অতিসংবেদনশীল শিশুদের পূর্ণ বয়সে দেখা দিতে পারে মনোরোগ ওসিডি
অতিসংবেদনশীল শিশুদের পূর্ণ বয়সে দেখা দিতে পারে মনোরোগ ওসিডি
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, অতিসংবেদনশীল শিশুরা পূর্ণ বয়সে অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার বা ওসিডি নামের মনোরোগে আক্রান্ত হতে পারে । এ ধরণের মনোরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা, হাত ধোয়া, বা দরজায় সঠিক ভাবে চাবি লাগানো হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখার মতো কাজ বারবার করেন। কোনো কোনো মনোবিজ্ঞানী এ জাতীয় কিছু কিছু তৎপরতাকে আচারপরায়ণতা বলে থাকেন।
অবশ্য কোনো ধরনের যুক্তি বা ধমক দিয়ে ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তিকে তার ওই আচারপরায়ণতা থেকে বিরত রাখা যায় না।
‘জার্নাল অব বিহেইভিওর থেরাপি অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল সাইকিয়াট্রি'তে সম্প্রতি চালানো এ সংক্রান্ত একটি সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অতিসংবেদনশীল শিশুরা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য আচারপরায়ণ হয়ে উঠতে শুরু করে। আর এ ভাবে তারা ওসিডি'র শিকারে পরিণত হয়। এ সমীক্ষার নেতৃত্বদানকারী মনোবিজ্ঞানী বলেছেন, ওসিডি'তে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে তিনি যখন কাজ করছিলেন, তখন কোনো কোনো রোগী তাকে জানান, তারা শৈশব থেকেই শব্দ ও স্বাদের প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল ছিলেন।
এ মনোবিজ্ঞানী এবং তার সহকর্মীরা বলেছেন,ইন্দ্রিয়লব্ধ তৎপরতা চলে স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে। এ তৎপরতার সঙ্গে আচারপরায়ণতা এবং ওসিডি'র একটি সম্পর্ক রয়েছে।
গবেষক দলটি বলেছেন,ইন্দ্রিয়লব্ধ তৎপরতা, আচারপরায়ণতা এবং ওসিডি'র মধ্যে সম্পর্ক বের করার পথ খুঁজে পেয়েছেন তারা।
এ জন্য প্রথমেই তারা কম বয়সী শিশুদের মা-বাবাকে তিনটি প্রশ্ন করেছেন। এ সব প্রশ্ন হলো, তাদের শিশু কতোটা আচারপরায়ণ । অর্থাৎ একই কাজ শিশুটির সুনির্দিষ্টভাবে করার প্রয়োজন হয় কিনা বা কোনো কিছু সুনির্দিষ্টভাবে তারা পেতে চায় কিনা? শিশুটি কতোটা উদ্বেগে ভোগে? এ প্রশ্নের মধ্য দিয়ে একজন অপরিচিত মানুষের সঙ্গে শিশু কী ধরনের আচরণ করে, কোনো জিনিসের ফলাফল কি হবে তা নিয়ে সে মাথা ঘামায় কিনা এবং সেইসাথে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শিশুর ঘনিষ্ঠতা নির্ণয়েরও চেষ্টা করা হয়। সবশেষে প্রতিদিন ইন্দ্রিয়লব্ধ তৎপরতার ক্ষেত্রে শিশুটি কী করে তা জানতে চাওয়া হয়; অর্থাৎ শিশুকে স্পর্শ করলে বা অপরিচিত স্বাদ বা গন্ধের ক্ষেত্রে কি ধরণের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।
সমীক্ষার দ্বিতীয় পর্যায়ে গবেষকরা ৩১৪ জন পূর্ণ বয়সীর ওপর অনলাইনে জরিপ চালিয়েছেন। এ সময় তাদের মধ্যে ওসিডির প্রবণতা আছে কিনা, তাদের উদ্বেগের মাত্রা কী পরিমাণ, মুখ বা স্পর্শজনিত কারণে যে সব উদ্দীপনার সৃষ্টি হয় সে বিষয়ে তাদের অতীত ও বর্তমান স্পর্শকাতরতা সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করেছেন গবেষকরা।
এই দুই সমীক্ষার ফল থেকে বোঝা গেছে যে আচার পরায়ণতা এবং অতিসংবেদশীলতার মধ্যে সম্পর্ক আছে বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। তারা আরো বলেন, শিশুদের মধ্যে আচারপরায়ণতার মতো উপসর্গের মধ্য দিয়ে অতিসংবেদনশীলতা প্রকাশ পায়। অবশ্য বড়দের ক্ষেত্রে এ ধরণের আচরণের সঙ্গে ওসিডির সম্পর্ক রয়েছে।
গবেষক দলটি বলেছে, কোনো বিশেষ স্পর্শ বা গন্ধের প্রতি যখন কোনো শিশু অতিমাত্রায় স্পর্শকাতর হয় তখন তার কাছে মনে হয় কোনো হামলার মুখে পড়েছে সে বা পরিবেশ তার জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে । এ অবস্থায় একটি শিশু আচারপরায়ণতাকে গ্রহণ করে অনেকটা আত্মরক্ষার অংশ হিসেবে। এরফলে শিশুটি নিজের ওপর খানিকটা নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়। কিন্তু বয়সীদের ক্ষেত্রে এগুলোই ওসিডি'র উপসর্গ হয়ে দেখা দেয়।
সূত্রঃ ইন্টারনেট
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন