রেনেসাঁর কবি ইকবাল -৯

রেনেসাঁর কবি ইকবাল -৯


পাঠক ! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। কবি ইকবালের জীবন ও কর্মভিত্তিক ধারাবাহিক আলোচনার আজকের আসরে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। আশা করি আপনারা যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। গত কয়েকটি আসরে আমরা ইকবালের জীবন ও কর্ম থেকে কিছু কিছু বিষয়ে আলাপ করার চেষ্টা করেছি। আজো আমরা তাঁর সামগ্রিক জীবনের কিছু প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো।
আমাদের আপনারা জানেন যে ইকবাল পড়ালেখা করেছেন স্বদেশ এবং স্বাদেশের বাইরে বৃটেনে,জার্মানীতে। বাইরে পড়ালেখা করার সুবাদে তিনি তাঁর সমকালীন শ্রেষ্ঠ কবি সাহিত্যিক দার্শনিক এবং শিক্ষাবিদদের সাহচর্য লাভ করার সুযোগ পেয়েছেন। টমাস আর্নল্ড, প্রফেসর ম্যাক টিগার্ড,প্রফেসর এডওয়ার্ড ব্রাউন,প্রফেসর রেনল্ড নিকলসন প্রমুখ ব্যক্তিত্ববর্গের সাথে তাঁর পরিচয় ঘটে। তিনি কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে জার্মানীর মিউনিখ ইউনিভার্সিটিতে যান এবং দর্শন শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। লন্ডন ইউনিভার্সিটিতে প্রফেসর আর্নল্ডের পরিবর্তে কিছুছিন শিক্ষকতাও করেন। পশ্চিমা চিন্তাবিদ বা দার্শনিকদের মধ্যে কবি ইকবাল যে কজনকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন এবং যাদের লেখা বা দর্শন পছন্দ করতেন তাদের মধ্যে কজন হলেন জন লক,কান্ট, হেগেল,গ্যাটে,টলস্টয়। আর প্রাচ্যের কবিদের মধ্যে মাওলানা জালালুদ্দিন বালখির কবিতার ভক্ত ছিলেন তিনি।
ইতোপূর্বে আমরা বলেছিলাম যে ইকবাল তাঁর লেখালেখি শুরু করেছিলেন ফার্সি ভাষায়। প্রথমে তিনি থিসিস লিখেছিলেন ফার্সিতে। এরপর কবিতাও লেখেন ফার্সিতে। ফার্সি ভাষায় কাব্যচর্চা করার কারণে ইকবাল খুব সহজেই মুসলিম দেশগুলোতে তো বটেই সমগ্র বিশ্বেই কবি খ্যাতি পেয়ে যান। বহু গবেষক বা চিন্তাবিদের মতে ইকবাল ছিলেন মুসলিম দেশগুলোর মাঝে পারস্পরিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার আহ্বানকারী প্রাথমিক কবিদের অন্যতম। মুসলমানদের চিন্তা চেতনায় তিনি যে জাগরণ নিয়ে এসেছেন,তাঁর বাঙ্গে দারা নামক গ্রন্থে তার স্বরূপ খুঁজে পাওয়া যাবে। ১৯০৮ সালের আগস্ট মাসে তিনি তাঁর স্বদেশে ফিরে আসেন বাইরে থেকে। ফিরে এসেই লাহোর সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
ইকবাল যেহেতু পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সাথে পরিচিত ছিলেন সেহেতু প্রাচ্যের দার্শনিক বা চিন্তাবিদদের সমালোচনা করতেন। কারণ পাশ্চাত্যের সংস্কৃতির অগ্রহণযোগ্য দিকগুলোর কথা জেনেও তাঁরা কেন পাশ্চাত্যকে অনুসরণ করছেন এই প্রশ্নটি ইকবালকে তাদের ব্যাপারে সমালোচক করে তোলে। ইকবালের বক্তব্য হচ্ছে প্রাচ্যের দার্শনিকরা বা চিন্তাবিদরা পাশ্চাত্যের কাছে নিজেকে সমর্পন করে পরাধীন হয়ে গেছেন,এবং নিজস্ব সত্ত্বার কথা ভুলে গেছেন। পাশ্চাত্যের বাহ্যিক চাকচিক্য দেখে তাঁরা আত্মহারা হয়ে যান। ইকবাল ভারতে ফিরে আসার প্রাথমিক ক'বছরে আসরারে খুদি এবং রুমুযে বিখুদি গ্রন্থ দুটি লেখেন।
তাঁর এই লেখাগুলো তাঁর শিক্ষক রিনল্ড নিকলসনের হাতে গিয়ে পৌঁছায়। নিকলসন আগে থেকেই ইকবালের মেধার ব্যাপারে সচেতন ছিলেন। তাই ইকবালের বইগুলো হাতে পেয়ে তিনি গভীর মনোযোগের সাথে পড়েন। পড়ার পর তিনি ইকবালের কবিতাগুলোকে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেন। এ কারণে ইকবাল ভারতে পরিচিত হবার আগে বৃটেনে অনেক বেশী পরিচিতি পান।
১৯২৬ সালে ইকবাল পাঞ্জাবের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। হিন্দু-মুসলমানের মধ্যকার নানা জটিলতা এবং স্বাধীনতাপ্রিয় মনোভাবের কারণে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে আগ্রহী হন। ১৯৩০ সালে আহমাদাবাদে মুসলিম লীগের বার্ষিক সম্মেলনে তিনি পাকিস্তান সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন। তাঁর পায়ামে মাশরেক নামক কাব্য গ্রন্থে সামাজিক বিভিন্ন সমস্যার কথা বলা হয়েছে। তিনি বর্ণবৈষম্যের বিরোধী ছিলেন,ঔপনিবেশিকতার বিরোধী ছিলেন,গোত্রপ্রীতির বিরোধী ছিলেন। ইকবাল লিখেছেনঃ

نه افغاني و نه ترك و تتاريم
چمن زاديم و از يك شاخساريم
تميز رنگ و بو بر ما حرام است
كه ما پروردة يك نو بهاريم
আমরা নই আফগানী,তুর্কি কিংবা তাতারী
ঘাসের মতো কিংবা বিভিন্ন শাখা যেন একই বৃক্ষের
বর্ণ-বৈষম্য আমাদের প্রতি হারাম
কেননা আমরা সবাই এক আল্লাহর সৃষ্টি
সূত্রঃ ইরান বাংলা রেডিও

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন