হজরত মিসামে তাম্মার (রা.)এর সংক্ষিপ্ত জিবনি
হজরত মিসামে তাম্মার (রা.)এর সংক্ষিপ্ত জিবনি
এস, এ, এ
হজরত মিসামে তাম্মার (রা.)এর পিতার নাম ছিল ইয়াহিয়া এবং তিনি ইরান ও ইরাকের মধ্য স্থান নাহরাওয়ান নামক এলাকার অধিবাসি ছিলেন। অনেকের কাছে তিনি আবু সালেম নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর উপাধি ছিল তাম্মার (খেজুর বিক্রেতা)। কেননা তিনি কুফাতে খেজুর বিক্রি করতেন।
প্রাথমিক অবস্থায় তিনি বণি আসাদ গোত্রের এক নারির দাশ ছিলেন। হজরত আলি (আ.) তাকে উক্ত নারির কাছ থেকে ক্রয় করেন এবং মুক্ত করে দেন। অতঃপর তিনি ইমাম আলি (আ.) এর ছাত্র এবং অনুসারি হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেন।
মিসামে তাম্মারের ৬ জন পুত্র সন্তান এবং তাঁর অনেক দৌহিত্র ছিল। তাঁর সন্তাদের নাম ছিল যথাক্রমে, ইমরান, সোয়েব, সালেহ, মোহাম্মাদ, হামযা এবং আলি। তাঁর সকল সন্তাগণ ছিলেন হজরত আলি (আ.) এর অনুসারি এবং হাদসি বর্ণনাকারি। আহলে বাইত (আ.)গণও মিসামে তাম্মার এবং তাঁর সন্তানদের যথেষ্ট স্নেহ করতেন এবং ভালবাসতেন।
ইমরান ইমাম জয়নুল আবেদিন, বাকের এবং সাদিক (আ.)এর সানিধ্যে অর্জন করেছিলেন। সালেহ ইমাম বাকের এবং ইমাম সাদিক (আ.)এর সানিধ্যে অর্জন করেছিলেন এবং সোয়েব ইমাম জাফর সাদিক (আ.)এর সানিধ্যে অর্জন করেন।
ইমাম আলি (আ.) মিসামে তাম্মারের শাহাদতের ভবিষ্যত বাণি রাসুল (সা.) এর কাছ থেকে শুনেছিলেন। যখন মিসামে তাম্মারের সাথে হজরত আলি (আ.) এর সাক্ষাত হয় তখন তিনি ছিলেন বণি আসাদ গোত্রের একজন নারির দাশ। অতঃপর তিনি মিসামকে ক্রয় করেন এবং তাঁকে মুক্ত করে দেন। হজরত আলি (আ.) এর সাথে মিসামের সাক্ষাত তার জিবনে এক আমুল পরিবর্তন এনে দেয় সে মুক্ত হয়, হজরত আলি (আ.)এর ছাত্র হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেন এবং তিনি যথেষ্ট পরিমাণে ইসলামি জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি তাফসিরে কোরআনের শিক্ষা ইমাম আলি (আ.)এর কাছে গ্রহণ করেন এছাড়া তিনি পুস্তকও লিখেছিলেন এবং তাঁর সন্তানরা তার উক্ত তাফসির এবং লিখিত পুস্তক সমূহকে বর্ণনা করতেন।
হজরত আলি (আ.) তাঁর মৃত্যুর পূর্বে হজরত মিসামে তাম্মারকে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ দেন এবং তাঁকে বলেন: কিভাবে এবং কে তাঁকে শহিদ করবে।
রাসুল (সা.) এবং হজরত আলি (আ.) এর দেয়া ভবিষ্যতবাণি অনুযায়ি হজরত মিসামে তাম্মার (রা.)কে সন ৬০ হিজরির ২২শে জিলহজ তারিখে ইবনে যিয়াদের নির্দেশে ফাঁসি দেয়া হয়। এছাড়াও মিসামে তাম্মার (রা.) এর মৃত্যু তারিখ সম্পর্কে অন্যান্য মতামতও বর্ণিত হয়েছে যেমন: ১৯শে জিলহজ এবং আশুরার দিন। যখন মিসামে তাম্মার (রা.)কে ফাঁসিতে ঝুলানোর পূর্ব পর্যন্ত তিনি আহলে বাইত (আ.)এর ফযিলত বর্ণনা করা থেকে নিজেকে বিরত রাখেননি। এমতাবস্থায় তাঁর হাত পা কেটে ফেলা হয়। কিন্তু তারপরেও তিনি আহলে বাইত (আ.) এর ফযিলত বর্ণনা করছিলেন। অবশেষে তার মুখে লাগাম লাগিয়ে দেয়া হয় এবং তার জিহবাকে কেটে ফেলা হয়। অতঃপর যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন তখন ৭ জন খুরমা বিক্রেতা তার শরিরকে ফাঁসির কাষ্ঠ থেকে নিচে নামায় এবং বর্তমানে যেখানে তাঁর মাজার রয়েছে সেখানে তার দেহকে দাফন করে দেয়।
সূত্র:
১- মুসতাদরাকে সাফিতুল বিহার, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ২১৪।
২- শারহে ইবনে আবলি হাদিদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৯১।
৩- আল এসাবা ফি মারেফতিস সাহাবা, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪।
৪- নাফসুল মাহমুম, পৃষ্ঠা ৫৯।
৫- আল ইরশাদ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩২৩।
৬- সাফিনাতুল বিহার, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫২৪।
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন