সূরা আম্বিয়া; আয়াত ৬৮-৭৩
সূরা আম্বিয়া; আয়াত ৬৮-৭৩
সূরা আম্বিয়ার ৬৮ ও ৬৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
قَالُوا حَرِّقُوهُ وَانْصُرُوا آَلِهَتَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ فَاعِلِينَ (68) قُلْنَا يَا نَارُ كُونِي بَرْدًا وَسَلَامًا عَلَى إِبْرَاهِيمَ (69)
“তারা বলল: একে পুড়িয়ে দাও এবং তোমাদের উপাস্যদের সাহায্য কর,যদি তোমরা কিছু করতে চাও।” (২১:৬৮)
“আমি বললাম: হে আগুন,তুমি ইব্রাহীমের ওপর শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।” (২১:৬৯)
মূর্তিপূজারীরা হযরত ইব্রাহীম (আ.)-র যুক্তি খণ্ডন করতে পারেনি। কিন্তু এরপরও তারা প্রকাশ্য আদালত গঠন করে হযরত ইব্রাহীম (আ.)-র বিচার করলো। আদালতের নির্দেশ ছিল এরকম- হযরত ইব্রাহীমকে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি দিতে হবে। এজন্য তাকে আগুনে নিক্ষেপ করতে হবে, যাতে কেউ আর কখনও মূর্তির বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস না পায়। নির্দেশ অনুযায়ী আগুনের বিশাল কুণ্ডলী তৈরি করা হলো এবং সেখানে হযরত ইব্রাহীম (আ.)কে নিক্ষেপ করা হলো। কিন্তু আল্লাহর নির্দেশে আগুন হযরত ইব্রাহীম (আ.)-র কোনো ক্ষতি করলো না বরং তার জন্য তা নিরাপদ স্থানে পরিণত হল, যাতে রাসূলের শত্রুরা আল্লাহর ক্ষমতা উপলব্ধির মাধ্যমে মূর্তিপূজা থেকে সরে আসতে পারে।
এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিক হলো:
১. যাদের কাছে যুক্তি-প্রমাণ নেই, তারা খোদাপ্রেমীদেরকে নির্যাতন ও হত্যার চেষ্টা চালায়, যদিও আল্লাহপ্রেমীরা জীবন বিসর্জন দিয়ে হলেও শিরক ও কুফরির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে থাকে।
২. প্রকৃতিসহ সব কিছুই আল্লাহর নির্দেশে চলে। সব কিছুই ঘটে তারই সৃষ্ট নিয়মে। তিনি ইচ্ছে করলে প্রকৃতির নিয়মকেও পাল্টে দিতে পারেন। যেমনিভাবে তিনি আগুনকে তার বৈশিষ্ট্য পাল্টে ঠাণ্ডা ও শান্তিময় হয়ে যেতে বলেছিলেন। আগুন তাই করেছে।
সূরা আম্বিয়ার ৭০ ও ৭১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
وَأَرَادُوا بِهِ كَيْدًا فَجَعَلْنَاهُمُ الْأَخْسَرِينَ (70) وَنَجَّيْنَاهُ وَلُوطًا إِلَى الْأَرْضِ الَّتِي بَارَكْنَا فِيهَا لِلْعَالَمِينَ (71)
“তারা ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে ফন্দি আঁটতে চাইল,অতঃপর আমি তাদেরকেই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত করে দিলাম।” (২১:৭০)
“আমি তাঁকে ও লুতকে উদ্ধার করে সেই দেশে পৌঁছিয়ে দিলাম,যেখানে আমি বিশ্বের জন্যে কল্যাণ রেখেছি।” (২১:৭১)
মূর্তিপূজারীরা ভেবেছিল- তাদের তৈরি আগুনের কুণ্ডলি হযরত ইব্রাহীম (আ.)কে চীরতরে ধ্বংস করে দেবে এবং তারা নির্বিঘ্নে তাদের অন্যায় কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু যখন আগুন নিভে গেল এবং হযরত ইব্রাহীম (আ.) অক্ষত অবস্থায় বের হয়ে আসলেন,তখন সাধারণ মানুষ সন্দেহের মধ্য পড়ে গেল। এ অবস্থায় জালিম শাসক নমরুদ, আল্লাহর রাসূল ইব্রাহী ম(আ.)-র বিরুদ্ধে অন্য ফন্দি আঁটল। তাঁকে হত্যার পরিবর্তে নির্বাসনে পাঠালো। এর ফলে হযরত ইব্রাহীম (আ.) তার ভাতিজা লুতকে সঙ্গে নিয়ে শামের দিকে রওয়ানা হলেন।
এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিক হলো:
১. আল্লাহ চাইলে শত্রুর সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে পারেন। আল্লাহ যখনি ইচ্ছা করেন তখনি তা হয়ে যায়।
২. সত্য-মিথ্যার লড়াইয়ে সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী এবং মিথ্যার পরাজয় নিশ্চিত।
৩. কুফরি ও পাপাচারে নিমজ্জিত ভূখণ্ড ত্যাগ করে পবিত্র ভূখণ্ডে হিজরত করা হলো ঐশী ব্যক্তিত্বদের বৈশিষ্ট্য।
সূরা আম্বিয়ার ৭২ ও ৭৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ نَافِلَةً وَكُلًّا جَعَلْنَا صَالِحِينَ (72) وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا وَأَوْحَيْنَا إِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَإِقَامَ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءَ الزَّكَاةِ وَكَانُوا لَنَا عَابِدِينَ (73)
“আমি তাকে দান করলাম ইসহাক ও পুরস্কারস্বরূপ দিলাম ইয়াকুব এবং প্রত্যেককেই সৎকর্ম পরায়ণ করলাম।” (২১:৭২)
“আমি তাঁদেরকে নেতা করলাম। তাঁরা আমার নির্দেশ অনুসারে পথ প্রদর্শন করতেন। আমি তাঁদের প্রতি ওহি নাযিল করলাম সৎকর্ম করার, নামায কায়েম করার এবং যাকাত দান করার। তারা সর্বদা [ শুধুমাত্র ] আমারই আনুগত্য করতো।” (২১:৭৩)
হযরত ইব্রাহীম (আ.) ততকালীন শামে অবস্থানকালে বিবি সারাকে বিয়ে করেন। দীর্ঘদিন তাদের কোন সন্তান হয়নি। এর ফলে বিবি সারার পরামর্শে হযরত ইব্রাহীম (আ.), তাঁর দাসী হাজেরাকে বিয়ে করেন। আর মহান আল্লাহ হযরত হাজেরার গর্ভে হযরত ইসমাইল (আ.)কে দান করেন। এরপর বিবি সারার গর্ভেও সন্তান আসে। তার ঘরে হযরত ইসহাক (আ.) জন্মগ্রহণ করেন। হযরত ইসহাক (আ.)’র ঘরে জন্ম নেন হযরত ইয়াকুব (আ.)।
আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত ইব্রাহীম (আ.)কে সন্তান দানের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- ওহীর মাধ্যমে ইমামত বা মানব সমাজকে নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্ব প্রাপ্ত হওয়া। আল্লাহ ওহির মাধ্যমে এ ঘোষণা দেন যে, হযরত ইব্রাহীম (আ.)-র মৃত্যুর পর তাঁর সন্তানদের উপর ইমামতের দায়িত্ব অর্পিত হবে। আল্লাহতায়ালা এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্য হযরত ইব্রাহীম (আ.)-র সন্তানদেরকে উপযুক্ত মনে করলেন। অবশ্য আল্লাহর দাসত্ব ও এবাদতের মধ্যদিয়েই এ দায়িত্বের শুরু হয় এবং তা অব্যাহত থাকে।
এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিক হলো:
১. সৎ সন্তান হচ্ছে পবিত্র ও ধার্মিক বান্দাদেরকে দেয়া আল্লাহর বড় নেয়ামত।
২. আল্লাহর বিশেষ দয়া ও করুণার জন্য একনিষ্ঠ বন্দেগির প্রয়োজন। নবী-রাসূল ও ইমামগণ হচ্ছেন সবচেয়ে ধার্মিক ব্যক্তি।
৩. আল্লাহর ওহীর প্রধান উদ্দেশ্য হলো- মানুষকে সৎ কাজের দাওয়াত দেয়া। অন্যতম সৎ কাজগুলোর দু’টি হচ্ছে- নামাজ ও যাকাত।
সূত্রঃ তেহরান রেডিও
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন