জামাদিউল আওয়াল মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি
জামাদিউল আওয়াল মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি
এস, এ, এ
৫ই জামাদিউল আওয়াল
হজরত জয়নাব(সা.আ.) এর জন্মদিবস:
হজরত জয়নাব (সা.আ.) ৫ অথবা ৬ হিজরিতে মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। এছাড়াও তাঁর জন্ম তারিখ সম্পর্কে ইতিহাসে একাধিক মতামত বর্ণিত হয়েছে যেমন: সন ৬ হিজরি শাবান মাসের প্রথম দিনগুলোতে, ১লা শাবান, ৩০শে শাবান, রমজান মাসে, রবিউস সানি মাসের শেষে। তবে প্রসিদ্ধ হচ্ছে ৫ই জামাদিউল আওয়াল।
তাঁর উপনাম হচ্ছে উম্মে কুলসুম, উম্মে আব্দুল্লাহ, উম্মুল হাসান, উম্মুল মাসায়েব, উম্মুর রাযায়া এবং উম্মুল নাওয়ায়েব। তাঁর উপাধি সমূহ হচ্ছে: আকিলায়ে বণি হাশিম, আকিলাতুত তালেবিন, ওয়ালিয়াতুল্লাহ ইত্যাদি। তাঁর পিতার নাম হজরত আলি (আ.) এবং মাতার নাম হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.)। তাঁর স্বামির নাম হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর। তাঁর পাঁচটি সন্তান ছিল আলি, অউন, আব্বাস, মোহাম্মাদ, উম্মে কুলসুম। তন্মধ্যে আলি ও আউন কারবালার মর্মান্তিক ঘটনায় শাদাদত বরণ করেন। (তাযকেরাতুল খাওয়াস, পৃষ্ঠা ১৭৫, মুসতাদরাকে সাফিনাতুল বিহার, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩১৬, ওফায়াতুল আয়েম্মা, পৃষ্ঠা ৪৩১, তাকভিমুল আয়েম্মা, পৃষ্ঠা ৭১, ৭৯, রিয়াহিনুশ শারিয়া, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৩, মাআলিস সিবতাইন, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২২১, মুনতাখাবুত তাওয়ারিখ, পৃষ্ঠা ৯৪- ৯৫, জয়নাবে কুবরা, পৃষ্ঠা ১৭)
৬ই জামাদিউল আওয়াল
মোতার যুদ্ধ:
সন ৭ অথবা ৮ হিজরিতে সংঘটিত হয়। উক্ত যুদ্ধে জাফর ইবনে আবি তালিব ৪১ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। উক্ত যুদ্ধে রাসুল (সা.) এবং হজরত আলি (আ.) উপস্থিত ছিলেন না। রাসুল (সা.) তিনজনকে সেনাপ্রধানের দ্বায়িত্বে নিয়োগ করেন। উক্ত সেনাপ্রধানগণ ছিলেন জাফর ইবনে আবি তালিব, যায়দ বিন হারেস এবং আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা। উক্ত তিনজন সেনাপ্রধানকে শাহাদতের পরে একই কবরে দাফন করা হয়। রাসুল (সা.) জাফর ইবনে আবি তালিবের শাহাদতের কারণে অত্যান্ত দুঃখিত হন এবং তিনদিন পর্যন্ত জাফর ইবনে আবি তালিবের ঘরে খাদ্য প্রেরণ করার নির্দেশ দান করেন। (তারিখে তাবারি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩১৮, তাবাকুতুল কুবরা, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১২৮, বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ২১, পৃষ্ঠা ৫০, শারহে নাহজুল বালাগা, খন্ড ১৫, পৃষ্ঠা ৬১, তারিখে ইয়াকুবি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৬৫)
১০শে জামাদিউল আওয়াল
জামালের যুদ্ধ:
সন ৩৬ হিজরি জামাদিউল আওয়াল মাসের ১০ তারিখে জামালের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এছাড়াও ইতিহাসে জামাল যুদ্ধের বিভিন্ন তারিখ বর্ণিত হয়েছে যেমন:৫ এবং ১৯শে জামাদিউল আওয়াল। হজরত তালহা এবং যুবাইর হজরত আলি (আ.)এর হাতে বাইয়াত করার পরে উমরা হজের অজুহাতে হজরত আয়েশার সাথে মিলিত হন। হজরত উসমানের যুগে নিয়োগপ্রাপ্ত বাসরার শাষক আব্দুল্লাহ বিন আমের দুইশত দিনার দিয়ে একটি উট ক্রয় করে এবং হজরত আয়েশার কাছে নিয়ে আসে এবং তাঁকে বাসরার দিকে নিয়ে যায়। বারসরাতে হজরত আলি (আ.) কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত শাষক উসমান বিন হুনাইফের উপরে তারা চড়াও হয় এবং তাকে বন্দি করে। অতঃপর তাকে মারপিট করে এবং তার মাথার চুল, দাড়ি এবং ভ্রুকে ছিড়ে ফেলে। ইমাম আলি (আ.) উক্ত কথাটি শোনার পরে বাসরার অভিমুখে রওনা হন। ইমাম আলি (আ.) এর দলে বণি হাশিমের লোকজন ছাড়াও ৮০ জন বদরের সাহাবি, ২৫০ জন যারা রাসুল (সা.)এর সাথে বাইয়াতে শাজারাতে অংশগ্রহণ করেছিল এবং ১৫০০জন রাসুল (সা.) এর অন্যান্য সাহাবিরা অংশগ্রহণ করছিলেন। উক্ত যুদ্ধে হজরত আলি (আ.) এর পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ২০ হাজার সৈন্য এবং শহিদ হয় ৫ হাজার। হজরত আয়েশার পক্ষে অংশগ্রহণ করে ৩০ হাজার এবং মারা যায় ১৩ হাজার লোকজন। অবশেষে যুদ্ধে হজরত আলি (আ.) জয়ি হন এবং হজরত আয়েশাকে স্বসম্মানে মদিনাতে পৌছে দেন। (মুনতাখাবুত তাওয়ারিখ, পৃষ্ঠা ১৫৯- ১৬১, মানাকেবে আলে আবি তালিব, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৮১, বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৩২, ১৭২, তাতেম্মাতুল মুনতাহা, পৃষ্ঠা ১৭, মেসবাহে কাফআমি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৭৯)
১৩ই জামাদিউল আওয়াল
হজরত ফাতেমা (সা.আ.) এর শাহাদত:
ইতিহাসের বর্ণনামতে রাসুল (সা.) এর ওফাতের ৭৫ দিন পরে হজরত ফাতেমা (সা.আ.) ১৮ বছর বয়সে মদিনাতে শাহাদত বরণ করেন। এছাড়াও ইতিহাসে হজরত ফাতেমা (সা.আ.) এর শাহাদতের সম্পর্কে বিভিন্ন তারিখ বর্ণিত হয়েছে যেমন: ৩রা জামাদিউস সানি, ১৩, ১৪ অথবা ১৫ই জামাদিউল আওয়াল। হজরত আলি (আ.) ১৪ তারিখে দিবাগত রাতের অন্ধকারে হজরত ফাতেমা (সা.)কে দাফন করে দেন এবং তাঁর কবরের চিহ্নকে মিটিয়ে দেন। (ফেইযুল আলাম, পৃষ্ঠা ২৪৮, কাফি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৪১, ৪৫৮, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২২৮, বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ২২, পৃষ্ঠা ৫৪৫, খন্ড ২৯, পৃষ্ঠা ১৯২, খন্ড ৪৩, পৃষ্ঠা ৭, ৭৯, ১৯৫, মাফাতিহুল জেনান, জামাদিউল আওয়াল মাসের আমল, ফাইযুল আলাম, পৃষ্ঠা ২৪৬-২৪৭)
২২শে জামাদিউল আওয়াল
হজরত কাসিম বিন মুসা বিন জাফর (আ.) এর ওফাত:
উক্ত তারিখে ইমাম কাযিম (আ.) এর সন্তান হজরত কাসিম মৃত্যুবরণ করেন। ইমাম কাযিম (আ.) এর শাহাদতের পরে তিনি মদিনা থকে বাহির হয়ে যান এবং হিল্লা শহরের বাখামরা নামক স্থানে শেইখ সুলাইমান নামক এক ব্যাক্তির বাড়িতে মেহমান স্বরূপ অবস্থান করেন। সেখানেই তিনি বিবাহ করেন, মারা যান এবং সেখানেই তাঁকে দাফন করে দেয়া হয়। ইমাম কাযিম (আ.) তাঁকে অত্যান্ত বেশি ভালবাসতেন। বর্তমানে হিল্লা থেকে প্রায় ৮ ফারসাখ দূরত্বে তাঁর মাজার শরিফ রয়েছে এবং বর্তমানে তা মুমিনদের যিয়ারতের স্থানে রূপান্তরিত হয়েছে। (হায়াতুল কাসিম বিন মুসা ইবনে জাফর (আ.), পৃষ্ঠা ১৭৮- ১৯৮, কাফি, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ১২৬, তাহযিবুল আহকাম, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৪২৭, বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৪৮, পৃষ্ঠা ২৮৯, ৩১০, মুনতাহিউল আমাল, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৩১)
২৭শে জামাদিউল আওয়াল
হজরত আব্দুল মোত্তালিবের মৃত্যুদিবস:
হজরত মোহাম্মাদ (সা.) এর জন্মের ৮ বছর ২ মাস এবং ১০ দিন পরে ২৭শে জামাদিউল আওয়াল তারিখে এবং অন্য মত অনুযায়ি ১০ই রবিউল আওয়াল হজরত আব্দুল মোত্তালিব মৃত্যুবরণ করেন। (মুনতাখাবুত তাওয়ারিখ, পৃষ্ঠা ৩৬, মেরআতুল উকুল, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৭৮, কাফি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৪৩৯, ৪৪৭, শারহে নাহজুল বালাগা, খন্ড ১৪,পৃষ্ঠা ৬৮, বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ১৫, পৃষ্ঠা ১৫৭)
জামাদিউল আওয়ালের শেষ তারিখ
মোহাম্মাদ বিন উসমান আমরি (রহ.) এর ওফাত:
মোহাম্মাদ বিন উসমান বিন সাঈদ আমরি (রহ.) ছিলেন ইমাম মাহদি (আ.) এর দ্বিতিয় নায়েব ছিলেন এবং উক্ত পদে তিনি ৪০ বছর দ্বায়িত্ব পালন করেন। তাঁর বাবার মৃত্যুর পরে ইমাম মাহদি (আ.) সে যুগের শিয়াদের উদ্দেশ্যে একটি স্বীকৃতিপত্র প্রেরণ করেন। উক্ত পত্রে মোহাম্মাদ বিন উসমান বিন সাঈদ আমরি (রহ.) কে তিনি নিজের নায়েব হিসেবে নির্বাচন করেন। অবশেষে তিনি ৩০৪ অথবা ৩০৫ হিজরিতে মৃত্যুবরণ করেন। (মুসতাদরাকে সাফিনাতুল বিহার, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৩১, আল গিবা (শেইখ তুসি), পৃষ্ঠা ৩৬৬, বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫১, পৃষ্ঠা ৩৫২, আল আবকারিউল হেসান, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৩, আল কুনিয়া ওয়াল আলকাব, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৬৮)
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন