এজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার সংক্ষিপ্ত পরিচয়
এজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার সংক্ষিপ্ত পরিচয়
ইতিহাসের এক ঘৃণিত রূপ, আবু সুফিয়ানের নাতী, হিন্দা কলিজা খেকোর স্মৃতিই হচ্ছে এজিদ। তার মা“মাইসুন” কে শ্যাম নগরীর বিখ্যাত মহিলাদের মধ্যে গণনা কর হত। মুয়াবিয়া তাকে নিজের স্ত্রী করে নিল। এজিদকে গর্ভে ধারণ করার পর এই মহিলাকে মুয়াবিয়া কবিতার এক শ্লোক পড়তে শুনলো।
যাতে মুয়াবিয়া ও তার প্রাসাদের শোভা সৌন্দর্য এবং শ্যাম নগরীর আবহাওয়ার নিন্দা করা হয়েছিল, এবং নিজের গ্রামের কুটীর ঘর, সেখানকার আবহাওয়া, ভেড়ার পালের সাথে থাকা নিজের চাচাতো ভাইয়ের প্রশংসা করা হয়েছিল। মুয়াবিয়া এই কবিতা শোনার পর মাইসুনকে তালাক দিলে গর্ভধারীনি নিজের গ্রামে চলে যায়। সেই গ্রামেই এজিদ জন্ম গ্রহণ করে। জন্মের পর এজিদকে তায়েফ গোষ্ঠীর এক খৃষ্টান মহিলার তত্ত্বাবধানে দেওয়া হয়। ইসলাম সম্পর্কে যার কোন জ্ঞানই ছিল না। অসভ্য, বদ ও লজ্জাকর কাজ ছিল তার প্রথাগত বা অভ্যাসগত। এরকম কলুষিত বংশে এজিদ প্রতিপালিত ও বয়ঃপ্রাপ্ত হয়। সেখানে সে মদ খাওয়া, জুয়া খেলা, মানুষ খুন করা, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি কাজের শিক্ষা লাভ করে। বানরের সাথে খেলা করা ছিল তার সবচেয়ে পছন্দনীয় কাজ।
“আবু ক্বাইস” নামে এজিদের এক বানর ছিল। তার মতে বনি ইসরাইলের এক শেখ ছিল যে, পরবর্তিতে বানরে রূপান্তরিত হল। এজিদ সেই বানরকে মদ খাওয়াতো এবং তার চলন ভঙ্গি দেখে হাসতো। ইব্নে কাসির বলেন: এজিদ সেই বানরকে রেশমের কাপড় ও সোনার তার দিয়ে করা তৈরি টুপি পড়াতো। যেদিন বানরটির মৃত্যু হয়, এজিদ খুবই মর্মাহত হল। হুকুম করলো, তাকে কাফন পরিয়ে দাফন করা হোক এবং শ্যাম বাসিদেরকে সেই বানরের মৃত্যুর জন্য শোক পালন করতে বললো।
নিজের বংশে আহ্লে বায়ত সম্পর্কে সবচেয়ে বেশী ঈর্ষা ও শত্রুতা ছিল এজিদের মনে। যদিও আহলে বায়তের সাথে শত্রুতা সে বংশগত ও উত্তরাধিকারী সূত্রে পেয়েছিল। তবুও তার ব্যক্তিগত শত্রুতা তার চেয়েও বেশী ছিল। এজিদ তার নিজের ঈর্ষা, বিদ্বেষ ও শত্রুতাকে পিতার মত গোপন রাখতে পারতো না। বরং প্রকাশ্যে ও গর্বের সাথে তা অভিব্যক্ত করতো। ঘটনা বশত একদিন ইমাম হাসান (আ.) যে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, এজিদও সেখানে ছিল। এজিদ ইমাম হাসানকে (আ.) সরাসরি বললো: আপনার সঙ্গে আমার শত্রুতা রয়েছে। ইমাম (আ.) তার উত্তরে বললেন: তুমি ঠিক বলছো, আমি জানি যে, আমার প্রতি তোমার শত্রুতা রয়েছে। কেননা তোমার পিতার সঙ্গে শয়তানও তোমার ভ্রুণ স্থাপনে অংশীদার ছিল। তারপর ইমাম (আ.) এই আয়াত তেলাওয়াত করেন: “যার ভ্রুণ এ শয়তান শরিক হয় আলে মোহাম্মদের (আ.) সঙ্গে তার শত্রুতা থাকা নিশ্চিত। (১)
মাসউদি তাঁর তারিখে মাসউদি গ্রন্থে উল্লেখ করেন: এই উম্মতের মধ্যে এজিদ ছিল ফেরআউনের মত। বরং সে ফেরআউনের চেয়েও বদ, আর ফেরআউন তার তুলনায় ন্যায়পর ছিল। এজিদ নিজেই নাচতো, কুকুর, বানর, চিতাবাঘ নিয়ে খেলা করতো এবং মাতাল থাকতো। ইমাম হোসাইনকে (আ.) কতল করার পর, এজিদ একদিন মদের আড্ডায় বসে কবিতার এই শ্লোকটা পড়লো, ইবনে যিয়াদও তার পাশে বসেছিল: “আমাকে মদ খাওয়াও যাতে পরিতৃপ্ত হই। তারপর ইবনে যিয়াদকে খাওয়াও, সে আমানতদার এবং আমার প্রাণ রক্ষাকারী। সে আমার ইচ্ছা পূরণকারী ও আমার শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধকারী”।
মাসউদি বর্ণনা করেন: তার রাজত্ব কালে তার লোকদের মধ্যে ভ্রষ্টতা ও অত্যাচার ছড়িয়ে গিয়েছিল। মক্কা ও মদীনায় প্রকাশ্যে গান - বাজনা হতো। জনগণ অন্যায় লাম্পট্য, অসাধুতা ও অমিতাচারে ব্যস্ত থাকতো এবং প্রকাশ্যে মদ খাওয় আরম্ভ করেছিল। (২)
হাসান বসরি উল্লেখ করেন: মুয়াবিয়ার খুব গুরুত্বপূর্ণ চারটা অপরাধ ছিল, যার একটাই তার ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট ছিল। তার মধ্যে একটি ছিল এজিদকে তার উত্তরাধিকারী বনানো। যদিও সে মদ খেতো, মাতাল থাকতো, রেশমের কাপড় পরিধান করতো এবং সব সময় গান গাইতো। (৩)
এজিদের রাজত্বকাল ছিল তিন বছর আট মাস। সে ১৭’ ই সফর ৬৪ হিজরী সনে ৩৩ বৎসর বয়সে মৃত্যুবরণ করে। দামেস্কে তাকে দাফন করা হয়।(৪)
আব্বাস রাসেখী তার ইমাম হোসাইন গ্রন্থে উল্লেখ করেন: এজিদের মৃত্যু হাওয়ারিয়্যিনে হয় এবং মৃত্যুকালে মুয়াবিয়া, খালেদ, আবু সুফিয়ান ও আব্দুল্লাহ নামে চার ছেলে রেখে যায়। (৫)
সূত্রসমূহ:
১। ইমাম হোসাইন, আব্বাস রাসেখী, পৃষ্ঠা: ২২; ক্বেয়ামে ইমাম হোসাইন, পৃষ্ঠা: ৩২৫ - ৩২৭।
২। মুরুজুয্ যাহাব, ৩’য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ২২৭।
৩। আল ওয়েলায়াত ওয়াল ইমামত, পৃষ্ঠা: ৩৩৬; তারিখে তাবারি, ৪’র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা: ২৪২।
৪। মুরুজুয্ যাহাব, ৩’য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ৬৫; তারিখে ইয়াকুবি, ২’য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ৩১১।
৫। ইমাম হোসাইন, আব্বাস রাসেখী, পৃষ্ঠা: ২২; ক্বেয়ামে ইমাম হোসাইন, পৃষ্ঠা: ৩২৫ - ৩২৭।
সূত্রঃ ইন্টারনেট
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন