জিলহজ মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি

হজরত আলি (আ.) কর্তৃক সুরা তওবার আয়াত প্রচার: সন ৯ হিজরির উক্ত দিনে হজরত আবু কবরকে সুরা তওবা প্রচারের জন্য প্রেরণ করা হয়। কিন্তু পরে আবার ঐশি নির্দেশ আসার পরে তার পরিবর্তে হজরত আলি (আ.) তার স্থলে প্রেরণ করা হয়। তিনি হজের মৌসুমে হাজিদের মাঝে উক্ত আয়াতের তা

জিলহজ মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি

এস, এ, এ

জিলহজ,   গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি,

 

১লা জিলহজ: 

হজরত আলি (.) কর্তৃক সুরা তওবার আয়াত প্রচার:

সন ৯ হিজরির উক্ত দিনে হজরত আবু কবরকে সুরা তওবা প্রচারের জন্য প্রেরণ করা হয়। কিন্তু পরে আবার ঐশি নির্দেশ আসার পরে তার পরিবর্তে হজরত আলি (আ.) তার স্থলে প্রেরণ করা হয়। তিনি হজের মৌসুমে হাজিদের মাঝে উক্ত আয়াতের তাবলিগ করেন। (তৌযিহুল মাকাসেদ, পৃষ্ঠা ২৯)

 

মাবিয়ার উদ্দেশ্যে হজরত আলি (.)এর পত্র প্রেরণ:

উক্ত দিনে হজরত আলি (আ.)সিফফিনের যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মাবিয়ার উদ্দেশ্যে নসিহত স্বরূপ পত্র প্রেরণ করেন। কিন্তু মাবিয়া মুসলিম বিশ্বের খলিফার বিরূদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং তার বিরূদ্ধে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। (কালায়েদুন নুহুর, খন্ড মহরম ওয়া সফর, পৃষ্ঠা ৩০৩)

 

৬ই জিলহজ: 

ইমাম আলি (আ.) হজরত ফাতেমা (সা.আ.) এর বিবাহ:

সন ২য় হিজরিতে হজরত আলি (আ.)এর সাথে হজরত ফাতেমা (সা.আ.)এর বিবাহ সংঘটিত হয়। উক্ত পবিত্র বিবাহ সম্পর্কে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) থেকে রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেছেন: যদি হজরত আলি (আ.) এর জন্ম না হতো তাহলে সারা পৃথিবিতে হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.)কে বিবাহ করার মতো কোন উপযুক্ত ও যোগ্য পাত্র পাওয়া যেত না। (বাশারাতুল মোস্তফা, পৃষ্ঠা ২৬৭)

 

মনসুর দাওয়ানেকির মৃত্যু দিবস:

ইতিহাসের বর্ণনা অনুযায়ি উক্ত দিনে সন ১৫৮ হিজরিতে আব্বাসিয় খলিফা “মনসুরে দাওয়ানেকি” মারা যায়। মনসুরে দাওয়ানেকি ইমাম জাফর সাদিক (আ.), আব্দুল্লাহ মাহয, হাসানে মোসাল্লাস সহ ইমাম হাসান (আ.) এর অসংখ্য সন্তানদেরকে শহিদ করে। ইতিহাসে তার মৃত্যুর কারণ এভঅবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, একবার সে হজের উদ্দেশ্যে রওনা হয় এবং উক্ত সফরে সে মারা যায় এং তাকে ‘হাজুন’ নামক স্থানে দাফন করা হয়। (মুসতাদরাকে সাফিনাতুল বিহার, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ২২০)

 

৭ই জিলহজ: 

ইমাম মোহাম্মাদ বাকের (আ.)এর শাহাদত:

জিলহজ মাসের ৭ম দিনে ইমাম বাকের (আ.) শাহাদত বরণ করেন। উক্ত দিনটি হচ্ছে আহলে বাইত (আ.)’এর অনুসারিদের জন্য একটি শোকাবহ দিন। হেশাম বিন আব্দুল মালিক ইমাম বাকের (আ.)কে বিষ দান করে এবং উক্ত বিষের কারণে তিনি বিষের অসহনিয় যন্ত্রণা সহ্য করার পরে অবশেষে শাহাদত বরণ করেন। জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। (বাসায়েরুদ দারাজাত, পৃষ্ঠা ১৪১)২

 

ইমাম কাযিম (আ.) বাসরার কারাগার থেকে বাগদাদ প্রেরণ:

এছাড়াও উক্ত দিনে ইমাম কাযিম (আ.)কে হাতে পায়ে জন্জির বাঁধা অবস্থায় বাসরা এর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে এক বছর ঈসা বিন জাফর বিন আবি জাফর মানসুররের কাছে বন্দি করে রাখে। অতঃপর  তাঁকে বাগদাদে নিয়ে যাওয়া হয়। (ফেইযুল আলাম, পৃষ্ঠা ১১১)

 

মক্কায় হজরত আব্বাস (আ.)এর  ভাষণ:

সন ৬০ হিজরির উক্ত দিনে হুসাইনি কাফেলা মক্কা থেকে কারবালার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার একদিন পূর্বে হজরত আব্বাস (আ.) উচু স্থানে দাঁড়িয়ে ভাষণ দেন। তিনি ভাষণের শুরুতে মহান আল্লাহ তায়ালার হামদ ও সানা করেন অতঃপর তিনি বলেন: কুরাইশের কাফেররা রাসুল (সা.) কে হত্যা করতে চেয়েছিল কিন্তু হজরত আলি (আ.) তাঁকে সাহায্যে করেছিলেন। আর এখন মুসলমান নামধারি লোকেরা ইমাম হুসাইন (আ.) কে শহিদ করতে চায়। কিন্তু যতদিন আমি জিবিত আছি ততদিন তারা ইমাম হুসাইন (আ.) কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (খতিবে কাবা)

 

৮ই জিলহজ: 

মক্কায় ইমাম হুসাইন (আ.) কে হত্যার ষড়যন্ত্র:

সন ৬০ হিজরিতে পাপিষ্ঠ এজিদ শামের অবস্থানরত বণি উমাইয়ার প্রায় ৩০ জন ব্যাক্তিদেরকে মক্কায় হজের মৌসুমে প্রেরণ করে এবং তাদেরকে নির্দেশ দেয় তারা যেন ইমাম হুসাইন (আ.)কে এজিদের বাইয়াত করতে বাধ্যে করে নতুবা তাকে এহরামের অবস্থায় হত্যা করে। (ফেইযুল আলাম, পৃষ্ঠা ১১৩)

 

হজরত মুসলিমের প্রকাশ্যে বাইয়াতের আহবান:

সন ৬০ হিজরি মঙ্গলবারে ইমাম হুসাইন (আ.) এর দূত মুসলিম বিন আকিল প্রকাশ্যেভাবে কুফা বাসিদেরকে ইমাম হুসাইন (আ.) এর বাইয়াতের জন্য আহবান জানায়। (আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৬৬)

 

ইরাকের অভিমুখে ইমাম হুসাইন (আ.)এর যা্ত্রা:

ইতিহাসের বর্ণনা অনুযায়ি ইমাম হুসাইন (আ.) মক্কা থেকে কুফার উদ্দেশ্যে রওনা হন। (এলামুল ওয়ারা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৪৪৫)

উক্ত দিনটি “ইয়াওমে তারওয়িয়েহ” নামে প্রসিদ্ধ। রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, উক্ত দিনে রোজা রাখলে ৬০ বছরের কাফফারার সমপরিমাণ সওয়াব দান করা হবে। উক্ত দিনে গোসল করা হচ্ছে উত্তম।

 

৯ই জিলহজ: 

আরাফার রাত্রি:

উক্ত তারিখের রাতটি হচ্ছে ফযিলতপূর্ণ একটি রাত। উক্ত রাতে দোয়া ও তওবাকে কবুল করা হয়। যদি কেউ উক্ত রাতটিকে ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করে তাহলে তাকে ১৭০ বছরের সমপরিমাণ সওয়াব দান করা হবে। উক্ত রাতে সারা রাত ইবাদতে নিমগ্ন থাকার অনেক তাকিদ করা হয়েছে। রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, উক্ত রাতে আকাশের দরজাগুলো উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

ইমাম হুসাইন (আ.)’এর যিয়ারতের অনেক ফযিলত রয়েছে। রেওয়ায়েতে উক্ত দিন থেকে নিয়ে কুরবানির ঈদ পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে। যদি কেউ এমনটি করে তাহলে সে এক বছরের জন্য বিভিন্ন বিপদ থেকে মুক্ত থাকবে।

 

আরাফার দিন:

আরাফার দিন হচ্ছে উক্ত মাসের গুরুত্বপূর্ণ দিন সমূহের মধ্যে অন্যতম। উক্ত দিনে আল্লাহ তার বান্দাদেরকে তাঁর ইবাদতের জন্য আহবান জানান এবং শয়তানকে উক্ত দিনটিতে সবচেয়ে বেশি অপমানিত, তুচ্ছ এবং রাগান্বিত হয়। (মেসবাহে কাফআমি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৬০০)

 

মুসলিম বিন আকিল (আ.)এর শাহাদত:

সন ৬০ হিজরির উক্ত তারিখে কুফার গভর্নর ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের মিথ্যা প্রলোভনে প্রতারিত হয়ে বেশির ভাগ মানুষই ইমামের প্রতিনিধিকে (মুসলিমকে) ত্যাগ করেন। মুসলিমের সঙ্গী সাথীরা ধীরে ধীরে বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল। পরস্পর বলাবলি করতে লাগল আমরা কেন গোলযোগ আর বিশৃংখলার আগুন জ্বালাচ্ছি। আমাদের তো উচিৎ ঘরে বসে থাকা আর মুসলিম ও ইবনে যিয়াদের ব্যাপারে নিজেকে না জড়ানো। আল্লাহই তাদের মধ্যে সমাধান করে দিবেন। এভাবে সবাই চলে গেল শেষ পর্যন্ত ১০ জন লোক ছাড়া আর কেউই মুসলিমের সাথে রইল না। এবার তিনি মসজিদে এসে মাগরিবের নামাজ পড়লেন,নামাজের পর দেখলেন ঐ দশ জনও সেখানে নেই। তিনি অত্যন্ত অসহায়ভাবে মসজিদ থেকে বেরিয়ে পড়লেন। অলিগলির পথ চলতে চলতে তিনি ‘তাওয়া’ নাম্নী এক মহিলার ঘরে এসে পানি চাইলেন। মহিলা পানি দিলে তা তিনি পান করলেন এবং মুসলিমকে আশ্রয় দিলেন। কিন্তু তার ছেলে গিয়ে ইবনে যিয়াদকে ব্যপারটা জানিয়ে দিল। ইবনে যিয়াদ মুহাম্মদ ইবনে আশআসকে একদল লোক সহ মুসলিমকে গ্রেফতারের জন্য পাঠাল। মুসলিম তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে নিলেন এবং তাদের সাথে একাই যুদ্ধে লিপ্ত হলেন ও তাদের বেশ কিছু লোককে হত্যা করলেন । আশআস চিৎকার দিয়ে বলল: হে মুসলিম! আমরা তোমাকে নিরাপত্তা দিচ্ছি । মুসলিম বললেন: ধোকাবাজ,ফাসেক লোকদের কথার কোন মূল্য নেই। যুদ্ধ করতে করতে এক পর্যায়ে মুসলিমের ঢাল ও তরবারী ভেঙ্গে যাওয়ায় তার মনোবল কিছুটা দূর্বল হয়ে যায়। ইতিমধ্যে এক ব্যক্তি পিছন থেকে তীরের সাহায্যে আঘাত করলে তিনি ঘোড়া থেকে পড়ে যান। তখন তাকে বন্দী করে ইবনে যিয়াদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় ।

ইবনে যিয়াদ বকর ইবনে হামারানকে দারুল ইমারার ছাদের উপর মুসলিমকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করার নির্দেশ দিল। মুসলিম যাওয়ার সময় তসবিহ পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করছিলেন। ছাদের উপর পৌছা পর্যন্ত তিনি রাসূল (সা.) এর উপর দরুদ পাঠ করছিলেন।

তার মাথা দেহ থেকে আলাদ করে দেয়া হয়। তার হত্যাকারী অত্যন্ত ভীত বিহ্বলভাবে ছাদ থেকে নেমে আসে। ইবনে যিয়াদ জিজ্ঞেস করল তোমার কি হয়েছে। সে বলল: হে আমীর! যখন তাকে হত্যা করছিলাম তখন কুৎসিত কাল চেহারা এক লোক দেখলাম যে আমার মুখোমুখি দাড়িয়ে দাতে নিজের আঙ্গুল কামড়াচ্ছে। তাকে দেখে এত ভয় পেয়েছি যে জীবনে কোন কিছুতেই আমি এত ভয় পাইনি। যিয়াদ বলল: মনে হয় মুসলিমকে হত্যা করার কারণে তুমি ভয় পেয়েছ। অতঃপর তার পা বেধে টেনে হিচড়ে কুফার বাজারে আনা হয়। অতঃপর তার মাথা বিহিন শরিরকে ঝুলিয়ে রাখা হয় এবং তাঁর মাথাকে দামেস্কে প্রেরণ করা হয়। (মারাকেদুল মাআরেফ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩১৮)

 

হানি বিন উরওয়ার শাহাদত:

মুসলিম ইবনে আকিলের শাহাদতের পরে হানি বিন উরওয়া’ কে শহিদ করা হয়। (মুনতাখাবুত তাওয়ারিখ, পৃষ্ঠা ২৯৪- ২৯৫)

 

সাদদুল আবওয়াব:

ইতিহাসের প্রসিদ্ধ ঘটনা “সাদদুল আবওয়াব” উক্ত দিনে রাসুল (সা.) শুধুমাত্র হজরত আলি (আ.) এর ঘরের দরজা ব্যাতিত মসজিদে নবাবির দিকের খুলে রাখা সকল সাহাবিদের ঘরের দরজাকে বন্ধ করার নির্দেশ দান করেন। রাসুল (সা.) বলেন: যাদেরকে বাহির করে দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই এতে সন্তুষ্ট না যে, আলি সর্বদা মসজিদে অবস্থান করুক। মহান আল্লাহর শপথ যে, আমি তাদেরকে বাহির করে দেইনি এবং আলিকেও মসজিদে থাকার নির্দেশ দেইনি বরং উক্ত হুকুমটি ছিল মহান আল্লাহ তায়ালার। (ওয়েকায়াউশ শুহুর, পৃষ্ঠা ২২৬)

 

১০ই জিলহজ: 

ঈদুল আযহা:

উক্ত দিনটি হচ্ছে মুসলমানদের আরেকটি ঈদের দিন অর্থাৎ ঈদুল আযহা। (মাশারুশ শিয়া, পৃষ্ঠা ১৮)

 

আব্দুল্লাহ মাহযের শাহাদত:

সন ১৪৫ হিজরি উক্ত দিনে আব্দুল্লাহ মাহয বিন হাসানে মোসান্না বিন হাসান (আ.) কে ৫৭ বছর বয়সে এবং বণি হাশিমের আরো কিছু সন্তাদেরকে আব্বাসিয় খলিফা মনসুর দাওয়ানেকি এর নির্দেশে কারাগারে শহিদ করা হয়। উক্ত কারাগরের অবস্থা এমন ছিল যে সেখানে দিন রাত বোঝা যেত না। (মারাকেদুল মাআরেফ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৫)

 

ইমাম রেযা (আ.)কে ঈদের নামাজ  পড়ানোর ক্ষেত্রে বাধা প্রদান:

উক্ত দিনে ইমাম রেযা (আ.) আব্বাসিয় খলিফা মামুনের নির্দেশে খোরাসানে ঈদের নামাজ পড়ানোর নির্দেশ দেয়। কিন্তু খলিফা মামুন জন সমাগম দেখে ভয় পায় সে মনে করে হয়তো জনগণ এরপরে তার বিরূদ্ধে বিপ্লবি আন্দোলন গড়ে তুলবে। আর উক্ত কারণে সে ইমাম রেযা (আ.) কে ঈদের নামাজ পড়াতে নিষেধ করে। (কালায়েদুন নুহুর, খন্ড জিলহ্জ, পৃষ্ঠা ৩৮৩)

 

১১ই জিলহজ:

দোয়ায়ে সাবাহ লিখা হয়:

উক্ত দিনে রাসুল (সা.) হজরত আলি (আ.)কে দোয়া-এ সাবাহ এর শিক্ষা দেন এবং ইমাম আলি (আ.) দোয়াটি লিখেন। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৯১, পৃষ্ঠা ২৪৭)

 

১২ই জিলহজ

ওয়াদিউল আকিক নামক স্থানে ইমাম হুসাইন (আ.):

উক্ত তারিখে ইমাম হুসাইন (আ.) মক্কা থেকে কারবালার পথে রওনা হওয়ার সময় ওয়াদিউল আকিক নামক স্থানে অবস্থান করেন। (ইমাম হুসাইন ওয়া আসহাবিহি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৫৮)

 

১৩ই জিলহজ:

শাককুল ক্বামার:

উক্ত তারিখের দিবাগত রাতে অর্থাৎ ২৪ তারিখে রাতে “শাককুল ক্বামার” রাসুল (সা.) মক্কায় অবস্থান কুরাইশের কাফেররা তাঁর কাছে মজেযা দেখতে চাইলে তিনি তাঁর আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করেন এবং পুণরায় তা আবার জোড়া লাগিয়ে দেন। তখন আবু জাহল বলে: আমার মনে হচ্ছে এটা জাদু। আমরা অন্যান্য এলাকার লোকজনদের কাছে জিজ্ঞাসা করবো যে তারাও কি উক্ত ঘটনাটি অবলোকন করেছে কিনা। যখন অন্যান্য এলাকার লোকজনদেরকে জিজ্ঞাসা করা হয় তখন তারাও বলে হ্যাঁ আমরাও দেখেছি যে চাঁদের এক খন্ড কাবার পিছন অংশে এবং অবশিষ্ট অংশটি আবু কুবাইসের পাহাড়ের পিছনে অবস্থান করছিল। (রিয়াহিনুশ শারিয়া, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৫৭)

 

ইমাম হুসাইন (আ.) সাফরা নামক স্থান অবস্থান করেন:

ইমাম হুসাইন (আ.) মক্কা থেকে কারবালার অভিমুখে যাওয়ার সময় উক্ত তারিখে সাফরা নামক স্থান অবস্থান করেন।উক্ত স্থানে মোজাম্মা এবং উব্বাদ তাদের লোকজনদের সাথে হুসাইনি কাফেলায় অংশগ্রহণ করেন। তারা উভয়েই কারবালাতে শাহাদত বরণ করেন। (ইমাম হুসাইন ওয়া আসহাবিহি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৫৮- ১৫৯)

 

১৪ই জিলহজ:

হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.)কে ফেদাক প্রদান:

উক্ত তারিখে রাসুল (সা.) ফেদাক নামক বাগানটি হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.)কে দান করেন। বিশ্বস্ত সুত্রে এটা সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত যে,রাসুল (সাঃ) তাঁর জীবদ্দশাতেই উক্ত বাগানটি তাঁর প্রানপ্রিয় কন্যা ফাতিমা (সা.আ.)কে দান করেছিলেন। আল-বাজ্জার,আবু ইয়ালা,ইবনে আবি হাতিম,ইবনে মারদুয়াই ও অন্যান্য অনেকে আবু সাঈদ খুদরী ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের বরাত দিয়ে বর্ননা করেছেন যে,যখন কোরানের আয়াত-“নিকটবর্তী আত্নীয় পরিজনকে তাদের প্রাপ্য দিয়ে দাও”-(১৭ঃ২৬)-নাজিল হয়েছিল তখন রাসুল(সাঃ) ফাতিমাকে ডেকে এনে তাঁকে ফেদাক দান করেছিলেন (মুসতাদরাকে সাফিনাতুল বিহার, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২১৬)

 

ইমাম হুসাইন (আ.) যাতুল ইরাক নামক স্থানে অবস্থান করেন:

উক্ত দিনটি ছিল সোমবার। ইমাম হুসাইন (আ.) মক্কা থেকে কারবালার অভিমুখে যাওয়ার সময় উক্ত তারিখে যাতুল ইরাক নামক স্থান অবস্থান করেন।(ইমাম হুসাইন (আ.) ওয়া আসহাবিহি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৫৮)

 

১৫ জিলহজ:

ইমাম আলি নাকি  (.)এর জন্ম দিবস:

সন ২১২ অথবা ২১৩ হিজরির উক্ত দিনে মদিনার নিকটবর্তি “সারিয়া” নামক গ্রামে দশম ইমাম ‘ইমাম আলি নাকি (আ.)’ জন্মগ্রহণ করেন। নাম: আলী, উপাধি: হাদী, নাক্বী। ডাক নাম: আবুল হাসান পিতার নাম: ইমাম জাওয়াদ (আ.)। মাতার নাম: সামানে মাগরেবিয়েহ। জন্ম তারিখ: ১৫ই জিলহজ্ব ২১২ হিজরী। জন্মস্থান: সেরিয়া নামক গ্রামে যা মদীনা মুনাওয়ারা থেকে ৬ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত। আয়ু: ৪২ বছর। ইমামতকাল: ৩৪ বছর। হত্যাকারী: মোয়তাআয আব্বাসী। শাহাদত: ৩য় রজব ২৫৪ হিজরী। দাফনের স্থান: সামেরা, ইরাক। তাঁর ইমামতকালে খলিফাগণ: মোয়তাসেম, ওয়াসেক্ব মোয়তাসেমের পুত্র, মোতাওয়াক্কেল মোয়তাসেমের ভাই, মুনতাসের মোতাওয়াক্কিলের পুত্র, মুসতাইন মুনতাসেরের চাচাতো ভাই, মোয়তায মোতাওয়াক্কিলের আরেক পুত্র। সন্তান: ৫জন, ৪জন ছেলে এবং ১জন কন্যা। (মুনতাখাবুত তাওয়ারিখ, পৃষ্ঠা ৭৮৯)

 

হাজার নামক স্থানে ইমাম হুসাইন (আ.) অবস্থান করেন:

রোজ বৃহস্পতিবার ইমাম হুসাইন (আ.) মক্কা থেকে কারবালার অভিমুখে যাওয়ার সময় উক্ত তারিখে হাজার নামক স্থান অবস্থান করেন।উক্ত স্থান থেকে তিনি আব্দুল্লাহ বিন ইয়াকতিন অথবা কাইস ইবনে মুসাহহার-এর মাধ্যমে কুফাবাসিদের উদ্দেশ্যে পত্র লিখে প্রেরণ করেন। কিন্তু কাদেসিয়া নামক স্থানে হাসিন বিন নুমাইর ইমাম হুসাইন (আ.) এর উক্ত পত্রবাহকে আটক করে।(আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৭০)

 

১৬ই জিলহজ

ফায়দ নামক স্থানে ইমাম হুসাইন (আ.) এর অবস্থান:

ইমাম হুসাইন (আ.) মক্কা থেকে কারবালার অভিমুখে যাওয়ার সময় উক্ত তারিখে ফায়দ নামক স্থান অবস্থান করেন।(ইমাম হুসাইন (আ.) ওয়া আসহাবিহি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৬২)

 

১৭ই জিলহজ

ইমাম হুসাইন (আ.) আজফুর নামক স্থানে অবস্থান করেন

ইমাম হুসাইন (আ.) মক্কা থেকে কারবালার অভিমুখে যাওয়ার সময় উক্ত তারিখে আজফুর নামক স্থান অবস্থান করেন।(ইমাম হুসাইন (আ.) ওয়া আসহাবিহি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৬৩)

 

১৮ জিলহজ:

ঈদে গাদির:

উক্ত দিনটি হচ্ছে ইসলাম ধর্ম পূর্ণ হওয়ার দিন। রাসুল (সা.)’এর খলিফা নির্বাচনের দিন। বিভিন্ন রেওয়ায়েতে উক্ত দিনটিকে ‘ঈদুল আকবার’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

-  উক্ত দিনে হজরত ইব্রাহিম (আ.) নমরুদের নির্দেশে প্রজ্বলিত আগুন থেকে পরিত্রাণ লাভ করেন। (মাশআরুশ শিয়া, পৃষ্ঠা ২২, যাদুল মাআদ, পৃষ্ঠা ২৬৯, তাকভিমে মোহসেনিন, পৃষ্ঠা ১৪)

-  উক্ত দিনে হজরত আদম (আ.) এর তওবা কবুল হয়। (মাশআরুশ শিয়া, পৃষ্ঠা ২২, ফাইযুল আলাম, পৃষ্ঠা ১২৫)

-  উক্ত তারিখে হজরত মুসা (আ.)কে ফেরাউনের জাদুকরদের উপরে বিজয় লাভ করেন। (মাশআরুশ শিয়া, পৃষ্ঠা ২২, ফাইযুল আলাম, পৃষ্ঠা ১২৫)

-  উক্ত তারিখে হজরত মুসা (আ.) তার উম্মতের মাঝে ইউসা বিন নুন (আ.)কে নিজের ওয়াসি নিযুক্ত করেন। (মাশআরুশ শিয়া, পৃষ্ঠা ২২, ফাইযুল আলাম, পৃষ্ঠা ১২৫)

-  উক্ত তারিখে হজরত ঈসা (আ.) সামউন আসফা কে নিজের ওয়াসি নিযুক্ত করেন। (মাশআরুশ শিয়া, পৃষ্ঠা ২২, ফাইযুল আলাম, পৃষ্ঠা ১২৫)

-  উক্ত তারিখে হজরত সুলাইমান (আ.) আসিফ ইবনে বারখিয়া এর কাছ থেকে নিজের শাষণ ক্ষমতার স্বিকৃতির সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। (মাশআরুশ শিয়া, পৃষ্ঠা ২২, ফাইযুল আলাম, পৃষ্ঠা ১২৫)

-  উক্ত তারিখে রাসুল (সা.) তার সাহাবিদেরকে মাঝে ভ্রাতুত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করেন। (মেসবাহে কাফআমি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১২৫, তাকভিমুল আয়েম্মে, পৃষ্ঠা ১৪, তাকভিমুল মোহসেনিন, পৃষ্ঠা ১৪)

-  উক্ত তারিখে বিভিন্ন নবিগণ তাদের নিজেদের স্থলাভিষিক্তদের নির্বাচন করেছিলেন। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৯৭, পৃষ্ঠা ৩৮৪)

 

খুযাইমা নামক স্থানে ইমাম হুসাইন (আ.) এর অবস্থান:

ইমাম হুসাইন (আ.) মক্কা থেকে কারবালার অভিমুখে যাওয়ার সময় উক্ত তারিখে যখন খুযাইমা নামক স্থানে পৌছান তখন তিনি সেখানে এক দিন ও এক রাত সেখানে অতিবাহিত করেন।সকাল হলে হজরত জয়নাব (সা.আ.) ইমাম হুসাইন (আ.)কে বলেন:ভাইয়া গতরাতে আমি একটি শব্দ শুনছিলাম। তখন ইমাম হুসাইন (আ.) তাঁকে বলেন অবস্থান করেন আল্লাহ যা আমাদের ভাগ্যে রেখেছেন তার হবেই।(মানাকেবে আলে আবি তালিব, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১০৩)

 

 

২০শে জিলহজ:

ইমাম হুসাইন (আ.) শাকুক বা শুকুক নামক স্থানে অবস্থান করেন:

ইমাম হুসাইন (আ.) মক্কা থেকে কারবালার অভিমুখে যাওয়ার সময় উক্ত তারিখে শাকুক বা শুকুক নামক স্থানে অবস্থান করেন এবং এখানেই ফারাযদাক্ব তাঁর সাথে সাক্ষাত করে। (ইমাম হুসাইন (আ.) ওয়া আসহাবিহি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৬৫- ১৬৬)

 

২১শে জিলহজ

যারুদ নামক স্থানে ইমাম হুসাইন (আ.) অবস্থান করেন:

ইমাম হুসাইন (আ.) মক্কা থেকে কারবালার অভিমুখে যাওয়ার সময় উক্ত তারিখে যারুদ নামক স্থানে অবস্থান করেন এবং উক্ত স্থানে যোহাইর বিন কাইন বাজালি ইমাম হুসাইন (আ.) এর সাথে সাক্ষাত করেন। (তারিখে তাবারি, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৯৮)

 

২২শে জিলহজ:

মিসামে তাম্মার  (রা.) এর শাহাদত:

সন ৬০ হিজরির উক্ত তারিখে হজরত মিসামে তাম্মার (রা.)কে ইবনে যিয়াদের নির্দেশে ফাঁসি দেয়া হয়। এছাড়াও মিসামে তাম্মার (রা.) এর মৃত্যু তারিখ সম্পর্কে অন্যান্য মতামতও বর্ণিত হয়েছে যেমন: ১৯শে জিলহজ এবং আশুরার দিন। যখন মিসামে তাম্মার (রা.)কে ফাঁসিতে ঝুলানো হয় তখনও তিনি আহলে বাইত (আ.)এর ফযিলত বর্ণনা করা থেকে নিজেকে বিরত রাখেনি। এমতাবস্থায় তাঁর হাত  পা কেটে ফেলা হয়। যখন সে মৃত্যু বরণ করে কখন ৭জন খুরমা বিক্রেতা তার শরিরকে ফাঁসির কাষ্ঠ থেকে নিচে নামায় এবং বর্তমানে যেখানে তাঁর মাজার রয়েছে সেখানে তার দেহকে দাফন করে দেয়। (মুসতাদরাকে সাফিতুল বিহার, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ২১৪)

 

ইব্রাহিম বিন মালিকে আশতার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হন:

উক্ত তারিখে ইব্রাহিম বিন মালিকে আশতার প্রায় ১২ হাজার সৈন্য নিয়ে এবং ইবনে নোমা-এর বর্ণনামতে ২০ হাজরের চেয়ে কম সৈন্য সাথে নিয়ে আমির মোখতারের নির্দেশে ইবনে যিয়াদের বিরূদ্ধে যুদ্ধের জন্য বাহির হয়। ইব্রাহিম বিন আশতার খাযার নদীর তির থেকে প্রায় ৩০ কি:মি: মুসেল নামক স্থানে অবস্থান করে। ঐদিকে ইবনে যিয়াদ ৮০ হাজার অশ্বারোধি বাহিনি দ্বারা এলাকাটিকে ঘিরে ফেলে। অবশেষে যুদ্ধ শুরু হয় কয়েকদিন যুদ্ধের পরে এক পর্যায়ে ইবনে যিয়াদ পরাজিত হয়। ইব্রাহিম বিন মালিকে আশতার তার মাথাকে কেটে মোখতার সাকাফির কাছে প্রেরণ করেন। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৪৫, পৃষ্ঠা ৩৮০- ৩৮৪)

 

সাআলাবিয়া নামক স্থানে ইমাম হুসাইন (আ.) এর অবস্থান:

ইমাম হুসাইন (আ.) মক্কা থেকে কারবালার অভিমুখে যাওয়ার সময় উক্ত তারিখে সাআলাবিয়া নামক স্থানে অবস্থান করেন। একটি মত অনুযায়ি উক্ত স্থানে বনি আসাদের দুইজন ব্যাক্তি ইমাম (আ.)কে হজরত মুসলিম (আ.)এর শাহাদতের খবর দেয়।তখন ইমাম হুসাইন (আ.) তিনবার বলেন “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” অতঃপর ক্রন্দন করেন। (তারিখে তাবারি, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৯৯)

 

২৩শে জিলহজ

যাবালে নামক স্থানে ইমাম হুসাইন (আ.) অবস্থান করেন:

ইমাম হুসাইন (আ.) মক্কা থেকে কারবালার অভিমুখে যাওয়ার সময় উক্ত তারিখে যাবালে নামক স্থানে অবস্থান করেন।ইতিহাসের এক বর্ণনা অনুযায়ি উক্ত স্থানে বনি আসাদের দুইজন ব্যাক্তি ইমাম (আ.)কে হজরত মুসলিম (আ.)এর শাহাদতের খবর দেয়।তখন ইমাম হুসাইন (আ.) তিনবার বলেন “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” অতঃপর ক্রন্দন করেন এবং উক্ত স্থান থেকে যাদের ঈমান বলিষ্ঠ ছিল না তারা তখন ইমাম হুসাইন (আ.) থেকে পৃথক হয়ে যায়। (আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৭৫)

 

২৪শে জিলহজ: 

ঈদে মুবাহেলা:

মুবাহিলার ঘটনাটি ঘটেছিল খ্রিস্টানদের সঙ্গে তিন দিন ধরে বিতর্ক চলার পর। রাসূল (সা.)’র মুখে মানুষের সঙ্গে সাদৃশ্যহীন আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে অকাট্য যুক্তি (হযরত আদম-আ.’র উদাহরণসহ) শোনার পরও নাজরানের খ্রিস্টান প্রতিনিধিরা ঈসা (আ.)-কে আল্লাহর পুত্র বা পুত্র-আল্লাহ বলার মত অদ্ভুত বিশ্বাসের ওপর অবিচল ছিল এবং বিশ্বনবী (সা.)-কে সত্য নবী হিসেবে মানতে অস্বীকার করছিল। (খ্রিস্টান পাদ্রিরা এ বিতর্কের সময় বলছিল যে হযরত ঈসা নবী-আ. যেহেতু পিতা ছাড়াই জন্ম নিয়েছেন তাই তিনি আসলে আল্লাহর পুত্র। জবাবে আল্লাহর রাসূল-সা. বলেছিলেন, আদম-আ. তো পিতা ও মাতা ছাড়াই জন্ম নিয়েছিলেন তাহলে তো আল্লাহর পুত্র হওয়ার সম্ভাবনা-নাউজুবিল্লাহ- তারই বেশি হওয়ার কথা ছিল!)

এ অবস্থায় রাসূল (সা.) মুবাহিলার চ্যালেঞ্জ জানান। অর্থাৎ যারা মিথ্যাবাদী তাদের ধ্বংসের জন্য উভয় পক্ষ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাবে। খ্রিস্টান পাদ্রিরা বেশ সাহস দেখিয়ে এই চ্যালেঞ্জ মেনে নেয়।

এ পরিস্থিতিতে নাজেল হয় পবিত্র কুরআনের ওই আয়াত। যেখানে মহান আল্লাহ উভয় পক্ষকে তাদের নারী, পুত্র, ঘনিষ্ঠ পুরুষ এবং শিশু সন্তানসহ শহরের বাইরে একটি ময়দানে জড় হওয়ার নির্দেশ দেন।

পরের দিন বিশ্বনবী (সা.) শান্তচিত্তে ও অবিচল আস্থা নিয়ে নির্ধারিত স্থানে আসেন। সঙ্গে ছিলেন কন্যা হযরত ফাতিমা জাহরা (সালামুল্লাহি আলাইহা.), জামাতা হযরত আলী (আ.) এবং নাতি হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)। (তাঁদের সবার ওপর মহান আল্লাহর অশেষ দরুদ ও রহমত বর্ষিত হোক)

তাঁদের নুরানি চেহারা ও অভিব্যক্তি দেখেই খ্রিস্টানরা স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। ইসলাম যে সত্য ধর্ম তা তারা বুঝতে পারে। তাই তারা মিথ্যাবাদীর ওপর খোদায়ী অভিশাপ বর্ষণের আহ্বান জানানোর চ্যালেঞ্জ প্রত্যাহার করে নেয়।

নাজরানের খ্রিস্টান প্রতিনিধি বা পাদ্রিদের প্রধান তখন তার সঙ্গীদের বলেছিলেন: আমি এমন জ্যোতির্ময় বা পুণ্যবান ব্যক্তিদের চেহারা দেখছি যারা খোদায়ী অভিশাপের জন্য হাত উঠালে পাহাড়গুলো তাদের স্থান থেকে সরে আসবে, তাই মুবাহিলা হতে হাত গুটিয়ে নেয়াই ভাল, নইলে কিয়ামত পর্যন্ত খ্রিস্টানদের নাম-নিশানাও থাকবে না। পরে তারা মুসলমান না হয়েই সন্ধি করে ও জিজিয়া কর দিতে সম্মত হয়।

তখন মহানবী (সা.) বলেন, “ আল্লাহর কসম! এরা যদি মুবাহিলা করত তাহলে আল্লাহ তাদের বানরে বা শুকরে রূপান্তরিত করতেন এবং ময়দান আগুনে পরিণত হত। আর নাজরানের একটি প্রাণীও এমনকি পাখি পর্যন্ত রক্ষা পেত না।”(তাফসিরে জালালালাইন, ১ম খণ্ড, পৃ.৬০, বায়দ্বাভী, ১ম খণ্ড, পৃ.১১৮, তাফসিরে দুররুল মানসুর, ২য় খণ্ড, পৃ.৩৯, মিশর মুদ্রণ)

 

হজরত আলি (.)এর আংটি প্রদান:

আর উক্ত দিনেই হজরত আলি (আ.) রুকু অবস্থায় জাকাত দান করেছিলেন। আর উক্ত জাকাত দান কে কেন্দ্র তাঁর শানে সুরা মায়েদা আয়াত নং ৫৫টি নাযিল হয়। সুতরাং উক্ত দিনটি হচ্ছে একটি পবিত্র দিন। (কালায়েদুন নুহুর, খন্ড জিলহজ, পৃষ্ঠা ৪২৬)

 

এলক্বা নামক স্থানে ইমাম হুসাইন (আ.) অবস্থান করেন:

ইমাম হুসাইন (আ.) মক্কা থেকে কারবালার অভিমুখে যাওয়ার সময় উক্ত তারিখে এলক্বা নামক স্থানে অবস্থান করেন। (ইমাম হুসাইন ওয়া আসহাবিহি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৭৮)

 

২৫শে জিলহজ:

আহলে বাইত (.)এর শানে সুরা দাহর নাযিল হয়:

উক্ত দিনে সুরা দাহর’এর “هل أتي” আয়াতটি আহলে বাইত (আ.)’এর শানে নাযিল হয়। আর তাই এ দিনে সাদকা দান করার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। আর এ দিনে যিয়ারতে জামে এবং দোয়ায়ে মুবাহিলা পড়ার জন্যও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। (তৌযিহুল মাকাসিদ, পৃষ্ঠা ৩২)

 

ইমাম আলি প্রথম জুমআর নামাজ পড়ান:

ইমাম আলি (আ.)জনগণের কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহণের পরে প্রথম তিনি জুমআর নামাজ পড়ান। (মুনতাখাবুত তাওয়ারিখ, পৃষ্ঠা ১৫৯)

 

আকাবা নামক স্থানে ইমাম হুসাইন (আ.) অবস্থান করেন:

ইমাম হুসাইন (আ.) মক্কা থেকে কারবালার অভিমুখে যাওয়ার সময় উক্ত তারিখে আকাবা নামক স্থানে অবস্থান করেন। উক্ত স্থানে পৌছানোর পরে ইমাম হুসাইন (আ.) এর সঙ্গিরা বলেন: হে ইমাম (আ.) আমাদের মনে হচ্ছে যে অচিরেই আমরা শত্রুরা আমাদেরকে হত্যা করবে। তখন ইমাম হুসাইন (আ.) তাদেরকে বলেন: আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমার উপরে কতগুলো কুকুর আক্রমণ করে এবং তাদের মধ্যে একটি ছিল সবচেয়ে হিংস্র এবং কুৎসিত। (কামেলুয যিয়ারত, পৃষ্ঠা ১৫৭)

 

২৬শে জিলহজ

শারাফ নামক স্থানে ইমাম হুসাইন (আ.) অবস্থান করেন:

ইমাম হুসাইন (আ.) মক্কা থেকে কারবালার অভিমুখে যাওয়ার সময় উক্ত তারিখে শারাফ নামক স্থানে অবস্থান করেন। উক্ত স্থানে পানি দেখেতে পাওয়ার পরে ইমাম (আ.) তার সঙ্গিদের বলেন: তোমরা মশকগুলোতে পানি পূর্ণ করে নাও। উক্ত স্থানে ইবনে যিয়াদের সৈন্যরা ইমাম হুসাইন (আ.)কে কুফাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করে। (তারিখে তাবারি, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩০২)

 

২৭শে জিলহজ:

যুহুসুম নামক স্থানে ইমাম হুসাইন (আ.) অবস্থান করেন:

ইমাম হুসাইন (আ.) মক্কা থেকে কারবালার অভিমুখে যাওয়ার সময় উক্ত তারিখে রোজ রবিবার যুহুসুম নামক স্থানে পৌছান। উক্ত স্থানের নামটি ইতিহাসে বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে যেমন:যু হুসুসি, যু খুসুব এবং যু জিসাম্মি। ইমাম হুসাইন (আ.) তার সঙ্গিদের সেখানে অবস্থান করার নির্দেশ করেন। হুর বিন ইয়াযিদ রিয়াহি উক্ত স্থানে পৌছালে ইমাম হুসাইন (আ.) তার সৈন্য এবং ঘোড়াকে পানি দ্বারা পরিতৃপ্ত করার নির্দেশ দেন। (নাফসুল মাহমুম, পৃষ্ঠা ১৮৮)

 

মারওয়ানের মৃত্যু:

সন ১৩৩ হিজরির উক্ত তারিখে মারওয়ান বিন মোহাম্মাদ বিন মারওয়ান বিন হাকাম ওরফে মারওয়ানে হেমারকে হত্যা করা হয়।  সে ছিল বণি উমাইয়ার শেষ খলিফা। বণি আব্বাসের বিদ্রোহের পরে সাফফা মারওয়ানকে হত্যা করার জন্য আব্দুল্লাহ ইবনে আলিকে প্রেরণ করে। মারওয়ান তখন মিশরে বুসির নামক স্থানে আত্মগোপন করেছিল। বণি আব্বাসের লোকজন পথে বণি আব্বাসের কোন লোকজন দেখার সাথেই তাদেরকে হত্যা করছিল। এমনকি জর্ডান নদীর কিনারায় তারা অসংখ্য লোকজনকে হত্যা করে এবং তাদের লাশের উপরে বসে খাদ্য খায়।সেখান থেকে আব্দুল্লাহ মারওয়ানকে হত্যা করার জন্য আমের বিন ইসমাইলকে প্রেরণ করে। সে মারওয়ানকে এক গির্জার মধ্যে হত্যা করে এবং তার জিহবাকে কেটে একটি বিড়ালকে খেতে দেয়। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে মারওয়ান উক্ত দিনেই তার এক গোলামের জিহবাকে কেটে উক্ত বিড়ালকে খেতে দিয়েছিল। (কালায়েদুন নুহুর, খন্ড জিলহজ, পৃষ্ঠা ৪১৩)

 

হাররার কলঙ্কময় ঘটনা:

সন ৬৩ হিজরিতে উক্ত তারিখ রোজ বুধবারে ইতিহাসের কলঙ্কময় ঘটনা যা “হাররা-এর ঘটনা” নামে প্রসিদ্ধ। উক্ত ঘটনায় এজিদের নির্দেশে মসজিদে নবাবিকে ঘোড়ার আস্তাবল বানানো হয়, নারিদের সম্ভ্রমকে লুট করা হয়, রাসুল (সা.) এর সাহাবিদেরকে হত্যা করা হয়। মুসলিম বিন উকবা তার সৈন্যদের জন্য মদিনার সকল কিছুকে তিন দিনের জন্য মুবাহ বা উন্মুক্ত করে দেয়। আর উক্ত ঘটনাটি এজিদের মৃত্যুর আড়াই মাস পূর্বে সংঘটিত হয়। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ১৮, পৃষ্ঠা ১২৫- ১২৬)

 

২৮শে জিলহজ

আযিবুল হাযানাত নামক স্থানে ইমাম হুসাইন (আ.) অবস্থান করেন:

ইমাম হুসাইন (আ.) মক্কা থেকে কারবালার অভিমুখে যাওয়ার সময় উক্ত তারিখে আযিবুল হাযানাত নামক স্থানে অবস্থান করেন। উক্ত স্থানে মোজাম্মা, তারাম্মাহ এবং নাফে হুসাইনি কাফেলায় যোগ দেয়। ইতিহাসের বর্ণনামতে উক্ত স্থানেই ইমাম হুসাইন (আ.) কাইস ইবনে মুসহহারের মৃত্যুর সংবাদ পান। (ইমাম হুসাইন ওয়া আসহাবিহি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৮৫)

 

২৯শে জিলহজ

কাতকাতানিয়া নামক স্থানে ইমাম হুসাইন (আ.) অবস্থান করেন:

ইমাম হুসাইন (আ.) মক্কা থেকে কারবালার অভিমুখে যাওয়ার সময় উক্ত তারিখে কাতকাতানিয়া নামক স্থানে অবস্থান করেন। (আমালি সাদুক, পৃষ্ঠা ২১৯)

 

জিলহজ মাসের শেষ দিন: 

রাসুল (সা.) বিভিন্ন বাদশাদেরকে চিঠি লিখেন:

সন ৬ হিজরি রাসুল (সা.) বিভিন্ন দেশের বাদশাহদেরকে চিঠি লিখেন এবং তাদেরকে দ্বিন ইসলামের দাওয়াত দেন। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ২০, পৃষ্ঠা ৩৮২)

 

হজরত আবু যার (রা.)এর মৃত্যু:

হজরত আবু যার (রা.) ছিলেন রাসুল (সা.)এর সেই সাহাবি যাকে তিনি সত্যবাদি বলে আখ্যায়িত করেছেন। যখন তিনি মাবিয়ার অপকর্ম সমুহকে দেখলেন তখন তিনি আর চুপ থাকতে পারেননি এবং মাবিয়ার বিরোধিতা করেন। মাবিয়া উক্ত খবরটি হজরত উসমানকে অবগত করলে হজরত উসমান তাকে ডেকে পাঠায় এবং তাকে “রাবেযা” নামক স্থানে নির্বাসন দেন। তিনি স্বপরিবারে রাবেযাতে চলে যান। সন ৩২ হিজরিতে সেখানে তিনি তাঁর সন্তান, স্ত্রী  মারা যায়। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ তার জানাযার নামাজ পড়ান এবং এবং মালিকে আশতার তাঁকে কাফন পরান ও দাফন করে দেন। (বেদায়াতুন নেহায়া, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ১৮৫)

 

যোরারে বিন আয়ুন (রহ.)এর মৃত্যু:

ইমাম জাফর সাদিক (আ.)এর শাহাদতের প্রায় দুই মাস পরেই যোরারে বিন আয়ুন মারা যান। তিনি তার জিবদ্দশায় তিন ইমাম (আ.)এর সান্নিধ্যে অর্জনের সৌভাগ্যে লাভ করেন। (মুসনাদে যোরারে, পৃষ্ঠা ২৬)

 

হজরত আবু বকরের পিতার মৃত্যু:

সন ১৩ হিজরির শেষের দিকে হজরত আবু বকরের বাবা আবু কুহাফার মারা যায়। (মুসতাদরাকে সাফিনাতুল বিহার, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ২১০)

 

কলিজাখোর হিন্দার মৃত্যু:

ইতিহাসের বর্ণনা অনুযায়ি ‍১৩ হিজরির উক্ত তারিখে রাসুল (সা.)এর চাচা হজরত হামযা (রা.) এর কলিজাখোর আবু সুফিয়ানের স্ত্রী ও মাবিয়ার মা হিন্দা ও মৃত্যু বরণ করে। উক্ত দিনটি হচ্ছে আবরি বর্ষের শেষ দিন। (তাতেম্মাতুল মুনতাহি, পৃষ্ঠা ৪৩)