কোমল পানীয় চর্বিযুক্ত খাবারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
কোমল পানীয় চর্বিযুক্ত খাবারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
কোমল পানীয় ও অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবারের বিরুদ্ধে নতুন এক যুদ্ধে নামতে শুরু করেছে বিশ্ব। এরই অংশ হিসেবে নিউ ইয়র্কের মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ প্রকাশ্য স্থানে বা রেস্তোরাঁয় ১৬ আউন্স বা ০.৪৫ কিলোগ্রাম কোমল পানীয় একদফায় পরিবেশনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বিবেচনা করেছেন।
ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞরা বলছেন,অতি চিনি বা চর্বিযুক্ত অস্বাস্থ্যকর খাদ্য খাওয়ানোর জন্য এ সংক্রান্ত খাদ্য শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা নানাভাবে মানুষকে প্রলোভিত করছেন; এ থেকে জনগণকে রক্ষার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। অতিরিক্ত ওজন বা মেদভুঁড়ির সংকট দেখা দেয়ার সঙ্গে বাড়তি চিনি এবং চর্বিযুক্ত অস্বাস্থ্যকর খাবারের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত ওজন ডেকে আনে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা অসুখ বিসুখ।
এক হিসাবে দেখা গেছে, আমেরিকার দুই/তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ স্থলুকায়। মোটা হওয়ার ফলে সৃষ্ট রোগ-ব্যাধির পেছনে দেশটিকে বছরে ১৯০ কোটি ডলার ব্যয় করতে হয়। আমেরিকার মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের ২১ শতাংশ এ ভাবে ব্যয় হয়। লেইগ বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপে এ কথা উঠে এসেছে। এছাড়া স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় মোটা মানুষের স্বাস্থ্য খাতে গড়ে দু' হাজার সাতশ' ৪১ ডলার বেশি ব্যয় হয় বলেও এ জরিপে দেখা গেছে।
মানুষ যেন অতিরিক্ত চিনি না খায় বা অতি চর্বিযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকে তার ব্যবস্থা নেয়া হয় না; কিন্তু এ জাতীয় খাবারের ফলে যে স্বাস্থ্য সংকট দেখা দেয় তার চিকিৎসায় মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করে।
আমেরিকার মানুষরা বাড়তি যে চিনি গ্রহণ করে তার ৪১ শতাংশই আসে কথিত কোমল পানীয় থেকে। আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশিতব্য প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
খুব স্বাভাবিকভাবেই অতি চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবারের ওপর বাড়তি কর বসানোর এবং করের অর্থ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের কথা বলবেন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষরা।
অনেক দেশ অতি চর্বিযুক্ত খাবার ও ‘ফেঞ্চ ফ্রাই' হিসেবে পরিচিত আলুর চিপসের ওপর ট্যাক্স বাড়িয়েছে।
ডেনমার্ক ২.৩ শতাংশের বেশি সংম্পৃক্ত চর্বি বা স্যাচুরেডেট ফ্যাটযুক্ত খাবারের ওপর গত বছর থেকে কর বাড়িয়েছে। এ ছাড়া মাখনের দাম বাড়িয়েছে ৩০ শতাংশ। আর আলু চিপসের দাম বাড়িয়েছে আট শতাংশ। দেশটি চিনিযুক্ত কোমল পানীয়, চকলেট, আইসক্রিম, লজেন্সের দাম এরও এক বছর আগে বাড়িয়েছে ২৫ শতাংশ। ২০১১ সালে হাংগেরি অতিমাত্রায় লবন, চিনি বা ক্যাফিনযুক্ত প্যাকেটজাত খাবারের ওপর কর বাড়িয়েছে। কথিত কোমল পানীয়, বিস্কিট, জ্যাম এবং ইন্সট্যান্ট স্যুপের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। একইভাবে মিষ্টি, চকলেট ও আইসক্রিমের ওপর কর বসিয়েছে ফিনল্যান্ড এবং কথিত কোমল পানীয়র ওপর কর বৃদ্ধি করেছে।
বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড, রুমানিয়া, ইতালি এবং ব্রিটেনে মোটা মানুষের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। এ সংখ্যা আমেরিকার সংখ্যাকে ছুঁতে চলছে এবং তারাও কোমল পানীয় ও অতি চর্বিযুক্ত খাবারের ওপর একই ধরনের পদক্ষেপের কথা ভাবেছে।
পাকিস্তানের হরমোন বিশেষজ্ঞ ডা. সালেম কোরেশি কথিত কোমল পানীয়'র ওপর বাড়তি করারোপের পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, সরকারের এখন এ বিষয় মাথা ঘামানোর প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। কেবল যে ‘চিনি' এবং ডায়াবেটিস নিয়ে ভাবতে হচ্ছে তা নয়। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডিন ফেইল হওয়া, অন্ধত্ব, পা কেটে ফেলা প্রভৃতিও দেখা দেয়া ডায়াবেটিসের পথ ধরে। তরুণ বয়সেই এ সংকট দেখা দিতে পারে বা তরুণদেরও হতে পারে এ জাতীয় সংকট।
সব মিলিয়ে বলা যায়, অতি চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবারের বিরুদ্ধে এখন সবার সচেতন হওয়ার সময় এসে গেছে। ধূমপানের বিরুদ্ধে বিশ্ব যেমন একযোগে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তেমন পদক্ষেপ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে এ ধরনের খাবারের বিরুদ্ধেও।
সূত্রঃ ইন্টারনেট
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন