ওহাবি মতবাদঃ ১৪তম পর্ব

ওহাবি মতবাদঃ ১৪তম পর্ব
মহা দয়ালু স্রষ্টা কোরআনকে আমাদের জন্যে পাঠিয়েছেন তাঁর দিকে যাবার তাঁর পথে চলার একটি গাইড বা পথনির্দেশক হিসেবে। পার্থিব এই জীবনের আঁকাবাঁকা, উত্থান-পতনময় দুর্গম ও জটিল পথে এবং বিভিন্ন চিন্তাদর্শের বেড়াজালে যাতে আমরা দিশেহারা হয়ে না যাই কিংবা যাতে আমরা সঠিক পথ হারিয়ে না বসি সেজন্যেই আল্লাহ পাক কোরআনকে আমাদের গাইড লাইন হিসেবে অবতীর্ণ করেছেন। আমরা এখানে কোরআনের আয়াতের প্রতি আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করবো যাতে পরহেজগারদের দিকে আল্লাহর দৌড়ানো সংক্রান্ত রাসূলে খোদার বক্তব্যের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা যায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সূরায়ে আঙ্কাবুতের উনসত্তর নম্বর আয়াতে বলেছেনঃ
"আর যারা আমাদের পথে একনিষ্ঠ লক্ষ্য নিয়ে সাধনা করে, আমরা অবশ্যই তাদেরকে আমাদের পথে পরিচালিত করবো এবং আল্লাহ পাক সৎকর্মশীলদের সাথে রয়েছেন।"
আল্লাহর পথে যারা চেষ্টা প্রচেষ্টা চালায় আল্লাহ তাদেরকে এভাবেই সহযোগিতা করেন এবং তাদেরকে আল্লাহ তাঁর একান্ত হেদায়াত দান করেন। আর প্রকৃতপক্ষে এটাই হলো রাসূলে খোদার হাদিসের ব্যাখ্যা যেখানে তিনি বলেছিলেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর নেককার, পরহেজগার বান্দাদের দিকে দৌড়ে যান। আর এই আয়াতের প্রতি একটু মনোযোগ দিলেই বোঝা যাবে এখানে আল্লাহর দৈহিক রূপে দৌড়ানোর বিষয়টি বোঝায় না অর্থাৎ এর উদ্দেশ্য মানুষের মতো দু'পায়ে আল্লাহর দৌড় দেওয়া নয়। আল্লাহ তার বান্দাদেরকে সরল সঠিক পথে পরিচালিত করেন-এ ধরনের বহু আয়াত রয়েছে পবিত্র কোরআনে। তবে মানুষের মতো দৈহিক দৌড় দেওয়া এবং এ ধরনের মানবীয় অঙ্গসঞ্চালনমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি হেদায়েত দেন না, কেননা আল্লাহর এ জাতীয় সঞ্চালনের প্রয়োজনই নেই।
ইবনে তাইমিয়া আরো বিশ্বাস করেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে আমাদের বাহ্যিক চোখ দিয়ে দেখা সম্ভব। এ সম্পর্কে তিনি বলেছেনঃ "যে-কোনো বস্তু বা জিনিসেরই অস্তিত্ব যদি পরিপূর্ণতরো হয় দেখার জন্যে তা অধিকতর উপযুক্ত হয়। আর যেহেতু আল্লাহ হচ্ছেন পূর্ণাঙ্গ এবং পরিপূর্ণতম সত্ত্বা তাই অন্যান্য বস্তুর চেয়ে তাঁকে দেখা সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক। ফলে আল্লাহকে অবশ্যই দেখতে পাওয়া উচিত।"
ওহাবিরা অবশ্য 'আল্লাহকে দেখার বিষয়টি' নিয়ে এতো বেশি বাড়াবাড়ি করেছে, এতো বেশি সীমালঙ্ঘন করেছে যে,বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন যে-কোনো সচেতন চিন্তার মানুষই তাদের ঐ চরমপন্থী কথাবার্তায় বিস্মিত না হয়ে পারেন না।
ইবনে তাইমিয়া বিশ্বাস করেন কিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক তাঁর অবয়ব পরিবর্তন করে মানুষের সামনে আসবেন এবং আত্মপরিচয় দিয়ে বলবেনঃ
"আমি তোমাদের খোদা।' কিন্তু মানুষ তার জবাবে বলবেঃ 'আমরা তোমাকে চিনি না এবং আমরা তোমার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। যদি আমাদের খোদা আসেন আমরা তাঁকে চিনতে পারবো।' তারপর আল্লাহ তাঁর আসল অবয়বে তাদের সামনে আসবেন এবং আত্মপরিচয় দেবেন। মানুষেরা তখন বলবেঃ হ্যাঁ! তুমিই আমাদের খোদা! তারপর তারা আল্লাহর পেছনে পেছনে বেহেশতের দিকে যাবে।"
আচ্ছা! ওহাবিদের এইসব কথাবার্তা কি আল্লাহর সাথে ঠাট্টা-রসিকতা করা নয়? আরেকটি প্রশ্ন হলো মানুষ কি আগে দুনিয়াতে কখনো আল্লাহকে দেখেছে যে কিয়ামতে তাঁকে তাঁর আসল চেহারা দেখে চিনতে পারবে? পাঠক! আপনারা কি কেউ আল্লাহকে দেখেছেন কিংবা আল্লাহকে দেখেছে এমন কাউকে চেনেন? আল্লাহকে দেখার কোনো সুযোগ নেই-কোরআনে এ সংক্রান্ত সবচেয়ে স্পষ্ট যে আয়াতটি প্রমাণ হিসেবে উদ্ধৃত করা যায় তাহলো সূরা আনআমের ১০৬ নম্বর আয়াত। আয়াতটি হলোঃ "চোখগুলো তাঁকে দেখতে পায় না কিন্তু তিনি সকল চোখকেই দেখেন। তিনি সূক্ষ্ম দৃষ্টিসম্পন্ন এবং সকল বিষয়েই সচেতন।"
আল্লাহকে যে মানব চোখ দিয়ে দেখা কোনোভাবেই সম্ভব নয় সে সম্পর্কে কোরআনের সূরা আরাফে'র ১৪৩ নম্বর আয়াতে সুস্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে। বলা হয়েছেঃ "তারপর মূসা যখন প্রতিশ্রুত সময়ে যথাস্থানে এসে পৌঁছলেন,তখন তাঁর সাথে তাঁর রব কথা বললেন। তিনি বললেনঃ হে পরোয়ারদেগার! আমাকে দর্শন দাও,আমি তোমাকে দেখবো। আল্লাহ বললেনঃ 'আমাকে কক্ষণো দেখবে না।"
যে দুটি আয়াতের উদ্ধৃতি দেওয়া হলো,তা থেকে নিরূপণ হয়ে যায় যে,ইবনে তাইমিয়ার কল্পনাপ্রসূত চিন্তাভাবনাগুলো ভ্রান্ত।প্রকৃত সত্য হলো আল্লাহ এমন এক সত্ত্বা যাকে কখনোই দেখা যাবে না। ইবনে তাইমিয়া এবং অন্যান্য সালাফিয়ারা আল্লাহ সম্পর্কে আরো অনেক কথাবার্তা বলেছেন। যেমনঃ আল্লাহ পাক মশার পিঠে চড়েও চলাফেরা করতে পারেন। আল্লাহ কোঁকড়ানো চুলধারী যুবক। আল্লাহর চোখে ব্যথা হলে ফেরেশতারা তাঁর সেবায় এগিয়ে যান। আল্লাহ পাক নবীদের সাথে করমর্দন করেন। সোনালী রঙের জুতা পরা পা রয়েছে আল্লাহর। আল্লাহর কাঁধ আছে, কোমর আছে, আঙুল আছে, তিনি আশ্চর্য হন এবং হাঁসেন ইত্যাদি....
এইসব অযৌক্তিক কল্পনার জবাবে আমরা ইতোপূর্বেও বলেছি যে আল্লাহ তায়ালা মানুষসহ কোনো কিছুর সাথেই তুলনীয় নয় এবং তাঁর কোনো দৈহিক অবয়ব নেই। সূরা আঙ্কাবুতের আটষট্টি নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা কথা বানায় কিংবা তার কাছে সত্যের দাওয়াত আসার পরও তাকে অস্বীকার করে তারচেয়ে অত্যাচারী আর কে হতে পারে? কাফেরের স্থান কি দোযখ নয়? বিশিষ্ট দার্শনিক ইমাম গাযযালি এবং কুরতাবিসহ আরো বহু মুসলিম মনীষী বলেছেন যারা আল্লাহর দৈহিকতায় বিশ্বাস করে তারা কাফের। কেননা দেহ মানেই হলো মাখলুক অর্থাৎ সৃষ্ট,আর সৃষ্ট কোনো কিছু তথা মাখলুকাতের পূজা বা প্রার্থনা করা মূর্তি পূজার শামিল।
সূত্রঃ ইন্টারনেট

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন