মোটা মানেই কি ভালো স্বাস্থ্য?
মোটা মানেই কি ভালো স্বাস্থ্য?
বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই একটি লোক বিশ্বাস প্রচলিত আছে। এ বিশ্বাস মোতাবেক মনে করা হয় যে, মোটা হওয়া মানেই ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া। তবে এ বিশ্বাস মোটেও ঠিক নয় বা স্বাস্থ্য সম্মত নয়। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মোটা হওয়া মানেই হলো স্বাস্থ্যের জন্য সংকট ডেকে আনা। নির্ধারিত ওজনের চেয়ে কম ওজনের হওয়াকেও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মোটেও সুস্থতার লক্ষণ বলে মনে করেন না। তবে ওজন আধিক্যকে স্বাস্থ্যের জন্য যতোটা হুমকি মনে করা হয়, কম ওজনকে ততোটা হুমকি হিসাবে মনে করা হয় না। এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন ময়মসিংহ মেডিক্যাল কলেজের ইন্টারন্যাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. টিটো।
মোটা-সোটা মানুষরা স্বাস্থ্যবান মানুষ এমন একটি ভুল ধারণা আমাদের অনেকের মধ্যে আছে। যা মোটেও ঠিক নয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা সে সব মানুষকেই স্বাস্থ্যবান মনে করেন, যাদের ওজন নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে আছে ও যাদের অসুখ-বিসুখ নেই। যারা সহজেই দৈনন্দিন কাজ-কর্ম সহজেই করতে পারেন তাদেরকেই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী বলে গণ্য করতে হবে।
মোটা হলেই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী বলে চলতি যে বিশ্বাস আছে তার বিরোধিতা করে এই বিজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, মোটা মানুষকে কখনোই স্বাস্থ্যবান হিসেবে গণ্য করা যাবে না। কারো কারো ওজন একটু বেশি থাকতেই পারে তবে এ কারণে যদি অসুখ বিসুখ না থাকে ও কাজ-কর্মে অসুবিধা না হয় তাহলে তাকে স্বাস্থ্যবান হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে। কিন্তু আধুনিক কালে চিকিৎসাবিদরা প্রয়োজনের চেয়ে বাড়তি ওজনের বিষয়ে বেশ স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছেন। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ওজন যাদের আছে তাদের উচ্চ রক্তচাপ,বহুমুত্র, হৃদরোগসহ অন্যান্য নানা অসুখ দেখা দিতে পারে। উচ্চতা অনুযায়ী দেহের ওজন কতোটা হবে তা ঠিক করা আছে। কারো যদি এর চেয়ে কম ওজন হয় তবে তাকে চট করে অসুস্থ মনে করা ঠিক হবে না। তবে তার ওজন কম কেনো তা প্রয়োজন হলে খতিয়ে দেখা যেতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হয়ত ঠিক মতো খেতে পারছেন না বা তার জ্বর হয়েছে এ কারণে ওজন কমে গেছে। অন্যদিকে এমন দেখা গেছে, খেতে পারছেন কিন্তু সে খাবার তার দেহে ঠিকভাবে থাকছে না। অর্থাৎ আন্ত্রিক রোগ বা ডায়রিয়ার কারণে খাবার সঠিকভাবে হজম হতে পারছে না । অন্যদিকে বহুমুত্র বা ডায়বেটিসের একটি উপসর্গ হলো, এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রচুর খেতে পারেন কিন্তু তাদের ওজন তো বাড়েই না বরং তা কমতে থাকে। এ ছাড়া টিবি বা যক্ষ্মার কারণেও ওজন হ্রাস পেতে পারে। কাজেই কারো ওজন যদি কম থাকে বলে মনে করেন। বা ওজন কমতে থাকে তবে সেক্ষত্রে তাকে অবশ্যই সর্তক হতে হবে। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে একজন চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করে দেখতে হবে কেনো তার ওজন হ্রাস পাচ্ছে। তবে কেউ কেউ বংশগত কারণে চিকন হয়ে থাকেন। সে সব ক্ষেত্রে মন খারাপ করার বা শংকিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
প্রত্যেকেরই নিজ নিজ সঠিক ওজন বজায় রাখার চেষ্টা করা উচিত। এ জন্য প্রথমেই জেনে নিতে হবে বয়স ও উচ্চতা অনুসারে তার জন্য সঠিক ওজন কোনটি। তারপর সে ওজন বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। অন্তত তার ওজন যেন আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি না পায় বা হঠাৎ করে হ্রাস পেতে না থাকে সে দিকে নজর দিতে হবে। ওজন সঠিক রাখার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে অবশ্যই খাদ্য অভ্যাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। একটি কথা সবার মনে রাখতে হবে, আর তা হলো, আমারা বাঁচার জন্য খাই, খাওয়ার জন্য বাঁচি না। এ ছাড়া যে খাবারটি গ্রহণ করছি তা যেন দেহ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে সেদিকেও নজর দিতে হবে। যারা দৈহিক পরিশ্রমবিহীন জীবন-যাপন করেন এ কথা তাদের জন্য বেশি প্রযোজ্য। সুষম খাদ্য, পরিমিত আহার ও দিনে একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যায়াম করা তাদের জন্য একান্ত প্রয়োজন। সুন্দর জীবন যাপনের স্বার্থে সবাইকে যতোটা সম্ভব নির্ধারিত ওজনের মধ্যেই থাকা উচিত। অন্তত ওজন যেন নির্ধারিত সীমাকে অতিক্রম না করে সে বিষয়ে নজর দেয়া উচিত। ওজন নির্ধারিত মাত্রার গণ্ডি পার হলে তাতে নানা রোগের আক্রমণের দরজা খুলে যেতে পারে।
এ কথা কেবল বড়দের জন্য নয় বরং শিশুদের জন্যও প্রযোজ্য। কারণ শিশু-কিশোরদের বাড়তি ওজন নানা সমস্যা এমনকি অকাল মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। কথাটি শুনতে অনেকেরই খারাপ লাগবে, কিন্তু এ ধরণের একটি সর্তকবাণী উচ্চারণ করেছিলেন একজন বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেছিলেন, আজকের দিনে যে সব অতিরিক্ত মোটা শিশু রয়েছে তাদের অনেকেরই পিতামাতাকে শেষ পর্যন্ত সন্তানের লাশ বহন করতে হবে। একজন বিশেষজ্ঞ যখন এ ধরণের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তখন নিশ্চয়ই আমরা আদর করে সন্তানকে ভুঁড়িভোজ করাবো না। বরং তার ওজন যেন নির্ধারিত সীমার মধ্যে থাকে সে চেষ্টাই করব।
সূত্রঃ ইন্টারনেট
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন