সফর মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি
সফর মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি
এস, এ, এ
১লা সফর:
ইমাম হুসাইন (আ.)এর কাটা মাথাকে শামে আনা হয়:
উক্ত তারিখে ইমাম হুসাইন (আ.)এর কাটা মাথাকে শামে আনা হয়। আর এ কারণে বণি উমাইয়ারা উক্ত তারিখে ঈদ উৎযাপন করেছিল।(মেসবাহে কাফআমি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৯৬)
শামে বন্দি অবস্থায় আহলে বাইত (আ.)দের আগমণ:
যখন এজিদ শুনতে পাই যে আহলে বাইত (আ.)গণ বন্দি অবস্থায় শামের কাছে পৌছে গেছে তখন সে নিন্মোক্ত নির্দেশাবলি জারি করে:
১- মূল্যবান পাথর দ্বারা মুকুট এবং আকর্ষণিয় মঞ্চ তৈরি কর।
২- বিভিন্ন ব্যাক্তিত্বদের দাওয়াত এবং সারা শহরকে সুসজ্জিত করা হোক।
৩- শহরের লোকজন যেন নিজেকে পরিপাটি এবং নতুন পোষাক পরিধান করে উপস্থিত হয়।
৪- সকলেই যেন একে অপরকে অভিনন্দন জানায়।
৫- সার্বিক প্রস্তুতির পরে সকলে যেন ঢোল এবং শিঙা বাজিয়ে বন্দিদের আগমণকে উপভোগ করে।
৬- ঝাড়ুদারগণ সারা শহরকে ঝাড়ু দেয় এবং যারা খলিফা এজিদকে ভালবাসে তারা যেন আজকে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে। (আল ওয়াকায়া ওয়াল হাওয়াদেস, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৬- ৩০)
সিফফিনের যুদ্ধ:
সন ৩৮ হিজরি রোজ বুধবার উক্ত তারিখে সিফফিনের যুদ্ধ শুরু হয়। উক্ত যুদ্ধে ইমাম আলি (আ.)এর সৈন্য সংখ্যা ছিল ৯০ হাজার এবং মাবিয়ার সৈন্য সংখ্যা ছিল ৮৫ হাজার। মাবিয়ার নির্দেশে এক পর্যায়ে ইমাম আলি (আ.)এর সৈন্যদের জন্য পানিকে বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু ইমাম আলি (আ.)এর সেনাদল যখন আবার পানির উৎসকে নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় কিন্তু মাবিয়ার সেনাদলের জন্য পানিকে বন্ধ করে দেয় না। মাবিয়া যুদ্ধে মুসলিম জাহানের খলিফা ইমাম আলি (আ.)কে পরাজয় এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির লক্ষ্যে কোরআনকে বর্শার উপরে তুলে সন্ধির মিথ্যা আশ্বাস দেয়। আর উক্ত ঘটনার কারণে খারেজি নামের বিভ্রান্ত দলটির সৃষ্টি হয়। (আল ওয়াকায়া ওয়াল হাওয়াদেস, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৬- ৩০)
২য় সফর:
এজিদের দরবারে আহলে বাইত (আ.):
আহলে বাইত (আ.)দেরকে বন্দি অবস্থায় পাপিষ্ঠ এজিদের দরবারে উপস্থিত করা হয়। (মহরম ওয়া সাফার, পৃষ্ঠা ৩৫৩)
যায়দ বিন আলি বিন হুসাইন (আ.) এর শাহাদত:
যায়দ বিন আলি বিন হুসাইন (আ.)কে উক্ত দিনে ১২১ হিজরিতে বণি উমাইয়ার বিরোধিতা ও বিপ্লবি আন্দোলন করার কারণে তাকে ৪২ বছর বয়সে কুফায় শহিদ করা হয়। দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, ১৯ রবিউল আওয়াল তারিখে তার কবরকে খোঁড়া হয় এবং তার দেহকে বাহির করে দড়ি দিয়ে টানা হয় এবং অবশেষে তাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। (মুসতাদরাকে সাফিনাতুল বিহার, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৬৭ )
৩য় সফর:
ইমাম মোহাম্মাদ বাকের (আ.) এর জন্মদিবস:
এক বর্ণনামতে ইমাম মোহাম্মাদ বাকের (আ.) সন ৫৭ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন।
৫ম সফর:
হজরত রুকাইয়া (সা.আ.) এর শাহাদত:
সন ৬১ হিজরিতে হজরত রুকাইয়া (সা.আ.)এর শাহাদত। এছাড়াও তাঁকে ফাতেমা এবং জয়নাব নামেও অভিহিত করা হতো। তাঁর পিতার নাম ইমাম হুসাইন (আ.)। তিনি তিন বছর বয়সে তাঁর পিতার সাথে কারবালায় উপস্থিত ছিলেন। যদিও ইমাম হুসাইন (আ.)’এ ছোট কন্যা যাকে আমরা রুকাইয়া, ফাতেমা সুগরা সহ বিভিন্ন নামে চিনি কিন্তু অনেক ঐতিহাসিকগণ তাদের স্বিয় গ্রন্থে তাঁর নামকে উল্লেখ করেনি। আবার কিছু ইতিহাস গ্রন্থে তাঁর জীবনি, কারবালাতে তার উপস্থিতি এমনকি শামে তাঁর হৃদয়বিদারক শাহাদতের ঘটনাও বর্ণনা করা হয়েছে যেমন: যখন হজরত জয়নাব (সা.আ.) কুফাতে তাঁর ভাই ইমাম হুসাইন (আ.)’এর কাটা মাথার দিকে দৃষ্টিপাত করতেন তখন তিনি এভাবে শোকগাঁথা পাঠ করে বলতেন: হে আমার ভাই! তুমি আামদের ছোট ফাতেমার সাথে কথা বল যেন সে মারা না যায়।
ইমাম হুসাইন (আ.) তাঁর জিবনের অন্তিম মূহুর্তে (সিমার তার গলা কাটার সময়) বলেন: হে জয়নাব, সকিনা এবং আমার সন্তানরা! এখন কে তোমাদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে? হে রুকাইয়া! উম্মে কুলসুম আমি তোমাদেরকে আল্লাহর কাছে আমানত স্বরূপ ছেড়ে যাচ্ছি কেননা আমার নির্ধারিত সময় কয়েক মূহুর্তের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। (মুন্তাখাবে তাওয়ারিখ, পৃষ্ঠা ৩৮৮)
৭ম সফর:
ইমাম হাসান (আ.) এর শাহাদত:
সন ৫০ হিজরির উক্ত তারিখে ইমাম হাসান (আ.) ৪৭ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। তবে শিয়া আলেমগণের মাঝে প্রসিদ্ধ যে, তিনি ২৮ সফর শাহাদত বরণ করেন। মাবিয়ার সাথে সন্ধি হওয়ার পরে যখন তিনি মদিনায় ফিরে আসেন এবং সেখানেই তিনি ১০ বছর অতিবাহিত করেন। কিন্তু মাবিয়া চক্রান্ত করে বেহেস্তের যুবকদের সর্দার ইমাম হাসান (আ.) কে তাঁর স্ত্রী জোওদার মাধ্যেমে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে শহিদ করে। বিষ প্রদানের মাত্র ৪০ দিন পরেই ইমাম হাসান (আ.) শাহদত বরণ করেন। (দালায়েলুল ইমামা, পৃষ্ঠা ৩০৩)
৮ই সফর:
হজরত সালমান (রা.) এর ওফাত:
ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পরে হযরত সালমান ফার্সি (রা.) খুব সাদাসিধে জীবন-যাপন করতেন। তার কোন স্থায়ী আবাসস্থল ছিল না। তিনি হয় গাছের নীচে নতুবা দেয়ালের পাশে রাত্রি যাপন করতেন। বাগদাদের নিকটে একটি এলাকার গভর্নর হিসাবে তিনি পাঁচ হাজার দিরহাম বেতন পেতেন। কিন্তু তিনি পুরোটাই সদকা হিসাবে বিতরণ করতেন। তিনি সবসময় নিজ উপার্জন দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতেন। একবার কিছু লোক মদীনায় এসে যখন সালমান (রা.) খেজুর গাছের নীচে কাজ করতে দেখলেন, তখন তারা বললেন, “আপনি এখানকার নেতা এবং আপনার ভবিষ্যৎ নিশ্চিত তবুও আপনি এই সমস্ত কাজ করছেন?” সালমান (রা.) উত্তরে বললেন- “আমি নিজ হাত কাজ দ্বারা অর্জিত আয় দ্বারা খেতে পছন্দ করি।”
সালমান ফার্সি (রাঃ) সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, সালমান আমার আহলে বায়তের অন্তর্ভুক্ত এবং তিনি তাদের একজন জান্নাত যাদের আগমনের প্রত্যাশী। সন ৩৬ হিজরি হজরত সালমান ফার্সি (রা.) ২৫০ অথবা ৩৫০ বছর বয়সে মাদায়েনে মৃত্যুবরণ করেন। রেওয়ায়েতের বর্ণনা অনুযায়ি তিনি ২৫০ অথবা ৩৫০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। (আল ওয়াকায়া ওয়াল হাওয়াদেস, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৩২৫)
৯ম সফর:
হজরত আম্মার এবং খুযাইমা (রা.)এর শাহাদত:
সন ৩৭ হিজরি সিফফিনের যুদ্ধে মাবিয়া কর্তৃক হজরত আম্মারে ইয়াসির (রা.) ৯৩ বছর বয়সে এবং খুযাইমা বিন সাবিত শাহাদত বরণ করেন। হজরত আম্মার (সা.) এর পিতা ছিলেন ইয়াসির বিন আমের যাকে মক্কার মুশরিকরা শহিদ করে এবং তাঁর মা সুমাইয়া যাকে আবু জেহেল শহিদ করে। যখন ইমাম আলি (আ.) তাঁর শাহাদতের সংবাদ পান তখন তিনি হজরত আম্মারের কাছে আসেন এবং তাঁর মাথাকে নিজের কোলে তুলে ক্রন্দন করেন। (মুসতাদরাকে সাফিনাতুল বিহার, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৯৪)
নাহরাওয়ানের যুদ্ধ:
সন ৩৯ হিজরিতে নাহরাওয়ানের যুদ্ধ শুরু হয়। খোলাফায়ে রাশেদিনের চতূর্থ খলিফা ইমাম আলি (আ.) এর বিরূদ্ধে উক্ত যুদ্ধে খারেজিরা অংশগ্রহণ করে। (মানাকেবে ইবনে শাহর আশুব, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২২০)
লাইলাতুল হারির:
সন ৩৮ হিজরির উক্ত তারিখে শুক্রবার রাতটি ইতিহাসে লাইলাতুল হারির নামে পরিচিত। উক্ত রাতে মাবিয়ার সৈন্যরা ঠান্ডার কারণে কাতরাচ্ছিল যা অনেকটা কুকুরের কাতরানোর ন্যায় ছিল। অভিধানে কুকুরের চিৎকারকে হারির বলা হয়। সেহেতু উক্ত রাতকে লাইলাতুল হারির নামকরণ করা হয়।উক্ত রাতের যুদ্ধে ইমাম আলি (আ.) প্রায় ৫০০ জনকে হত্যা করেন। (মুন্তাখাবে তাওয়ারিখ, পৃষ্ঠা ১৬৩- ১৬৬)
১২ সফর:
সিফফিনের যুদ্ধে শাষক নির্বাচন:
সন ৩৮ হিজরির ১২ই সফর তারিখের সকাল বেলা ইমাম আলি (আ.) এর সৈন্যরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়। কিন্তু উমরে আস তার কুটবুদ্ধি খাটিয়ে মাবিয়ার সেনাদেরকে নির্দেশ দেয় তারা যেন প্রথম সারিতে কোরআনকে বর্শার মাথায় তুলে “লা হুকমা ইল্লা লিল্লাহ” বলে শ্লোগান দেয়। উক্ত অবস্থা দেখে আশআশ বিন কাইস ইমাম আলি (আ.) কে বলে আমরা কোরআনের সাথে লড়াই করতে পারবো না। তার চেয়ে উত্তম হচ্ছে আসুন আমরা উভয় দল মিলে শাষক নির্বাচন করি। ইমাম আলি (আ.) তাদেরকে মাবিয়ার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবগত করলেও তারা যুদ্ধ করতে রাজি হয়নি। অবশেষে তারা ইমাম আলি (আ.)কে শাষক নির্বাচনের জন্য বাধ্যে করে। অবশেষে আবু মুসা আশআরিকে ধোকা দিয়ে উমরে আস মাবিয়াকে শাষক নির্বাচন করে। তখন আবু মুসা আশআরি ইমাম আলি (আ.) এর সেনাদের ভয়ে মক্কায় পলায়ণ করে। (মুসতাদরাকে ওসায়েল, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৪১০)
১৩ই সফর:
খারেজি ফেরকার সৃষ্টি:
সিফফিনের যুদ্ধে উমরে আসের বিচারক নির্ধারনের ষড়যন্ত্রের কারণে খারেজি ফেরকার সৃষ্টি হয়। (মুসতাদরাকে সাফিনাতুল বিহার, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৯৪)
১৪ই সফর:
মোহাম্মাদ বিন আবু বকরের শাহাদত:
সন ৩৮ হিজরির উক্ত তারিখে মোহাম্মাদ বিন আবু বকর ২৮ বছর বয়সে মাবিয়া এবং উমরে আসের কারণে শাহাদত বরণ করেন। ইমাম আলি (আ.) এর খেলাফতকালে তিনি মিশরের শাষক ছিলেন। মিশরের কুম শারিক নামক স্থানে তাকে শহিদ করা হয়। শাহাদতের পরে তার দেহকে শত্রুরা মৃত গাধার পেটে ভরে জ্বালিয়ে দেয়। (ফাইযুল আলাম, পৃষ্ঠা ২৪৯- ২৫০)
১৫ই সফর:
রাসুল (সা.) অসুস্থ হয়ে পড়েন:
উক্ত তারিখে রাসুল (সা.) অসুন্থ হয়ে পড়েন এবং উক্ত অসুখের কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৩৩, পৃষ্ঠা ৬৩৩)
১৭ই সফর:
ইমাম রেযা (আ.) এর শাহাদত:
ইতিহাসের এক বর্ণনামতে সন ২০৩ হিজরির উক্ত তারিখে ইমাম রেযা (আ.) ৫১ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। আব্বাসিয় খলিফা মামুন বিষ মিশ্রিত আঙ্গুর ইমাম রেযা (আ.) কে খেতে বাধ্য করে। উক্ত বিষের প্রভাবের কারণেই তিনি শাহাদত বরণ করেন। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৪৯, পৃষ্ঠা ২২৩)
২০শে সফর:
ইমাম হুসাইন (আ.)এর চল্লিশা:
জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারি কারবালাতে ইমাম হুসাইন (আ.) এর যিয়ারত করতে আসেন। ইমাম হুসাইন (আ.)এর পরিবার পরিজন উক্ত তারিখে কারবালাতে ফিরে আসেন। (ওসায়েলুশ শিয়া, খন্ড ১৪, পৃষ্ঠা ৪৭৮)
আহলে বাইত (আ.)এর কারবালায় প্রত্যাবর্তন:
ইতিহাসে প্রসিদ্ধ এবং সহিহ বর্ণনামতে আহলে বাইত (আ.) উক্ত তারিখে শাম থেকে কারবালাতে ফিরে আসেন। (তৌযিহুল মাকাসিদ, পৃষ্ঠা ৬- ৭)
ইমাম হুসাইন (আ.) এর মস্তক দাফন:
উক্ত তারিখে ইমাম জয়নুল আবেদিন (আ.) ইমাম হুসাইন (আ.) এর মাথাকে তাঁর শরিরের সাথে লাগিয়ে কারবালাতে দাফন করে দেন। (ওসায়েলুশ শিয়া, খন্ড ১৪, পৃষ্ঠা ৪০৩)
২৩শে সফর:
হজরত সালেহ (আ.)এর মাদি উটের পা কেটে ফেলা হয়। হজরত ইউনুস (আ.) মাছের পেটে আটকে পড়েন।
২৪শে সফর:
রাসুল (সা.) ওসিয়ত লিখার ক্ষেত্রে বাধা প্রদান:
রাসুল (সা.) তাঁর উম্মতের উদ্দেশ্যে ওসিয়ত লিখার জন্য কাগজ ও কলম চান যেন তাঁর উম্মত তাঁর পরে পথভ্রষ্ট না হয় এবং হজরত আলি (আ.)কে তাঁর পরে মুসলিম জাহানের খলিফা স্বরূপ মেনে নেয়। কিন্তু হজরত উমর উক্ত কাজে বাধা দান করতে বাধা প্রদান করে বলেন: নাউযুবিল্লাহ রাসুল ভুল বকছেন এবং আমাদের জন্য আল্লাহর কিতাবই যথেষ্ট। (মুসতাদরাকে সাফিনাতুল বিহার, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৯৫)
২৫শে সফর:
রাসুল (সা.) সাকালাইনকে অনুসরণ করার নির্দেশ দেন:
উক্ত তারিখে রাসুল (সা.) মুসলমানদের মাঝে মেম্বারে আরোহন করে খুৎবা প্রদানের পরে তার উম্মতকে নির্দেশ দেন তারা যেন সাকালাইনের (কোরআন ও আহলে বাইত (আ.)) অনুসরণ করে। (সিরাতুল মুস্তাকিম, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১০২)
২৬শে সফর:
উসামা সেনাবাহিনির প্রস্তুতি:
সন ১১ হিজরিতে রাসুল (সা.) তাঁর কিছু বিশেষ সাহাবিদেরকে (হজরত আবু বকর, উমর এবং উসমান) উসামার নেতৃত্বে রোমীয়দের সাথে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে প্রস্তুত হওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু তখন অনেকেই উসামার নেতৃত্বে যুদ্ধে যেতে রাসুল (সা.)এর অবাধ্যতা করে। তখন রাসুল (সা.) তাদেরকে উদ্দেশ্যে করে বলেন: আল্লাহর অভিসম্পাত হোক তাদের উপরে যারা আমার অবাধ্যতা করেছে। (তাবাকাতে ইবনে সাআদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৬)
২৮শে সফর:
রাসুল (সা.) এর ওফাত দিবস:
সন ১১ হিজরি রাসুল (সা.) ৬৩ বছর বয়সে ওফাত পান। বর্তমানে মদিনা মুনাওয়ারার যেখানে তার মাজার রয়েছে সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। তাঁর ওফাতের পরে ইমাম আলি (আ.) তাকে গোসল দেন কাফন পরান এবং জানাযার নামাজ পড়ান। উক্ত জানাযার নামাজে বণি সাকিফাতে অংশগ্রহণকারি ব্যাক্তিরা ব্যাতিত অন্যান্য সাহাবিরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। (কাফি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৯৬)
হজরত আলি (আ.)এর ইমামতের প্রথম দিন:
উক্ত দিনটি ছিল ইমাম আলি (আ.)এর ইমামতের প্রথম দিন। উক্ত দিনে ইমাম আলি (আ.)এর যিয়ারত পাঠ করা হচ্ছে মুস্তাহাব।(বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৯৭, খন্ড পৃষ্ঠা ৩৮৪)
ইমাম হাসান (আ.)এর শাহাদত দিবস:
৫০ হিজরির উক্ত তরিখটি হচ্ছে ইমাম হাসান (আ.)এর শাহাদত দিবস। ইমাম হাসান (আ.) এর শঅহাদেরত পরে ইমাম হুসাইন (আ.) তাঁকে গোসল ও কাফন দেন, জানাযার নামাজ পড়ান। অতঃপর তাকে রাসুল (সা.) এর পাশে দাফন করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু কিছু ব্যাক্তিবর্গের তাঁর লাশকে সেখানে দাফন করতে বাধা দেয় এমনকি তার লাশের উপরে তির বর্ষণ করার নির্দেশ দেয়া হয়। অবশেষে তাঁর লাশকে জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়। ইমাম হাসান (আ.) এর হত্যার কারণ ইতিহাসে এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জোয়দা বিন আশআশ মাবিয়ার ষড়যন্ত্রের কারণে ইমাম হাসান (আ.)কে বিষ দান করে। কারণ মাবিয়া তাকে ওয়াদা করেছিল যে, ইমাম হাসান (আ.)কে মেরে ফেলতে পারলে তাকে ১ লক্ষ দিরহাম দান করবে এবং এজিদের সাথে তার বিবাহ দিবে। কিন্তু ইমাম হাসান (আ.)এর মৃত্যুর পরে তাকে ১লক্ষ দিরহাম দান করেন কিন্তু এজিদের সাথে তার বিবাহ দেয় না। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৪৪, পৃষ্ঠা ১৪২, ১৬১)
৩০শে সফর:
ইমাম রেযা (আ.) এর শাহাদত দিবস:
সৈয়দ ইবনে তাউস (রা.) থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েত অনুযায়ি সন ২০৩ হিজরির উক্ত তারিখে ৫১ অথবা ৫৫ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। ইতিহাসে তাঁর মৃত্যুর কারণ এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইমাম রেযা (আ.)কে আব্বাসিয় খলিফা মামুন জোর পূর্বক বিষ মিশ্রিত আঙ্গুর খেতে বাধ্যে করে এবং উক্ত বিষের প্রভাবের কারণে ইমাম রেযা (আ.) শাহাদত বরণ করেন। বর্তমানে ইরানের মাশহাদ শহরে যেখানে তাঁকে মাজার রয়েছে সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। (কাশফুল গুম্মা, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৬৭)
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন