কারবালা দাগী আসামী “হুরমুলা বিন কাহেলী আসাদী”

ইতিহাসে কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনার পূর্বে হারমালা (হুরমুলা)বিন কাহেলী আসাদী সম্পর্কে তেমন কিছুই বর্ণিত হয়নি। তবে কারালার মরুপ্রান্তরে তার চরিত্রকে ইতিহাস এভাবে বর্ণনা করেছে যে, হারমালা বিন কাহেলী আসাদী ছিল সেই পাষাণ হৃদয়ের অধিকারী যে ইমাম হুসাইন (আ.)এর ছোট

কারবালা দাগী আসামী “হুরমুলা বিন কাহেলী আসাদী”

এস, এ, এ

 

ইতিহাসে কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনার পূর্বে হারমালা (হুরমুলা)বিন কাহেলী আসাদী সম্পর্কে তেমন কিছুই বর্ণিত হয়নি। তবে কারালার মরুপ্রান্তরে তার চরিত্রকে ইতিহাস এভাবে বর্ণনা করেছে যে, হারমালা বিন কাহেলী আসাদী ছিল সেই পাষাণ হৃদয়ের অধিকারী যে ইমাম হুসাইন (আ.)এর ছোট শিশু হজরত আলী আসগার (আ.)এর তৃষ্ণার্ত গলায় তীর মেরেছিল।

 মিনহাল বিন আমরু রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন যে, একবার আমি মক্কা থেকে মদীনায় ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.)এর সমীপে উপস্থিত হই। তিনি আমাকে হারমালা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তখন আমি তাঁকে বলি: আমি যখন কুফা থেকে বাহির হই তখনও সে জিবীত ছিল। কথাটি শোনার পরে ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) তাঁর হাতদ্বয়কে আকাশের পানে উত্তোলন করে বলেন: হে আল্লাহ! তুমি হারমালাকে আগুন এবং লোহার তাপের কষ্ট দ্বারা হত্যা কর। আমি যখন কুফাতে ফিরে আসি তখন শুনতে পাই যে, মোখতার সাকাফি বিপ্লবী আন্দোলনের ঘোষণা করেছে। আমি উক্ত কথাটি শোনার পরে মোখতারের ঘরে যায় এবং তার সাথে সাক্ষাত করি।

মোখতার আমাকে বলে: আমি যখন থেকে বিপ্লবী আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছি, তারপর থেকে তুমি আমার সাথে দেখাও করতে আসনি এমনকি আমাকে উৎসাহ প্রদান করনি। আমি তাকে বলি: আমি এতদিন মক্কায় ছিলাম এবং কুফাতে পৌছানোর পরে তোমার বিপ্লবী আন্দোলনের ঘোষণার কথা শুনে তোমার সাথে দেখা করতে আসলাম। আমরা উভয়ে ‍বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে বলতে কুফার ‘কানাসা’ নামক স্থানে এসে উপস্থি হই। তখন কিছু লোক মোখতারকে খবর দেয় যে, তারা হারমালাকে বন্দি করেছে।

অতঃপর যখন হারমালাকে মোখতারের সমীপে উপস্থিত করা হয়। তখন মোখতার হারমালাকে উদ্দেশ্য করে বলে: আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করি যে, অবশেষে আমি তোকে ধরতে পেরেছি। অতঃপর মোখতার জল্লাদকে হারমালার হাতকে কর্তন করার নির্দেশ দেয়। জল্লাদ তার হাতকে আগুনে পুড়িয়ে কর্তন করে। অতঃপর মোখতার জল্লাদকে হারমালার পাঁ কে কর্তন করার নির্দেশ দেয়। জল্লাদটি পূর্বের ন্যায় তার পাঁ কে আগুনে পুড়িয়ে কর্তন করে। অতঃপর মোখাতার আগুন জ্বালানোর নির্দেশ দিলে তার সহকারীরা আগুন প্রজ্বলিত করে। অতঃপর হারমালাকে উক্ত আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

হঠাৎ আমার ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) এর দোয়ার কথাগুলো স্মরণে আসে এবং আমি নিজের অজান্তেই বলে উঠি সুবহানাল্লাহ!

তখন মোখতার আমাকে হঠাৎ সুবহানাল্লাহ পাঠের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আমি তাকে বলি যে, আমি মক্কা থেকে ফেরার পথে ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.)এর সাথে সাক্ষাত করার জন্য যায়। তখন তিনি আল্লাহ তায়ালার কাছে যেরূপভাবে হারমালার মৃত্যুর জন্য দোয়া করেন। তুমিও হারমালাকে অনুরূপভাবে হত্যা করেছে। আর এ কারণেই আমি সুবহানাল্লাহ পাঠ করেছিলাম। মোখতার উক্ত কথাটি শোনার পরে শুকরানা নামাজ পড়ে এবং দীর্ঘক্ষণ সিজদায় অবনত থাকে। সিজদা থেকে মাথাকে উত্তোলন করে বলে: আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি যে, ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.)এর দোয়া আমার দ্বারা পূর্ণ হয়েছে। আর এ কারণে আমি আজকে শুকরানা রোজা রাখবো।

তথ্যসূত্র:

১- তারিখে তাবারী, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৪৮।

২- আমালি শাইখ তুসী (রহ.)।

৩- বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৪৫, পৃষ্ঠা ২৩২- ২৩৩।

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন