সূরা আম্বিয়া; আয়াত ৯৫-৯৯
সূরা আম্বিয়া; আয়াত ৯৫-৯৯
সূরা আম্বিয়ার ৯৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেছেন:
وَحَرَامٌ عَلَى قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَاهَا أَنَّهُمْ لَا يَرْجِعُونَ (95
“যে সব জনপদকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি, তার অধিবাসীদের ফিরে না আসা অবধারিত (তারা আর কোনোদিন ফিরে আসবে না)।” (২১:৯৫)
আগের পর্বে মুমিন ও সৎ ব্যাক্তির ভাল কাজ সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। আল্লাহ ওয়াদা করেছেন তাদের ভাল কাজগুলো কেয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষণ করবেন। এ ছাড়া, আল্লাহ তাদের কষ্ট ও পরিশ্রমকে অবশ্যই পরিপূর্ণভাবে পুরস্কৃত করবেন।
আর এ আয়াতে তাদের বিপরীতমুখী দলের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন: যে সব কাফের ও ফাসেককে তাদের গোনাহর জন্য দুনিয়াতে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, তারা মৃত্যুর পর আশা করে বলবে হে আল্লাহ! আমাদেরকে আবার দুনিয়াতে ফেরত পাঠাও। কিন্তু আল্লাহ তাদের আশা পূরণ হতে দেবেন না। তারা দুনিয়ায় ফিরে আসতে পারবে না।
পবিত্র কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন, গোনাহগাররা যখন জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে উপস্থিত হবে এবং মৃত্যুর আলামত অনুভব করবে তখন বলবে, হে আল্লাহ! আমাদেরকে আর কিছুদিন বাঁচিয়ে রাখো তাহলে জীবনে যে সব সৎ কাজ করতে পারিনি সে সব অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব। কিন্তু তখন আল্লাহ তাদের বলবেন, এখন আর তা সম্ভব নয়।
এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:
১. আমরা যতদিন পৃথিবীতে জীবিত থাকব ততদিন ভাল কাজ করব এবং অতীতের ভুলগুলো সংশোধন করার চেষ্টা করব। কারণ, মৃত্যুর পর অনুশোচনা করে কোনো লাভ হবে না।
২. দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য আল্লাহ যে বিধান তৈরি করেছেন তা অলঙ্ঘনীয়। এ আইনে কোন ধরনের পরিবর্তন-পরিবর্ধন হবে না।
সূরা আম্বিয়ার ৯৬ ও ৯৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
حَتَّى إِذَا فُتِحَتْ يَأْجُوجُ وَمَأْجُوجُ وَهُمْ مِنْ كُلِّ حَدَبٍ يَنْسِلُونَ (96) وَاقْتَرَبَ الْوَعْدُ الْحَقُّ فَإِذَا هِيَ شَاخِصَةٌ أَبْصَارُ الَّذِينَ كَفَرُوا يَا وَيْلَنَا قَدْ كُنَّا فِي غَفْلَةٍ مِنْ هَذَا بَلْ كُنَّا ظَالِمِينَ (97)
“যে পর্যন্ত না ইয়াজুজ ও মাজুজকে বন্ধন মুক্ত করে দেয়া হবে এবং তারা প্রত্যেক উচ্চভূমি থেকে দ্রুত ছুটে আসবে।” (২১:৯৬)
“অমোঘ প্রতিশ্রুত সময় নিকটবর্তী হলে কাফেরদের চোখ ছানাবড়া দিয়ে যাবে; (এবং বলবে) হায় আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা এ বিষয়টিকে আমরা উপেক্ষা করেছি; আমরা বরং নিজেদের ওপর জুলুম করেছি।” (২১:৯৭)
পৃথিবীর সময় শেষ এবং কেয়ামত শুরুর একটি আলামত হলো- যুলকারনাইনের দেয়া বাঁধ ভেঙে ইয়াজুজ ও মাজুজের গোত্র মানব জনপদের দিকে ধেয়ে আসতে থাকবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ সূরা কাহাফের ৯৮ ও ৯৯ নম্বর আয়াতে বলেন: ইয়াজুজ ও মাজুজ এমন গোত্র ছিল যারা বিভিন্ন এলাকায় হানা দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতো এবং সেগুলো ধ্বংস করে দিত। এ অবস্থায় যুলকারনাইন তাদেরকে বাধা দিতে একটি কঠিন বাঁধ তৈরি করেন। ফলে তাদের বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়।
যুলকারনাইন তার কাজ শেষ হওয়ার পর বলেন: এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ। যখন আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুত সময় আসবে, তখন তিনি একে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন এবং সেদিন শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে। এরপর সবাইকে একত্রিত করা হবে।
এ আয়াতেও আল্লাহ বলেন: এমনিভাবে পৃথিবীতে চলতে থাকবে এবং একদিন ইয়াজুজ ও মাজুজ বাঁধ ভেঙে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে যাবে। তারা উঁচু পাহাড় অতিক্রম করে পঙ্গপালের মতো ছুটে আসবে এবং মানুষের উপর হামলা করবে।
শিঙ্গায় ফুঁৎকার দিলে পৃথিবীর আয়ু শেষ হয়ে যাবে। তখন কাফেররা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে ছুটাছুটি করতে থাকবে এবং তাদের চোখের পাতায় পলক পড়বে না। তাদের অহংকার ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। তারা আল্লাহ, তার রাসূল ও মুমিন বান্দাদের কথা না শোনার জন্য অনুতাপ করতে থাকবে। তারা বলবে নবীগণ ও মুমিনগণ যা বলেছিল আমরা তা না শুনে তাদেরকে ঠাট্টা করেছি। তখন তারা নিজেদের ভুল স্বীকার করবে।
এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:
১. ভয়ঙ্কর বন্য গোত্রের আক্রমন হলে বুঝতে হবে পার্থিব জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কেয়ামত শুরু হয়ে গেছে।
২. কুফরি ও সত্যকে অস্বীকার, অবিশ্বাস ও উদাসিনতা থেকে সৃষ্টি হয়। কাফেররা কেয়ামতের দিন নিজেদের গোনাহর কথা স্বীকার করে অনুতপ্ত হবে, কিন্তু তখন স্বীকার করে আর কি লাভ?
সূরা আম্বিয়ার ৯৮ ও ৯৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
إِنَّكُمْ وَمَا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ حَصَبُ جَهَنَّمَ أَنْتُمْ لَهَا وَارِدُونَ (98) لَوْ كَانَ هَؤُلَاءِ آَلِهَةً مَا وَرَدُوهَا وَكُلٌّ فِيهَا خَالِدُونَ (99)
“তোমরা এবং এক আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের পূজা কর, সেগুলো দোযখের ইন্ধন। তোমরাই তাতে প্রবেশ করবে।” (২১:৯৮)
“এই মূর্তিরা যদি উপাস্য হত, তবে জাহান্নামে প্রবেশ করত না। প্রত্যেকেই তাতে চিরস্থায়ী হয়ে পড়ে থাকবে।” (২১:৯৯)
যারা কেয়ামতের দিন নিজেদের জুলুম ও কুফরির কথা স্বীকার করবে, সেদিন তাদের এ অনুতাপে কোন লাভ হবে না। দোজখের আগুন থেকে তারা রক্ষা পাবে না। শুধুমাত্র তারা নয় তাদের খেয়ালি প্রভুও দোজখের আগুনে পুড়বে।
কাঠ পাথরের প্রাণহীন মূর্তি যাদের দ্বারা কোন কাজ সম্ভব না, তারা নিজেরাই সেদিন মুক্তি পাবে না। যদিও দুনিয়ার মুশরিকরা তাদের কাছ থেকে মুক্তি পাবে বলে আশা করেছিল।
এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:
১. গোনাহগারের শরীর দিয়ে দোজখের আগুন জ্বালানো হবে এবং এসব শরীর সে আগুনকে জ্বলন্ত রাখবে।
২. কেয়ামতের দিন জালেমের অবস্থা এতই খারাপ হবে যে তার সঙ্গে কাঠ ও অন্যান্য পদার্থের মতো ব্যবহার করা হবে।
সূত্রঃ তেহরান রেডিও
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন