ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ ও ইমাম আলী (আ.)

ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ ও ইমাম আলী (আ.)

ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ ও ইমাম আলী (আ.)

ঐতিহাসিক,  বদর যুদ্ধ,  ইমাম আলী, (আ.), বদর যুদ্ধ-দিবস,

আজ ১৭ রমজান। ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ-দিবস। ১৪৩৪ বছর আগে (খ্রিস্টীয় ৬২৪ সনে) দ্বিতীয় হিজরির এই দিনে মুসলমানরা অসম এক যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছিল কাফিরদের ওপর। এটি ছিল ইসলামের ইতিহাসের প্রথম সুসংগঠিত বা বড় ধরনের যুদ্ধ।

অবশ্য কুরাইশ কাফিরদের বাণিজ্য কাফিলাকে বাধা দেয়ার লক্ষ্যে ও তাদের সম্পদ আটকের জন্যই একদল মুসলিম মুজাহিদ বিশ্বনবীর (সা.) নেতৃত্বে মদীনা থেকে বেরিয়ে আসেন। কাফিররা মক্কায় মুসলমানদের অনেক সম্পদ আটক করে রেখেছিল। তাই এ ধরনের হামলার অধিকার মুসলমানদের ছিল। তবে বড় ধরনের কোনো যুদ্ধ হবে বলে মুসলমানদের কেউই ভাবেননি এবং সে জন্য প্রস্তুতিও ছিল না। কিন্তু কুরাইশ কাফিরদের শীর্ষস্থানীয় নেতা আবু সুফিয়ান তার বাণিজ্য কাফিলার ওপর মুসলমানদের হামলার প্রস্তুতির খবর জানতে পেরে সেই খবর মক্কার কাফিরদের জানালে অনেক কাফির নেতা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ফলে তারা একটি সুসংগঠিত যুদ্ধের আয়োজন করে এবং মুসলমানরাও মহানবীর (সা.) নেতৃত্বে কাফিরদের মোকাবেলা করতে বাধ্য হন।

এ যুদ্ধে মুসলিম মুজাহিদদের সংখ্যা মাত্র ৩১৩ জন হওয়া সত্ত্বেও তারা মক্কার সুসজ্জিত প্রায় এক হাজার কাফিরের ওপর বিজয়ী হয়েছিলেন। মহান আল্লাহর অদৃশ্য সাহায্য থাকাতেই তা সম্ভব হয়েছে। এ যুদ্ধে কাফির বাহিনীর ৭০ জন মুজাহিদদের হাতে নিহত এবং তাদের ৭০ জন মুসলিম বাহিনীর হাতে বন্দী হয়।

অন্যদিকে মুসলিম বাহিনীর ১৪ জন শাহাদত বরণ করেন। মুসলমানদের পক্ষে এই যুদ্ধের প্রধান বীর ছিলেন আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ.)। তিনি একাই ৩৬ জন কাফিরকে হত্যা করেছিলেন যাদের মধ্যে অনেকেই ছিল নেতৃস্থানীয় কাফির সর্দার ও তৎকালীন আরব বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় খ্যাতিমান যোদ্ধা ।

বহু বছর পরে মুয়াবিয়া হযরত আলী (আ.)'র খেলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে এক চিঠিতে আমিরুল মু'মিনিন তাকে সতর্ক করে দিয়ে লিখেছিলেন, “যে তরবারি দিয়ে আমি তোমার নানা (উৎবা), তোমার মামা (ওয়ালিদ) ও ভাই হানজালার ওপর আঘাত হেনেছিলাম (তথা তাদের হত্যা করেছিলাম) সে তরবারি এখনও আমার কাছে আছে।”

বদর যুদ্ধে মুসলিম সেনাদলে ছিলেন ৮২ জন মুহাজির। এ ছাড়াও মদিনার খাজরাজ গোত্রের ১১৭ জন এবং আওস গোত্রের ৬১ জন লোক ছিলেন। এই সেনাদলে মাত্র তিনটি ঘোড়া ও সত্তরটি উট ছিল।

ইসলামের সে যুগে মুসলিম সমাজে আত্মত্যাগ ও শাহাদাতের আকাঙ্ক্ষা এতটা তীব্র ছিল যে, অনেক অপ্রাপ্তবয়স্ক বালকও সে যুদ্ধে অংশগ্রহণের আগ্রহ ব্যক্ত করেছিল; কিন্তু রাসূল (সা.) তাদেরকে মদীনায় ফিরিয়ে দেন।

প্রকৃতপক্ষে কুরাইশদের কাফেলাগুলোর ওপর মুসলমানদের আক্রমণের কারণ ছিল মুসলমানদের প্রতি তাদের নির্যাতনমূলক আচরণ যা কোরআনও উল্লেখ করেছে এবং মুসলমানদের এ আক্রমণের অনুমতি দিয়ে বলেছে :

''যাদের প্রতি আক্রমণ করা হয়েছে তাদের প্রতিরোধের অনুমতি দেয়া হলো। কারণ তারা নির্যাতিত হয়েছে এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাদের সাহায্য করতে পূর্ণ ক্ষমতাবান।'' (সুরা হজ, ৩৯)।

সংগৃহিত: পার্সটুডে।

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন