হজরত কাসিম (আ.) এর বিবাহ
হজরত কাসিম (আ.) এর বিবাহ
এস, এ, এ
হজরত কাসিম (আ.) এর সাথে হজরত ইমাম হুসাইন (আ.) এর কন্যার বিবাহের ঘটনা হচ্ছে ইসলামের শত্রুদের একটি রটনা এবং ষড়যন্ত্র এবং এ সম্পর্কে কোন সঠিক রেওয়ায়েত বিশ্বস্ত পুস্তক সমূহে লিপিবদ্ধ নেই।
কেননা ইমাম হুসাইন (আ.) এর দুইটি কন্যা ছিল, শেখ তাবাররাসীর মতে একজনের নাম ছিল সাকিনা, যাকে তিনি ইমাম হাসান (আ.) তার সন্তান আব্দুল্লাহ বিন হাসানের সাথে বিবাহ দেন। কিন্তু কন্যা বিদায়ের পূর্বেই তিনি শহীদ হয়ে যান এবং ইমাম হুসাইন (আ.) এর আরেকটি কন্য ফাতিমা যার সাথে হাসান মোসান্নার বিবাহ হয়েছিল তিনিও কারবালাতে উপস্থিত ছিলেন। ইমাম হুসাইন (আ.) এর আর কোন কন্যা ছিল না যে তার সাথে হজরত কাসিম (আ.) এর বিবাহ দিবেন।
কিছু বর্ণনার ভিত্তিতে ইমাম হুসাইন (আ.) এর আরো একটি কন্যা ছিল যার নাম ছিল ফাতিমা সুগরা যিনি কারবালায় ছিলেন না বরং তিনি কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার সময় মদীনায় ছিলেন।
মোহাদ্দেসে নূরী তার লুলু ওয়া মারজান নামক গ্রন্থে এবং অন্যান্য বিশ্বস্ত গ্রন্থ সমূহে যেমন হাদীস, সীরাহ এবং বংশধারা বিশেষজ্ঞদের মতে ইমাম হুসাইন (আ.) এমন কোন কন্যা ছিল না যার কারবালার ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বিবাহ হয়নি।
কারবালার ঘটনার সময় হজররত কাসিম (আ.) এর বয়স পনের বছরের কম ছিল। তাবারীর মতে তার হজরত কাসিমের বয়স ছিল দশ বছর এবং মাকতালে আবু মাখনাফে বর্ণিত হয়েছে যে কাসিমের বয়স ছিল ১৪ বছর। (মুনতাখাবে তাওয়ারিখ, পৃ ২৬৬।)
আল্লামা মাজলিসীর মতে হজরত কাসিমের বিবাহের ঘটনার কোন বিশ্বস্ত দলিল নেই উক্ত ঘটনাটি মাত্র দুইটি পুস্তকে লিপিবদ্ধ রয়েছে তা নিন্মরূপঃ
১- মাজমাউল বাহরাইন, লেখক শেইখ ফাখরুদ্দিন তুরাইহী।
২-রওযাতুশ শোহাদা, লেখক মোল্লা হুসাইন কাসেফী।
উক্ত পুস্তকটি প্রথম কারবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে লিখা একটি বই যা ফার্সি ভাষায় লিখা হয়েছে।(রিয়াযুল মোকাদ্দাস আল মোসামমা বে হাদায়েক্বেল উনস, মরহুম সদর উদ্দিন ওয়ায়েয কাযওয়িনি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪২।)
উক্ত বইটিতে একটি রেওয়ায়েত বর্ণনা করা হয়েছে যে, যখন ইমাম হুসাইন (আ.) মদীনা থেকে কারবালা অভিমুখে যাচ্ছিলেন তখন হাসান বিন হাসান তার চাচা হুসাইন (আ.) এর কাছে তার দুই কন্যার মধ্যে থেকে একজনের সাথে বিবাহের প্রস্তাব দেন ইমাম তাকে বলেন তুমি যাকে বেশি পছন্দ কর তাকে নির্বাচন কর। তখন হাসান বিন হাসান লজ্জা পান এবং কিছুই বলেন না। তখন ইমাম হুসাইন (আ.) বলেনঃ আমি তোমার জন্য আমার কন্যা ফাতিমাকে নির্বাচন করলাম যে আমার মা ফাতিমার সাথে অনেক মিল রয়েছে। এটাই হচ্ছে হজরত কাসিমের বিবাহের ভুল ঘটনা যা ইতিহাসে বিকৃত করা হয়েছে।
যদি ধরেও নেই যে, হজরত কাসিমের বিবাহের ঘটনাটা সত্যি তাহলে বলতে হবে যে ইমাম হুসাইন (আ.) এর দুইটি কন্যা ছিল এক ফাতিমা যার সাথে হাসান বিন হাসানের বিবাহ হয় এবং অপর কন্যার সাথে হজরত কাসিমের বিবাহ হয়। অথবা বিষয়টি এমনও হতে পারে যে কন্যার সাথে হজরত কাসিমের বিবাহ হয় তার নাম ফাতিমা ছিল না এবং ইতিহাসের বর্ণনানুযায়ি তা ভুল উল্লেখ করা হয়েছে। যদি উক্ত ঘটনাকে সত্যি বলে গ্রহণ না করি তাহলে আমরা বলতে পারবো যে ইতিহাসবিদরা হাসানের নামের স্থানে ভুল করে কাসিমের নাম উল্লেখ করেছে। এমতাবস্থায় বেশিরভাগ কারবালার ঘটনা বর্ণনাকারীদের দৃষ্টিতে কারবালায় কাসিমের বিবাহের ঘটনাকে ভুল বা ইসলামের শত্রুদের ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন।
মোহাদ্দেস কুম্মী মুনতাহিউল আমালে এবং নাফসুল মাহমুম নামক গ্রন্থে হজরত কাসিমের বিবাহের ঘটনাকে অস্বিকার করেছেন এবং বলেছেন যে, লেখকগণ ভুলবশত হাসান বিন হাসানের নামের স্থানে কাসিমের নাম উল্লেখ করেছেন।
কারবালার দিনটি ছিল এমন একদিন যেখানে নামাজ পড়ার মতো অবস্থা ছিল না। ইমাম হুসাইন (আ.) ভয়ের নামাজ তাড়াতাড়ি পড়েছিলেন এমনকি দুইজন সাহাবী তাঁর সামনে দাড়িয়েছিলেন যেন তিনি উক্ত নামাজটি পড়তে পারেন। তাহলে কিভাবে সম্ভব যে ইমাম হুসাইন (আ.)এমন সংকটপূর্ণ অস্থায় বিবাহের মতো এক আনন্দময় পরিবেশ তিনি গড়ে তুলবেন। হজরত কাসিমের এই বিবাহের ঘটনাটি কোন বিশ্বস্ত ইতিহাসের পুস্তকে লিপিবদ্ধ নেই। (হামাসে হুসাইনী, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৭, ২৮)
উস্তাদ শহীদ মোর্তযা মোতাহহারীও হজরত কাসিমের বিবাহকে অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন যে, কোন বিশ্বস্ত গ্রন্থ সমূহে এ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়নি এবং উক্ত ঘটনার কোন সত্যতা নেই। (হামাসে হুসাইনী, মোর্তজা মোতাহহারী, খন্ড ১, পৃ ২৮।)
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন