সূরা আম্বিয়া; আয়াত ৪২-৪৫

সূরা আম্বিয়া; আয়াত ৪২-৪৫


সূরা আম্বিয়ার ৪২ ও ৪৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
قُلْ مَنْ يَكْلَؤُكُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ مِنَ الرَّحْمَنِ بَلْ هُمْ عَنْ ذِكْرِ رَبِّهِمْ مُعْرِضُونَ (42) أَمْ لَهُمْ آَلِهَةٌ تَمْنَعُهُمْ مِنْ دُونِنَا لَا يَسْتَطِيعُونَ نَصْرَ أَنْفُسِهِمْ وَلَا هُمْ مِنَّا يُصْحَبُونَ (43)
“(হে নবী! আপনি অস্বীকারকারীদের) বলুন: রাত্রে ও দিনে ‘রহমান’ (এর ক্রোধ) থেকে কে তোমাদেরকে হেফাজত করবে। কিন্তু তারা নিজেদের রবের উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।” (২১:৪২)
“তবে কি আমি ব্যতীত তাদের এমন দেব-দেবী আছে যারা তাদেরকে আমাদের ক্রোধ থেকে রক্ষা করবে? তারা তো নিজেদেরই সাহায্য করতে সক্ষম নয় এবং তারা আমার মোকাবেলায় সাহায্যকারীও পাবে না।” (২১:৪৩)

আগের আয়াতে আমরা বলেছি, কেয়ামতে অবিশ্বাসী কাফের-মুশরিকরা জান্নাত এবং জাহান্নামে বিশ্বাসী মুসলমানদের নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করে। এমনকি এটাকে তারা কুসংস্কার বলেও মনে করে। তাই আল্লাহ মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বলেন: কাফেরদের এমন আচরণে তোমরা মন খারাপ কর না, তারা কেয়ামতের দিন তাদের পরিণতি দেখতে পাবে।
আর এ আয়াতে বলেন: তারা যে শুধুমাত্র কেয়ামতেই শাস্তি পাবে তা নয়, দুনিয়াতেও তারা ঐশী শাস্তি এবং রোষানল থেকে মুক্ত নয়। আল্লাহ যখনি চান তখনি ঐশী আযাব অবতীর্ণ হবে। তাদের অনুসৃত কাল্পনিক দেবতাদের কেউই সেই আযাব থেকে রক্ষা করতে পারবে না।

মজার ব্যাপার হল, এ আয়াতে আল্লাহ শব্দ ব্যবহার না হয়ে ‘রহমান’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। তার মানে সম্ভবত এখানে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, তোমাদের কৃতকর্মে রহমতের আধার পরম দয়ালু আল্লাহও অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তোমরা নিজেরাই নিজেদের ওপর ঐশী ক্রোধ ডেকে আনছ।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিক হলো:
১. যদি কেউ আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে নিজেকে আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে নেয় এবং ঐশী শাস্তি ডেকে আনে।
২. আল্লাহ ছাড়া কোন শক্তি ও ব্যক্তিই নিজের প্রয়োজনেই মেটাতে সক্ষম নয়, সে কীভাবে অন্যের প্রয়োজন মেটাবে।

সূরা আম্বিয়ার ৪৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
بَلْ مَتَّعْنَا هَؤُلَاءِ وَآَبَاءَهُمْ حَتَّى طَالَ عَلَيْهِمُ الْعُمُرُ أَفَلَا يَرَوْنَ أَنَّا نَأْتِي الْأَرْضَ نَنْقُصُهَا مِنْ أَطْرَافِهَا أَفَهُمُ الْغَالِبُونَ (44)
“বরং আমি তাদেরকে এবং তাদের বাপ-দাদাকে দুনিয়াবী নিয়ামত দিয়েছিলাম, যার ফলে তাদের আয়ু দীর্ঘ হয়েছিল। (তারা ভেবেছিল এইসব নিয়ামত এবং তাদের আয়ু শেষ হবে না) কিন্তু তারা কি দেখে না, (আমরা মৃত্যু এবং ধ্বংস দিয়ে) সকল দিক থেকে তাদের পৃথিবীকে সংকুচিত করে আনছি? এরপরও কি তারা আমাদের ওপর বিজয়ী হবে?” (২১:৪৪)

আগের আয়াতগুলোতে বলা হয়েছে, কাফেররা আল্লাহর রোষানল থেকে মুক্তি পাবে না। আর এ আয়াতে আল্লাহ বলছেন: পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকেই মরতে হবে-এটাই ঐশী বিধান-এই মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পাওয়া বা পালানোর শক্তি কারো নেই, অথচ সুস্থ-সবল থাকা শারীরিক শক্তির কারণে মানুষ অহংকারবশত মনে করে তারা ঐশী বিধানের উর্ধ্বে উঠে গেছে এবং তাদের উপর আর কোন শক্তির অস্তিত্ব নেই।
আচ্ছা তারা কি দেখে না তাদের তুলনায় শক্তিশালী গোত্র ও জাতি পৃথিবীতে প্রচণ্ড প্রতাপের সাথে হুকুমাত করার পরও বিলীন-বিলোপ হয়ে গেছে? তাহলে তারা প্রভাবশালী না আমরা?

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:
১. কাফেরদের জন্য দুনিয়ার নেয়ামত আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের ওপর করুণার নিদর্শন নয়, বরং আল্লাহর নেয়ামত সবার জন্যেই সমানভাবে প্রযোজ্য, এক্ষেত্রে কাফের এবং মুমিনদের মধ্য পার্থক্য রাখা হয়নি।
২. অতীত ইতিহাস আগামী দিনের পৃথিবীবাসীদের জন্যে এই শিক্ষা বয়ে আনে যে, তারা যেন অস্থায়ী দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট না হয় এবং আল্লাহর নাফরমানি করা থেকে বিরত থাকে।

সূরা আম্বিয়ার ৪৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
قُلْ إِنَّمَا أُنْذِرُكُمْ بِالْوَحْيِ وَلَا يَسْمَعُ الصُّمُّ الدُّعَاءَ إِذَا مَا يُنْذَرُونَ (45)
“(হে নবী! তাদেরকে) বলুন: আমি তো কেবল ওহীর মাধ্যমেই তোমাদেরকে সতর্ক করি,কিন্তু বধিরদেরকে যখন সতর্ক করা হয়, সে সতর্কবাণী তারা শোনে না।” (২১:৪৫)

এ আয়াতে আল্লাহ শত্রুদের অহংকারের জবাব দিয়ে রাসূল (সা.)কে বলেন: আপনি যা কিছু বলেন তা ওহী। আর সেই ওহী তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের ফল সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছে, যাতে তারা সচেতন হয় এবং আল্লাহর বিধি-বিধান পালনে আন্তরিক ও বিনয়ী হয়। কিন্তু তাতে কোনো লাভ নেই, কেননা বধিরেরা ঐসব সতর্কবাণী শোনেনা বলে ভয়াবহতাকে উপলব্ধি করে না।

প্রকৃতপক্ষে রাসূলে খোদার শত্রুরা বধির ছিল না তারা রাসূল (সা.)এর কথা ঠিকই শুনত। তাই এ সকল আয়াতের মূল উদ্দেশ্য হল কিছু লোক আছে যারা সত্যকে শুনেও শোনে না, বধির আর তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, মনে হয় তারা কিছুই শুনেনি। বুদ্ধিমানরা যখন কোনপ্রকার ভয়ংকর সতর্কবাণী পায়, একটা প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং জীবন বাঁচানোর জন্য হলেও প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ফেলে। কিন্তু রাসূল (সা) কাফেরদেরকে তাদের কৃতকর্মের ফলাফল সম্পর্কে এতবেশি হুঁশিয়ারি বা সতর্কবাণী দেবার পরও তারা মন্দ কাজ থেকে বিরত হল না, উল্টো বরং মন্দ কাজ করার জন্য উঠেপড়ে লেগে গেল।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:
১. আল্লাহর ওহীর ভিত্তিতেই রাসূলগণ দাওয়াত দিয়েছেন বা কথা বলেছেন, তাঁদের দাওয়াত কারো ব্যক্তিগত বিশ্বাস কিংবা চিন্তা-ধারণা প্রসূত ছিল না।
২. যারা চোখ কান থাকা সত্ত্বেও সত্যকে দেখে শুনে গ্রহণ করে না, প্রকৃতপক্ষে তারা অন্ধ এবং বধির।
সূত্রঃ তেহরান রেডিও

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন