ফুলের নগরী শিরাজ
ফুলের নগরী শিরাজ
শিরাজে বসন্তের আগমনের গুণগান করে মহাকবি হাফিজ বলেছেন :
গোলাপি পোশাকে সেজে এসেছে বসন্ত,
নিঃশ্বাসে আনন্দঝরা ঋতুরাজকে কাছে টেনে নাও
হে বন্ধু আমার! কাছে টেনে নাও হাস্যোজ্জ্বল অতিথিকে,
সাদরে স্বাগত জানাও তারে।
এই নগরীতে আপনি দেখতে পাবেন মহাকবি হাফিজের মাযারকে ঘিরে একটি সুবিশাল ফুলবাগান- হাফেজিয়া। এর শান্ত ও পবিত্র পরিবেশ আল্লাহর প্রতি স্থানীয় জনসাধারণের প্রেম ও প্রীতির কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ও তীর্থযাত্রী মহাকবি হাফিজের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার ডালি নিয়ে হাফেজিয়ায় এসে সমবেত হন।
শিরাজের উপকণ্ঠে অবস্থিত একটি গ্রামের এক সুবৃহৎ ও সুন্দর বাগানে রয়েছে অপর এক প্রখ্যাত কবি সাদী’র মাজার-গ্রামটির নাম সা’দীয়া। শহরের খুব কাছাকাছি এই গ্রামটির প্রাকৃতিক দৃশ্য অত্যন্ত মনোরম। পর্যটক ও তীর্থযাত্রীরা এর অপরূপ সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন। তাঁরা সা’দীর কালজয়ী প্রতিভার কথা স্মরণ করেন, স্মরণ করেন তাঁর অমর গ্রন্থ ‘গুলিস্তান’-এর কথা, স্মরণ করেন তাঁর আধ্যাত্মিক গীতিকবিতার কথা। শ্রদ্ধাবনতচিত্তে তাঁরা এই অমর কবির আত্মার কল্যাণ কামনা করেন।
বাগানটির ভেতরে হাঁটতে হাঁটতে এক জায়গায় আপনার নজরে পড়বে একটি ঝরনা। আপনি দেখতে পাবেন, ঝরনার কাছে দাঁড়িয়ে অথবা বসে কত লোক ঝরনার পানিতে হাত-মুখ ধুয়ে নিচ্ছেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন যে, এই ঝরনার পানি তাঁদের শরীরিক ও মানসিক ব্যাধি সারিয়ে দিতে পারে। আপনি দেখবেন, অনেকেই ঝরনার পানিতে নেমে দাঁড়িয়ে আছেন। সেখানে খুব স্বচ্ছ পানির একটি কূপ দেখা যাবে। এই কূপে যদি আপনি একটি মুদ্রা নিক্ষেপ করেন তবে আপনার যে কোন আশা পূর্ণ হতে পারে। এই বিশ্বাস নিয়ে অনেকেই সেখানে মুদ্রা নিক্ষেপ করেন।
শিরাজ শহরের একটি ঐতিহাসিক স্থান হচ্ছে পারসিপোলিস। এই স্থানটি দেখার জন্য আপনাকে পুরো একটি দিন সময় দিতে হবে। পর্যটকরা এখানে বিরাট বিরাট প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যান। এসব প্রাসাদের স্তম্ভগুলোতে খোদাই করা চিত্রাদি এবং সুসজ্জিত বর্ণমালা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সেগুলো দেখে এবং তা পাঠ করে আপনি জানতে পারবেন- আজ থেকে হাজার বছর আগে পারস্যের সম্রাট ও রাজাদের এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাপন প্রণালি কেমন ছিল। এখানকার আরেকটি প্রত্নতত্ত্ব সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য স্থান হচ্ছে পাসারগাদ। পারসেপোলিস এবং পাসারগাদ উভয় স্থানেই আপনি অবাধ বেড়াতে পারবেন এবং কম খরচে খেতে পারবেন। বিলাসবহুল হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলো সাশ্রয়ীমূল্যে আপনাকে উপাদেয় স্থানীয় খাদ্য সরবরাহ করবে। এই সফরে আপনি সত্যি খুব আনন্দ পাবেন।
এখানে আপনি উকিল বাজার দেখতে যেতে পারেন। এই বাজারে ব্যাপক জনসমাগম হয়ে থাকে। এখানে আপনি স্থানীয়ভাবে তৈরি কার্পেট, কম্বল ইত্যাদি ক্রয় করতে পারেন। প্রদেশের উপজাতীয় লোকেরা এগুলো তৈরি করে। বাজারে ঢুকে আপনি বিভিন্ন ধরনের মসলার গন্ধ পাবেন, ছোট-ছোট কারখানার ছাদের কক্ষপথে ধুয়া নির্গত হচ্ছে দেখতে পাবেন। এসব দেখে প্রাচ্যের বাজার সম্পর্কিত সনাতন ধারণাটাই আবার আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে। এই বাজারের ভিতর দিয়ে এগুতে থাকলে আপনি আরও একটি বাজারে পৌঁছে যাবেন। এই বাজারটির নাম হচ্ছে বাজার হাজি। এখানে অনেকগুলো সরাইখানা রয়েছে। এগুলোর একটি হচ্ছে ‘সরাই-মশির’। এটি প্রথম নির্মিত হয়েছিল জান্দ শাসনামলে। পরে এটি পুনর্নির্মিত হয়। তবে, পুনর্নির্মাণকালে এর মূল নির্মাণশৈলী সম্পূর্ণ অবিকৃত রাখা হয়েছে। এই বাজারে আপনি একটু থামুন, স্থানীয় হস্ত শিল্পগুলো দেখুন। একটি রেস্তোরাঁয় বসে এক কাপ কফি অথবা চা খান। এসব রেস্তোরাঁয় স্থানীয় কবিরা প্রায়ই ফেরদৌসীর কবিতা পাঠের আসর বসান। আপনিও শ্রোতা হিসাবে আসরে বসে যেতে পারেন এবং সুন্দর সুন্দর পোশাকে সজ্জিত খাদেমদের সেবা গ্রহণ করতে পারেন।
এখান থেকেই আপনি তামার তৈরি শিল্পকর্মের বাজারে যেতে পারেন। এখানকার বিশেষভাবে নির্মিত ঘরগুলোতে লোকেরা এখনো পুরনো পন্থায়ই কাজ-কর্ম চালিয়ে যায়। এই বাজারে প্রাচ্য দেশীয় স্থাপত্যশিল্পের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এখানে দিন-রাত কামারের হাতুরির টুংটাং শব্দ শোনা যায়।
বাজার হতে বের হয়ে আপনি এমন একটি রাস্তায় উঠতে পারেন যে রাস্তাটি আপনাকে শাহ-এ-চেরাগে পৌঁছে দেবে। এটি হচ্ছে নবী বংশের অস্টম ইমাম রেজা (আ.)-এর ভ্রাতা আহমদ-ইবনে-মূসার মাজার।
শিরাজে বহুসংখ্যক সুন্দর প্রাচীন মসজিদ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য মসজিদ হচ্ছে : উকিল মসজিদ, নও মসজিদ ও জামে মসজিদ। এগুলোর প্রতিটিতেই মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের চমৎকার নিদর্শন রয়েছে।
এই শহরের একটি দর্শনীয় স্থান হচ্ছে বাগে এরাম। ১২ হেক্টর জায়গা নিয়ে এই বাগান। এতে দেশী ও বিদেশী গাছ ও ফুলের প্রচুর সংগ্রহ রয়েছে। শুধু পড়াশুনা করে এই বাগিচা সম্পর্কে আপনি আর কতটুকু জানতে পারবেন! তার চেয়ে ভাল হবে যদি আপনি বাগিচাটি স্বচক্ষে দেখে আসতে পারেন।
সূত্রঃ ইন্টারনেট
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন