নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে সমঝোতার আভাস দিলেন আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রী
নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে সমঝোতার আভাস দিলেন আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রী
আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়াশিংটন-কাবুল নিরাপত্তা চুক্তির ব্যাপারে সমঝোতার একটি সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। আফগান সরকার যখন নিরাপত্তা চুক্তি পর্যালোচনার জন্য প্রবীন নেতাদের নিয়ে গঠিত ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় পরিষদ ‘লয়াজির্গা’র বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিক তখন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ ঘোষণা দিলেন। বার্লিন সফরকারী আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল বিসমিল্লাহ খান মোহাম্মদি বলেছেন, আগামী ১৯ তারিখে কাবুলে লয়াজির্গার যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে তাতে নিরাপত্তা চুক্তির প্রতি তাদের সমর্থন দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ করা যায়, প্রস্তাবিত নিরাপত্তা চুক্তিতে ২০১৪ সালের পরও আফগানিস্তানে নয়টি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে। আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রী আমেরিকার সঙ্গে প্রস্তাবিত নিরাপত্তা চুক্তির প্রতি লয়াজির্গা সমর্থন জানাতে পারে বলে যে নিশ্চয়তা দিয়েছেন তাতে দেশটির রাজনৈতিক মহল ও জনমনে এ সন্দেহ তৈরি হয়েছে যে, লয়াজির্গার বৈঠক আসলে লোক দেখানো এবং বিভিন্ন গোত্র ও ধর্মীয় প্রতিনিধি হিসেবে তাদেরকে ব্যবহার করে এ চুক্তির বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
চুক্তিতে এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে যাচাই-বাছাই করে পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানিয়েছে আফগানিস্তানের জনগণ। কারণ এ চুক্তিতে ২০১৪ সালের পরও আফগানিস্তানে অবশিষ্ট মার্কিন সেনাদেরকে দায়মুক্তি দেয়া, আমেরিকার নয়টি সামরিক ঘাঁটি টিকিয়ে রাখা এবং সহজে গোয়েন্দাবৃত্তির সুযোগ করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে যা কিনা আফগানিস্তানের জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রকাশ্য লঙ্ঘন।
আফগানিস্তানের জনগণ ওয়াশিংটন-কাবুল নিরাপত্তা চুক্তির ধারাগুলো সঠিকভাবে যাচাই করার আহবান জানিয়েছে যাতে ভবিষ্যতে আমেরিকা ও ন্যাটো বাহিনী সেদেশের ওপর কর্তৃত্ব করতে না পারে। এ কারণে আফগানিস্তানের সংসদ সদস্যরা নিরাপত্তা চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব লয়াজির্গার ওপর ন্যস্ত করার সরকারের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, চুক্তির প্রতিটি ধারা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা উচিত যাতে জনগণের অধিকার নষ্ট না হয়। তারা বলেছেন, চুক্তির বিষয়বস্তু এখনো লয়াজির্গার সদস্যদের হাতে পৌঁছায়নি ফলে তারা এ নিয়ে অধ্যয়ন বা চিন্তা করারও সুযোগ পায়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যে বিষয়টি আফগানিস্তানের রাজনৈতিক মহল ও জনগণকে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত করে তুলেছে তা হচ্ছে , মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী সাহায্য দেয়ার বিষয়টিকে আফগানিস্তানে তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ন্যাটো আফগানিস্তানকে এমন সময় সাহায্য বন্ধের হুমকি দিয়েছে যখন দেশটির প্রেসিডেন্ট সেদেশে বিদেশি সেনাদের কার্যক্রমের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই সেদেশে বিদেশি সেনাদের কার্যক্রমের সমালোচনা করাকে তার অধিকার বলে মনে করেন। কিন্তু বিদেশি কর্মকর্তারা আফগানিস্তানের জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে উপেক্ষা করে ন্যাটোর কার্যক্রমের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট কারজাইয়ের মনোভাবে পরিবর্তন আনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে যা কারজাইয়ের পছন্দ নয়। কারণ বিদেশিদের এ ধরণের আবদার আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ।
আফগানিস্তানের জনগণ এজন্য চিন্তিত যে, সরকার যদি আমেরিকার সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তিতে সই করে তাহলে বিদেশি বাহিনী নির্বিঘ্নে যে কোনো অপরাধ করতে পিছ পা হবে না। কারণ আফগানিস্তানের বিচারবিভাগও অপরাধী বিদেশী সেনাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন