হজরত ইমাম মাহদি (আ.)এর আগমন
হজরত ইমাম মাহদি (আ.)এর আগমন
মুসলিম জাহান আজ নানা বলয়ে বিভক্ত। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্তর্ধানের পর মুসলমানদের মধ্যে ঐশী খিলাফতব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল। আর হজরত রাসুল করিম (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী এ খিলাফতব্যবস্থার সমাপ্তি হয়ে জুলুম-অত্যাচারের রাজত্ব চলেছে, এর পর আবার পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসার কথা হজরত ইমাম মাহদি (আ.)-এর আগমনের মাধ্যমে। অনেকেই মনে করেন, আমরা নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত_সবই পালন করছি ও মানছি; তাহলে আবার ইমাম মাহদি আসার কী প্রয়োজন? আবার উম্মতের বেশির ভাগ লোকই হজরত ইমাম মাহদির আগমনের অপেক্ষায় দিন গুনছেন? হজরত ইমাম মাহদি (আ.)-এর আবির্ভাব সম্পর্কে উম্মতের প্রখ্যাত আলেমদের মতামত :
আলহাজ মাওলানা এ কে এম ফজলুর রহমান মুন্সি রচিত 'পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে হজরত ইমাম মাহদি (র.)' যা ১৯৮৪ ইং সালে দি তাজ পাবলিশিং হাউস, ৭/বি, প্যারীদাস রোড, ঢাকা-১ কর্তৃক প্রকাশিত হয়। আলহাজ মাওলানা এ কে এম, ফজলুর রহমান মুন্সি ওই পুস্তকের এক অংশে হজরত ইমাম মাহদি (আ.)-এর আবির্ভাবের সময় সম্পর্কে বলেন, "এই উপমহাদেশের বিখ্যাত অলি হজরত শাহ নেয়ামত উল্লাহ কাশ্মীরি (র.) তাঁহার ভবিষ্যদ্বাণীতে উল্লেখ করেছেন যে_১৩৮০ হিজরী সালে ইমাম মাহদি জন্মগ্রহণ করিবেন এবং চলি্লশ বৎসর বয়সে আত্মপ্রকাশ করিবেন। এই হিসাব অনুসারে ইমাম মাহদি ১৪২০ হিজরী সালে আত্মপ্রকাশ করিবেন। সুতরাং তাঁহার প্রকাশ পাওয়ার মাত্র বিশ বৎসর বাকী রহিয়াছে।" (পৃষ্ঠা : ১৬-১৭)
আলহাজ মাওলানা এ কে এম ফজলুর রহমান মুন্সির হিসাব অনুযায়ী হজরত ইমাম মাহদি (আ.)-এর আবির্ভাব হওয়ার কথা ২০০৪ সালে। কারণ ১৯৮৪ সালে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, আর মাত্র বিশ বছর বাকি আছে হজরত ইমাম মাহদি (আ.)-এর আগমনের সময়। তাহলে বর্তমানে কত সাল চলছে?
মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস থেকে প্রকাশিত (হিজরি ১৩০৫) হজরত আল্লামা আবদুল ওহাব শা'রানি প্রণীত কিতাব 'আল ইওয়াকিত ওয়াল জাওয়াহির' গ্রন্থের প্রথম সংস্করণের ১৬০ পৃষ্ঠায় তিনি এ মত প্রকাশ করেছেন যে মাহদি (আ.) ১২৫৫ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করবেন।
দ্বাদশ হিজরির মুজাদ্দিদ হজরত শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী (রহ.) তাঁর মূল্যবান কিতাব 'তাফহিমাতে ইলাহিয়াত', প্রকাশকাল ১৩৫৫ হিজরি। ওই গ্রন্থের ১৪৩ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন_'মহাপ্রতাপশালী আমার প্রভু আমাকে জানিয়েছেন যে কেয়ামত অতি নিকটবর্তী এবং হজরত মাহদি (আ.) প্রকাশ হওয়ার জন্য প্রস্তুত।'
মৌলভী নবাব সিদ্দীক হাসান খান ভূপালি সাহেবের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ 'হেজাজুল কেরামাহ ফি আসারে কাদীমা' গ্রন্থে তিনি হজরত ইমাম মাহদি (আ.)-এর আবির্ভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং বহু গণ্যমান্য আলেমের উদ্ধৃতি দিয়ে নিজ মন্তব্য এভাবে বর্ণনা করেছেন_'আমি বড় মজবুত সূত্রসমূহ মিলিয়ে দেখছি যে, নিশ্চয় তিনি (হজরত ইমাম মাহদি আ.) হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর প্রারম্ভে আবির্ভূত হবেন।' (পৃষ্ঠা ৩৯৫)
পাক-ভারতের খ্যাতনামা আলেম সৈয়দ আবদুল হাই (রহ.) তাঁর লিখিত পুস্তক 'হাদীসুল গাসীয়া' গ্রন্থে লিখেছেন_'চতুর্দশ শতাব্দীর প্রারম্ভে হজরত ইমাম মাহদি (আ.)-এর আবির্ভাব অনেকটা সুনিশ্চিত। যেহেতু মাহদি (আ.) সম্পর্কিত সকল নিদর্শনাবলী প্রকাশ হয়ে গেছে।'
জনাব খাজা হাসান নিযামী পাক-ভারতের বিখ্যাত সুফি ও সাহিত্যিক এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক, তিনি হজরত ইমাম মাহদি (আ.)-এর আগমন সম্পর্কে 'কিতাবুল আমর ইয়ানী মাহদির আনসার ও ফরায়েয' নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন। ওই গ্রন্থে তিনি উল্লেখ করেন_'মাহদি (আ.)-এর যুগ হিজরী চতুর্দশ শতাব্দী।' তা ছাড়া তিনি একবার আরব দেশ ভ্রমণ করে লিখলেন_'আরবের মশায়েখ ও উলামায়েকেরাম_ সবাই হজরত ইমাম মাহদি (আ.)-এর অপেক্ষা করছেন। এমনকি শেখ সানসীর এক খলিফা এতদূর বলে ফেললেন যে 'হিজরী ১৩৩০-এ মাহদি (আ.) যাহির হয়ে পড়বেন'। (পত্রিকা 'আহলে হাদীস', ২৬ জানুয়ারি, ১৯১২ ইং)।
প্রখ্যাত গ্রন্থকার সৈয়দ আবুল খায়ের নুরুল হাসান রচিত গ্রন্থ 'ইকতারাবুস সায়াতে' যা তিনি ১৩০৯ হিজরিতে রচনা করেন। ওই গ্রন্থের ২২১ পৃষ্ঠায় তিনি উল্লেখ করেছেন_'মাহদি (আ.) এই শতাব্দীতেই যাহির হবেন।'
দ্বাদশ হিজরির মুজাদ্দিদ হজরত শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী (রহ.) তাঁর নিজ সন্তানদের নসিহত এভাবে করে গেছেন_'হজরত ইমাম মাহদি (আ.) যদি আমার জীবিত অবস্থায় আসেন, তাহলে আমি সর্বপ্রথম তাঁকে হজরত রাসূলে করীম (সা.)-এর সালাম জানাবো আর আমার মৃত্যুর পরে যদি তিনি আগমন করেন, তবে আমার সন্তানদের উচিৎ হবে তাঁকে গ্রহণ করে মুহম্মদী সেনাবাহিনীর দলে শামিল হওয়া।' (মযমুয়া ওসায়া আরবায়া, পৃষ্ঠা ৪৭)।
কোরআন-হাদিস থেকে যা জানা যায়, হজরত ইমাম মাহদি (আ.)-এর আগমন হবে সব ধর্মের ওপর ইসলামকে জয়যুক্ত করার উদ্দেশ্যে। তিনি হজরত রাসুলে করিম (সা.)-এর আদর্শ এবং পবিত্র কোরআনের শিক্ষাকে বিশ্বমানবের কাছে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করবেন। তিনি নতুন কোনো শরিয়ত নিয়ে আসবেন না, কারণ ইসলাম পরিপূর্ণ ধর্ম এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) শেষ শরিয়তদাতা নবী, তাঁর পরে আর কেউ নতুন শরিয়ত নিয়ে দুনিয়ায় আগমন করবেন না। ইমাম মাহদি (আ.) এসে তাঁর (সা.) কাজই পরিচালনা করবেন। ধর্মে যেসব বেদাত সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর করবেন। তিনি ইসলামের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনবেন। তাই ইমাম মাহদি (আ.)-কে সাহায্য করা ও তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়াকে প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ওয়াজিব বা অবশ্য কর্তব্য বলে হজরত রাসুলে করিম (সা.) ঘোষণা করেছেন। যেমন_তিনি (সা.) বলেছেন_'প্রত্যেক মুসলমানের ওপর সর্বতোভাবে ওয়াজিব হবে ইমাম মাহদির সাহায্য করা অথবা তাঁর ডাকে সাড়া দেওয়া।' (সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুল মাহদি)। আর আমরা যদি তাঁকে না মেনে মৃত্যুবরণ করি, তাহলে অজ্ঞতার মৃত্যু হবে_সে ব্যাপারেও তিনি (সা.) আমাদের সাবধান করেছেন। যেমন_তিনি (সা.) বলেছেন_'যে ব্যক্তি যুগের ইমামকে না মেনে মারা যাবে, সে জাহেলিয়াতের অর্থাৎ অজ্ঞতার মৃত্যুবরণ করবে।' (মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল)। তিনি (সা.) আরো বলেছেন_'যে ব্যক্তি মাহদিকে অস্বীকার করে, সে কুফরি করেছে।' (হুজাজুল কেরামা, পৃষ্ঠা ৩৫১, নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান, ভূপাল)। তাই আমাদের কর্তব্য ধর্ম সংস্কারের জন্য শেষ জামানায় যাঁর আসার কথা তিনি এসেছেন কি না তা অন্বেষণ করা।
সূত্রঃ ইন্টারনেট
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন