সূরা ত্বোয়া-হা; আয়াত ১২৭-১৩০ পর্ব-২৩ 

সূরা ত্বোয়া-হা; আয়াত ১২৭-১৩০ (পর্ব-২৩)
পবিত্র কুরআনের সূরা ত্বোয়া-হা'র ১২৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
وَكَذَلِكَ نَجْزِي مَنْ أَسْرَفَ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِآَيَاتِ رَبِّهِ وَلَعَذَابُ الْآَخِرَةِ أَشَدُّ وَأَبْقَى (127)
“এবং এইভাবেই আমি তাকে প্রতিফল দেই, যে বাড়াবাড়ি করে ও তার প্রতিপালকের নিদর্শনে বিশ্বাস স্থাপন করে না। পরকালের শাস্তি অবশ্যই কঠোরতর ও স্থায়ী।”(২০:১২৭)
আগের পর্বে বলা হয়েছে, যারা নবী-রাসূলদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে না এবং আসমানি গ্রন্থ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখে পৃথিবীতে তাদের জীবন হয় দুঃখ-দুর্দশায় পরিপূর্ণ। কিয়ামতের কঠিন দিনেও তারা আল্লাহর বিচারে জান্নাতে যেতে পারবে না।
এ আয়াতে একই বিষয়ে আরো বেশি জোর দিয়ে বলা হয়েছে, এ পৃথিবীতে এমন অনেক লোক আছে যারা বিশ্বাসগত দিক দিয়ে কাফের হয়ে গেছে এবং সত্য ও সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন বিষয়ে উগ্রপন্থা অবলম্বন করছে। তাদেরকে আল্লাহ যে সব ধন-সম্পদ দান করেছেন তা অন্যায় পথে ব্যয় করছে। এই ধরনের মানুষও আগে উল্লিখিত মানুষের মতো জাহান্নামের কঠিন আযাবের সম্মুখীন হবে। সেই জাহান্নাম থেকে কেউ পালিয়ে যেতে পারবে না।
এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল:
১. আল্লাহর নেয়ামত ও দানকে অন্যায় পথে ব্যয় করা বা এসব দানের অপচয় করা মানেই হচ্ছে গোনাহ করা। আল্লাহর প্রতি ঈমানদার ব্যক্তিরা এ ধরনের কাজ করতে পারে না।
২. পৃথিবীর জীবনে প্রতিটি কাজ করার ক্ষেত্রে দুনিয়ার লাভ-ক্ষতি হিসাব করার আগে আখেরাতের পুরস্কার ও শাস্তির কথাটি আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
সূরা ত্বোয়া-হার ১২৮ ও ১২৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
أَفَلَمْ يَهْدِ لَهُمْ كَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِنَ الْقُرُونِ يَمْشُونَ فِي مَسَاكِنِهِمْ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَاتٍ لِأُولِي النُّهَى (128) وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِنْ رَبِّكَ لَكَانَ لِزَامًا وَأَجَلٌ مُسَمًّى (129)
“তবে কি তারা এর মাধ্যমে উপদেশ গ্রহণ করে না যে আমি তাদের আগে এ ধরনের কত জনপদ ধ্বংস করে দিয়েছি যাদের বাসস্থান দিয়ে তারা অতিক্রম করে থাকে, অবশ্যই এতে বিবেকবানদের জন্য নিদর্শন আছে।" (২০:১২৮)
“তোমার প্রতিপালকের পূর্ব-ঘোষণা না থাকলেও এক নির্দিষ্ট কাল নির্ধারিত না থাকলে আশু শাস্তি অবশ্যম্ভাবী হত।”(২০:১২৯)
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর যুগের কাফের ও মুশরিকদের উদ্দেশ করে এ দুই আয়াত নাজিল হয়েছে। এসব কাফের ও মুশরিক ইয়েমেন সফরে গিয়ে আদ জাতির ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘর-বাড়ি দেখতে পেয়েছিল। তারা শ্যাম বা সিরিয়ায় গিয়ে সামুদ ও হযরত লুত (আ.)এর সম্প্রদায়ের ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘর ও জীবনোপকরণ দেখতে পেয়েছিল। এসব জাতির কঠোর পরিণতি দেখেও মক্কার মুশরিক ও কাফেররা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনেনি। অথচ এসব ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘর-বাড়ি বর্তমান যুগের মানুষদের পাশাপাশি ভবিষ্যত প্রজন্মকেও সতর্ক করে দেয় যে, শিরক, কুফর, অন্যায়, অত্যাচার ও পাপাচারের পরিণতি ভালো হয় না।
আয়াতের পরবর্তী অংশে বলা হয়েছে, আল্লাহর রীতি হচ্ছে সঠিক পথে ফিরে আসার জন্য কাফেরদের সময় দেয়া। এ ছাড়া, প্রতিটি জাতির কর্মফল অনুযায়ী পরিণতির সময়ও নির্ধারণ করে রেখেছেন আল্লাহ। সেই সময়ের আগে ওই জাতির ওপর আল্লাহর গজব নাযিল হয় না।
এ দুই আয়াতের কয়েকটি শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে:
১. অতীত থেকে যে শিক্ষা নেয় না তার জন্য রয়েছে চরম লাঞ্ছনা ও অপমান।
২. ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখার সময় বেশিরভাগ মানুষ বিনোদনকেই গুরুত্ব দেয় এবং এসব নিদর্শন সৃষ্টিকারী অতীত জাতিগুলোর পরিণতির দিকে তাকায় না।
সূরা ত্বোয়া-হা'র ১৩০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
فَاصْبِرْ عَلَى مَا يَقُولُونَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا وَمِنْ آَنَاءِ اللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَأَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضَى (130)
“(হে রাসূল) ওরা যা বলে সে বিষয়ে তুমি ধৈর্যধারণ কর এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা কর এবং রাত ও দিনের কিছু অংশ জুড়ে (তোমার প্রতিপালকের) পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হতে পার।” (২০:১৩০)
মক্কার মুশরিকদের অপমান ও অপবাদের মোকাবিলায় এই আয়াতে মহান আল্লাহ রাসূলে আকরাম (সা.)কে উদ্দেশ করে বলেন: এ ধরনের গালিগালাজ সহ্য করুন এবং আল্লাহ অচিরেই তাদেরকে চরম শাস্তি দেবে বলে আশা করবেন না। ওদের এ ধরনের জঘন্য কর্ম চলতে থাকবে। আপনাকে শুধু ধৈর্য ধারণ করতে হবে। সেইসঙ্গে মানসিক প্রশান্তির জন্য দিনের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর জিকির আসগারে মশগুল হতে হবে। এর ফলে আল্লাহর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে।
এ ছাড়া, কাফের ও মুশরিকদের বিরোধিতা আপনার রেসালাতের দায়িত্ব পালনে বিন্দুমাত্র বাঁধা সৃষ্টি করতে পারবে না। পাশাপাশি আপনিও নিজ দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে হতাশ হবেন না। আল্লাহর অনুগ্রহের ব্যাপারে আশাবাদী থাকুন এবং যে মহান দায়িত্ব আপনাকে দেয়া হয়েছে তাতে রাজী ও সন্তুষ্ট থাকুন।
এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:
১. ঈমানদার ব্যক্তিদেরকে কাফের-মুশরিকদের কথা ও আচরণে কষ্ট পেলে চলবে না। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও তারা নমনীয় হতে পারবেন না।
২. ইসলামের শত্রুদের অপমানজনক কথা ও অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণের মোকাবিলায় নামাজসহ অন্যান্য ইবাদত ও আল্লাহর স্মরণ মানুষের মানসিক শক্তি ও সহ্য ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
৩. রাত শুধু ঘুম ও বিশ্রামের জন্যই সৃষ্টি করা হয়নি। এই রাতের কিছু সময় আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করে কাটাতে হবে।
সূত্রঃ সূত্রঃ ইরান বাংলা রেডিও

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন