ২৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
فَحَمَلَتْهُ فَانْتَبَذَتْ بِهِ مَكَانًا قَصِيًّا (22) فَأَجَاءَهَا الْمَخَاضُ إِلَى جِذْعِ النَّخْلَةِ قَالَتْ يَا لَيْتَنِي مِتُّ قَبْلَ هَذَا وَكُنْتُ نَسْيًا مَنْسِيًّا (23)
“এরপর মারিয়াম গর্ভ ধারণ করলেন এবং একটি দূরবর্তী নীরব স্থানে চলে গেলেন।” (১৯:২২)
“তারপর প্রসব বেদনা শুরু হলে তিনি একটি খেজুর গাছের তলায় গিয়ে পৌঁছলেন। তিনি বলতে লাগলেনঃ হায়! যদি আমি এর আগেই মরে যেতাম এবং আমার নাম-নিশানাই যদি না থাকতো।” (১৯:২৩)

আল্লাহর ইচ্ছায় ফেরেশতা যখন মারিয়ামের ওপর ফুঁ দিলেন মারিয়াম গর্ভবতী হয়ে গেলেন এবং তা একেবারে সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠল। সেজন্যে হযরত মারিয়াম (আ.) বায়তুল মোকাদ্দাসের ইবাদাত স্থল ত্যাগ করে জনমানবহীন মরু প্রান্তরের দিকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন যাতে তাঁকে কেউ দেখতে না পায়। এভাবে নয় মাস কাটানোর পর অলৌকিক এই সন্তান প্রসবের বেদনা শুরু হয়ে গেল। মারিয়াম তাই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন-কীভাবে তিনি জনগণের প্রশ্নের জবাব দেবেন..কী করে তিনি গর্ভবতী হলেন কী ব্যাখ্যা দেবেন তার। এজন্যেই তিনি মৃত্যুর কথা বলেছিলেন যে হায় খোদা! এর আগে কেন আমার মৃত্যু হল না! মরে গেলে তো এই পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। জীবনে বিন্দুমাত্র অন্যায় না করেও দুশ্চরিত্রের মতো সবচেয়ে বড়ো অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হল।

এ আয়াতগুলো থেকে আমরা যেসব শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি, তাহলোঃ
১. গর্ভবতী হওয়া এবং প্রসব করার মতো কাজে নারীদের যদিও ভীষণ কষ্ট হয় কিংবা অনেক সমস্যায় পড়তে হয়, তবু এর মাধ্যমে সন্তান জন্মের ক্ষেত্র সৃষ্টি হয় যার মধ্যে রয়েছে বিচিত্র কল্যাণ ও মঙ্গল।
২. যারা সচ্চরিত্রের অধিকারী তাদের কাছে বদনামির চেয়ে মৃত্যু অনেক শ্রেয় এবং পবিত্রতার মধ্যেই জীবনের মূল্য নিহিত বলে তাঁরা মনে করেন।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন