শাবান মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি
শাবান মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি
এস, এ, এ
২য় শাবান:
রোজা ওয়াজিব হয়:
সন ২য় হিজরির উক্ত দিনে থেকে রমজান মাসের রোজা ওয়াজিব করা হয়। (মাশারুশ শিয়া, পৃষ্ঠা ৩৭)
আব্বাসিয় খলিফা মোতাযের মৃত্যু:
সন ২৫৫ হিজরি ২রা শাবান আব্বাসিয় খলিফা মোতায-এর মৃত্যু হয়। সে তার চাচাতো ভাই মুসতাইনের পরে খেলাফতের পদ অর্জন করে। তার অপরাধ সমূহের মধ্যে অন্যতম অপরাধ হচ্ছে সে ইমাম হাদি (আ.)কে শহিদ করে। যখন সে বুঝতে পারে যে, মোয়েদ তার বিরূদ্ধে উক্ত বিষয়টিকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করবে তখন সে তাকে বিষাক্ত লেপ দ্বারা আবৃত করে লেপের দুই মাথাকে বেধে দেয় ফলে সে ২৩শে রজব শ্বাসরূদ্ধ অবস্থায় মারা যায়। (তাতেম্মাতুল মুনতাহা, পৃষ্ঠা ৩৪০)
৩য় শাবান:
ইমাম হুসাইন (আ.)এর জন্মদিবস:
সন ৪ হিজরির উক্ত তারিখে ইমাম হুসাইন (আ.)এর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ইমাম আলি (আ.) এর মাতার নাম হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.)। তিনি ছয় বছর ও কয়েক মাস রাসুল (সা.)এর সান্নিধ্যে অর্জন করেন, সাত বছর কয়েক মাস মাতৃত্বের স্নেহ ভালবাসায় লালিত পালিত হন, ৩০ বছর বছর তার পিতা ইমাম আলি (আ.) এর পিপৃত্বের ছত্রছায়ায় ছিলেন এবং প্রায় নয় বছর কয়েক মাস ভাই ইমাম হাসান (আ.) এর নেতৃত্বের অনুসরণ করেন। সন ৬১ হিজরিতে কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনায় তিনি শাহাদত বরণ করেন। (এলামুল ওয়ারা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৪২০)
ইমাম হুসাইন (আ.)এর মক্কায় আগমণ:
সন ৬০ হিজরির উক্ত তারিখের বৃহস্পতিবার রাতে ইমাম হুসাইন (আ.) মক্কায় প্রবেশ করেন এবং জিলহজ মাস পর্যন্ত তিনি সেখানেই অবস্থান করেন। (আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৫)
৪ঠা শাবান:
হজরত আব্বাস (আ.)এর জন্মদিবস:
সন ২৬ হিজরির উক্ত দিনে হজরত আব্বাস (আ.)এর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ইমাম আলি (আ.) এবং মাতার নাম ফাতেমা বিনতে আসাদ। তাঁর প্রসিদ্ধ নাম হচ্ছে আব্বাস, এছাড়া তার অন্যান্য নাম সমূহ হচ্ছে আবুল ফাযল, আবুল কুরবা, কামারে বনি হাশিম, বাবুল হাওয়ায়েজ, আব্দে সালেহ এবং সাক্কা।
তিনি ছিলেন একজন সুদর্শন পুরুষ আর এ কারণে তাঁকে কামারে বণি হাশিম বলা হতো (বণি হাশিমের চাঁদ)। তিনি ছিলেন লম্বা, তাঁর পেশিগুলো ছিল শক্তিশালি। যখন তিনি ঘোড়ার উপরে আরোহন করতেন তখন তাঁর হাটু ঘোড়ার গলা পর্যন্ত পৌছে যেত। ইমাম আলি (আ.) এর সাহসি সন্তানদের মধ্যে ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.) এর পরে তার স্থান ছিল। কারবালাতে তিনি ইমাম হুসাইন (আ.) এর সেনা প্রধানের দ্বায়িত্ব ছিলেন এবং বীরত্বের সাথে শাহাদত বরণ করেন। (ওয়াকায়েউল আইয়াম, পৃষ্ঠা ৪২২)
৫ই শাবান:
ইমাম জয়নুল আবেদিন (আ.) এর জন্মদিবস:
ইমাম জয়নুল আবেদিন (আ.) সন ৩৮ হিজরির রোজ শনিবার হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.) এর ঘরে মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তিনজন ইমাম (আ.)কে উপলদ্ধি করেন। তাঁর পিতা ছিলেন শহিদদের সর্দার ইমাম হুসাইন (আ.) এবং মাতার নাম ছিল শহর বানু। ইতিহাসে তার জন্মগ্রহণ সম্পর্কে একাধিক মত বর্ণিত হয়েছে যেমন: ১৯ রবিউল আওয়াল, ১৫ই জামাদিউল আওয়াল, ১৫ই জামাদিউস সানি, ৫ই রজব, ১১ই রজব, ৭ই শাবান, ৮ই শাবান, ৯ই শাবান, ১৫ শাবান, ৫ই রমজান। অনুরূপভাবে কোন বারে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন এ সম্পর্কেও বিভিন্ন মতামত ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে যেমন: রবিবার, মঙ্গলবার, বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার। (মাশারুশ শিয়া, পৃষ্ঠা ৩৪)
৯ই শাবান:
ইমাম হুসাইন (আ.)এর আকিকা:
রাসুল (সা.) উক্ত দিনে ইমাম হুসাইন (আ.)এর আকিকা দেন এবং মাথার চুলকে মুন্ডন করেন এবং উক্ত চুলের সমপরিমাণ রূপা সাদকা দান করেন। (আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩২৭)
১০ই শাবান:
শিয়াদের উদ্দেশ্যে ইমাম মাহদি (আ.)এর পত্র:
উক্ত তারিখে আহলে বাইত (আ.)এর অনুসরিদের উদ্দেশ্যে ইমাম মাহদি (আ.) এর পত্র প্রেরণ করেন। আবু জাফর সামুরি তাঁর মৃত্যুর পূর্বে আহলে বাইত (আ.) এর অনুসারিদেরকে ইমাম মাহদি (আ.) তাঁর প্রেরিত স্বিকৃতিনামা প্রদর্শন করেন। (ওকায়েউশ শুহুর, পৃষ্ঠা ১৪০)
১১ই শাবান:
হজরত আলি আকবর (আ.)এর জন্মদিবস:
হজরত আলি আকবর (আ.) তিনি সন ৩৩ হিজরিতে মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার হচ্ছেন ইমাম হুসাইন (আ.) এবং মাতা উম্মে লাইলা বিনতে মাররা সাকাফি। কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার সময় তাঁর বয়স ছিল ২৭ বছর। বাযান্তির বর্ণনা অনুযায়ি তিনি বিবাহিত ছিলেন এবং তাঁর দুটি সন্তানও ছিল। (হজরত আলি আকবর (আ.), পৃষ্ঠা ১৬- ২০)
১৫ই শাবান:
ইমাম মাহদি (আ.)এর জন্মদিবস:
সন ২৫৫ হিজরি রোজ শুক্রবার ইমাম মাহদি (আ.) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ইমাম হাসান আসকারি এবং মাতার নাম নার্জিস খাতুন। এছাড়া উক্ত রাতটি হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ রাত। উক্ত তারিখে রাত্রি জাগরণ এবং ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে তাকিদ করা হয়েছে। রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে জমজম কুপের পানি উক্ত রাতে বৃদ্ধি পায় যদিও বর্তমানে তা ঢেকে রাখা হয়েছে। (এলামুল ওয়ারা, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৩১)
আলি বিন মোহাম্মাদ সামুরি মৃত্যুদিবস:
সন ৩২৯ হিজরির উক্ত তারিখে ইমাম মাহদি (আ.)এর নায়েব আলি বিন মোহাম্মাদ সামুরি মৃত্যু বরণ করেন। ইমাম মাহদি (আ.) আলি বিন মোহাম্মাদ সামুরির মৃত্যুর পূর্বে তাকে বলেন: তোমার পরে আর কাউকে আমার নায়েব নির্বাচনের প্রয়োজন নেই। তাঁর মৃত্যুবরণের পরপরেই দির্ঘকালিন অর্ন্তধান শুরু হয়ে যায়। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫১, পৃষ্ঠা ৩৪৯)
১৮ই শাবান:
হুসাইন বিন রূহ নৌবাখতির মৃত্যুদিবস:
ইমাম মাহদি (আ.)এর তৃতিয় নায়েব ছিলেন হুসাইন বিন রূহ নৌবাখতি। তিনি সন ৩২৬ হিজরি বাগদাদে মারা যান এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। (কালায়েদুন নাহুর, খন্ড শাবান, পৃষ্ঠা ৪৬৩)
১৯শে শাবান:
বণি মুস্তালিকের যুদ্ধ:
সন ৬ হিজরিতে বণি মুস্তালিকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। উক্ত যুদ্ধে মুসলমানদের সংখ্যা ১০০০ ও ১৩টি ঘোড়া ছিল এবং কাফেরদের সংখ্যা ছিল ৭০০ জন। উক্ত যুদ্ধে শুধুমাত্র একজন মুসলমান মারা যায় এবং ১০জন কাফের মারা যায়। মুস্তালাক হচ্ছে মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তি একটি স্থান। মুস্তালাক ছিলেন এমন এক ব্যাক্তি যে হজরত ইসমাইল (আ.) এর দ্বিনকে পরিবর্তন করে এবং সে তার গোত্রবাসিদেরকে হোবাল মূর্তির পুজা করার নির্দেশ দেয় এবং উক্ত মূর্তিটি কাবা গৃহে প্রতিস্থাপন করে। (তৌযিহুল মাকাসিদ, পৃষ্ঠা ২১)
শাবান মাসের শেষ তারিখ:
হজরত হাফসার মৃত্যু:
সন ৪৫ হিজরিতে হজরত হাফসা বিনতে উমর বিন খাত্তাব মৃত্যু বরণ করেন। তিনি ছিলেন হজরত উমরের কন্যা। রাসুল (সা.) এর সাথে বিবাহ হওয়ার পূর্বে তিনি “খানিস বিন আব্দুল্লাহ”কে বিবাহ করেছিলেন। রাসুল (সা.) তার সাথে বিবাহ করার পর তাঁর আচরণের কারণে তাকে তালাক দেন কিন্তু বিভিন্ন লোকদের অনুরোধের কারণে আবার তিনি (সা.) রুজু করেন। তার মৃত্যুর পরে মারওয়ান তার জানাযার নামাজ পড়ায়। হজরত হাফসা জামালের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে চান। কিন্তু তার ভাই আব্দুল্লাহ বিন উমর তাকে বাধা দেয় এবং তিনি যুদ্ধে যাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। (মুসনাদে আহমাদ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৩- ৩৪)
বণি আসাদের সাথে রাসুল (সা.)এর যুদ্ধ:
সন ৬ হিজরিতে রাসুল (সা.) হজরত আলি (আ.)কে ১০০জন লোকের সাথে প্রেরণ করেন যেন তিনি বণি সাআদ গোত্রের সাথে চুক্তি করেন। বণি সাআদের লোকজন খবরটি শোনার পরে পলায়ণ করে। মুসলমানরা ১০০টি উট, ১০০০ ছাগল গণিমত স্বরূপ অর্জন করে এবং রাসুল (সা.)এর খেদমতে উপস্থিত করেন। রাসুল (সা.) তা মুসলমানদের মাঝে বন্টন করেন এবং মদিনার উদ্দেশ্যে ফিরে যান। (বিহারুল আনওয়ারুল, খন্ড ২০, পৃষ্ঠা ৩৭৬)
সাঈদ বিন জাবিরের শাহাদত:
তিনি ছিলেন ইমাম জয়নুল আবেদিন (আ.) এর ছাত্র। আহলে বাইত (আ.) এর প্রতি নিগুঢ় ভালবাসা থাকার কারণে খলিফা হাজ্জাজ বিন ইউসুফ তাকে শহিদ করে। ইমাম উক্ত ঘটনার পরে দোয়া করে হে আল্লাহ! সে যেন আর কাউকে হত্যা করতে না পারে। ইমাম (আ.)এর দোয়া কবুল হয় এবং সাঈদ বিন জাবিরের শাহাদতের ১৫ – ২০ দিনে মধ্যেই সে মারা যায়। (মুনতাখাবুত তাওয়ারিখ, পৃষ্ঠা ৪২৩)
মুগাইরা বিন সোয়বার মৃত্যু:
মুগাইরা বিন সোয়বা ছিল আসহাবে মালউনা (যারা রাসুল (সা.)কে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল) এবং বনি সাকিফার সদস্য, হজরত ফাতেমা (সা.আ.)এর দরজায় আগুন জালানোর ঘটনায় সেও অংশগ্রহণ করেছিল। (বাইতুল আহযান, পৃষ্ঠা ১৪৪)
সে শাবান মাসের উক্ত তারিখে সন ৫০ হিজরিতে ৭০ বছর বয়সে কুফাতে মৃত্যুবরণ করে। সে মাবিয়ার নির্দেশে খতিবদেরকে গুরুত্বারোপ করতো তারা যেন নামাজের খুতবাতে মুসলিম জাহানের চতূর্থ খলিফা ইমাম আলি ইবনে আবি তালিবের উপরে অভিসম্পাত করে এবং সে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত উক্ত কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখেনি। ইবনে আবিল হাদিদ (রহ.)এর বর্ণনামতে জাহেলিয়াতের যুগে ব্যাভিচারকারি হিসেবে সে সবার কাছে পরিচিত ছিল। (কাশফুল হাওয়িয়া, পৃষ্ঠা ২৮৬-২৮৮)
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন