হজরত হাবীব ইবনে মাযাহীর (রা.)

নামঃ হাবীব বিন মাযাহীর বা হাবীব বিন রোআব বিন আশতার বিন হাজওয়ান বিন ফাক্বআস বিন তারীফ বিন আমরু বিন কাইস বিন হারেস বিন সাআলাবা বিন দুদান বিন আসাদ বিন আসাদী কেনদী ফাক্বআসী। (আয়ানুশ শিয়া, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৫৩)

হজরত হাবীব ইবনে মাযাহীর (রা.)

এস, এ, এ

 

নামঃ হাবীব বিন মাযাহীর বা হাবীব বিন রোআব বিন আশতার বিন হাজওয়ান বিন ফাক্বআস বিন তারীফ বিন আমরু বিন কাইস বিন হারেস বিন সাআলাবা বিন দুদান বিন আসাদ বিন আসাদী কেনদী ফাক্বআসী। (আয়ানুশ শিয়া, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৫৩)

 

নির্ভরযোগ্য সূত্র অনুযায়ি তার বাবার নাম দুইভাবে উচ্চারিত হয়েছে “মোতাহহার বা মোযাহহার”।(তাবারী, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৩৫২, ৩৫৫, ৪১৬, ইনসাবুল আশরাফ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৬২, ৪৭৮, ৪৮০, আল ফুতুহ, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ২৮, ৩৪, ৮৭)

 

কিন্তু যিয়ারতে তাঁর নাম মোযাহহার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু প্রাচীন ইতিহাস এবং রেওয়ায়েতের পান্ডুলিপি সমূহে ‘মাযহার’ ‘মাতহার’ এর ওজনে বর্ণিত হয়েছে এবং এটাই হচ্ছে সঠিক। কিন্তু বর্তমান পুস্তক সমূহের মাযাহীর লিখা হয় যা পূর্বের পান্ডুলিপির উচ্চারণের সাথে মিল নাই। (আয়ানুশ শিয়া, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৫৩)

 

ব্যাক্তিত্ব:

হাবীব ছিলেন একজন ইবাদতকারী, তাকওয়াধারী ব্যাক্তি। তিনি খোদায়ী বিধানের লংঙ্ঘন করতেন না, কোরআনের হাফেজ, সারা রাত ইবাদতে জাগ্রত থাকতেন, ইমাম হুসাইন (আ.) তাঁর সম্পর্কে বলেছেনঃ হাবীব প্রত্যেক রাতে একবার কোরআন খতম দিতেন।(নাফসুল মাহমুম, পৃষ্ঠা ১২৪)

 

তিনি সর্বদা সাদা ও সরলভাবে নিজের জীবনকে অতিবাহিত করেছেন। তিনি এমনভাবে জীবন যাপন করতেন এবং দুনিয়া থেকে এতটা দূরত্ব বজায় রাখতেন যে তাকওয়াধারী ব্যাক্তিরা তার অনুসরণ করতো। কারবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে অফুরন্ত অর্থ এবং নিরাপত্তা দানের আস্বাস দেয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি বলেছিলেনঃ আমি রাসুল (সা.) এর কাছে কি অজুহাত তুলে ধরব যে তাঁর সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হবে আর আমি নিরাপদে থাকব। (আয়ানুশ শিয়া, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৫৩)

 

রাসুল (সা.) এর যুগে:

এ বিষয়টি স্পষ্ট না যে হাবীব রাসুল (সা.) এর সাহাবী ছিলেন নাকি তাবেয়ীন ছিলেন। তবে ইবনে কালবী এবং ইবনে হাজার আসকালানী বলেছেনঃ তিনি রাসুল (সা.) এর সান্নিধ্য অর্জন করেছিলেন।(আবসারুল আয়ন ফি আনসারিল হুসাইন, পৃষ্ঠা ১২৬, আল আসাবা ফি তামিযিস সাহাবা, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৪২)

 

শেইখ তুসী (রহ.) তাঁকে হজরত আলী, হাসান এবং ইমাম হুসাইন (আ.) এর সাহাবী বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু রাসুল (সা.) এর সাহাবীদের নামের সাথে তার নাম উল্লেখ করেননি। “উসদুল গ্বাবা” ও “আল ইস্তিয়াব” গ্রন্থের লেখক তাঁকে সাহাবী বলে উল্লেখ করেননি। (রেজালে তুসী, পৃষ্ঠা ৬০, ৯৩, ১০০, আয়ানুশ শিয়া, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৫৪)

 

হজরত আলী (আ.) এর যুগে:

হজরত হাবীব হজরত আলী (আ.) এর সাথে কুফাতে আসেন এবং ইমাম (আ.) এর যুগে সকল যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং ইমমা (আ.) কে সাহায্যে করেন। তিনি ইমাম আলী (আ.) এর একজন বিশ্বস্ত এবং অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন।(আল হুসাইন ফি তারিক্বাতি ইলাশ শাহাদা, পৃষ্ঠা ৬

 

তিনি কারবালা ঘটনার কয়েক বছর পূর্বে মিসামে তাম্মারকে উক্ত হৃদয়বিদারক ঘটনার খবর দেন যা তিনি হজরত আলী (আ.) এর কাছ থেকে শিখেছিলেন। (আবসারুল আয়ন ফি আনসারীল হুসাইন, পৃষ্ঠা ১২৭)

 

ইমাম হুসাইন (আ.) এর যুগে:

মাবিয়ার মৃত্যুর পরে ৬০ হিজরীতে তিনি কুফার কয়েকজন ব্যাক্তিত্বসহ এজিদের বাইয়াত করতে অস্বিকৃতী জানান এবং ইমাম হুসাইন (আ.) এর কাছে চিঠি লিখেন এবং তাঁকে কিয়াম করার আহবান জানান। (আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৭৮)

 

যখন মুসলিম বিন আক্বিল কুফাতে আসেন তখন তিনি মুসলিম ইবনে আওসাজাকে সাথে নিয়ে কুফার জনগণের কাছ থেকে ইমাম হুসাইন (আ.) এর জন্য বাইয়াত গ্রহণের কাজে বিশেষ ভুমিকা রাখেন এবং এক্ষেত্রে তিনি কোনরূপ অসর্তকতা এবং অবহেলা করেননি। (আয়ানুশ শিয়া, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৫৪)

 

যখন ইবনে যিয়াদ কুফাতে আসে এবং কঠিন আইন জারী করে তখন সবাই ইমাম হুসাইন (আ.) এর বাইয়াত ভঙ্গ করে তাদেরকে একা ছেড়ে দেয়। তখন তিনি এবং মুলিম ইবনে আওসাজা নিজেদেরকে গোপণ করেন এবং ইমাম হুসাইন (আ.) এর কাফেলার উদ্দেশ্যে রওনা হন। তাঁরা ইবনে যিয়াদের গুপ্তচরদের ভয়ে রাতে যাত্রা করতেন এবং দিনের বেলায় লুকিয়ে থাকতেন। অবশেষে তাঁরা ৭ই মহরম কারবালায় ইমাম হুসাইন (আ.) এর কাফেলার সাথে যোগ দেন।(আবসারুল আয়ন ফি আনসারীল হুসাইন, পৃষ্ঠা ১২৮)

 

কারবালাতে হাবীব:

হাবীব কারবালাতে পৌছানোর পরে ইমামের সমীপে আবারও নিজের বিশ্বস্ততার পরিচয় দেন। তিনি ইমাম (আ.) কে বলেনঃ কারবালার পাশেই বণী আসাদ নামক এক গোত্রের লোকেরা বসবাস করে আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি তাদেরকে সাহায্যের আহবান জানাতে পারি। ইমাম (আ.) এর অনুমতি নিয়ে তিনি দ্রুত উক্ত গোত্রের কাছে যান এবং তাদেরকে সাহায্যের জন্য আহবান জানান। কিন্তু ওমরে সাআদের সৈন্যরা তাদের উপরে হামলা করে তাদেরকে বিক্ষিপ্ত করে দেয়ার কারণে তারা আর ইমামের সৈন্য বাহিনীতে যোগ দিতে পারেনি।(আয়ানুশ শিয়া, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৫৪)

 

৯ই আশুরা ও হাবীব:

হজরত হাবীব ছিলেন সেই ব্যাক্তি যিনি ওমরে সাআদের কাছ থেকে নিরাপত্তা দানের বার্তা আসার পরে এজিদী বার্তা বাহকে নসিহত করেন। ৯ই মহরম যখন এজিদী সৈন্যরা ইমাম (আ.) এর তাবুতে আক্রমণ করতে চায়, তখন তিনিই তাদেরকে ইমাম (আ.) এবং তার সাহাবীদের ফযিলত বর্ণনা করেন এবং তাদেরকে যুদ্ধ শুরু করা থেকে বিরত রাখেন।(আবসারুল আয়ন ফি আনসারীল হুসাইন, পৃষ্ঠা ১৩০, ইনসাবুল আশরাফ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৮৪)

 

আশুরার রাতে হাবীব:

যখন হেলাল বিন নাফে হাবীবকে আলী কন্যা হজরত জয়নাব (সা.আ.) এর উদ্বিগ্নতার কথা জানায় তখন তিনি তিনি ইমাম হুসাইন (আ.) এর সাহাবীদেরকে একত্রিত করেন এবং ইমাম (আ.) এর কাছে সে প্রতিজ্ঞা করেন যে, তাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত তারা ইমাম (আ.) এর সার্বিক রক্ষার কাজে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখবেন। (মুসুআতী কালেমাত ইমাম হুসাইন. পৃষ্ঠা ৪০৭-৪০৮)

 

আশুরার দিন:

আশুরার দিন ইমাম হুসাইন (আ.) হাবীবকে তার বাম পার্শ্বের সৈন্যর সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত করেন, যোহাইর বিন কায়ন কে ডান পার্শ্বের সৈন্যর সেনাপতি এবং হজরত আব্বাস (আ.) কে নিজের পতাকাবাহী হিসেবে নিযুক্ত করেন।(মাক্বতালুল হুসাইন, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৭)

 

হাবীব (রা.) এর শাহাদত:

হজরত হাবীব এর বয়স বেশী হওয়া সত্বেও তিনি কারবালাতে একাই ৬২ এজিদী সৈন্যকে হত্যা করেন। তখন “দাবীল বিন মারিয়াম আক্বফানী” নামক ব্যাক্তি তার উপরে হামলা করে। সে তাঁর মাথার উপরে আঘাত করলে তিনি ঘোড়া থেকে পড়ে যান। তখন দাবীল বিন মারিয়াম আক্বফানী তার মাথাকে শরীর থেকে আলাদা করে দেয়। (নাফসুল মাহমুম, পৃষ্ঠা ১২৪)

 

হজরত হাবীব এর কাসীম নামক এক সন্তান ছিল। যখন যে যুবক হয় তখন সে দাবীল বিন মারিয়াম আক্বফানী কে হত্যা করে। (আবসারুল আয়ন ফি আনসারীল হুসাইন, পৃষ্ঠা ১২৭)

 

হাবীব এর কবর:

বণী আসাদ গোত্রের লোকেরা কারবালার শহীদদের দাফন করার সময় তাঁকে ইমাম হুসাইন (আ.) এর কবর থেকে ১০ মিটার দূরত্বে দাফন করে দেয়। যা বর্তমানে ইমাম হুসাইন (আ.) এর কবর ঘরের মধ্যেই অবস্থিত। ইমাম হুসাইন (আ.) এর যিয়ারতে হজরত হাবীব এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এটা থেকে স্পষ্ট হয় যে ইমাম হুসাইন (আ.) তাঁকে জীবিত থাকা অবস্থায় এবং শাহাদতের পরেও নিজের সাথে রেখেছেন।(বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৪৫, পৃষ্ঠা ৭১, খন্ড ৯৮, পৃষ্ঠা ২৭)

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন